নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অদৃষ্টরে শুধালেম, চিরদিন পিছে, অমোঘ নিষ্ঠুর বলে কে মোরে ঠেলিছে?সে কহিল, ফিরে দেখো। দেখিলাম থামি, সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি।

মুবিন খান

নিজের পরিচয় লেখার মত বিখ্যাত বা বিশেষ কেউ নই। অতি সাধারণের একজন আমি। লিখতে ভাল লাগে। কিন্তু লেখক হয়ে উঠতে পারি নি। তবে এই ব্লগে আসা সে চেষ্টাটা অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্য নয়। মনে হল ভাবনাগুলো একটু সশব্দে ভাবি।

মুবিন খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

চায়ের কেটলির কাছে খোলা চিঠি

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:৪৭




প্রিয় চায়ের কেটলি,
ভালো আছ নিশ্চয়ই। চাই তো থাক। আমিও ভালোই আছি। থাকতে হয় যে!
জানো, সেদিন একজন পেয়ালায় চা ঢালতে গিয়ে অনেকটা চা ছলকে তার সাদা শার্টে ফেলে দিয়েছিল। ফেলে দিয়ে সে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়েছিল। তারপর মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বলেছিল, 'দেখেন, শার্টটাতে কেমন দাগ হয়ে গেছে। তাহলে আমাদের বুকের ভেতর কেমন দাগ হয়েছে বলেন তো!' জবাবে আমিও হেসেছি। কিছু বলি নি।

ঠিক ওই কথাটাই অনেকদিন আগে সাদা চায়ের কাপের ভেতরে লালচে হয়ে যাওয়া দাগ দেখিয়ে আরও একজন বলেছিল। আমি সেদিনও স্মিত হেসেছিলাম। হাসিতে চায়ের জন্যে প্রশ্রয় ছিল।
চা খাওয়াটা আমার জন্যে বিলাসিতা নাকি প্রয়োজন এটা একটা কঠিন প্রশ্ন হতে পারে। আমি তাই একে অভ্যাস বলে চালিয়ে দিই আর সবার মত।

চা খাওয়ার জন্যে কাপের চাইতে মগ পছন্দ আমার। আর সেটা কাঁচের হওয়া চাই। কিন্তু তারপর মগের প্রতি কেমন একটা মায়া জন্মে যায়। কাঁচ তো ভঙ্গুর, তাই অনেক মগই কোনও না কোনভাবে ভেঙেছে। তখন নতুন আরেকটা মগ আসত। কিন্তু ভেঙে যাওয়া মগটার জন্যে বুকের কোন্ কোণে যেন কষ্ট লুকিয়ে থাকত। ধীরে ধীরে সে মগের রঙ, আকৃতি, ডিজাইন ইত্যাদি ভুলে যেতাম।

কিন্তু জানো, এই এবার যে মগটি ভাঙল সেটির কথা ভুলতে পারছি না কিছুতেই। প্রথমত, ধবধবে সাদা আর খুব দামী ওই মগটা আমার বড় পছন্দর ছিল। আমাকে বুঝত ও। জানতো চায়ে কতটা উষ্ণতা আমার পছন্দ। দ্বিতীয়ত, আমার অপরূপ ওই চায়ের মগটি তুমি তোমার ধাতব নল দিয়ে ভেঙেছ।

অতটা উঁচু থেকে চা ঢালতে নেই জেনেও তুমি ঢেলেছ। আর মগ পূর্ণ হতেই শেকল ছেঁড়া লিফটের মত মগের ঠোঁটে ঝাঁপিয়ে পড়ার তোমার কেন দরকার হল সে আমি এখনও বুঝে উঠতে পারি না। মগের ঠোঁটে তো ঠোঁট লাগিয়ে চুমু খেতে হয়, এই নিয়ম। এই নিয়ম মানলে তবেই হয় চা খাওয়া। তুমি কেন নিয়ম ভাঙলে কেটলি? চা তোমার বুকের ভেতরে থাকে বলে?

অথচ চা তৈরিতে তোমার যে প্রচণ্ড পরিশ্রম তাতো আমি কখনও অস্বীকার করি নি। বুকের ভেতরে পানি নিয়ে চুলোর ওপর তুমি বসে তারপর সে পানি গরম কর। পানি যখন টগবগ করে ওঠে তখন চায়ের পাতার নির্যাস তুমিই মেলাও চায়ে। চুলোর আগুনের যে উত্তাপ তুমি ধারণ কর তাতেই চিনি গলে গিয়ে মিশ্রিত হয় সদ্য চা হয়ে ওঠে পানি। তোমার পুরো প্রক্রিয়াটিই জানি আমি।

কিন্তু তুমি আমার বহু পরিশ্রম করে চা পাতা, বিশুদ্ধ পানি, দুধ, চিনি সংগ্রহ করাটাকে মনেই রাখ নি। রাখ নি বলেই আমার অমন মহামূল্যবান অপরূপ চায়ের মগটি তুমি নির্দয়ের মত ভেঙে ফেলতে পেরেছ।

আমি কিছুই বলব না। আমি বুঝতে পেরে গেছি তোমার মত চমৎকার চায়ের কেটলিতে নির্মিত চা আমার ঠোঁট দাবি করে না হয়ত। আমাকে তরকারির হাড়িতেই চা করে খেতে হবে। তাই হোক তবে। সে কারণেই ভাবছি এখন টি ব্যাগের চা আনব। সাতকাহন করে আর বানানোর ঝামেলায় যাব না। তাতে কেবল পানি গরম করলেই চলবে। তুমি থাক আমার শেলফে। নিয়মিত তোমাকে মেজে ঝকঝকে করে রাখব। যেমন সব সময় রাখতাম। আমি এখন ছিপছিপে সুশ্রী আর টাটকা টি ব্যাগ খুঁজছি।
যাই এখন। শুভ কামনা। ভালো থাকবে।

ইতি
আমি
তোমার চা-খোর প্রেমিক।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ ভোর ৫:৪৬

জাতির বোঝা বলেছেন:
সুপ্রভাত!
আপনি কেমন আছেন, মহাশয়?
আপনার গেজেট পাঠ করিয়া আমি খুবই আমোদিত হই।
আপনি একজন উত্তম লেখক।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:৪৪

মুবিন খান বলেছেন: সুপ্রভাত মহাশয়। বিষণ্ণ ছিলাম। কিন্তু আপনার বার্তা পাঠ পূর্বক তনু মন প্রাণ ভরিয়া উঠিয়াছে। অতিশয় প্রীত হইলে মানবকুলের নাকি নৃত্য করার বাসনা জাগে। এক্ষণে উহাই অনুধাবন করিতেছি। সঙ্গে থাকুন মহাশয়।

২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:৪১

কালো_পালকের_কলম বলেছেন: কেটলি.. কিন্তু.... থাক সব কথা সব সময় বলতে নেই

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:৪৫

মুবিন খান বলেছেন: হ্যাঁ, সব কথা সব সময় বলতে নেই। নাই বা বললেন।

৩| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:০৮

হাবিব বলেছেন: চি খোর প্রেমিক..........?

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:৪৬

মুবিন খান বলেছেন: জ্বি ভাই, তবে 'চি' নয়, চা-খোর প্রেমিক।

৪| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:২০

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টি ভালো লাগলো।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:৪৭

মুবিন খান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৫| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:০৬

নীলপরি বলেছেন: বেশ অভিনব । ভালো লাগলো ।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:৪৮

মুবিন খান বলেছেন: সার্থক।
ধন্যবাদ।

৬| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৪৬

নজসু বলেছেন:


তরকারির হাঁড়িতে চা খেলে একটু ঝাল ঝাল লাগবে না?

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:৫২

মুবিন খান বলেছেন: ভালো বলেছেন। এ ভাবনাটা আসে নি আগে। এলেও কিছু করার আছে বলেও মনে হয় না। কেটলি শত্রুতা করলে চা দূর পরবাসী হয়, তারচেয়ে একটু ঝাল চা-ই উত্তম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.