নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অদৃষ্টরে শুধালেম, চিরদিন পিছে, অমোঘ নিষ্ঠুর বলে কে মোরে ঠেলিছে?সে কহিল, ফিরে দেখো। দেখিলাম থামি, সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি।

মুবিন খান

নিজের পরিচয় লেখার মত বিখ্যাত বা বিশেষ কেউ নই। অতি সাধারণের একজন আমি। লিখতে ভাল লাগে। কিন্তু লেখক হয়ে উঠতে পারি নি। তবে এই ব্লগে আসা সে চেষ্টাটা অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্য নয়। মনে হল ভাবনাগুলো একটু সশব্দে ভাবি।

মুবিন খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভয়াবহ কথাবার্তা

২২ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৯:৫৮



আমার এক ভাই। রাজনৈতিক সহকর্মী। তিনি বাম ধারার রাজনীতি করা লোক। তার সঙ্গে যখনই আলাপ হয়, খটমট লেগে যায়। কালরাতে ফোন করতে তিনি বলেন, তুমি আজকের দিনেও এগুলা বলবা! আমি পুস্প হাসি হেসে ফেলি।

তিনি বলেন, তুমি বলতে পার। আমি ডেমোক্রেটিক লোক বলেই বলতে পার। অন্যের ভিন্নমত শোনা আমার রাজনৈতিক শিক্ষা

আমার ধাক্কা লাগল। আমার ইচ্ছা করে বলি, গণতান্ত্রিক! সমাজতান্ত্রিক না!’ কিন্তু ইচ্ছা পূরণ করি না। কৌতুহলী মনের কৌতুহল বলি না। আমার মনে হতে থাকে, এই কথা বললে তিনি কোনো না কোনোভাবে ঠিকই গণতন্ত্রকে সমাজতন্ত্র বানিয়ে দেবেন। আমি অন্য কথা বলি।

আমি বলি, রাজনৈতিক শিক্ষা তো ভিন্ন জিনিস। আমাদের স্কুলের স্যার যেমন বলতেন, ‘বাবারা, তোরা খালি লেখাপড়া শিখিস্ না, শিক্ষিত হইস্, মানে লেখাপড়া শিখলেই কেউ শিক্ষিত হয় না। শিখে ফেলা লেখাপড়া নিজের ভেতর ধারণ করতে পারলে তবেই শিক্ষিত হওয়া যাবে। তেমনি রাজনীতি বা তার আদর্শ শিখলে-জানলেই হবে না। সে শেখা-জানাদের নিজের জীবনে প্রয়োগ করতে পারতে হবে।…

আমি বলতে থাকি, আমরা সকলেই তো রাজনৈতিক ওই শিক্ষাটা পেয়েছি। কিন্তু নিজের জীবনে কে পালন করি? আচ্ছা ভাই একটা কথা বলেন তো, এই যে শ্রমিকের অধিকার নিয়ে আমরা গলার রগ ফুলায়ে ফেলি। কারখানার সামনে দাঁড়িয়ে ভারি ভারি তথ্য উগরে দিয়ে শ্রমিকদের শোষণ বোঝাই, সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন বোঝাই। বলি, ব্যক্তির যেটা না হলেও চলে সাম্রাজ্যবাদ ফুসলিয়ে সেটাই ব্যক্তিকে কিনে ফেলতে প্রলুব্ধ করে। তারপর নিজের সুউচ্চ ফ্ল্যাটে ফিরে শাওয়ারের তলে ক্লান্তি ধুই। এরপর তোয়ালে দিয়ে গা মুছতে মুছতে পঞ্চান্ন ইঞ্চি টেলিভিশনে নেটফ্লিক্সে মুভি দেখতে দেখতে সারাদিনের আয়েশটা একটু ধরতে চাই- এটা কি ভোগবাদ না? স্ববিরোধিতা না?

ভাই আমার একথার সরাসরি কোনো উত্তর দেন না। তিনি এদিক দিয়ে যান, ওদিক দিয়ে যান। আমি তখন বলি, ভাই, আমি আপনার কথা বলছি না। আমার কথা বলছি। আমাদের কথা বলছি। আপনি বলেন তো, যে রাজনৈতিক শিক্ষার কথা আপনি বললেন, সেটা আমাদের মধ্যে নিজের জীবনে কে পালন করছে?

এবারে তিনি ফাঁক খুঁজে বের করেন। বলেন, না না, শোন, তোমাকে প্রযুক্তিকে গ্রহণ করতে হবে তো! প্রযুক্তিকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে না!

আমি বলি, ভাই, আমি তো চৌদ্দ ইঞ্চি টেলিভিশনে খবরটা দেখতে পারি। পঞ্চান্ন ইঞ্চি টেলিভিশন আমার লাগবে কেন! নেটফ্লিক্স দেখতে পারলেই কেন প্রযুক্তির সঙ্গে থাকা হবে?

ভাই এবারে বলেন, তুমি বুঝতে পারছ না। তুমি আসলে একটা জায়গায় আটকে আছ। একদিন চলে আসো। সামনা সমানি আলোচনা করব।

আমি বলি, ভাই, কঠিন কোনো প্রশ্ন তো না। আপনি রাজনৈতিক শিক্ষার কথা বললেন। আমি বললাম, নিজের জীবনে সে রাজনৈতিক শিক্ষাটা প্রয়োগ করতে না পারলে সেটা তো তবে শিক্ষা হলো না। এটাই তো। বলেন ঠিক বললাম কিনা?

তিনি এবারেও উত্তর দেন না। এটা সেটা বলে বোঝাতে চান।

এবারে আমি বলি, কবি সুকান্তর কথা ধরেন। সুকান্ত তো মেহনতি মানুষদের জন্যে রাজনীতি করত। ফ্ল্যাট বা আলাদা কোনো বাসাবাড়িতে থাকত না। তাদের সঙ্গেই থাকত। মাসের পর মাস থেকেছে। দিনের দিনের দিন না খেয়ে থেকে থেকে আলসারের রোগি হয়ে হাসপাতালে থেকেছে। নিজে একটু আয়েশ করে নি। ঠিকমত চিকিৎসাটাও পায় নি। অমন তরুণ একটা শেষে মরেই গেল। আর আমরা আধুনিক সকল সুবিধাঅলা ফ্ল্যাটে থাকি। কালেভদ্রে লিফটে নেমে কয়েক ঘন্টা প্ল্যাকার্ড ধরে দাঁড়িয়ে থেকে, দু মিনিট মাইক্রোফোনের সামনে গলার রগ ফোলাই। এভাবে আমরা শ্রমিকের ভাগ্য বদলাবো!…

তিনি এবারেও সরাসরি বলেন না। এদিক দিয়ে যান, ওদিক দিয়ে যান। তিনি জানেন, আমার বাসায় লিফট নাই। জানেন আমি প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তা বা কারখানার দরজায় দাঁড়াই না। জীবনেও মাইক্রোফোন নিয়ে গলার রগ ফোলাই না। ভাই আমার ডাকেন আমারে। যেতে বলেন তার কাছে। মুখোমুখি আলোচনা করবেন।

অনেকদিন আগে একবার একবার শীর্ষ বাম নেতা তার বাড়িতে ডেকেছিলেন। আমরা তখন পত্রিকা অফিসের কয়েকজন সমমনাদের নিয়ে গিয়েছিলাম। বাড়িতে ঢুকবার মুখে ঘাড় উঁচু করতে দেখি ছাদের চার কোণে চারটে ডিসঅ্যান্টেনা।

আমরা ভেতরে বসতে শীর্ষ নেতা এলেন। সরকারের স্থাবর অস্থাবর সকল দুর্নীতির হিসেব কষে ফলাফল দিলেন- বিপ্লব করতে হবে।
আমি যেহেতু বেদ্দপ, তাই টুক করে বলে ফেললাম, ‘বিপ্লব করবার প্রক্রিয়াটি কি হবে?’

তখন সবাই চুপ হয়ে গেল। দুয়েকজন ফিক্ করে হেসে ফেলল। এরপর সকলে স্বাভাবিক। আমি আমার পত্রিকার বিভাগীয় সম্পাদকের দিকে ঝুঁকে বলি, ‘কৃষক-শ্রমিক-মজুরের বাড়িতে চাইরটা ডিস কেন!’ সম্পাদক মৃদু একটা ধমকে চুপ করতে বলেন।

আজকে উত্তরটা পেয়ে গেছি। ওই শীর্ষ নেতাও আসলে সেসময়ের প্রযুক্তির সঙ্গে ছিলেন। আরও একটা উত্তর পেয়ে গেছি- এই বাগাড়ম্বরঅলা লোকগুলার জন্যেই এদেশের লোকেরা সমাজতন্ত্র ও সমাজতান্ত্রিক লোকেদের গালি দেয়।

‘ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ।’ ইনারা ত্যাগ করেন আপন জীবনে নয়, শৌচাগারে। সেকারণে খাদ্যগ্রহণ অধিক দরকার। সেকারণে দরকার সম্পদও। রাজনৈতিক শিক্ষাটা এঁদের সেকাজেই লাগছে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১:২৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:


মব্নি ভাই
ভয়াবহ কথা শুনতে ভয় পাই

২৬ শে জুলাই, ২০২১ রাত ২:১৬

মুবিন খান বলেছেন: ভয় আমিও পাই ভাই। তাইত শিরোনামেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছি।
ধন্যবাদ জানবেন।

২| ২৩ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ৮:২৪

কামাল১৮ বলেছেন: এদের একটাই কথা,আমি যা বলি তোমরা তা কর আমি যা করি তোমরা তা করো না।
শ্রমিক শ্রেনীর মুক্তির জন্য শ্রমিকদের মাঝ থেকেই নেতৃত্ব আসতে হবে।

২৬ শে জুলাই, ২০২১ রাত ২:১৯

মুবিন খান বলেছেন: শ্রমিকদের ভেতর থেকে তখনই নেতৃত্ব আসবে যখন প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা তাঁদের নাগালে আসবে। এখানেও কথা আছে। শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলিত ধারাটি মানুষকে কতটা শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারে সেটিকেও বিবেচনায় রাখা দরকার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.