![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র এবং মানবেতর জীবনযাপন করে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন গুজরান করে। শুধু ঢাকা শহরের বস্তিগুলো ও রাস্তার পাশে পড়ে থাকা মানুষের দিকে তাকালেই দেখা যায়, তাদের অধিকাংশের পেটে অনাহারের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত তারা। ক্ষুধার তাড়নায় নিরুপায় হয়ে ডাস্টবিনের ময়লাযুক্ত পচা খাবার গলাধঃকরণ করে।
আমাদের দেশের শিশুরা, যাদের থাকার কথা ছিল মায়ের কোলে, আদরে আহ্লাদে, তারা আজ ক্ষুধার দুর্বিষহ যন্ত্রণায় টিকতে না পেরে সারাদিন ভিক্ষা করে বেড়ায়। রাতে রাস্তার পাশে ঘুমায়। রাতে গা ঢাকার মতো একখানা কাপড় না পেয়ে গাড়ির চলন্ত ইঞ্জিনের মতো কাপতে থাকে, কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, সমাজের এসব করুণ চিত্র এখন আর কাউকে শিউরে ওঠায় না। কারও অন্তরে দয়ার উদ্রেক করে না, অথচ আমাদের সমাজে এমন লোকের সংখ্যাও কম নয়। যারা ফাইভস্টার হোটেল, চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও কমিউনিটি সেন্টারে দামি-দামি বিলাসী খাবার অর্ধ আহারান্তে ফেলে দেয়। কোটি টাকার গাড়ি হাঁকিয়ে সদম্ভে চলাচল করার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে আয়েশি জীবনযাপন করার লোকও এ দেশে কম নয়। হাদিস শরীফে এসেছে : ‘ভালোবাসা ও সহমর্মিতায় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। আর দেহের কোনো অঙ্গে কষ্টের ছায়া লাগলে গোটা দেহ জ্বর ও নিদ্রাহীনতায় আক্রান্ত হয়।’ কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমরা সমাজের গরিব-দুঃখী ও অসহায়দের প্রতি কোনো রূপ দায়িত্ব বোধ করি না। তাদের প্রতি সামান্যতম সহমর্মিতা দেখাই না।
ইসলাম কখনোই এমন সমাজ চায়নি। ইসলাম চায় পরস্পর হৃদ্যতাপূর্ণ সহানুভূতিশীল এক সমাজব্যবস্থা। যেখানে সবলরা দুর্বলদের সাহায্য-সহযোগিতা করবে। সম্পদশালীরা দরিদ- অনাহারীকে আহার দান করবে। তাই ইসলাম অসহায় গরিবদের সাহায্য-সহযোগিতার প্রতি উত্সাহিত করেছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সত্কর্ম শুধু পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করার নাম নয়, বরং সত্কর্ম হলো আল্লাহতায়ালা, পরকাল, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব ও সব নবী-রাসুলের ওপর ঈমান আনয়ন করা। আর আল্লাহর মহব্বতে আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন, মুসাফির, ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য সম্পদ ব্যয় করা’ (সুরা বাকারা ১৭৭)। হাদিস শরীফে আছে রাসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ‘আবুজর! যখন তুমি ঝোল-তরকারি রান্না করো তখন কিছুটা পানি বাড়িয়ে দাও। অতঃপর সেখান থেকে কিছু অংশ তোমার প্রতিবেশীর ঘরে পাঠিয়ে দাও’ (সহিহ মুসলিম হাদিস-২৬২৫)।
আমাদের দেশে গরিবদের সংখ্যা বেশি হলেও ধনীদের সংখ্যাও কম নয়। তারা যদি অনর্থক অপচয় কমিয়ে অন্তত সে টাকাটা গরিবদের দান করেন, তাহলে গরিবরা অনায়াসেই খেয়ে-পরে বাঁচতে পারে। এতে তাদের বিলাসিতায়ও বড় ধরনের প্রভাব পড়ে না। অন্তত ফরজ জাকাতটাও যদি আদায় করে দেন। তাহলেও বাংলাদেশের গরিব-দুঃখীদের জীবনযাত্রার মান কিছুটা হলেও উন্নত হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, গরিব-দুঃখীদের দান-দক্ষিণা করা প্রতিটি মুসলমানের ঈমানি ও নৈতিক দায়িত্ব। সুতরাং আমাদের এ দায়িত্ববোধ সামনে রেখেই সমাজের গরিব মিসকিনদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা উচিত।
©somewhere in net ltd.