![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের যে ভালোবাসা, তা পৃথিবীর একমাত্র নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। সন্তানের জন্য বাবা-মা নিজের জীবন উৎসর্গ করতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। তাই তাদের সম্মান করা, ভালোবাসা ও তাদের প্রতি কর্তব্য পালন করা আমাদের সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু তিক্ত সত্য হলো, কালপরিক্রমায় আমরা হয়ে ওঠি অতি নির্মম। প্রকাশ পায় বাবা-মায়ের প্রতি চরম অবহেলা ও অবজ্ঞা। বাবা-মা যখন বৃদ্ধ হয়ে যান, তখন তারা সন্তানের উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল ও চরম অসহায় হয়ে পড়েন। আর তখন থেকেই আমরা তাদের প্রতি প্রদর্শন করি ঔদাসীন্য ও অবহেলা। তাদের ভাবতে থাকি পরিবারের বোঝাস্বরপ। এই ভোগবাদী মানসিকতা থেকেই আমরা তাদের জোর করে পাঠিয়ে দিই বৃদ্ধাশ্রমে। স্বামী-স্ত্রী ও আদরের ছেলে-মেয়ে নিয়ে গড়ে ওঠে সুখের সংসার। আর বৃদ্ধ বাবা-মায়ের ঠাঁই হয় বৃদ্ধাশ্রমে। পরিবার-পরিজন, ছেলে-মেয়ে থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এক চরম অসহায় জীবনযাপন করেন তারা। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, যে সন্তানকে মানুষ করার জন্য বাবা-মা সারা জীবন কষ্ট করেছেন, যে সন্তানের সুখের দিকে তাকিয়ে বাবা-মা নিজের সুখ বিসর্জন দিয়েছেন, সেই নরাধম সন্তানের দ্বারাই বাবা-মা নিগৃহীত হচ্ছেন।
আমরা একবারও ভাবি না যে, আমাদের সন্তান আমাদের কাছে যেমন, আমরা ও আমাদের বাবা-মায়ের কাছে তেমন। আমরা আমাদের সন্তানকে যেমন আদর-সোহাগ করি, মায়া-মমতা দিয়ে পরম যতেœ লালন-পালন করি, আমাদের বাবা-মাও আমাদের মায়া-মমতা দিয়ে, আদর-স্নেহ দিয়ে বড় করেছেন। বাবা-মা নিজে না খেয়ে আমাদের খাইয়েছেন। নিজের সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়ে আমাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। আমাদের সুখের দিকে তাকিয়ে তারা আরামের ঘুম হারাম করেছেন। আামদের মুখে দুু’মুঠো খাবার তুলে দেয়ার জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছেন। আমদের লালন-পালনে কষ্ট মনে করে কোনো শিশু আশ্রমে আমাদের পাঠিয়ে দেননি।
ইসলাম বাবা-মায়ের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। তাদের সেবা-যতœ করা, তাদের সঙ্গে সদাচরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের কথা মান্য করা ইসলামের দৃষ্টিতে ফরজ। বাবা-মাকে কষ্ট দেয়া, তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা, তাদের কথা অমান্য করা নিঃসন্দেহে অনেক বড় গুনাহ। আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন, তিনি ছাড়া অন্য কারও ইবাদত না করতে ও বাবা-মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহার করতে’ (সূরা বনি ইসরাইল : ২৩)।
হাদিস শরিফে এসেছে, একবার জনৈক সাহাবি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে জিহাদে যাওয়ার তীব্র আকাক্সক্ষা প্রকাশ করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার বাবা-মা কেউ কি জীবিত আছে, সাহাবি হ্যাঁ সূচক জবাব দিলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বাড়িতে গিয়ে তাদের সেবা কর। (বোখারি : ২৮৪২)। অন্য হাদিসে আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জীবিত অবস্থায় তার বাবা-মা উভয়কে অথবা তাদের একজনকে পেল, অথচ সে জান্নাত আদায় করতে পারল না, তার চেয়ে দুর্ভাগা আর কে হতে পারে?
বাবা-মা যখন বার্ধক্যে উপনীত হন তখন তাদের প্রতি দায়দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়, তাদের সেবা-শুশ্রƒষা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কারণ মানুষ যখন বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হয় তখন সে আবার শৈশবে ফিরে যায়। বিখ্যাত কবি ও দার্শনিক শেক্সপিয়র বার্ধক্যকে আখ্যায়িত করেছেন দ্বিতীয় শৈশব হিসেবে। তাই তখন তার বেঁচে থাকার জন্য শিশুকালের মতো আদর-স্নেহ, মায়া-মমতার প্রয়োজন হয়। বার্ধক্যের কারণে বাবা-মায়ের মেজাজ কিছুটা খিটখিটে ধরনের হয়ে যেতে পারে, সামান্য বিষয় নিয়ে তুলকালাম কা- ঘটাতে পারেন। তাই তাদের অস্বাভাবিক আচরণকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করার নির্দেশ রয়েছে ইসলামে। আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তাদের একজন বা উভয়েই জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের উফ বলো না। তাদের ধমক দিও না, তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বলো। (সূরা বনি ইসরাইল : ২৩)।
সন্তানের জন্য বাবা-মা উভয়েই কষ্ট করেন। তথাপি বাবার তুলনায় মায়ের হক অনেক বেশি। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, কোন ব্যক্তি আমার সর্বাধিক সদাচরণ পাওয়ার অধিকারী? তিনি বলেন, তোমার মা। লোকটি বললেন, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি বললেন, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমরা মা। লোকটি বললেন, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার বাবা (মুসলিম : ২৫৪৮)।
সর্বোপরি মনে রাখতে হবে, কালের বিবর্তনে আমরাও এক সময় বার্ধক্যে উপনীত হব। আমাদের সঙ্গে বৃদ্ধাবস্থায় তেমন আচরণ করা হবে, যেমন আচরণ আমরা আমাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে করব। অন্তত এই দিকটি বিবেচনায় রেখে আমাদের উচিত বাবা-মায়ের সঙ্গে সদাচরণ করা।
লেখক : শিক্ষক, জামিয়া সাওতুল হেরা, টঙ্গী, গাজীপুর
©somewhere in net ltd.