নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শালীন ভাষায় সাহসী উচ্চারণ

মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব

সম্পাদক, মাসিক আরবি ম্যাগাজিন ‘আলহেরা’

মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব › বিস্তারিত পোস্টঃ

ড. আফিয়া অপহরণের যখন যুগপূর্তি

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:৫৩




জি. মুনীর

০৫ এপ্রিল ২০১৫,রবিবার, ১৭:৪০



আফিয়া সিদ্দিকি। পাকিস্তানি এক মহিলা। আজ থেকে ১২ বছর আগে তিন শিশুসন্তানসহ
তাকে করাচিতে একটি ট্যাক্সি থেকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের সে দিনটি ছিল ২০০৩
সালের ৩ মার্চ। গত ৩ মার্চ ২০১৫ ছিল তার অপহরণের ১২ বছরপূর্তি দিন। অপহরণের
সময়টায় তার জীবন ছিল অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ। সবেমাত্র স্বামী তাকে তালাক দিয়েছেন। তিনি
ছিলেন স্বামীর নির্যাতনের শিকার। বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর বসবাস করছিলেন মায়ের
সাথে। তার বাবা মারা গেছেন হার্ট অ্যাটাকে। তার সবচেয়ে ছোট সন্তানটি তখন ছিল
কোলের শিশু। অপহরণের পর আফিয়া সিদ্দিকি ও তার সন্তানদের খোঁজখবর ছিল না পুরো
পাঁচ বছর। তিনি ওই কয়টি বছর কাটিয়েছেন আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের ইউএস ব্ল্যাক
সাইট প্রিজনগুলোতে। আমরা শুধু কল্পনা করতেই পারি, কী ভয়াবহ নির্যাতনই না সেখানে
তার ওপর চালানো হয়েছে! এ ধরনের নির্যাতন চালানো হয় সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের
ওপর। সেখানে তিনি ছিলেন একমাত্র নারী। তাকে ব্যক্তিগতভাবে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি
আদায়ে ব্যর্থ হলে তার সন্তানদের হত্যার হুমকি দিয়ে তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি
আদায়ের চেষ্টা চলেছে।

এরা বলেছে অন্য নারীরা এসেছিল, তারা আফগানিস্তানের গোপন বন্দিশালা থেকে চলে
গেছে। তাদের কাহিনী কেউ জানে না। কিন্তু আফিয়া একমাত্র মহিলা যার কাহিনী এখন
সবার জানা। তার কাহিনী সত্য। এর আংশিক কারণ তিনি এক দশকেরও বেশি সময়
বসবাস করেছেন, পড়াশোনা করেছেন ও কাজও করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। তারচেয়েও বড় কথা,
তার নাছোড়বান্দা পরিবার, মা ইসমেত ও বোন ফওজিয়া এক মুহূর্তের জন্য তাদের
চেষ্টা-তদবির থামাননি আফিয়াকে পরিবারে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে। করাচির একটি
উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তিনি। রক্ষণশীল এই মুসলিম পরিবারের সদস্যরা
সুশিক্ষিত। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের ছিল সুপরিচিতি। সিদ্দিকি পরিবারের মহিলারা
সরকারের সব মহলের, বিশেষ করে সাংবাদিক মহলের লোকেদের ব্যবহার করেছেন
আফিয়ার সন্ধান পাওয়া এবং তাকে পরিবারে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে।

তার মা ইসমেত বলেছেন, তার মেয়ের অপহরণের অল্পক্ষণ পরেই এক ব্যক্তি তাদের
দরজায় এসে তাকে শাসিয়ে যায়। সে বলল, আফিয়া ও তার শিশুদের সন্ধানের চেষ্টা থেকে
বিরত থাকতে হবে। ইসমেত ও ফওজিয়া এই দুই নারীর স্থির বিশ্বাস ছিল, আফিয়া
সিদ্দিকি ও তার তিন সন্তানকে অপহরণ করেছে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও
আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। বিষয়টিতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ,
পাকিস্তানি নাগরিকেরা প্রায়ই গুম হয়ে যাচ্ছিল ২০০১ সালের নয়-এগারোর ঘটনার পরবর্তী
সময়ে। তখন পর্যন্ত কয়েক হাজার পাকিস্তানিকে অপহরণের শিকার হয়ে স্বল্প দিন কিংবা
দীর্ঘ দিন কারাগারে কাটাতে হয়েছে। এদের সামান্যসংখ্যককে নিয়ে যাওয়া হয়েছে
গুয়ানতানামো বে কারাগারে। কিন্তু কে খবর রাখে অন্যদের ভাগ্যে কী ঘটেছে? অনেকেই
আর কখনোই ফিরে আসেননি। যুক্তরাষ্ট্রে হাজার হাজার অভিবাসীকে আটক করে
জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এদের অনেকেই হয়েছেন নির্যাতনের শিকার। অনেককে আটকে
রাখা হয়েছে মাসের পর মাস কিংবা বছরের পর বছর। কোনো আইনি সুবিধার সুযোগ দেয়া
হয়নি পরিবারের সদস্যদের। অনেককে কোনো অপরাধ না থাকলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে
দেয়া হয়েছে।

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তথাকথিত বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের প্রথম দিকের বছরগুলোতে শুধু আফিয়া
সিদ্দিকি একাই নির্যাতনের শিকার হননি। মোশাররফ সরকারের আমলে শুধু আফিয়াই
এভাবে অপহরণের শিকার হননি। পাকিস্তানের রাস্তা থেকে এভাবে হাজার হাজার মানুষকে
অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নয়-এগারোর পর বিশ্বের অনেক দেশেই এ ধরনের
ঘটনা ঘটেছে। এ নির্যাতন তখন ছিল সর্বব্যাপী। ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধের সময়
বেসামরিক লোকেদের ওপর চালানো হয়েছে নির্মম অত্যাচার। আফিয়া সিদ্দিকির ক্ষেত্রে
ব্যতিক্রম ছিল- তিনি ছিলেন একজন মহিলা এবং তাকে অপহরণ করা হয় তার তিন
সন্তানসহ। আরো ব্যতিক্রম হলো, তিনি অনেক বছর কাটিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে তিনি
কলেজে গেছেন এবং একসময় ব্রেনডিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়েছেন ডক্টরাল ডিগ্রি। বিয়ে
করেছেন পাকিস্তানি এক ডাক্তারকে। তার ঘরে ছিল দুই সন্তান। তিনি সুনামের সাথে কাজও
করেছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে। তিনি কুরআন পাঠিয়েছেন বন্দীদের কাছে। একটি মসজিদে
কুরআন পড়িয়েছেন, নগরীর প্রতিবেশীদের গরিব শিশুদের।

দুর্ভাগ্য নেমে এলো নয়-এগারোর পর। তাকে ও তার স্বামীকে অপহরণ না করলেও
জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের অ্যাপার্টমেন্টে বসবাসরত এক সৌদি তরুণকে সরকার
প্ররোচিত করছিল। আফিয়ার স্বামী একটি নাইটভিশন গগোলস কিনেছিলেন ক্রেডিটকার্ড
ব্যবহার করে। তিনি বলেছেন, তিনি তা কিনেছেন শিকার করার জন্য। তখন তাদের বিয়ের
সম্পর্কে টানাপড়েন চলে। কখনো কখনো তা চরম আকার ধারণ করেছিল। একসময়
আফিয়ার কাঁধে দীর্ঘ কাটার দাগ দেখা যায়। তার স্বামী শিকার করেন, একদিন তিনি তার
ওপর বেবি বটল ছুড়ে মেরেছিলেন। আসফিয়া তার সন্তান নিয়ে চলে আসেন মা-বাবার
করাচির বাড়িতে। তৃতীয় সন্তান তার গর্ভে। যখন স্বামী তাকে বিদায় দিয়ে আবার বিয়ে
করেন, তখন তিনি ছিলেন বিব্রত ও ক্ষুব্ধ। এ ধরনের একটি পরিস্থিতিতে বিব্রত ও ক্ষুব্ধ না
হয়ে কেউ কি পারেন ? একদিন তিনি ট্যাক্সি করে তার এক আঙ্কেলের বাড়িতে বেড়াতে
যাচ্ছিলেন তিন সন্তানকে সাথে নিয়ে। তখন তিনি সন্তানদেরসহ অপহরণের শিকার হন।
২০০৮ সালের জুলাইয়ে আফিয়া সিদ্দিকি পৌঁছান ম্যানহাটানে। এর এক সপ্তাহ আগে
অপহরণ করে তার পাকস্থলী থেকে বেশ কয়েকটি বুলেট বের করা হয়। হুইলচেয়ারে করে
সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় আদালতকক্ষে। তার বিরুদ্ধে আফগানিস্তান ও ইউএস
সেনাবাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ আনা হয়। ব্যাপক প্রচারিত এক
বিচারের পর তাকে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। সেখানে মিডিয়ায় তাকে অভিহিত করা
হতো ‘ল্যাডি আলকায়েদা’ নামে। রায়ের পর তাকে পাঠানো হয় কার্সওয়েল মেডিক্যাল
সেন্টারে। এটি টেক্সাসের একটি হাই সিকিউরিটি ফেডারেল প্রিজন। জানা যায়, সেখানেই
তিনি এখন পর্যন্ত আছেন।

বিচারে সরকারি উকিলেরা কোনো ভৌত সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। এমন
একটি সাক্ষ্যপ্রমাণও ছিল না। প্রাসঙ্গিক কোনো মৌল প্রশ্নও করা হয়নি, জওয়াবও নেয়া
হয়নি। তার নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ বছর আফিয়া কোথায় ছিলেন? তিনি কি আফগানিস্তানের
গজনিতে শত্রুর মুখোমুখি হয়েছিলেন? তিনি যখন বললেন, তাকে অপহরণ করে নিয়ে
নির্যাতন করা হয়েছে, তখন কেন তার কথা বিশ্বাস করা হলো না? কেন পাকিস্তান সরকার
তাকে বাইরে নিয়ে যেতে দিলো? কেন তখন তার জন্য এমন আইনজীবী নিয়োগ দিলো,
যাদের তিনি বিশ্বাস করেন না। কারণ তাদের যোগ্যতা যা-ই থাক, তাকে নিয়োগ দিয়েছে
পাকিস্তান সরকার। একজন মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে পড়া মহিলাকে নির্যাতন
চালানোর কথা বলা হলেও, কেন তা তদন্ত করে দেখা হলো না?

২০০৩ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সময়ে ইউএস কর্মকর্তারা বারবার বলেছেন, আফিয়া
তাদের হেফাজতে নেই। এরা বলতে চেয়েছেন, তার অবস্থান সম্পর্কে তাদের কিছু জানা
নেই। কিন্তু ২০০৮ সালে যখন তাকে দেখানো হলো, বলা হলো- তিনি আলকায়েদার সাথে
জড়িত। তার যোগাযোগ রয়েছে খালিদ শেখ মোহাম্মদ ও তার কয়েকজন সহযোগীর সাথে।
এরা আসলে বলেছে, তার বিয়ে হয়েছে খালিদ শেখ মোহাম্মদের ভাইপো আম্মার আল
বেলুচির সাথে। আফিয়ার পরিবার অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে। তিনি অপহরণের
সময়ে সবেমাত্র তালাকপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং একটি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। আফিয়া
সিদ্দিকির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল- তিনি মজিদ খানের জন্য ম্যারিল্যান্ডে একটি
মেইলবক্স পেয়েছিলেন। তরুণ মজিদ খান করাচিতে খালিদ শেখ মোহাম্মদের সহযোগী
ছিলেন। তিনি ইচ্ছে করে তার ভিসা ল্যাপ্স হতে দিয়েছেন, যখন তার পরিবার করাচিতে
বসবাস করছিল। তখন প্রয়োজন হয়েছিল একিট ইউএস মেইলবক্স অ্যান্ড্রেসের, আবার
আবেদন করার জন্য, যাতে করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে পারেন। খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ
ছিল, যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে সন্ত্রাসকর্ম চালনার পরিকল্পনা করছিলেন তিনি।

কিন্তু ড. আফিয়াকে যে অভিযোগে বিচার করা হচ্ছে, সেটি কোনো অপরাধ নয়। এটি
গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া একটি কাহিনীমাত্র। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দাবি, আফিয়া সিদ্দিকি পাঁচ
বছর কাটিয়েছেন একটি টেরোরিস্ট সেলে কেমিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল ওয়েপন তৈরি
করে। তিনি একজন বিজ্ঞানী, তার রয়েছে পিএইচডি ডিগ্রি। যখন তাকে পাকিস্তানে
গ্রেফতার করা হয়, তার ব্যাগে তখন কিছু কেমিক্যাল পাওয়া যায়। এবং সাথে ছিল
রাসায়নিক ও জৈবিক অস্ত্র তৈরির হাতে লেখা রেসিপি ও স্ট্যাচু অব লিবার্টির একটি ছবি।
এসব আলামতকে সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ড. আফিয়া বলেছেন, তিনি এ
ধরনের একজন বিজ্ঞানী নন। তিনি একজন শিক্ষাবিদ। কিন্তু তার দাবি আমলে নেয়া হয়নি।
তার পিএইচডি করার বিষয় হচ্ছে নিউরো সায়েন্স। এটাই ব্রানডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ড।
তিনি ড. আফিয়া। কোনো চিকিৎসক, রসায়নবিদ ও জীববিজ্ঞানী নন। তিনি বলেন, তিনি
ডকুমেন্টটি লিখেছেন তার শিশুদের মেরে ফেলার ভয় দেখানোর পর। তিনি স্বেচ্ছায় তা
লেখেননি। তিনি আদালতে বলেছেন, তার নিখোঁজ থাকার সময় তার ওপর নির্যাতন
চালানো হয়েছে। তার এই সাক্ষ্য অসত্য ও অপ্রাসঙ্গিক বলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। সরকার
তার এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি পাকিস্তান সরকারের নিয়োজিত দামি
আইনজীবীর আইনি সহায়তা নিতে অস্বীকার করেন। কারণ, তিনি পাকিস্তান সরকারের
মনোভাব নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন। তা ছাড়া যেভাবে তার মামলা সাজানো হয়েছে, তিনি
তেমনটি চাননি। কিন্তু আদালত তার প্রতিবাদ আমলে নেননি। এসব আইনজীবী দিয়ে
মামলা অব্যাহত রাখার অনুমোদন দেন আদালত। অভিযোগ আছে, বিচারক বারমানকে
যুক্তরাষ্ট্রের অভিমত ব্যক্তিগতভাবে অবহিত করা হয়। এ কাহিনী প্রকাশ হয়ে যায়
গণমাধ্যমে। কোনো ভৌত সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াই তাকে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

আজ ড. আফিয়া সিদ্দিকি রয়েছেন কার্সওয়েলের সাইক্রিয়াটিক ডিভিশনে; তার ৮৬ বছরের
কারাভোগের সাত বছর চলছে। সেখানে তার কঠিন সময় কাটছে। সেখানকার গার্ড ও
ইনমেটরা তাকে নির্যাতন করছে কি না, আমরা জানি না। সেখানে তাকে একাকী রাখা
হয়েছে। তাকে সেখানে কোনো চিঠিপত্র গ্রহণ করতে দেয়া হয় না। পিস অ্যান্ড জাস্টিস
অ্যাক্টিভিস্ট জুডি বেল্লো তার কাছে অনেক চিঠি পাঠিয়েছেন। সবগুলোই ফেরত এসেছে,
তিনি সম্প্রতি সফর করেছেন সিরিয়া, ইরান, ইরাক ও পাকিস্তান। তখন তিনি সাক্ষাৎ
করেছেন আফিয়া সিদ্দিকির পরিবারের সদস্যের সাথে। তিনি তার লেখা ‘দ্য টুয়েলফথ
অ্যানিভার্সারি অব আফিয়া সিদ্দিকি’স অ্যাবডাকশন : হোয়াট হেপেন্ড টু আফিয়া সিদ্দিকি
অ্যান্ড হয়ার ইজ শি নাউ?’ শীর্ষক লেখায় এসব কথা জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, তার
লেখা চিঠিগুলো না খুলেই ফেরত পাঠানো হয়েছে তার কাছে। খামের ওপর লেখা
‘আনডেলিভারেবল’। তিনি যখন প্রিজনকে জানাতে বলেন, তিনি কি ঠিকানা ভুল লিখেছেন
কি না? তাকে জানানো হলো- ড. আফিয়া চিঠি গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। কয়েক মাস
পর জুডি বেল্লো আবার কারাগারে যান হেনকক এএফবি’র গেটে সরাসরি অ্যাকশন
প্রটেস্টের জন্য। তখন তিনি তার অ্যাটর্নির কাছ থেকে চিঠি পান। এবং বুঝতে পারেন এরা
চিঠি পড়ে তদন্ত করে দেখবে। এরপর তিনি আবারো চিঠি পাঠাতে থাকেন, তার চিঠিগুলো
তখন খোলা অবস্থায় ফেরত আসতে থাকে।

আফিয়া সিদ্দিকি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিবারের কারো সাথে কথা বলতে
পারেননি। টেক্সাসে তার এক ভাই থাকেন। তিনিও তার সাথে দেখা করতে পারেননি। এক
বছর হলো কারো সাথে তার যোগাযোগ নেই। সর্বশেষ তার পরিবারের সদস্য ও মায়ের
সাথে দেখা হওয়ার সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে। দুই সন্তানকে তাদের কাছে ফেরত
দেয়া হয়। আফিয়াকে কারাগারে পাঠানোর সময় তার সাথে দেখা হওয়ার সময় বোন
ফওজিয়া ড. আফিয়াকে জিজ্ঞেস করেন- কেন তিনি চিঠি ফেরত পাঠান। তখন আফিয়ার
জবাব- ‘কিসের চিঠি?’।

ড. আফিয়ার কাহিনী সুদীর্ঘ। তিনি বলেছেন, তিনি নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
কোনো তদন্ত ছাড়াই কেন তার এ অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়া হলো? ড. আফিয়ার কাহিনী
আরো অসংখ্য পাকিস্তানি, আফগানি ও আরবদের কাহিনী থেকে আলাদা কিছু নয়।
‘পাকিস্তান টুডে’ সম্প্রতি এক খবরে জানিয়েছে- যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালিত তথাকথিত
সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে ৮০ হাজার পাকিস্তানি নিহত হয়েছে। আন্তর্জাতিক চিকিৎসকদের
সংগঠন ‘বডি কাউন্ট : ক্যাজুয়েল্টি ফিগারস আফটার টেন ইয়ারস অব দ্য ওয়ার অন টেরর’
শীর্ষক প্রতিবেদনে সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছে। ২০০৪-১৩ সময়ে পাকিস্তানে এই লোকক্ষয়
ঘটেছে। অপর নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এনজিও ‘পিজিশিয়ানস ফর সোশ্যাল
রেসপনসিবিলিটি’ এক পরিসংখ্যানে বলেছে- গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত যুদ্ধে
বিশ্বে ২০ লাখ মানুষ হত্যা করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ অব্যাহতভাবে চলছে। কবে এর অবসান ঘটবে কেউ জানে
না। কেউ জানে না, কবে যুক্তরাষ্ট্রের অমানবিক ধ্বংসযজ্ঞের হাত থেকে বিশ্ববাসী রক্ষা
পাবে। কখন বিশ্ববাসী নিশ্চিত জানবে- আর কোনো ড. আফিয়াকে এভাবে নির্যাতন, ধর্ষণ
ও অমানবিকতার মুখোমুখি হতে হবে না। ড. আফিয়া অপহরণের এই এক যুগপূর্তির সময়ে
সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
- See more at: Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.