![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইমামতি একটি মহান দায়িত্ব। এটি সুন্দর ও সম্মানজনক পেশা। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও ইমামতি করেছেন। তারপর তার সাহাবিরা ও খোলাফায়ে রাশেদিন ওই একই মহান দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ানোর পর ইমামদের হাতে অফুরন্ত সময় থাকে। শহরের অধিকাংশ ইমাম এ সময় ভিন্ন পেশায় কর্মরত থাকলেও গ্রামের অধিকাংশ ইমাম এই মূল্যবান সময়টুকো চিরায়ত আলস্যের মধ্যে কাটান। অথচ তারা ইচ্ছে করলে এ সময়ে অনেক কিছু করতে পারেন। তাদের জন্য কোনো সংস্কারমূলক কাজ করা যতটা সহজ, অন্যদের জন্য ততটা সহজ নয়। তারা সাধারণ মানুষের মন-মেজাজের গভীরে প্রবেশ করতে পারেন। তাদের মনের কথাগুলো সাধারণ মানুষের কাছে সহজেই পৌঁছাতে পারেন। ইমামদের জন্য প্রতি জুমাবার জনগণের একেবারেই কাছে চলে যাওয়ার, তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার এক সুবর্ণ সুযোগ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় তিন লাখ মসজিদ আছে। শুক্রবার দুই কোটির ওপরে মুসল্লি মসজিদে হাজির হন। ইমামরা শুক্রবার খুতবার আগে যেসব বিষয়ে আলোচনা করেন, মুসল্লিরা বলতে গেলে বিনা প্রতিবাদে তা শোনেন এবং এর ওপর ভিত্তি করে তারা তাদের জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সুতরাং জুমার আগে খুতবায় ইমামরা মুসল্লিদের জীবন চলার প্রয়োজনীয় পাথেয় যেমন দিতে পারেন, তেমনি তাদের বলতে পারেন সমাজের নানা অসঙ্গতির কথা। ইসলামের কথা, সমাজের অসঙ্গতির কথা জনগণের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে জুমাবার একটি মিডিয়ার ভূমিকা পালন করে। ইমামরা এসব সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সমাজ সংস্কারমূলক বিভিন্ন কাজ করতে পারেন। সমাজের অসঙ্গতির কথা, বৈধ-অবৈধের কথা কোরআন-হাদিসের আলোকে জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারেন। দিতে পারেন প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা।
আমাদের দেশের ইমামরা নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ পরকালীন মুক্তির ওয়াজ-নসিহতের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকতে চান। পার্থিব কর্মকাজের বিধি-বিধান সম্পর্কে সাধারণত তারা মুখ খুলতে চান না। অথচ ইসলামের বিধান শুধু নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
ইসলাম মানুষের সর্বক্ষেত্রে পরিব্যাপ্ত, ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন- সর্বক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা রয়েছে। একজন ইমামকে যেমনিভাবে নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত সম্পর্কে আলোচনা করতে হবে, তেমনিভাবে সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি সামাজিক অপরাধ সম্পর্কেও জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণ ও পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ, জলবায়ু পরিবর্তনে করণীয়, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, রোগপ্রতিরোধ, প্রাথমিক দায়িত্ব, দুর্নীতি দমন, খালি জায়গায় চাষাবাদ, উন্নত পদ্ধতিতে মাছ চাষ, বনায়ন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, সামাজিক সমস্যা দূরীকরণ, জনসংখ্যা সমস্যা, শিক্ষা ও কৃষিজ উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ে নৈতিক ও ব্যবহারিক শিক্ষা প্রদান করতে পারেন। ইমামরা সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ইতিবাচক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রমে অবদান রাখতে পারেন। তবে এ দায়িত্ব আঞ্জাম দিতে গিয়ে ইমামরা বাধাগ্রস্ত হতে পারেন। সেক্ষেত্রে সব বাধা উপেক্ষা করে সৎসাহসিকতার পরিচয় দিতে হবে। বাধা আসার ভয়ে শরিয়তের কিছু অংশ প্রকাশ করা, কিছু অংশ গোপন করার অবকাশ নেই। মনে রাখতে হবে, নবীরাও দ্বীনের বাণী প্রচার করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। তাই বলে তারা রিসালাতের কাজ ছেড়ে দেননি। নবীদের সেই দায়িত্ব এখন ওলামায়ে কেরামের ওপর ন্যস্ত। তাই বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে এ দায়িত্ব আঞ্জাম দিতে হবে। মনে রাখতে হবে সাময়িক উত্তেজনার পরিবর্তে দ্বীনি ঈমানী চেতনা সৃষ্টি করে মানুষের চিন্তায় পরিবর্তন আনাই একজন বিজ্ঞ আলেমের দায়িত্ব। ইমামতির পাশাপাশি ইমামরা সামাজিক উন্নয়ন ও নিরক্ষরতা দূরীকরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। তারা মসজিদভিত্তিক শিক্ষাকার্যক্রম চালু করতে পারেন। ইসলামের সোনালি যুগে মসজিদভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু ছিল। সাহাবায়ে কেরাম শিক্ষা অর্জনের জন্য মসজিদে নববীতে জড়ো হতেন। সেখানকার শিক্ষক ছিলেন স্বয়ং রাসুলে করিম (সা.) এবং শিক্ষা সিলেবাস ছিল আল্লাহ প্রদত্ত ওহি। ওহির জ্ঞান অর্জন করে তারা সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন।
ইসলামের সোনালি যুগে সমাজ পরিচালিত হতো মসজিদকে কেন্দ্র করে। বিচারকার্য পরিচালনা করা হতো মসজিদে। সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার জ্ঞান বিতরণ করা হতো মসজিদ থেকে। সেই ইতিহাস আমরা ভুলে গেছি। মসজিদকে আমরা ধর্মীয় তীর্থ ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারি না। ইসলামকে আমরা শুধু ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। এর জন্য মসজিদের ইমামরাই বেশি দায়ী। ইমামরা শুধু ইবাদতের ওয়াজ নসিহত করেন। মসজিদ থেকে এখন আর লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে সততা, চাকরি-বাকরিতে দায়িত্ব পালনের কর্তব্যনিষ্ঠা, সুদ-ঘুষের আলোচনা খুব একটা শোনা যায় না।
সাধারণ মানুষ এসব বিষয়ের আলোচনা না শুনতে শুনতে এগুলোকে ইসলামবহির্ভূত বিষয় মনে করতে শুরু করেছে। তারা নামাজ-রোজা সঠিকভাবে আদায় করলেও লেনদেন, বিয়ে-শাদি ও জীবনযাপনের অন্যান্য বিষয়ে শরয়ী বিধি-বিধান জানারও প্রয়োজন বোধ করে না। বাংলাদেশের প্রায় সব গ্রামে একাধিক মসজিদ আছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে একটি বিদ্যালয় নেই সেখানেও একাধিক মসজিদ আছে। মসজিদের ইমামরা যদি এসব বিষয় মানুষকে জানান, তাহলে জনগণের অনেক ভুল ভেঙে যাবে।
- See more at: Click This Link
২| ০৭ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:১২
তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: গুরুত্বপূর্ণ লেখা। ভাল লাগলো।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৭
এস আলভী বলেছেন: অনেক প্রতিক্ষার পর ফ্রন্টপেইজ একসেস দেওয়ায় ব্লগ কর্তৃপক্ষকে গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
আপনার লেখায় আমি আজ প্রথম মন্তব্য করার সুযোগ পেয়ে গর্ব বোধ করছি।
নতুন ব্লগার হিসাবে আপনার সহযোগিতা কামনা করছি। ধন্যবাদ।