নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শালীন ভাষায় সাহসী উচ্চারণ

মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব

সম্পাদক, মাসিক আরবি ম্যাগাজিন ‘আলহেরা’

মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব › বিস্তারিত পোস্টঃ

দান করে বলে বেড়নো অন্যায়

০৮ ই মে, ২০১৫ দুপুর ২:৪৮

মানুষের জীবন প্রবাহের সকল কাজ নিয়মের অন্তর্ভুক্ত। চাই তা ইহজগতের কাজ হোক বা পরজগতের। পরজগতের সব কাজে নিষ্ঠা ও আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার নিয়ত থাকতে হয়। কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায় বহু মানুষ সঠিক কাজে কৃত্রিমতা অবলম্বন করে। ধর্মীয় ও পরজগতের কাজকেও ইহজগতের বিভিন্ন কলুষতা দ্বারা কলুষিত করে ফেলে। ধর্মীয় কাজে অনেকে সঠিক নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটিয়ে বিভিন্নমুখী কৃত্রিম ও প্রচারণামূলক পথ ও পন্থার আশ্রয় নেয়। জাগতিক কাজের বিষয়াদির মত ধর্মীয় কাজের বেলায়ও মানুষ একই নীতির অনুসরণ করে। যেমন দান-সদকা একটি ইবাদত। এখানে মিথ্যা বা কৃত্রিমতার কোন স্থান নেই। তবুও শয়তানের প্ররোচনায় অনেক মানুষ লোক দেখানো দান-খয়রাত করে। এরূপ দান-খয়রাত মূল্যহীন। কারণ আল্লাহ মানুষের সব অকৃত্রিম বা খাঁটি কাজের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন। পক্ষান্তরে তাদের যে কোন কৃত্রিম বা নকল কাজের প্রতি অসন্তুষ্ট থাকেন। মানুষ যে কোন কাজই করুক তার উদ্দেশ্য হবে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জন করা। কেননা আল্লাহ্র সন্তুষ্টি ব্যতীত কোন পুণ্য লাভ করা সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা লোকদেরকে দেখাবার জন্য স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে এবং আল্লাহ্র প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না, আর যাদের সহচর শয়তান, সে নিকৃষ্ট সঙ্গীই বটে’ (নিসা ৪/৩৮)। কিন্তু মানুষ দান-সদকা করে নিজেকে প্রকাশ করতে চায়। মানুষকে দেখাতে চায়। পৃথিবীতে আত্মপ্রচার বিমুখ মানুষের সংখ্যা খুবই কম। অধিকাংশ মানুষ নিজেকে প্রকাশ করতে চায়। দুনিয়ার ক্ষেত্রে তো বটেই এমনকি ইবাদতের ক্ষেত্রেও অনেকে প্রচার করে ইবাদতের সওয়াব নষ্ট করে দেয়। অনেক মানুষ আছে, যারা আত্মপ্রচার ও সুনাম ও সুখ্যাতি অর্জন করার জন্য দান করে। আবার কেউ কেউ রাজনৈতিক ফায়েদা হাসিল করার জন্য দান করে। আবার অনেকে নিজের ধনাঢ্যতা জাহির করার জন্য দানখয়রাত করে থাকে। এ ধরনের দান-সদকা আল্লাহ পছন্দ করেন না। দান-খয়রাত একটি ইবাদত। যারা পবিত্র বস্তু হতে, সঠিক নিয়তে, আল্লাহ্র ভয়ে তাঁর সন্তুষ্টির জন্য গোপনে বা প্রকাশ্যে দান করে তাদের দান কবুল হয়ে যায়। তারা দান-খয়রাত করে কাউকে বলে বেড়ায় না; বরং আল্লাহ্র কাছে বিনিময় পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করে। পক্ষান্তর যারা দুনিয়ার সুনাম অর্জনের জন্য দান-খয়রাত করে তারা দান করার পর অনায়সে তা বলে বেড়ায়। আল্লাহ্র সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির বিষয়টি চিন্তা করে না। অথচ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যারা স্বীয় ধন-সম্পদ আল্লাহ্র রাস্তায় ব্যয় করে আর ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং কষ্টও দেয় না, তাদেরই জন্য তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার এবং তাদের কোন আশংকা নেই, তারা চিন্তিত হবে না। নম্র কথা বলে দেয়া এবং ক্ষমা প্রদর্শন করা ওই দান-খয়রাত অপেক্ষা উত্তম, যার পরে কষ্ট দেয়া হয়। আল্লাহ তায়ালা সম্পদশালী, সহিষ্ণু। হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-খয়রাত বরবাদ করো না, সে ব্যক্তির মতো যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। অতএব এ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মত যার উপর কিছু মাটি পড়েছিল। অতঃপর এর উপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো, অনন্তর তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিল। তারা ঐ বস্তুর কোন ছওয়াব পায় না, যা তারা উপার্জন করেছে। আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না’ (বাক্বারাহ ২/২৬২-৬৪)।

যারা দুনিয়ার বিভিন্ন উদ্দেশ্যে দান করে তাদের একটু ভাবা উচিত যে, আমার কষ্টার্জিত সম্পদ দান করে দিয়ে আমি কী পাচ্ছি? আমার নিয়ত যদি শুদ্ধ না থাকে তবে আমার ইহজগতের ঘাম ঝরানো অর্থ যেমন বিনষ্ট হলো তেমনি পরজগতে জান্নাতের পরিবর্তে জাহান্নাম আমার ঠিকানা। আমার দুনিয়াও গেল আখেরাতও গেল।

আমাদের মনে রাখা উচিত, ইহজগতের সম্মান ও পরজগতের সম্মান সম্পূর্ণ পৃথক দু’টি বিষয়। ইহজগতের সম্মান একেবারে অস্থায়ী, পরকালের সম্মান চিরস্থায়ী। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাসী বা তাঁদের আদেশ প্রত্যাদেশের প্রতি বিশ্বাসী তারা সর্বদাই ইহজগতের চাইতে পরজগতের সম্মানকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এজন্য আল্লাহ্র যে কোন আদেশের প্রতি তারা সব সময় বিনীত, নত ও শ্রদ্ধাশীল থাকে। মানুষের দান-খয়রাত করা উচিত আল্লাহ্র আদেশে ও নিজেদের মঙ্গল কামনায়। শুধু অভাবগ্রস্তদের প্রয়োজনে নয়। আবার অনেক দাতা আছে, যারা ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় প্রচুর দান-খয়রাত করে। কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের উপর বিশ্বাস রাখে না। এরূপ লোকদের দান কখনই কবুল হবে না। কারণ যে কোন ভাল কাজ একমাত্র আল্লাহ্র জন্য এবং আল্লাহ্র আদেশ পালনের জন্য হতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আপনি বলুন, তোমরা ইচ্ছায় অর্থ ব্যয় কর বা অনিচ্ছায় তোমাদের থেকে তা কখনও কবুল হবে না, তোমরা নাফরমানের দল। তাদের অর্থ ব্যয় কবুল না হওয়ার এছাড়া আর কোন কারণ নেই যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি অবিশ্বাসী, তারা ছালাতে আসে অলসতার সাথে আর ব্যয় করে সঙ্কুচিত মনে’ (তওবা ৯/৫৩-৫৪)। দান-খয়রাত করার কথা বলে বেড়াতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। উপরের আয়াতে তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এরূপ গর্হিত কাজ হতে সবাইকে বিরত থাকতে হবে।

মনে রাখা উচিত, এ পৃথিবী মানুষের জন্য একটি পরীক্ষা কেন্দ্র। তাই মানুষের প্রতিটি ভাল ও মন্দ কাজ আল্লাহ্র পক্ষ থেকে লিপিবদ্ধ করা হয়, মৃত্যুর পর বা পরকালে মূল্যায়ন করার জন্য। দুনিয়ার জীবন মানুষের জন্য পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় ভাল ফল লাভ করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা কুরআন ও হাদীছের মাধ্যমে সঠিক জ্ঞান ও শিক্ষা দানের সুব্যবস্থা করেছেন এবং মানুষকে তা ভালভাবে অবগত করেছেন। এখান থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে মানুষ ভাল কাজ করবে, তাহলে পরকালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে, চিরস্থায়ী সুখী জীবন যাপন করবে। অন্যথা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে চিরস্থায়ী অশান্তির কারাগারে জীবন যাপন করবে। ছাত্র জীবনের শ্রেণী পরীক্ষায় পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু বাদ দিয়ে নিজের ইচ্ছামত অন্য পাঠ্যপুস্তকের বা জ্ঞানের কথা খাতা ভর্তি করে লিখলে যেমন পাশ করা যায় না, তদ্রƒপ ধর্ম পালনেও কুরআন-হাদীছের অনুসরণ ছাড়া পরকালীন পরীক্ষায় পাশ করা যাবে না। লোক দেখান দান-খয়রাত তেমনি একটি স্বেচ্ছাচারমূলক কাজ। এখানে আল্লাহ্র নির্দেশ মান্য করা হয় না এবং তাঁর সন্তুষ্টির কথাও চিন্তা করা হয় না; বরং দুনিয়াতে সুনাম অর্জনের জন্য তা করা হয়। অন্তর্যামী আল্লাহ তা ভালভাবে জানেন এবং সেজন্য তিনি এ দান প্রত্যাখ্যান করেন। শুধু দান-খয়রাতের বেলায় নয়, যে কোন কাজের ক্ষেত্রে লোক দেখান উদ্দেশ্য থাকলে আল্লাহ্র নিকট তা মঞ্জুর হবে না। সে বিষয়েও আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সতর্ক করার জন্য কুরআনে অনেক আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর (হে বিশ্বাসীগণ!) তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা গর্বভরে ও লোকদেখানোর জন্য নিজেদের ঘর থেকে বের হয় এবং (লোককে) আল্লাহ্র পথে বাধা দেয়। তারা যা করে তা আল্লাহ্র আয়ত্তে রয়েছে’ (আনফাল ৮/৪৭)।

লোকদেখান যে কোন কাজই কৃত্রিম বা মিথ্যার নামান্তর। আল্লাহ এ কৃত্রিমতাকে বা লোকদেখান যেকোন বিষয়কে পছন্দ করেন না। কেননা লোক দেখান কোন কাজেরই পরিণতি ভাল নয়। এমনকি লোক দেখান ছালাত আদায় করেও কোন লাভ হয় না, বরং এর পরিণতি ভয়াবহ। উপরের আয়াতের আলোচনা হতে তা সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়। দান-খয়রাত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তাঁর প্রিয় বিশ্বস্ত বান্দাদেরকে এই পবিত্র ইবাদতে কোন কিছু মিশ্রণ না করার জন্য সতর্কতামূলক বা শিক্ষামূলক প্রত্যাদেশ অবতীর্ণ করেন। যাতে তারা ঐ লোকদেখান প্রতারক দাতাদের মত প্রভাবিত না হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! দানের কথা প্রচার করে ও কষ্ট দিয়ে (খোঁটা দিয়ে) তোমাদের দানকে ঐ লোকের মত নষ্ট করো না, যে নিজের ধন লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে না। তার উপমা একটি শক্ত পাথর যার উপর কিছু মাটি থাকে, পরে তার উপর প্রবল বৃষ্টি পড়ে তাকে মসৃণ করে ফেলে। যা তারা উপার্জন করে তার কিছুই তারা তাদের কাজে লাগাতে পারবে না’ (বাক্বারাহ ২/২৬৪)।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৪২

এন জে শাওন বলেছেন: যে দান শুধু দেখানোর জন্য সে দান রিয়া এর পর্যায়ে পড়বে। আর এর জন্য আছে কঠিন আযাব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.