নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শালীন ভাষায় সাহসী উচ্চারণ

মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব

সম্পাদক, মাসিক আরবি ম্যাগাজিন ‘আলহেরা’

মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপকারের খোঁটা দেয়া জঘন্যতম অপরাধ

০৯ ই মে, ২০১৫ রাত ৯:২৭

দান-সদকা করে কোনো মুসলমান ভাইয়ের উপকার করা একটি সওয়াবের কাজ। মানুষকে দান-সদকা করে উপকার করার প্রতি গুরুত্বারোপ করে মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, 'তোমরা সালাত আদায় করো জাকাত দাও এবং আল্লাহ তায়ালাকে উত্তম ঋণ দাও।' (সূরা মুজাম্মিল : ২০)।
অন্যত্র তিনি বলেন, 'তোমরা যদি আল্লাহ তায়ালাকে উত্তম ঋণদান কর তাহলে আল্লাহ তায়ালা তা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে দেবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন।'
আল্লাহ তায়ালা অমুখাপেক্ষী এক মহান সত্তা। যার কোনো জিনিসের প্রয়োজন নেই। কোনো মাখলুকের সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজন নেই; বরং তিনিই পৃথিবীর সব সৃষ্টিজীবকে সাহায্য করেন। মহাভা-ারের মালিক মানুষের কাছে ঋণ চান তার মহাভাণ্ডার শূন্য হওয়ার কারণে নয়; বরং তিনি ঋণ চান তার অসহায়-গরিব, গৃহহীন, বস্ত্রহীন, ক্ষুধার্ত বান্দাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করার জন্য। সুতরাং আল্লাহ তায়ালাকে ঋণ দেয়ার আহ্বান অত্যন্ত গুরুত্ববহ ও হৃদয়স্পর্শী। আল্লাহকে ঋণদান করলে অর্থাৎ আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের দান-খয়রাত করলে ইহজগতে তা ফেরত পাওয়া যাবে না; তবে আখেরাতে আল্লাহ তায়ালা প্রচুর লাভসহ ফেরত দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি রয়েছে। হাদিস শরিফে আছে, 'যে ব্যক্তি কোনো মোমিনের পার্থিব কষ্টগুলো থেকে একটি কষ্ট দূর করে দেয়, আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন তার কষ্টগুলো দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবীকে দুনিয়ায় ছাড় দেয়, আল্লাহ তায়ালা তাকে দুনিয়া ও আখেরাতে ছাড় দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মোমিনের দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে সাহায্য করেন, যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে।' (মুসলিম শরিফ)।
কিন্তু আজকাল দেখা যায়, একশ্রেণীর মানুষ দান-খয়রাত করে ও ধারকর্জ দিয়ে পরক্ষণেই খোঁটা দেয়। বিশেষত যদি গ্রহীতার সঙ্গে দাতার কোনো কারণে সুসম্পর্ক বিনষ্ট হয় বা মতপার্থক্য দেখা দেয় তখন অতীতের উপকারের খোঁটা দিতে দেখা যায়। উপকার করে খোঁটা দেয়া জঘন্যতম অপরাধ। উপকারের সব সওয়াবকে বিনষ্ট করে দেয়। উপকার করে খোঁটা দেয়ার চেয়ে উপকার না করাই উত্তম। মানুষের উপকার করার দ্বারা যে মহাপুণ্য অর্জিত হয়, খোঁটা দেয়ার দ্বারা তা নষ্ট হয়ে যায়। তাই খোঁটা দেয়া ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য অন্যায় ও কবিরা গুনাহ। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, 'যারা স্বীয় সম্পদ আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় ব্যয় করে এবং তা প্রকাশ করে না এবং কষ্টও দেয় না, তাদের জন্যই রয়েছে তাদের পালনকর্তার কাছে পুরস্কার। তাদের কোনো আশঙ্কা নেই, তারা চিন্তিত হবে না। নম্র কথা বলে দেয়া ও কোনো অপ্রীতিকর ব্যাপারে সামান্য উদারতা ও ক্ষমা করে দেয়া ওই দান-খয়রাতের চেয়ে উত্তম। আল্লাহ তায়ালা সম্পদশালী ও সহিষ্ণু। 'হে ঈমানদাররা! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-খয়রাত নষ্ট করো না। সে ব্যক্তির মতো যে নিজের সম্পদ লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে এবং আল্লাহ তায়ালা ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। অতএব, এ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের ন্যায়, যার ওপর কিছু মাটি পড়েছিল, অতঃপর এর ওপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো, অনন্তর তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিল। তারা ওই বস্তুর কোনো সওয়াব পায় না যা তারা উপার্জন করেছে। আল্লাহ তায়ালা কাফের সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না।' (সূরা বাকারা : ২৬২-৬৪)।
খোঁটা দেয়া হীনমন্যতার পরিচয়। যারা হীন, যাদের হৃদয় সঙ্কীর্ণ, একমাত্র তারাই খোঁটা দেয়। এটি একটি সামাজিক ব্যাধি। যাদের চরিত্রে নবীর (সা.) শিক্ষার বিকাশ ঘটে তারাই একমাত্র এই ব্যাধি থেকে বেঁচে থাকতে পারে। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবুজর (রা.) থেকে বর্ণিত, 'রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তিন শ্রেণীর লোকের সঙ্গে আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন কথা বলবেন না। খোঁটাদানকারী, সে যা কিছু দান-সদকা করে পরক্ষণেই তার খোঁটা দেয়। আর যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে তার পণ্য বিক্রি করে এবং যে ব্যক্তি টাকনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে চলে বা পরিধান করে।' (সহিহ মুসলিম : ২০২)।
আরেক হাদিসে আছে, 'তিনজন বেহেশতে যেতে পারবে না। তারা হচ্ছে- মাতাপিতার অবাধ্য সন্তান, মাদকসেবী, উপকার ও দানদক্ষিণার প্রচার ও খোঁটাদানকারী।' (নাসায়ি শরিফ)।
মোটকথা, কাউকে উপকার করতে চাইলে নিঃস্বার্থভাবেই করব; কিন্তু উপকার করে খোঁটা দেয়ার চেয়ে উপকার না করাই ভালো।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মে, ২০১৫ রাত ১০:৩৬

তৌফিক মাসুদ বলেছেন: ভালো লাগল আপনার লেখা, চালিয়ে যান।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.