নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রাবন্ধিক, কলামিষ্ট, গল্পকার

আবু.তাহের

ফেসবুকে আমি muhammad.taher.10

আবু.তাহের › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক কালো রাতের গল্প

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:১৩

১.

রাত্রি দ্বিপ্রহর প্রায় পেরিয়ে গেছে। প্রাসাদের বারান্দায় পায়চারী করছেন রানী সুফিয়া। কয়েকদিন যাবৎ চিন্তায় ঘুম উবে গেছে সুফিয়ার। বারান্দা। নির্দিষ্ট দুরুত্বে লন্ঠনের আলো জ্বলছে। বারান্দার এপাশ থেকে ওপাশটা পরিস্কার দেখা যায় না। সুফিয়া শোবার ঘরে ঢুকলেন। বিরাট ঘর। মদের পেয়ালা হাতে নিয়ে আরেকবার চুমুক দিলেন। দূরে কোথাও কয়েকটা শিয়াল থেমে থেমে ডেকে উঠছে। আলবানী এখনো আসছে না। কি হল? আলবানী তার গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান। হঠাৎ ঘোড়ার আওয়াজ শুনা গেল। সুফিয়া ব্যালকনিতে এসে উকি দিলেন। অন্ধকারে স্পষ্ট কিছু দেখা যাচ্ছে না। ভিতরের ঘরে ঢুকতেই এক খাদেমা দৌড়ে আসল।

কুর্নিশ করে জানাল, রাজা ষ্টিফেন গমেজ এসে গেছে। সুফিয়া একটা নিঃশ্বাস ছাড়লেন। এখন শুধু আলবানী আসার বাকী। রাজা গৌরমোহন খানিক আগে এসে পৌছেছে। সুফিয়া একটি চেয়ারে গা এলিয়ে দেয়। কিছুটা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে যায় সুফিয়া। গলা খাকড়ির আওয়াজে চোখ মেলে সুফিয়া। আলবানী তার সামনে দাড়িয়ে।

কি খবর আলবানী? কখন এসেছো?

এইমাত্র।

চল।

সুফিয়ার পিছু পিছু হাটতে থাকতে থাকে আলবানী। বিশাল হল ঘরে ঢুকল সুফিয়া আর আলবানী। বেশ একটা খাবারের টেবিলে এপাশটায় থরে থরে খাবার সাজানো রয়েছে। একটা চেয়ার টেনে বসতেই ষ্টিফেন গমেজ আর গৌরমোহন হল ঘরে প্রবেশ করল।

বসুন সবাই।

এবার খবর বল আলবানী। কি অবস্থা পুরো দেশের?

সবাই যেন আলবানীর উপর ঝুকে পড়ল। খাবারে কথা তারা প্রায় ভুলেই গেল।

বিদ্রোহীরা রাতেই শহরের বিভিন্ন জায়গায় জড় হয়েছে। দিন থাকতে থাকতেই তারা শহরের আশে পাশে ভিড়তে থাকে। বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, লোকজনের বাসা বাড়িতে গিয়ে উঠছে। আমরা যা ধারনা করেছিলাম তার কয়েক গুণ বেশি বিদ্রোহী জমা হয়ে গেছে। আমার লোকেরা আরো বলেছে, বিদ্রোহীদের প্রধান ইব্রাহীম আসাদ এর দেশের বাইরেও অনেক প্রভাব রয়েছে। অনেকেই তাকে আধ্যাত্মিক নেতা বলে মানে। আমার আশংকা হচ্ছে দেশের বাইরে থেকে কোনো সহায়তা আসবে নাতো?

আরে নাহ! অনেকটা তাচ্ছিল্যের সুরে কথাটা বললেন গৌরমোহন। ওরকম কোন সুযোগ আমি দেবই না। আমার সৈন্যরা তোমাদের দেশকে ঘিরে রেখেছে। এরকম হবার কোন সুযোগই থাকবে না। আমার ভয় অন্য জায়গায়।

কে সেটা? সুফিয়া জানতে চাইলেন।

আমার ভয় তোমার সৈন্যরা ঘুরে দাড়াবে নাতো। তারা তাদের আপন ভাইয়ের উপর তলোয়ার চালাতে কুন্ঠিত হবে নাতো?

সেরকম হতে পারে। গমেজ মাথা লাড়লেন।

আমি সবাইকে এ বাহিনীতে রাখিনি। বেছে বেছে লোক নিয়েছি।

তারপরও সুফিয়া তুমি ভেবে দেখ। গৌরমোহনকে কিছুটা চিন্তিত মনে হল।

এ ব্যাপারে আপনি কি বলেন?

আমি বলি আমার কিছু লোক তোমার বাহিনীতে রাখ। ওরা জাতে হিন্দু। তারপর অন্য দেশের সৈনিক।

মাথা লাড়লেন গমেজ। আমিও তার সাথে একমত। একাজটাই ভাল হবে।

সুফিয়া চিন্তা করতে লাগলেন। গমেজ এর কথা তিনি সাধারনত ফেলতে পারেন না। শত হলেও সে তার ছেলের শশুর। তার মেয়ে লিনিয়ার সাথে কয়েক বছর আগে তার ছেলের বিয়ে হয়েছে। এ নিয়ে অনেক জল ঘোলা করেছিল এই বিদ্রোহীরা। লিনিয়া জাতে খ্রিস্টান। তারা মুসলমান। তারপর গমেজের বুদ্ধিতেই উদ্ধার হল সে। এক জনসভা ডেকে দেশের মানুষকে বলে দিলেন লিনিয়া আহলে কিতাব। তাই তাকে বিয়ে করা জায়েজ। ব্যাস। তাৎক্ষনিক অনেক মুখ বন্ধ করা গেল। যাই হোক।

সুফিয়া রাজি হয়ে গেল। সেটাই ভাল হয়। আপনার বেশ কিছু সৈনিক আমার দলের সাথে মিলিয়ে দিন।

সুফিয়া এই লোক দুটোর কাছে অনেক ঋনী। তার বাবার হারানো এই রাজ্য পুণরুদ্ধারে বিশেষ করে গৌরমোহন খুব সাহায্য করেছিল। কিন্তু পাঁচ বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আরেক নতুন সমস্যা সৃষ্টি হল। কিছু আলেম দেশের মানুষকে বুঝিয়ে তার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছে। আর এই বিদ্রোহ সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে। পরিস্থিতি এতটাই বেসামাল যে তার রাজ্য পরিষদ ও সেনাবাহিনী কিছুই করতে পারছে না। অগত্যা এই গোপন সভা ডাকা হল।



২.

সূর্য এখন ঠিক মাথার উপর। থেমে থেমে বিদ্রোহীরা শ্লোগান দিচ্ছে। শহরের সমস্ত অলিগলি লোকারণ্য। রাজপ্রসাদের সাথে বাইরের জগতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা। খুব সহজেই তারা শহরের প্রধান ফটকের নিকট পৌছে গেল। কোথাও কোথাও সরকারী সৈন্য চোখে পড়লেও তাদেরকে নির্জীব দেখা গেল। অস্ত্র গুটিয়ে রাস্তার একপাশে আবার কোথাও কোথাও বাজারের দোকানপাটের পাশে বসে থাকতে দেখা গেল। কোথাও কোথাও বয়ান চলছে। লোকজন জমা হচ্ছে।

বিকেল নাগাদ শহরের প্রধান ফটকের নিকট বিদ্রোহীরা ধীরে ধীরে জমা হতে লাগল। ইব্রাহীম আসাদের সহকারী আব্দুল্লাহ মাসুদ একটা উঁচু জায়গায় ভাষন দিচ্ছেন। সরকার বিরোধী বিভিন্ন কথা বলে চলছেন।

”এই রানী সম্পূর্ণ ইসলামী বিরোধী। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইসলাম বিরোধী আইন চালু করেছেন। কোরআন সুন্নাহর উপর আঘাত হেনেছেন। অন্য ধর্মের লোকেরা নির্বিঘ্নে চলাফেলা করতে পারলেও আমরা মুসলমানরা ভীত সন্তস্ত্র। কারণে অকারণে আমাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। নিক্ষেপ করা হচ্ছে কারগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। তার মদদে কিছু লোক আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসূল সা. এর উপর বাজে কথা বলছে। কোরআনের আয়াত বিকৃত করছে।” কথাগুলো বলতে বলতে আব্দুল্লাহ আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েন।

লোকেরা থেমে থেমে তাকবীর ধ্বনি দিচ্ছে। পশ্চিম আকাশ আরো লাল হয়ে গেল। হঠাৎ করেই শহরের প্রধান ফটক খুলে গেল। লোকজন হুড়মুড় করে ঢুকতে লাগল। কোথাও কোন বাধা দেয়া হল না। বিদ্রোহীরা খুব সহজেই শহরে প্রবেশ করতে লাগল। রাজপ্রসাদের খুব কাছাকাছি চলে এল তারা।

মাগরিবের আযান হচ্ছে। লোকেরা কাতার বন্দী হতে লাগল। আব্দুল্লাহ মাসুদ ইমামতি করবেন। সে এক চমৎকার দৃশ্য। সারি সারি লোক কাতার বন্দী। এক সাথে রুকু একসাথে সিজদা। সত্যিই চমৎকার। অন্ধকার ঝাপিয়ে পড়ছে। শহরের বাঁতিগুলো আজ জ্বালানো হয়নি। বিদ্রোহীরা কোথাও কোথাও মশাল জ্বেলে অন্ধকার দূর করার চেষ্টা করছে। থেকে থেকে শিয়াল ডাকছে।

হঠাৎ শহর প্রাচীরে বাইরে ঘোড়ার খুড়ের আওয়াজ শোনা গেল। ক্রমেই তা বাড়তে লাগল। শহরের প্রধান ফটকের নিকট থেকে প্রচন্ড চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ আসতে লাগল। লোকজন হুড়োহুড়ি শুরু করল। ঠিক তখনই অন্ধকার ফুড়ে বড় বড় আগুনের গোলা এসে ভিতরে পড়তে লাগল। কে যেন চিৎকার করে বলল, আমাদের উপর আক্রমন হয়েছে, সবাই ধৈর্য্য ধারন করুন। আমাদের নেতা এখনই আমাদের মাঝে এসে পড়বেন। মনোবল হারাবেন না। সবাই যিকির করুন। যিকিরের এক চমৎকার গুঞ্জন মুহুর্তের মধ্যেই এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে ছড়িয়ে গেল। আগুনের গোলা আসা এখন বন্ধ। সবাই স্থির হয়ে বসে আছে। প্রধান ফটকের নিকট থেকেও কোন শোড়গোল আসছে না। এশার আযান হচ্ছে। যে যার মত করে নামাজ পড়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল। প্রচন্ড ভীড় ঠেলে কয়েকজন বিদ্রোহীর লাশ এসে পৌছল। তলোয়ারের জযম। এখনও রক্ত ঝরছে। আব্দুল্লাহ মাসুদ সবাইকে ধৈয্য ধারন করতে বললেন।

এক শুনশান নীরবতা। অন্ধকার রাত। দ্বিপ্রহর পেরিয়ে গেছে। সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন। কেউ কেউ নামাজে দাড়িয়ে গেছে। হঠাৎ অন্ধকার ফুড়ে আবার আগুনো গোলা এসে পড়ল। হই হুল্লোড় শুরু হয়ে গেল। এবার ঘোড়ার আওয়াজ আগের তুলনায় কয়েকগুন বেশি শোনা গেল। লোকজনের ভীড় আস্তে আস্তে বাড়তে লাগল। প্রধান ফটকের লোকগুলো দ্রুত ভিতরের দিকে আসতে লাগল। লাশ আসতে লাগল। লাশের পর লাশ। হঠাৎ করেই রাজপ্রসাদ থেকে একঝাক তীর এসে পড়ল বিদ্রোহীদের মাঝে। মুহুর্তের মধ্যে একদল লোক মাটিতে পড়ে ছটফট করতে লাগল। সাথীরা ধরাধরি করে লাশগুলো সরাতে লাগল। কয়েকজনের তীর খোলা হল। যন্ত্রনায় লোকগুলো চিৎকার করছে। ফটকের কাছ থেকে আরো কিছু লাশ আসল। আবার আগুনের গোলা। বিদ্রোহীরা এদিকে ওদিক দৌড়াতে লাগল। অনেকেই মসজিদে গিয়ে আশ্রয় নিতে শুরু করল। জায়গায় জায়গায় আগুন জ্বলছে। অনেকে বিদ্রোহীর গায়ে আগুন জ্বলছে। যে যার মত করে সাহায্য করার চেষ্টা করছে। লাশের সংখ্যা বাড়তেই লাগল। দৌড়াতে গিয়ে অনেকেই লাশের সাথে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে।

এক বিভিষীকাময় অবস্থা। চারদিকে থেকে বিদ্রোহীদের ঘিরে ফেলা হয়েছে। বিদ্রোহীরা শহরের পূর্বকোণে দৌড়াতে লাগল। ঐ দিকটায় ঘন জঙ্গল। এদিকটায় তেমন আক্রমন দেখা গেল না। অনেক বিদ্রোহী জঙ্গলে ঢুকে পড়ল। ঘন জঙ্গল। নিকষ অন্ধকার। এলোপাথারি দৌড়াতে লাগল তারা। আরো একদল এসে ঢুকে পড়ল জঙ্গলে।

ওদিকে প্রধান ফটকের নিকট হাজার হাজার বিদ্রোহী গ্রেফতার হল। ফজরের আযান হচেছ। প্রধান নেতাদের কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। সাধারন বিদ্রোহীদের মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। ফটকের বাহিরে লাশের স্তুপ। অনেকেই আহত হয়ে কাতরাচ্ছে। অনেকগুলো ময়লার গাড়ি এল। সৈন্যরা মৃত লাশগুলো গাড়িতে তুলছে। ঘোড়া গাধার চেচামেচিতে কান ঝালাপালা।



৩.

আলবানী গলা খাকড়ি দিল। সুফিয়া কিছুটা বিবস্ত্র। মদের নেশায় বুদ। চোখ মেলে চাইল সে।

কি খবর আলবানী।

খবর খুব ভাল। আব্দুল্লাহ মাসুদ সহ হাজার হাজার বিদ্রোহীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর লাশের স্তুপ দেখলে আপনি ভড়কে যাবেন। হাজার হাজার লাশ। রক্তের বন্যা। অনেক ছোট ছোট ছেলের লাশ ও আছে।

সুফিয়া খুশিতে হাসতে লাগল। দারুন। বাকীদের কি অবস্থা?

সাধারণ বিদ্রোহীদের মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

কেন? কিছুটা উত্তেজিত হয়ে গেল সুফিয়া।

সবাইকে গ্রেফতার করলে পুরো দেশে বিদ্রোহ লেগে যাবে। তাই দেশের জনগণকে শান্ত রাখার জন্য এটা দরকার ছিল। তবে, আরো একটা খবর আছে, তা হলো, ইব্রাহীম আসাদকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

কেন? চিৎকার করে উঠল সুফিয়া।

এটারও দরকার ছিল। মহামান্য রানী। কারণ উনার দেশে ও দেশের বাইরে বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। ওনাকে না ছেড়ে দিলে আপনার দেশের বাইরে থেকেও চাপ আসবে। আর তা ছাড়া উনি ছাড়া সবাই গ্রেফতার। দু একজন পালিয়ে গেছে। ওদেরকেও ধরার জন্য পরোয়ান জারী করে দেয়া হয়েছে।

সত্যিই চমৎকার। দারুন। মদের পেয়ালায় আরেক বার চুমুক দেয় সুফিয়া। বাইরে ঝলমলে রোদ্দুর উঠেছে। সে ব্যালকনিতে এসে দাড়ায়। দূরে লাশ বোঝাই ময়লার গাড়িগুলো যাচ্ছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা শহরের দেয়াল রাস্তার রক্ত ধুয়ে দিচ্ছে। সে চোখ বুঝে হাসতে থাকে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:২৬

আরজু পনি বলেছেন:

সুলতানী আমলের গন্ধ পেলাম যেন লেখায় ।

শুভেচ্ছা রইল ।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.