| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কাল বসন্ত, তারপরের দিন ভালোবাসা দিবস। এই দিবসগুলো বানায় কে? আর উদযাপন করাটা এত জরুরী কেন? তারে একবার হাতের কাছে পাওয়া দরকার। আরও মানুষজনও পাইছে, টাকা যেন তেজপাতা। চায়ের মধ্যে যেমন ২-৪টা বেশি দিলেও সমস্যা নাই, তেমন দুই-চারটা নোট বেশি ফেললেও সমস্যা নাই। ফুল, ফুলের মালা, মাথার বেনী, বাসন্তী শাড়ি, লাল শাড়ী, ম্যাচিং সাজ-গোজ, সব মিলিয়ে মাথা নষ্ট হওয়া কাজ কারবার।
ছাদে বসে বসে একটা স্টার লাইট ধরিয়ে এসব কথা ভেবে যাচ্ছে মারুফ। চিন্তার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে আগামী দুই দিনের খরচের টাকাটা কোথায় পাওয়া যাবে। অন্তত ১টা হাজার টাকা হলে মান সম্মান রক্ষা হয়।
সরকারী তিতুমীর কলেজে একাউন্টিং ফাইনাল ইয়ারে আছে ও। বেশি না আর মাস দু-এক পরেই বের হয়ে যাবে, ফাইনাল আগামী মাসে। পাশাপাশি একটা কোচিং এ পড়াচ্ছে আর দুটো টিউশনি আছে। জাতীয় বিশ্ব-বিদ্যালয়ের ছাত্রদের টিউশনির বাজারে দাম কম। তাও যে পেয়েছে এই বেশি। মাস শেষে যা আসে তাতে বাসা-ভাড়া, খাওয়া খরচ, হাত খরচে চলে যাচ্ছে। বাড়ি থেকে কিছু নেয়ার কোন যোগাড় নেই আর নেয়া লাগছেও না। বাবা নেই, মা আর ছোট ভাই থাকেন মানিকগঞ্জে । মা প্রাইমারী স্কুলের টিচার। ছোট ভাই এবার ক্লাস ফাইবে পড়ছে, সামনে সমাপনী দেবে। মায়ের টাকা দিয়েই গ্রামের খরচ হয়ে যায়। আর যদি পারে তবে মারুফ কিছু দিয়ে আসে। দুই ঈদে জামা-কাপড় আর কিছু টুকটাক জিনিস। তেমন সমস্যা হচ্ছে না ওর।
মারুফ এখানে থাকছে মিরপুর ১, শাহ আলীর মাজারের পেছনে।
একেবারে যে টাকা-পয়সা হাতে থাকে না, তা হচ্ছে না,খুব একটা বেগ পোহাতে হয় না। কিন্তু গত মাসে নীলার ফোনটা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন হাত খালি। ৭হাজার দিয়ে স্যামফোনির একটা সেট কিনে দিয়েছে নীলাকে।
নীলা হচ্ছে মারুফের উনি। সেও তিতুমীর কলেজেই আছে, তবে সেকেন্ড ইয়ার ফিন্যান্সে। ভার্সিটির ফাংসানে একটা ওয়েস্টার্ণ গানের সাথে নেচেছিল। নীলার কোমর দুলানো মারুফের হৃদয় দুলিয়ে দিয়েছে। পরে পরিচয়, পরিচয় থেকে প্রেম। নীলাদের সপরিবারে ঢাকায় বাস। ওরও বাবা নেই, মা আর বড় বোন নিয়ে মিরপুর ১১ নাম্বারে থাকছেন। বড় বোন চাকুরী করে। পাত্র দেখা হচ্ছে। বিয়ে হয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি। আর নীলা দুটো ছাত্র পড়ায় এই যা।
স্টার লাইটে শেষ টান দেয়ার আগেই নীলা কল দিল। শেষ টানটা দিয়ে সিগারেট ছুড়ে ফেলে নীলার কল ধরল মারুফ। কয়েকদিন থেকে নীলা সময় দিতে পারছে না। খুব ব্যাস্ত থাকছে। ভার্সিটিতে যা দেখা হয়, বাসায় গেলে কথা বলারও নাকি সুযোগ থাকে না।
-হ্যালো?
-আচ্ছা শোন, কাল আমি একটু আম্মুর সাথে নারায়ণগঞ্জ যাব।
-কখন যাবা?
-সকালেই যাব। আবার রাতে চলে আসব।
-ও। ঠিক আছে।
-মন খারাপ করলে?
-আরে না।
-কিছু করার নেই। আম্মু খুব ধরেছে। নানুর নাকি শরীর খারাপ। আম্মুর সাথে যাওয়ারও কেউ নেই।
-আরে পাগল, আমি কিছু বলেছি নাকি? যাও আম্মুর সাথে।
-লক্ষী ছেলে।
-হে হে হে।
-আর শোন আমার ফোন বন্ধ থাকতে পারে, নানুরা কেমন তুমিতো জানোই।
-হে হে।
-হাসবা না, সব কথায়। ভাবলাম একটূ তোমাকে নিয়ে সময় কাটাব। টি.এস.সি যাব, আমি শাড়িও কিনছি। আর এখন এই অবস্থা। আমার মেজাজ গরম হয়ে আছে আর তুমি হাসতেছ।
-আচ্ছা হাসি বন্ধ।
-১৪ তারিখ কিন্তু আমি থাকতেছি।
-অবশ্যই। আচ্ছা,শোন আমার কাছে কিন্তু খুব বেশি টাকা পয়সা নেই।
-জানি তুমি একটা ফকিন্নি। নতুন করে বলার কিছু নাই। এক কাজ কর কিডনী একটা বেঁচে দাও।
-আমিও ভাবতেছি। দুইটা কিডনী খামাখা বয়ে বেড়াতেও বিরক্ত লাগে। খোজ খবর নাও তো কেউ কিনবে কিনা। আমার ব্লাড গ্রুপ ও-। রেয়ার গ্রুপ। বেচতে পারলে ভাল ভাল দাম পাওয়া যাবে।
-ছেছড়া টাইপ কথা বার্তা বলা বন্ধ করতে পার না। তোমাকে কোনদিন টাকার কথা বলছি?
-না এমনিতেই বললাম।
-ঠিক আছে যাওয়া লাগবে না কোথাও, যাচ্ছি আমি। আমাকে কল দিবা না আর।
ফোন কেটে দিল নীলা। কিন্তু মারুফ খুশি। এর প্রথম কারণ হচ্ছে কাল নীলা থাকছে না, তাই কালকে ঝামেলা নেই। খরচ নেই। ভার্সিটি যাওয়া লাগছে না। আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে কাল কোচিং বন্ধ দিয়েছে। কোচিং এর মালিকের বিয়ে। সেই উপলক্ষে বন্ধ। মারুফ দাওয়াত পেয়েছে। কিন্তু গিফটের কথা চিন্তা করে যাচ্ছে না। তার কলিগ সুমন বলেছে গিফটের ব্যাবস্থা সেই করবে। এখন দেখা যাক কাল কি হয়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে একটা সিগারেট খাওয়া মারুফের বহু দিনের অভ্যাস। তাও যেন তেন অবস্থায় নয়। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে দিতে খেতে হয় এই সিগারেট। এতে নাকি অন্যরকমের পাশবিক প্রশান্তি বিদ্যমান। এই ব্যাপার নিয়ে তার রুমমেট রিফাতের সঙ্গে বার কয়েক দীর্ঘস্থায়ী বিতর্ক প্রতিযোগিতা হয়েছে। প্রতিবার হেরে গিয়ে রিফাত এখন আর এ ব্যাপারে মাথা ঘামানো বন্ধ করে দিয়েছে।
প্রকৃতির ডাকে সারা দেয়া শেষ হলে শাহ আলীর মাজারের সামনের মার্কেটের দিকে গেল। উদ্দ্যেশ্য বারেক ভাই এর দোকান এবং একটা ফ্রী নাস্তা। সেই সাথে ১৪ তারিখের টাকাটাও ব্যাবস্থা করা।
বারেক ভাই ভদ্রলোক সুচিন্তা হারবালের মালিক। ব্যাবসা ভালই আছে। তার কাস্টমারের অভাব নেই। মাঝে মাঝেই এখানে বসে মারুফ। তখন দেখতে পায়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর খুব ভীড় হয়। তবে বেশির ভাগ কাস্টমার থাকে ১৮-২৪ বছর বয়সী ছেলে আর ১৬-২০ বছর বয়সী মেয়ে। মারুফ একদিন জিজ্ঞেস করেছিল,
-এইসব বাচ্চা বাচ্চা ছেলেরা কেন আসে? এদের কি সমস্যা?
-এদের কোন সমস্যা নাই। শুধু অঙ্গটা একটু মোটা করতে চায়।
-কি!!!
-আর হ মিয়া।
-এইসব পোলাপাইন চিকন-মোটার কি বুঝে?
-আরে মিয়া ভিডিও দেইখা সব বোঝন যায় অখন। কোন দুনিয়াত থাকেন আপনে?
-তো মেয়েরা?
-বুকের সুন্দর বাড়াইতে।
মারুফ থ হয়ে যায় এসব কথা শুনে। আর বারেক ভাই হাসতে হাসতে পান মুখে দেয়। ব্যাক্তিগত ভাবে লোকটা অনেক ভাল। আর মারুফকে অনেক সাহায্য করে। সকালে ঢুকতেই মারুফ জিজ্ঞাসা করল,
-বারেক ভাই?
-আরে কি অবস্থা মিয়া? দেখা সাক্ষাত নাই অনেকদিন?
-হুম। সময়তো পাই না খুব একটা ভাই।
-নাস্তা তো হয় নাই?
-একথা শুনে মারুফ হালকা করে ঠোটটা বাম দিকে একটু উচু করে হাসি দেয়ার ভঙ্গী করে।
-মুমিন?.......এই মুমিন্না। একটা নাস্তা দিয়া যা।
একটা চেয়ার টেনে তার সামনে বসল মারুফ। কাকে যেন কল দিচ্ছেন বারেক ভাই। ধরেছে ভদ্রলোক। মারুফ শুধু একপাশের খবরই পাচ্ছে।
-কিরে খবর কি? বুঝলাম, এখন এই কামটা তো করা দরকার। আজকের দিনটা তো বুঝতে হইব নাকি? ধান্দা-পানি না বুঝলে কাম করতে আহছ কে?
মারুফ রুটি ছিড়ে তাতে ভাজি মাখিয়ে মুখে ভরেছে। চিবোতে চিবোতে জিজ্ঞেস করল,
-কি হইছে ভাই?
-আরে কইও না মিয়া। আজকে বসন্তের দিন, কইতোরেরা আজকে খোপ খোঁজে বেশি। আনিসরে কইছি খোপের সামনে খাড়াবি আর লিফলেট ডি বিলি করবি। খান*র পোলার আজকেই কাম পড়ছে।
-কাজ তো থাকতেও পারে তাই না?
-কিসের কাম? যাইয়া দেখ একটারে লইয়া খোপের ভিত্তে ঢুকছে বাই* চো*।
-ভাই খোপ কি বুঝলাম না?
আপনেও মজা লোন নাকি ভাই? এত সিধা মানুষ ঢাকায় কেমনে চলে? খোপ মানে লিটনের ফ্ল্যাট, ঘন্টা হিসেবে ভাড়া দেয়।
-আরে না ভাই। আপনে তো জানেন আমি কেমন?
-কেমন লাগে কওতো মিয়া? দুইটা হাজার টাকা দিছে ওরে। খালি এই কামের লাইগা। আজকে না বিলাইলে বনি হইব আর? আমগোতো মিয়া কাস্টমার ধরণের দিন এগুলাই।
-বুঝলাম ভাই। না আসলে আর কি করতে পারবেন?
নাস্তা শেষ করার পর হাত ধুয়ে পানি খেল। এরপর কাছে গিয়ে মারুফ বলল,
-ভাই কাজটা আমি করে দেই?
-তুমি করবা কে? ছাত্র মানুষ।
-আমার কিছু টাকার দরকার ছিল আসলে।
-টাকা লাগব লও। পরে দিয়া দিলা।
-সমস্যা নাই ভাই, আপনারও উপকার আর আমারও উপকার হয়। টাকাটা খুব দরকার।
-পারবা তুমি? সারাদিনের কাম।
-পারব ভাই। আর এমনেও আজকে কোন কাজ নাই।
দুপুর প্রায় এখন শেষ। ঘড়িতে চারটা বাজে। লিফলেটের ব্যাগটা পাশে রেখে একটা হোটেলে খেতে বসেছে মারুফ। সব মিলিয়ে ৩হাজার টাকা দিয়েছে বারেক ভাই। অন্য কাউকে এত টাকা দেয় না। কিন্তু মারুফকে দিয়েছে সম্পর্কের জোরে। মারুফের এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৫০টাকা। সে এসেছে আমিন বাজারে। এখানে একটা খোপ রয়েছে। এটা ছয়তলা দালান। পুরোটাই নাকি এই ব্যাবসার জন্য ভাড়া দেয়া হয়। নাম “দিবা-নিশি আবাসিক”, কিন্তু ভেতরে অন্য কাজ হয়। ভেতরটা অন্ধকার। আর একটা গেট দেয়া আছে। গেটে শক্ত পোক্ত দারোয়ান বসা। সে মিনিট দশেক পর পর একটা করে বিড়ি খায়। বিরক্তিকর গন্ধ। সে অবশ্য বারেক ভাইএর পরিচিত। এখানে আসতেই দারোয়ান জিজ্ঞেস করল তখনই জানতে পারল। এই ধরণের লোকজন নাকি এদিকে আসতে দেয় না সে, শুধু বারেক ভাইএর ব্যাপার আলাদা। বারেক ভাই লোকটা নাকি খুব ভাল। কথাটা অবশ্য মিথ্যা নয়। বারেক ভাই লোকটা আসলেও ভাল।
মুগ ডাল, তেলাপিয়া মাছ ভাজি, বেগুন বাজি, আর টোমেটোর ভর্তা। এই দিয়ে খাওয়া হচ্ছে মারুফের। হোটেলটা খোপের একবারে কাছেই, হেটে যেতে মিনিট পাচেক লাগে । খাবারও ভাল। তার চেয়ে মুল বিষয় সকল খাবারের খরচ মাত্র ১০০টাকা। মারুফ আর লোভ সামলাতে পারেনি।খেতে বসে গেছে। আর তাছাড়া লিফলেটও আর খুব বেশি নেই। আর ঘন্টা দুয়েক দিলে শেষ হয়ে যাবে। খাওয়ার পরে হোটেলের চেয়ারেই হেলান দিয়ে বসে আছে। এখন হোটেল একটু ফাঁকা। হোটেল বয়কে ডাক দিয়ে একটা পান আর সিগারেটের কথা বলেছে সে। আসতে একটু সময় লাগছে। কারণ সিগারেটের দোকানটা হচ্ছে আবাসিক হোটেলটার ঠিক সামনে। সেখানে অবশ্য চাইলে বিয়ারও পাওয়া যায়। মারুফ দেখেছে দু-একজন কে কিনতে। যাই হোক এখন আর বেশি সময় নষ্ট করা যাবে না। বেলা প্রায় ৫টা বেজে গেছে। সিগারেটটা খেয়ে চালু চালু যেতে হবে ওকে।
“আল মদিনা আবাসিক” এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে মারুফ। মারুফ দাড়িয়েছে ঠিক সিগারেটের দোকানটার সামনে। এদিক দিয়ে যাওয়ার সময় একটা করে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে সবার। এখন অবশ্য বেশীর ভাগ মানুষ বের হচ্ছে। অনেকেই লজ্জা পাচ্ছে, তাও নিচ্ছে। মারুফ দেখল সাধারণত মানুষ এগুলো ফেলে দেয়। নিতে চায় না, পড়তে চায় না। কিন্ত এখান থেকে যারা বের হচ্ছে তারা খুব একটা ফেলছে না।কেউ মানিব্যাগে ভরে রাখছে না হলে পকেটে ভরছে।
লিফলেট প্রায় শেষ। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। মারুফ এখন দাড়িয়েছে ঠিক গেট এর মুখে। এমন সময় ঠিক ওর বয়সী একটা ছেলে বের হল। হালকা দাড়ি আছে মুখে। একটা সবুজ রঙের পাঞ্জাবী পরা, সাথে জিন্স। ছেলেটা বের হতেই হাতে একটা লিফলেট ধরিয়ে দিল মারুফ। লিফলেট হাতে নিয়েই মারুফের দিকে তাকালো ছেলেটা। অদ্ভুত একটা ভঙ্গি করে মারুফকে পার করে এসে একটা সিগারেট ধরাল ছেলেটা। লিফলেট তখনো তার হাতেই। মারুফের লিফলেট দেয়া শেষ তাই সে চলে যাওয়ার আগে একটা সিগারেট ধরাবে ভাবল।
একটা স্টার লাইট নিয়ে ধরিয়ে এক পাশে দাড়াল মারুফ। কিছুক্ষণ পর সেই ছেলেটা কাছে এল মারুফের,
-ভাই?
-জ্বী ভাইয়া বলুন?
-আপনি কি এই কোম্পানীর লোক?
-জ্বী, কেন বলেনতো? (তেমন কিছু না ভেবেই উত্তর দিল মারুফ)
-(এবার একটু লজ্জার হাসি দিয়ে ) আমার একটু দরকার ছিল তাই।
-ও আচ্ছা আচ্ছা। সমস্যা নেই বলুন আমাকে। যতটূকু পারি সাহায্য করব।
-ভাই এসব মেডিসিনকি সত্যি কাজ করে?
-কাজ না করলে কেউ নিত বলেন? আমি নিজেই আজ ৪ বছর ধরে এটার সাথে আছি। এবং প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আসছে।
-কি বলেন? সত্যি নাকি?
-আপনার সাথে তো মিথ্যা বলে কোন লাভ নেই ভাই।
-কাজ করে তাহলে?
-অবশ্যই। আর তাছাড়া এটাতো খারাপ কিছু না। আপনার সর্দি-কাশি হয় না? এসবতো সেগুলোর মত একটা রোগ। এখন রোগ হইলে -রোগের চিকিৎসা করাবেন না?
-সেটাতো অবশ্যই।
-আপনাকে লিফলেট দিয়েছি?
-হ্যাঁ হ্যাঁ। দিয়েছেন।
-ঠিকানা-ফোন নাম্বার দেয়া আছে সেখানে। চলে আসবেন। আমাদের সার্ভিস অন্য সবার চেয়ে ভাল হয়। মাঝে মাঝে কিন্তু টিভিতেও এ্যাড যায় সুচিন্তা হারবালের।
-হ্যাঁ। সেটা দেখেছি। ফেসবুকে ট্রলও দেখেছি। হা হা।
-ভাই মানুষজনতো যেটা পায় সেটা নিয়েই ট্রল বানায়।
-আমি অবশ্যই আসব। সত্যি বলতেকি পার্টনার খুশি হচ্ছে না। হে হে। এবার তো রেগে গিয়েছে। অনেক হাঙ্গামা করে এসেছে আমার সাথে। মেজাজ বিগড়ে আছে। আসলে সত্যি বলতে কি স্যাটসফেকশন একটা বড় ফ্যাক্ট। আপনি মানেন আর না মানেন।
(এই লোকের সাথে মারুফের আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। তাই সে প্রসঙ্গ বদালালো।)
-অবশ্যই ভাই। আমি যদিও সবসময় থাকি না। অন্য কাজ থাকে। আমার নাম মারুফ। গিয়ে আমার কথা বলবেন ওরা অনার করবে।
ঠিক এমন সময় আবাসিকের গেট দিয়ে একটা মেয়ে বের হল শাড়ি পরা। চারিদিকে অন্ধকার হয়ে গেছে। সিগারেটের দোকানের আলোও কম। তাই মারুফ ঠিক মত মেয়েটাকে দেখতেও পেল না।
মেয়েটা সোজা হেটে এসে ছেলেটার সামনেই দাড়াল, আর মারুফও সিগারেটের বিল দেয়ার জন্য সিগারেটের দোকানের দিকে এগিয়ে গেল। । মারুফকে খেয়াল না করেই ছেলেটাকে বলল,
-চল, এখন যাওয়া যাক। দেরী হয়ে গেছে।
-হুম, চল চল।
ছেলেটা বিদায় নেয়ার জন্য যখন মারুফকে ডাক দিল, ঠিক তখনই মারুফ মেয়েটাকে দেখতে পেল। আর মেয়েটাও তখন মারুফকে দেখল।
মারুফও অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। কারণ আড়াই বছরের সম্পর্কে নীলার এমন চেহারা মারুফ কখনও দেখেনি।
কল এল মারুফের। বারেক ভাই কল দিয়েছে।
-ভাই? হুম ভাই। সবগুলা শেষ ভাই। আছে, টাকা আছে ভালই এখনও। হুম চলে আসছি ভাই, তবে ভাই, লিফলেট বিলি করতে এসে অন্যরকম একটা স্যাটিসফেকশন পেলাম। স্যাটিশফেকশনটাই কিন্তু একটা বড় ফ্যাক্ট। কি বলেন?..
ফোনে কথা বলতে বলতে তাদের দিকে একটা হাসি দিয়ে জায়গাটা ছেড়ে এল মারুফ। পেছনে কি হচ্ছে এখন আর জানার দরকার নেই। আপাতত সুমনের সাথে যোগাযোগ করা দরকার। হাতে ভাল টাকা আছে, কোচিং এর মালিকের বিয়েটা মিস করার কোন মানে হয় না।
©somewhere in net ltd.