| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কোন এক অদ্ভুদ কারণে নিজামউদ্দিন রাশিফলের জম্মের ভক্ত।
বেকার যুবক হওয়া সত্ত্বেও সে প্রতিদিন সকালে হকারের কাছে থেকে দুটো খবরের কাগজ কেনে। একটাতে চাকুরীর খোজ করে, আরেকটাতে রাশিফল দেখে। হকার বেচারাও খুব খুশি নিজামকে নিয়ে। কারণ এই দুটো খবরের কাগজ ইন্টারনেটের যুগে খুব একটা কেউ কেনে না।
কিন্তু নিজামউদ্দিন এখনও নোকিয়া ১১১০ যুগের মানুষ। তার ফেসবুক আইডি নাই। ইমেইল একটা খুলেছিল। আইডি পাসওয়ার্ড ভুলে গেছে। ডায়রীতে লেখা আছে। খুব বেশি কাজে লাগলে সেখান থেকে কাজ চালায়। বাকিগুলোর নাম সে জানে কি না, সন্দেহ।
“অক্টোবরের ৬ তারিখ জন্মগ্রহণ করায় আপনি তুলা রাশির জাতক। আজকের দিনটি ব্যাবসার জন্য উত্তম। যেকোন প্রকার লেনদেন শুভ। দুরের যাত্রা থেকে বিরত থাকুন। প্রেম-ভালোবাসার জন্য দিনটি অত্যাধিক উত্তম।”
নাহ! এই খবর দেখার পর, আজকে আর চাকুরীর খবর দেখতে পারবে না সে। মন এবং মেজাজ দুটোই খারাপ। তামান্নার সাথে দেখা করার জন্য আজকের দিনটা খুব উত্তম। কিন্তু মোহাম্মদপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ সন্দেহহীন ভাবেই দুরের রাস্তা। যেটা শুভ নয়।
রাশির দোটানায় আর বেশিক্ষণ না থেকে সে ফজলুর দোকানে এসে বসল। বেকারত্তের ধর্মের মধ্যে একটা বিশেষ দিক হচ্ছে, চা দোকানদার নির্দিষ্ট হতে হয়। বাকি রাখার একটা ব্যাপার থাকে। বেকারদের ভাষা হবে মধুর মত। সদ্য কাটা মৌমাছির চাকে এত মধু পাওয়া যাবে না, একজন বেকারের ভাষায় যতটা মিলবে। এরা চা দোকানদারকে যে পরিমাণ সম্মান প্রদর্শন করবে, নিজের বাপকেও ততটা করবে না।
-ফজলু মিয়া। চিনি কম দিয়া একটা লিকার চা দাও। আদা দিও না, পারলে একটু লেবু দাও। লেবু আছে?
-জ্বি ভাইজান। লেবু রাখছি। ভাইজানের চাকুরীর কি অবস্থা?
এই প্রশ্ন শোনার পর যেকোন মানুষের মাথায় রক্ত উঠে যাওয়ার কথা। ব্যাটা প্রথম কথায় চাকুরীর খবর কেন নিবি? তাও আবার যে বছর দুয়েক ধরে চাকুরী পায় না। এই প্রশ্নের সহজ উত্তর, বাকির খাতায় হিসাব বেড়ে পাহাড় সমান হচ্ছে। ফজলুর মত দোকানদার যেটার চাপ খুব সহজে নিতে পারছে না। এখন আপনার মনেও প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে চা দেয় কেন? যেলোকের কথায় মধু ঝরে, তাকে কি সরাসরি বলা যায়, “ভাই, বাকি বাড়ছে, আগের টাকা দেন, নাইলে চা কেন, গরম পানিও দিমু না।”
কিন্তু নিজামের মাথায় রক্ত উঠল না। বেকারদের মাথা থাকবে ঠান্ডা। এদের মাথার তাপমাত্রা থাকবে, -২৭৩ কেলভিন। এন্টারটিকার থেকেও তাদের মাথার তাপমাত্রা থাকবে শীতল। যেকোন রগচটা কথা এরা হাসিমুখে উত্তর দেবে।
-নাহ! চাকুরীর যোগ নেই? চিন্তা ভাবনায় আছি। তোমার কাছে অনেকগুলা টাকা ঋণী। তুমি না থাকলে বড় বিপদেই পড়তাম।
আগেই বলেছি। বেকারদের ভাষা হবে মধুর চেয়েও মধুর। চামে দিয়ে ফজলুকে বুঝ দেয়া হয়ে গেল।
-আরে ভাইজান। আপনেও যে কি কন? ৫০০/৬০০ টাকা পামু মোডে। আজকে আপনের নাই, কালকে আমার থাকব না। আজকে আমি আপনেরে দেখতেছি, কালকে কি আপনে আমারে ফালাইয়া দিবেন? আল্লাহ্ ভরশা। পাইয়া যাবেন। লন চা লন? নাস্তা খাইছেন? বদিরে দিয়া দুইটা পরোটা আনাই? চার লগে মজা পাইবেন।
বলেই সে নিজামের চেহারার দিকে না বোধক উত্তরের অপেক্ষায় থাকবে। কারণ উটকো ১০ টাকা খরচ তার করার ইচ্ছা নেই।
-আরে না। তুমি জানোনা আমি তেল খাই না। আর সিরাজ যেই তেল দিয়া পরোটা বানায়, তাতে জলহস্তী ফ্রাই করা যাইব। কোন দরকার নাই ওমন তেল চুবচুবা পরোটা খাওয়ার। বাদ দাও।
মন মত উত্তর পেয়ে ফজলুর মুখের হাসিটা আরও উজ্জ্বল হবে।
-আরে দুই একটা খাইলে কি আর এমন হব।
এই কথার পরে চোখ এদিক সেদিক গিয়ে বদির খোজ করবে। কিন্তু নিজাম ও ফজলু দুইজনই জানে বদি কামে দোকানের হেলপার হলেও স্বভাবে জমিদার। ১০টার আগে তার ঘুম ভাঙ্গে না আর ১০.৩০ এর আগে সে আসে না। এখন বাজে মোটে সাতটা তিরিশ।
-তুমিও মিয়া বেশি বেশি। ধর আজকের চায়ের টাকা রাখ।
-সিগারেট লইবেন না ভাইজান?
-নাহ! পকেটে টাকা নাই।
-আপনের কাছে টাকা চাইছি?
-দাও তাইলে দুইটা স্টার দাও।
ফজলুর দোকান থেকে বিদায় নিয়ে মেসে আসার পথে নিজাম দেখছে, বাড়ীওয়ালা নিচে দাঁড়িয়ে আছে কিনা। কোনমতে যদি প্যান্ট চেঞ্জ করে বের হওয়া যায়, তাহলে রাত পর্যন্ত নিরাপদ। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন নয়। বাড়ীওয়ালা নিচেই দাঁড়ানো। দারোয়ানের সাথে কি নিয়ে যেন চিৎকার করছে। রাশিফলে এই জিনিসটা কেন জানা যায় না, সেটা নিয়েও নিজামের মনে ক্ষুদ্র আক্ষেপ আছে।
-আসসলামুলাইকুম কাকা। শরীর খারাপ নাকি? চোখের নিচে কাল দাগ ?
-আরে কত রকম চিন্তায় থাকি। ৫ তালার লাইট নষ্ট, এই হারামজাদারে বলছি গতকালকে ঠিক করাতে। বান্দীর পোলা তামাশা করে আমার লগে। তার মনে নাই। কি কাম করে এমন? জমিদারের পুত। সিড়িও মোছে নাই আজকে। বান্দীর পুত।
রতন মোল্লা বছর ছয়েক হল এই বাসায় আছে। তার কাজ, সকাল-বিকাল দুই বেলা সিড়ি ঝাড়ু দেয়া, মোছা। আর যত খুচরা ফরমাইয়েশী কাজ আছে, সেগুলো করা। গতকাল রতনকে সে জিয়া উদ্দানে দেখেছে। মেয়েটাকে সে ঠিক চেনে না। তবে ভালই অন্তরঙ্গ মুহুর্ত তারা কাটিয়েছে সেটা নিজাম জানে। বেকারদের চোখ হয় শকুনের মত। এরা অনেক সময় অনেক কিছু দেখে ফেলে।
নিজাম তখনই স্বিদ্ধান্ত নেয় এই ব্যাপার দিয়েই রতনকে শায়েস্তা করা যাবে। ব্যাটা দিন কয়েক হল একটু তেড়ি-বেড়ি করছে।
(চলবে)
০৪ ঠা জুন, ২০১৮ রাত ১:৪৯
মুহাম্মদ মাহিন বলেছেন: ধন্যবাদ। দোয়া রাখবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ১:০৩
কাওসার চৌধুরী বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম। শুভ কামনা আপনার জন্য।