নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাঝে মাঝে চাই কেউ আমার কথা শুনুক। এইতো।

মুহাম্মদ মাহিন

মুহাম্মদ মাহিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

নীল দালানের মেয়ে

২২ শে মে, ২০১৮ দুপুর ১:১৫

নীল দালানের মেয়ে

পর্ব-১.

নিউইয়র্ক সেন্ট্রাল পার্কে বিকেল বেলা কাটানোটা ইদানীং অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। আমার কাজ হচ্ছে রাস্তার ধারের বেঞ্ছীগুলোতে বসে পড়া আর পাঁচ মিশালী মানুষ দেখা। এই পার্কেও রাস্তাগুলোর আলাদা নাম আছে। যেমন “97th, 5th avenue, 85th, 65th” এরকম আরও কিছু রাস্তা আছে।। পার্কের রাস্তা বললেও খুব একটা ছোট ভাবা যাবে না। অনায়াসে গাড়ি চালিয়ে নেয়া যাবে কিছু কিছু রাস্তায়। আর বাঙ্গালী চালক হলে দুটো গাড়ি পাশাপাশি চালানো যাবে। সবচেয়ে যেটা ভাল লাগে, অনেক মানুষ হলেও জায়গাটা মোটেও ইসলামপুরের মোড় মনে হয়নি কখনও। বরং এখানকার সভ্য মানুষগুলো একটু বেশিই ভাল। যদিও অসভ্যতার শিখরে থেকে সভ্যতার রূপ দেখানো আমার কাছে হিপোক্রেসি ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না।
আমি বসি 85th এর পাশে। এখানে একটা বিশাল হ্রদ আছে। যেটার নাম জ্যাকলিন কেনেডি ওয়াসিস রিসিভয়েখ। সুবিশাল নয়। পানিগুলো নীল থাকে, আর পরিষ্কার থাকে। হ্রদের দিকে তাকিয়ে বিকেল পার করাটা খুব একটা খারাপ হয় না।
পাঁচ মিশালী রঙের মানুষ এখানে দেখা যায়। গাঁয়ের রং দুধ সাদা থেকে কাজল কাল পর্যন্ত পাওয়া যাবে। কোন রকম খোজাখুজির কষ্ট ছাড়াই। বিধাতার কি অদ্ভুত সৃষ্টি। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) এর যেকোন একজন কাল ছিলেন বা কাল জ্বীনের বাহক ছিলেন । নাহলে জেনেটিক্যাল দিক থেকে এই সাদা- কাল ব্যাপারটা আশা করা খুব কষ্টকর। এদের গাঁয়ের রঙের মত, এদের ভাষার রংও অনেক ভিন্নতায় ভর্তি থাকে। একই ভাষা বিভিন্ন উচ্চারণে শোনা যেতে পারে এখানে। আবার বিভিন্ন ভাষা একই উচ্চারণে শোনা যেতে পারে। বাঙ্গালীও যে খুব কম আছে তা বলা যাবে না। অন্য স্টেটগুলোর তুলনায় নিউইয়র্কে বাঙ্গালী বেশি। বাংলাদেশি বললে খুব বেশি সার্বজনীন করা হয়ে যাবে না।
সেন্ট্রাল পার্কটা বড় বড় দালান-কোঠার মাঝে গড়ে ওঠা একটা পার্ক। উপর থেকে দেখলে মনে হবে শহরের মাঝে একটা আয়তকার সবুজ কার্পেট। যেটার মাঝে মাঝে কিছু নীল রং আছে। এখানের মানুষ ভালই ব্যাস্ত। তারপরেও এরা জীবনকে সময় সুযোগ পেলেই উপভোগ করে। ইশ্বর নিয়ে, পরিবার নিয়ে, সমাজ নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে যে সকল জটিলতা হয় এরা বেশির ভাগ সময় তার উর্ধে থাকে। জীবন উপভোগের দিক থেকে এরা আমাদের চেয়ে এগিয়ে। অর্থনীতি এখানে খুব বড় একটা প্রভাবক। আমাদের সমাজে একটা অদেখা শ্রেণীবিন্যাস থাকে। যেমন মধ্যবিত্তের ভেতরে উচ্চবিত্তের প্রাচুর্যতার ভাব, উচ্চবিত্তের ভেতরে নিম্নবিত্তের আচরণ, আর নিম্নবিত্তের ভেতরে উচ্চবিত্তের উদারতা। এই জায়গায় আমি সবসময় একটা ঘটনা বলি। মনে আছে মাধ্যমিকের সময় আমি বাংলা কাইয়ুম স্যারের কাছে পড়তাম। ভদ্রলোক তার ঘরে ক্লাসের আগে ছাত্র-ছাত্রীদের ঢুকতে দিতেন না। গার্জিয়েন বসতে দিতেন না। তার বিল্ডিঙের মালিক আরও অদ্ভুত ভাল ছিলেন। তিনি বিল্ডিঙের নিচে কাউকে বসতেও দিতেন না। আমার স্কুল ছুটি হয়ে গেলে আমি হেটে হেটে স্যার এর বাসায় যেতাম। তারপরেও ঘন্টাখানেক সময় হাতে থাকত। এই ঘন্টাখানেক কোনদিন মসজিদে, কোনদিন রাস্তায় হেটে কাটাতে হত। একদিন ক্ষুদার্ত পেট, পকেটে টাকাও আছে। কিন্তু আসে পাসে সেরকম হোটেল চিনি না। সে বিল্ডিঙের দারোয়ান চাচা আমাকে তার সাথে খেতে দিলেন। আমার চেহারা দেখে তার বুঝতে বাকি থাকল না, আমার খুব ক্ষুদা পেয়েছে। খাবার একজনেরই দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে তিনি আমাকে খাওয়ালেন। খুব ছোট একটা ঘটনা। আমার জীবনে এমন ছোট ছোট সাইজের কিন্তু বিশাল ওজনের কিছু ভালোবাসা আমি পেয়েছি। সেই সাথে কিছু শিক্ষাও পেয়েছি। এরপর থেকে আর বাহিরের রূপ দেখে মানুষকে বিশ্বাস করি না। ভেতরটা দেখি। যোগ্যতা থাকলে বিশ্বাস করি, না থাকলে করি না। মাপতে হয়, মানুষ মেপে দেখতে হয়। কারণ পৃথিবীর ভয়ংকর তম প্রানীটাই “আশরাফুল মাখলুকাত” এর মত দেখতে। মেপে না দেখলে বিপদ। যাইহোক, এই অদ্ভুত ধরণের এক শ্রেনীবিন্যাসের কারণে সত্যিকার অর্থে আমরা জীবনকে উপভোগ করতে পারি না। মাঝে মাঝে দামি জিনিস কেনা হয় লোক দেখানোর জন্য, রিক্সাওালার সাথে কথা কাটাকাটি হচ্ছে দুই টাকা বাঁচানোর জন্য। এসবের মাঝে জীবন উপভোগ হচ্ছে না। কারণ দিন শেষে এগুলো আত্মার শান্তি দেয় না। এদের মাঝে এই ব্যাপারটা দেখেছি। এরা আত্মাকে শান্তি দেয়।
লেকের পাড়ের বেঞ্চিটাতে বসে বসে দূরে একটা যুগলের কিস করা দেখছিলাম। কি সুন্দর সাবলীল ভঙ্গিতে এরা একজন আরেক জনের ঠোটে ঠোট মিলিয়ে ফেলে। কোন রকম লজ্জা বা আড়ষ্টতা কাজ করে না। খুব সম্ভবত বিদায় চুম্বন বা গুড বাই কিস। তাই সময়টা একটু দীর্ঘায়িত হল। এদের ভালোবাসার প্রকাশটা ভালই খোলামেলা। এদের ভাষায় এটাই সম্মান, এটাই ভালোবাসা। আমি একবার মিরপুর ১৪ থেকে ১০ এ যাবার রাস্তার পাসে দাঁড়িয়ে আছি। চা খাচ্ছিলাম। আমার সামনে ব্যাস্ত রাস্তা, সময় রাত ৮টার মত হবে। দেখি রিক্সায় একটা যুগল আসছে। হুড ওঠানো, ঠোটে ঠোট, ছেলেটার ডান হাত ব্যাস্ত, মেয়েটার সিল্কের ওড়না দিয়ে ছেলেটার হাতের কর্ম ঢাকবার বৃথা চেষ্টা। হুট করে একটা বাড়ি খেলাম।
বাবা-মার পছন্দ হবার মত ছেলের সাথে প্রেম করতে গিয়ে যে কত মেয়ে তার বুকের কাপড় খুলল তার হিসাব নাই। হিসাব কষে কোন লাভও নেই। এখন প্রেম মানেই শরীর। । যুগে যুগে সংগা বদলায়। এখনও বদলে গেছে। আমিও একসময় ভাবতাম এসবই বুঝি প্রেম, কিংবা ভালোবাসা। পরে বুঝলাম নাহ, প্রেমের সাথে শরীরের যোগাযোগ খুব কিঞ্চিৎ। হিসেবটা শুন্যের কাতারে ফেলা যায়।
সুর্য ডুবে যাবে। লেকের পাড়ে বসে দালানগুলোর মাঝ দিয়ে সুর্য ডোবাটা দেখব। পার্কটা আগের চেয়ে আরেকটূ বেশি হালকা হয়ে গেল। অন্ধকার জেঁকে বসা শুরু করেছে। এক কাপ চা হলে খুব ভাল হত। আবছা আবছা আলোতে দেখছি মাহিন হেটে আসছে হাতে দুটো কাপ, চা হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। শুধু মাঝে মাঝে আমাকে চমকে দেয়ার জন্য কফি নিয়ে আসে। এটা ওর একটা খেলা। ওর নামটার একটা বিশেষত্ব হল চট করে ধরা যায় না, এটা ছেলের নাম নাকি মেয়ের নাম। ওর কাজগুলোও এরকম। কোনটা কেন করল, চট করে ধরা যাবে না। তবে সবকিছুর মাঝে সে একটা আনন্দ পায়, আনন্দটা আত্মার শান্তি আনে।
(চলবে)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ১২:৩০

কাইকর বলেছেন: বাহ....সুন্দর লিখেছেন। পরবর্তী পর্ব চাই। খুব ভালো লিখেছেন। সময় পেলে আমার ব্লগে ঘুরে আসবেন। আমিও ছোটখাটো গল্পকার।

২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ১:১০

মুহাম্মদ মাহিন বলেছেন: ঘুরে এসেছি। আপনিও ভাল লেখেন। ভয়ঙ্কর অপ্সরা। ভাল লেগেছে গল্পটা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.