নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাঝে মাঝে চাই কেউ আমার কথা শুনুক। এইতো।

মুহাম্মদ মাহিন

মুহাম্মদ মাহিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘুষখোরের মেয়ে।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ২:২০

পর্ব-২

এ বাসার সোফাগুলো বেশি নরম । বসার সাথে সাথেই এক হাত ডেবে গেল। ফ্যানটাও বেশ খানিকটা দূরে। গলায় টাই এর নড ঢিলে করে দিয়েছি, তাও এত গরম কেন লাগছে বুঝছি না। এতই যখন ঘুষ খাও তবে একটা এ.সি লাগালেই পারতে। এমনি তো ঘরের আলগা ফুটানির জিনিস পত্রের অভাব নেই।
এটা মেয়ের নিজের ঘর। সাধারণত মেয়েদের ঘর কখনও এমন হয় না। পুরো ঘর ঝুড়ে বিশাল আট তাকের একটা বুক শেলফ। কম করে হলেও হাজার দুই বই আছে সেখানে। শেলফটার একপাশে একটা জানালা। জানালার সামনে একটা পড়ার টেবিল।
একা ঘরে বসে থাকতে ভাল লাগছে না আবার চক্ষু লজ্জার কারণে উঠেও দেখতে পারছি না। এরা এমন কেন করছে বুঝতে পারছি না। মনে হয় যেন আম্মার কোন বান্ধবীর বাসায় এসেছে। আমি একা একটা রুমে বসিয়ে রেখে গেল। আক্কেল একেকজনের………...। আরে এসেছেন, মেয়ে আসবে হাতে চা নিয়ে, রান্নার প্রশংসা করবেন, চুল দেখবেন, হাটাহাটি দেখবেন, কথা বার্তা বলবেন, চলে যাবেন। এত প্রেম কেন বুঝলাম না। ড্রয়িং রুম থেকে আমাকে এনে একটা আলাদা ঘরে ঢুকিয়ে দিল। ভাল হল, এ ঘরটায় ফ্যানের নিচে বসা যাচ্ছে একটু ফ্যানের বাতাস খাওয়া যাচ্ছে।
এদিক ওদিক তাকিয়ে উঠে শেলফের সামনে গেলাম। বই গুলো দেখছি। উপরের দুই তাকে নাম করা ইংরেজি লেখকদের বই আছে নিচের তাক গুলো সব বাংলা বইয়ে ঠাসা। মেয়েটা কি নিয়ে পড়ছে মার কাছ থেকে শুনে নিলে ভাল হত। আসলে শুরু থেকেই এ মেয়ের ব্যাপারে আমার খুব একটা আগ্রহ কাজ করেনি। তাই নিজ থেকে আগ বাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞেস করিনি। সাহিত্যের ছাত্রী বলেই মনে হচ্ছে।
টেবিলের পাশে ছবি আকার ক্যানভাস আছে। নিচে দেয়ালের সাথে লেগে থাকা কিছু ছবিও দেখলাম। একটা ছবিতে একটা ছেলের অর্ধেক মুখের ছবি। আর বাকিটা ধোয়া। পুরো ছবিটা শুধু কালো রঙের। সাদা কালো বলা যাবে না। কারণ ছবিটা আকা হয়েছে একটা হলুদ ক্যানভাসের উপর। এ মেয়েটা আমার ঠিক বিপরীত। আমি একটা সরলরেখাও স্কেল ছাড়া আকতে পারি না।
“ওটা আপুর আঁকা।”
“আপনি?”
“যার সাথে আপনার বিয়ে হবার কথা বার্তা চলছে আমি তার ছোট বোন।”
“আচ্ছা। তাহলে বড়জন কোথায়?”
দরজার ফাক দিয়ে আমাকে দেখা চোখজোড়া এরই ছিল সেটা বুঝতে পারলাম। চোখের নিচে তিল আছে। তিল জিনিসটা আমার খুব পছন্দের।
“আপা বাসায় নেই।”
“পালিয়ে গেছে নাকি?”(বলে একটু হাসলাম)
“বলা যায় একরকম।”(সেও হাসতে হাসতে বলল)
“কি বল? কার সাথে? আমার পরিবারের কেউ জানে?”
“আরে কারও সাথে না। আসলে আপার ভয় হচ্ছে। তাই আপনার সামনে আসতে চাচ্ছে না।”
“ও আচ্ছা। এই ব্যাপার। ভয় কেন?”
“এর আগেও দুজন দেখতে এসেছিল। আপা দেখতে একটু কালোতো। মানা করে দিয়ে গেছে। আব্বু-আম্মু মন খারাপ করেছিল। আপনিই বলেনতো, আপার গায়ের রঙ্গকি আপার নিজের দেয়া? তাহলে?”
“গায়ের রঙ দেখে মানুষকে মুল্যায়ন করা ঠিক না। অপদার্থের দল সব।”
“আপনি কি এমন করবেন? মানে পরে আবার যদি মানা করে দেন? এইজন্য...”
ভেতরে খঠ করে উঠল। আমার অনেকদিনের সখ ফর্সা তুলতুলে মেয়ে বিয়ে করব। ঠোট থাকবে গোলাপী। গালে তিল থাকবে। অফিস সেরে এসে সে তিলে প্রেমের চুমু খাব। আপাতত পানির গ্লাসে চুমু খেলে ভাল হয়।
“কি যে বল? আমার জন্য এক গ্লাস পানি এনে দেবে?”
“আপনি বসুন আমি এনে দিচ্ছি।”
মেয়েটা বেরিয়ে গেল। তখন চোখে পড়ল আরেকটি ছবি আঁকা। চুলগুলো হালকা লাল। একেবারে হালকা। গায়ের রঙ দুধে আলতা ফর্সা। গালে তিল আছে, ঠোটের ঠিক কাছেই। মুখ থেকে জিহবা বের করে তিল ছোয়া যাবে। চোখগুলো শক্তিশালী, মানে চোখের ভেতর গাড়ত্ব আছে, ব্যাক্তিত্ব আছে। নাকটা চিকন। এই ছবিটাও মনে হয় সেই একেছে। কালো বলে মনের ভেতর ক্ষোব আছে বোধহয়, তাই ফর্সা মেয়ে একেছে। সব কালো মেয়েই বোধহয় চায় ফর্সা হতে। কিন্তু মেয়েটা অনেক গুনী আর জ্ঞানী। বুঝতে পারলাম এ মেয়ের যোগ্যতার কাছে আমার কোন যোগ্যতাই নেই। সারা জীবন গাধার মত পড়ে একটা চাকরী যুগিয়েছি এই পর্যন্ত। আর মেয়েটা অনেক পড়ুয়া। ভাল ছবিও আঁকে। এর নিশ্চয়ই আরও ভাল গুণ থাকবে। সেখানে আমি একটা বেগুন। তাও গোলটা। ভাজি করা ছাড়া অন্য কোন কাজে আসে না। লম্বা বেগুন হলেও একটা কথা ছিল। ভাজি ছাড়াও কিছু কাজে আসত।
সব ছাপিয়ে মনের ভেতর হাহাকারের একটা সূর বেজে উঠছিল,”কালো মেয়ে বিয়ে করব?” সে সুরকে অবজ্ঞা করার মহান স্বীদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম। ততক্ষণে একজন হাতে একটা ট্রে নিয়ে ঢুকল। তার হাতে কি, কি নিয়ে এসেছে, কেন এসেছে, কিছুই মাথায় আসেনি, শুধু ঘুর পাক খাচ্ছিল, "আমি সারাটা জীবন শুধু এর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম"।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.