নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কম্পিউটিঙে জড়ানো জীবন

আবদুর রব মুহসিন

মুহসিন, দি ডিজাইনার

বৈচিত্রময় এ পৃথিবীতে সত্য সুন্দর এবং সভ্যতার প্রতীক হয়ে সকলকে কাজ করতে হবে । ----মুহসিন

মুহসিন, দি ডিজাইনার › বিস্তারিত পোস্টঃ

সত্যের সন্ধানী: আল-ফারাবী

১০ ই জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৪:৩০



আল-ফারাবী একজন খ্যাতনামা দার্শনিক ও বহুভাষাবিদ পন্ডিত। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে তাঁর প্রভাব সুদূর প্রসারী। তিনি ৮৭০ খ্রিস্টাব্দে তুর্কীস্তানের ফারাব এর নিকটে তুর্কী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। ফারাব শহরের বাসিন্দা বলে তাঁর ডাকনাম আল-ফারাবী হয়েছে। তাঁর পুরো নাম আবু নসর মুহাম্মদ বিন তারখান ইবনে উযলাগ আল-ফারাবী। লাটিন ভাষায় আল-ফারাবিয়াস।



ফারাবীর পিতা তৎকালীন খোরাসানের একজন সৈনিক ছিলেন। দার্শনিক আল-ফারাবী খলিফা মোকতাদেরের খেলাফতের সময়(৯০৮-৯৩২খ্রি) ফারাব শহর থেকে বাগদাদে আসেন। বাগদাদে আসার সময় তিনি আরবি ভাষা জানতেন না, শুধু জানতেন তাঁর মাতৃভাষা। এখানে তিনি আরবি ভাষা ও সাহিত্য অধ্যয়ণ করেন। এরপর তিনি বাগদাদের অ্যারিস্টটল শিক্ষাকেন্দ্রে শিক্ষা লাভ করেন। এখানে দর্শন শিক্ষার পাশাপাশি আল-ফারাবী কুরআন, হাদীস, ফেকাহ, রাজনৈতকি দর্শন, অধিবিদ্যা, মনোদর্শন, পদার্থবিদ্যা, জোতির্বিদ্যাও সঙ্গীত বিদ্যায় পারদর্শিতা অর্জন করেন। জ্ঞান অর্জনের ব্রাপারে আল-ফারাবী ছিলেন উদার। শিয়া, সুন্নী, মুুসলিম, খ্রিস্টান সবার কাছেই তিনি শিক্ষা লাভ করেন।



আল-ফারাবী মনে করতেন যে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা শুরু হয়েছে প্রথমে ইরাকের কালদিয়ান সম্প্রদায়ের মধ্যে। পরে তা বিবর্তিত হয়েছে ক্রমাম্বয়ে মিশর, গ্রিস, সিরিয়া এবং আরব দেশে। সম্ভবত জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যেই এসব ঐতিহ্যবাহী স্থান তিনি সফর করেন। গ্রীক দর্শনের দুই প্রধান ব্যক্তিত্ব প্লেটো ও অ্যারিস্টটল আল-ফারাবীকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেন। তিনি এই দুই মতবাদের সামাঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা করেন। তাঁর পদ্ধতিতে অ্যারিস্টটলবাদ, প্লেটোবাদ ও সূফীবাদের সমস্বয় ঘটেছে; গ্রীক দর্শনের সাথে মুসলিম দর্শনের সামঞ্জস্য রক্ষা পেয়েছে। অ্যারিস্টটল, টলেসী প্রমুখ গ্রীক মনীষীদের উপর তিনি ভাষ্য লেখেন। তাঁদের বহু গ্রন্ত গ্রীক ভাষা হতে আরবি ভাষায় অনুবাদ করেন।



তাঁর রচিত গ্রন্থে পীথাগোরাস, হিরোক্লিটাস, সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, থিও ফ্রিসটাস, অ্যারিস্টিপাস, ডাইওজেনিস, ইপিকিউরিয়ান, স্টোয়িক প্রমুখ দার্শনিকের উদ্ধতি ও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। আল-ফারাবী একজন সত্যের সন্ধানী দার্শনিক ছিলেন। তিনি অতি সাবধানে তাঁর দর্শনগ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর দর্শনে ধর্মতাত্ত্বিক মতবাদের প্রকাশ নেই। তিনি এসব বিষয়ের উর্ধ্বে থেকে সার্থক চিন্তাধারার ভিত্তিতে দর্শনগ্রন্থ রচনার চেষ্টা করেছেন। আল-ফারাবীর একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম উত্তম রাষ্ট্রের অধিবাসীদের ভ্রান্তি সম্পর্কিত গ্রন্থ। প্লেটোর মতো আল-ফারাবীও একটি আদর্শ রাষ্ট্রের কল্পনা করেছেলেন। তাঁর মতে, আল্লাহ সব কিছুর স্রষ্টা এবং সকল সৃষ্টি আল্লাহরই প্রকাশ। আবার, একই সঙ্গে বিশ্বকেও তিনি শ্বাশত জ্ঞান করেছেন। এর অর্থ ব‘ জগতের প্রাধান্য মেনে নেয়া। চরম সত্য বা স্রষ্টার ব্যাখ্যায় তিনি প্লেটোর চিন্তা গ্রহণ করেছেন। অন্যদিকে মনোজগতের বিশেস্নষণে অ্যারিস্টটলের মতামতই তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়েছে। বিজ্ঞান ও ধর্ম এই দুইয়ের টানাপোড়নে আল-ফারাবী বরাবরই মধ্যপন্থার আশ্রয় নিয়েছেন। এ ধরনের আপসবাদিতার প্রকাশ তাঁর রাজনৈতিক চিন্তার মধ্যেও লক্ষ্য করা যায়।



আল-ফারাবী জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় সার্থকভাবে বিচরণ করেছেন। অধিবিদ্যা, মনোবিদ্যা, যুক্তিবিদ্যা, রাষ্ট্রদর্শন ও সমাজ দর্শনে তাঁর অবদান অসামান্য। কাব্য ও সঙ্গীত চর্চায় তিনি খ্যাতিমান পুরুষ ছিলেন। সঙ্গীতের উপর তিনি গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং নিজেও সঙ্গীত চর্চা করতেন।



আল-ফারাবী প্রায় ৭০টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি বাগদাদ ও দামেস্ক থেকে তাঁর সব গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর রচনা এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাবলীর মধ্যে রয়েছে দর্শনের সংক্ষিপ্ত পরিচিত সমম্বিত রিসালাতু ফুসুসিল হিকাম এবং সমাজতাত্ত্বিক গুরুত্বপূর্ণ রিসালাতুনফী মাবাদী-ই আরা-ই- আহলিল মাদীনাতিল ফাযিলাহ। তাঁর বিজ্ঞানের মৌলিক নীতির শ্রেণীবিন্যাস সম্পর্কিত গ্রন্থ কিতাব ইহসাইল উলুমও অমরতা লাভ করেছে। প্রাচ্যের সঙ্গী শাস্ত্রের উপর অমূল্য গ্রন্থ কিতাবুল মুসীকিল কবীর, ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ফরাসী ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আল-ফারাবীর সময়ে সূফীতত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাঁর যুগে ইলমুল কালাম বা যুক্তিমূলক ধর্মতত্ত্বের বিকাশ ঘটেছিল। এসময়েই কাদারিয়া, জাবারিয়া, মুতাযিলা ও আশারীয়া ধর্মতাত্ত্বিক সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা লঅভ করেছিল। আশারীয়া ধর্মতাত্ত্বিক সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম আবুল হাসান আশারী ও মাতুরিদী আল-ফারাবীর সমসাময়িক ছিলেন।



দশম শতকের পর মুসলিম দার্শনিকদের উপর আল-ফারাবীর চিন্তাধারার প্রভাব প্রতিফলিত হয়। উখওয়ান সাফা, আল মাসউদী, মিসকাওয়াইহা, ও আবুল হাসান মুহম্মদ আল-আমিরী তাঁর দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হন। ইবনে সীনা ও ইবনে রুশদ তাঁর চিন্তাধারার সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। আল-ফারাবীর রাজনৈতিক ধারণাবলী বহু পরে ১৩শ শতক হতে স্থায়ী সফলতা লাভ করে। আল-ফারাবী ৯৫০ খ্রিস্টাব্দে আনুমানিক ৮০ বছর বয়সে দামেস্কে ইন্তেকাল করেন। রাজকীয় মর্যাদায় তাঁকে দামেস্কে বার-আল-সাগীর এলাকায় দাফন করা হয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.