নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ধকারেও হাতড়ে বেড়াই নিজের ছায়া

মুখচোরা কথক

কিছুই তো জানি না। কবে যে নিজেকে চিনতে পারব........।

মুখচোরা কথক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বড় গল্পঃ রক্ত-মাংশের গল্প

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৩৭

আজ রঘুর মন খুব ভাল।সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আজ যা কামিয়েছে তা দিয়ে অনায়েসে সামনের দুই দিন কাটাতে পারবে সে।অর্ধেক শেষ হওয়া সিগারেটটা টানতে,টানতে সে ভাবে পুরোনো দিনের কথা,যখন সে নিজের পায়ে দাড়াতে পারত,যখন তার নিজের বাড়ি ছিল,পরিবার ছিল।আজ তার কিছুই নেই।এমন কি নেই স্বাভাবিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও।তার এক পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন,আরেক পা থেকেও নেই।সেই সারহীন ল্যাংচানো পা নিয়ে কাঠের ছোট্ট তিন চাকার গাড়িতে বসে থাকে সে,কখনো ছবির হাট,টিএসসি কখনো বাংলা একাডেমী,কার্জন হল,শহীদ মিনার।অবশ্য শুক্রবার গুলোতে চলে যায় কোন মসজিদের সামনে।

এই কাঠের গাড়িটাই এখন তার সংসার,ব্যাবসাস্থল আর মূলধন হচ্ছে ব্যাধি।সিগারেটটা শেষ করে কাথামুড়ি দিয়ে শুয়ে পরে সে।রাতে সে ঘুমায় কার্জন হলের সামনের রাস্তায়।তার মত আরো অনেকেই ঘুমায় এখানে।সবাই মোটামুটি তার পরিচিত।বেশীরভাগ তার মত ভিক্ষা করে,কেও কেও রাস্তার ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র কুড়ায়,দুইটি মেয়েও অবশ্য আছে,তাদের দেখে ঘেন্না লাগে রঘুর।একটু রাত হলে সেজেগুজে রাস্তায় বসে থাকে মাগীরা।মাঝে মাঝে রিকশা এসে থামে,দরদাম ঠিক করে নিয়ে যায় তাদের,কখনো,কখনো মাইক্রোও থামতে দেখেছে সে।"ছেনাল মাগী,কাম কইরা খাইতে পারস না?লজ্জা-শরম নাই?"মনে মনে ওদের গাল দেয় সে।সে নিজে অবশ্য ভিক্ষা করে,কাজ করার সাধ্য নেই বলে তাই।তাছাড়া একসময় দুহাতে কত টাকা কামিয়েছে সে,কতটাকা উড়িয়েছে,শালার পা দুইডা খালি নাই বইলা,নইলে এই দুনিয়ায় টাকা ক্যামনে কামাইতে হয় তা রঘু জানে।কম তো দেখেনি রঘু,টাকা আর মেয়েছেলে,ধরতে জানলে এ তো কতই পাওয়া যায়।
এখন শারীরিক ভাবে অক্ষম একজন মানুষ সে,অন্যদের দয়ার উপর নির্ভরশীল।কিন্তু একসময় তার দয়া পেতেই অনেকে উন্মুখ থাকত।হঠ্যাত হাসি পায় তার,একটা সামান্য ছুরি অথবা খেলনা পিস্তল কিভাবে একজন সক্ষম মানুষকে মুহূর্তে অসহায় বানিয়ে দেয়।কত শক্তিমান মানুষকে সে নতজানু হতে দেখেছে,নিজহাতে কত মানুষের শরীরে ছুরি বসিয়ে দিয়েছে,কত মানুষকে করেছে সর্বস্বান্ত,মেয়েদের গা থেকে খুলে নিয়েছে গয়না।আহ,কি দিন যে ছিল।
বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশনে আশ্রয় নিয়েছিল সে।তারপর,টোকাই থেকে ছিচকে চোর,তা থেকে ছিনতাইকারী।একদিন ছিনতাই করতে গিয়েই পুলিশের তাড়া খেয়ে দৌরে পালানোর সময় চলন্ত ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগে তার আজকের এই পরিণতি।
এসব আবোলতাবোল ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে পরে সে।

চলবে........

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.