নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোর ভাবনারে কি হাওয়ায় .........

দোলাহাসান

দোলাহাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আফ্রিকায় আমি

১১ ই এপ্রিল, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:১৫

আরো সব দেশি ভাইদের মত আফ্রিকা সম্পর্কে আমার ধারণাও ছিল ভাসা ভাসা। যেমন মানুষগুলো কালো, রোগা পটকা। কিন্তু অলিম্পিকের সুবাদে ধারণা পাল্টেও যাচ্ছিল।দূরপাল্লার দৌড়ে বেশ কিছু মেডেল কেনিয়া সহ আফ্রিকার দেশ গুলো জিতে নেয় প্রতিবার,ফুটবলে আফ্রিকার দেশগুলো বেশ ভাল ইত্যাদি ইত্যাদি। এছাড়া এ্যালেক্স হ্যালির রুটস ছবিটা দেখার পর মনে মনে ক্ষীণ দুরাশা জাগে যদি কোনদিন সুযোগ হয় আফ্রিকায় যাব! তো সুযোগ এসে গেল। যাকে বিয়ের জন্য পছন্দ করলাম সে চাকরি পেয়েছে আফ্রিকায়! হুররে আমার খুশি দেখে কে! আব্বা আম্মার মুখ কাল হয়ে গেল। তোমার যাওয়ার দরকার নেই। বাবু চাকরি শেষ করে আসুক অথবা ঐ চাকরিতে না যাক! কি সাংঘাতিক। আমার আফ্রিকা যাওয়ার কি হবে! কিছু হবেনা। দেখতে দেখতে তিন বছর কেটে যাবে। আমার এত শখ। নিজেরাতো যেতে পারবনা, ওর চাকরির সুবাদে না হয় গেলাম অসুবিধা কোথায় আমিতো বুঝি না। আম্মা তাও কিছুক্ষণ গজ গজ করে চুপ হয় গেল। কারণ আমার অকাট্য যুক্তি। সত্যি তো।ওরা কি কখনো বেড়ানোর জন্য আফ্রিকা যাবে। মোটেই না। বিয়ের দুই সপ্তাহ পড়ে আমরা আফ্রিকা উদ্দ্যেশে ঢাকা ছাড়লাম। সিংগাপুর এয়ারলাইনসে সিংগাপুর হয়ে জোহানসবার্গ, তারপর গ্যাবোরোন,বোতসোয়ানার রাজধানি।আমাদের গন্তব্যস্হল। সিংগাপুরে কয়েক ঘন্টার বিরতি তারপর একটানা প্রায় দশ/বারো ঘন্টার জার্নি। এত লম্বা জার্নিতে আমার অবস্হা কাহিল। প্লেনে এতক্ষন বসে থেকে কেমন জানি শরীর খারাপ লাগছিল। ঘুম হয়নি। খাওয়া পছন্দ হয়নি। অথচ সবাই কেমন গপ গপ করে খাচ্ছে। আমার খালি বমি পায়। পানিও খেতে ইচ্ছে করেনা। মনটা মুষড়ে গেল। আমার এত সাধের আফ্রিকায় আসতে পেরে কোথায় খুশিতে নাচব, তা না শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছে! বাবু খালি বলে চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে। ছাতু কখন ঠিক হবে? আমিতো মনে হয় মারা যাচ্ছি। জোহানসবার্গে নেমে আবার ঘন্টা দুয়েকের বিরতি। এর পরে বোতসোয়ানার এয়ারলাইনসে গ্যাবোরোন রওয়ানা হলাম। ছোট প্লেন। বেশিরভাগ সাদা মানুষ আর কিছু আমরা। এয়ার হোস্টেস মেয়েটা কাল। কিন্তু কি লম্বা। হাসলে খুব সুন্দর লাগে। দাঁত গুলো সাদা। এই কাল মানুষগুলোর হাসি আসলেই খুব সুন্দর। প্রাণ খোলা হাসি।এত যে দুঃখ কষ্ট, কিন্তু হাসিটা অদ্ভুত প্রাণখোলা।

যাইহোক প্লেন জার্নি শেষ হোল।আমরা বেলা বারটার দিকে গ্যাবোরোন পৌছলাম। প্লেনে বাইরের আবহাওয়া বুঝতে পারি নাই। এখন ঠাওর পাচ্ছি। কি যে গরম। মনে হল চুলার মধ্যে বসে আছি। জানুয়ারি মাসে এত গরম কি ব্যাপার। জানতে পারলাম আফ্রিকার ওয়েদার আমাদের উল্টা। আমাদের শীত, ওদের গরম, আর ওদের শীত আমাদের গরম। এয়ারপোর্টের ঝামেলা শেষ হলে সোজা হোটেলে গেলাম। হোটেলের নাম গ্যাবোরোন সান। বাবুর চাকরি সুবাদে একমাসের জন্য হোটেলে থাকা খাওয়া ফ্রি। কি দারুন। খালি খাও দাও, ঘুরে বেড়াও ঘুমাও। কোন চিন্তা নাই ভাবনা নাই। আমার তাও ভাবনা হচ্ছে কি ভাবে এই গরম সহ্য করব। আমার খালি মাথা ব্যথা হয়। কি করি। দিনের মধ্যে দুবার করে গোসল শুরু করলাম।বাইরে গেলে সব সময় সান গ্লাস পরি।তাও কোন লাভ হয় না। বাইরে ঘোরা ঘুরি দিনের বেলা কম করতে লাগলাম। বাবু অফিসে চলে গেলে আমি হোটেলের ভিতরেই থাকি। মাঝে মাঝে পুলের পাশে গিয়ে বসি।খুব ইচ্ছা করত পুলে নামতে। লোক লজ্জার জন্য যতটা না খারাপ লাগত বেশি লাগত সাঁতার না জানার জন্য। দেখতাম সাদা কালো সবাই কিভাবে সাঁতার কাটছে। খালি আমিই বোকার মত বসে থাকতাম। হোটেলে কালো মেয়েরা কাজ করত। ঘর পরিষ্কার করতে আসত যে মহিলা, তার সাথে আমার বেশ ভাব হয়েছিল। অনেক কথা হত তার সাথে।

বিরাট সংসার, অনেক বাচ্চা, স্বামী অসুস্হ।সংসার বাঁচানোর জন্য সে বড় হোটেলে কাজ করে। টাকা ভাল পায় কিন্তু সারাদিন কাজ করতে হয় , আধঘন্টা খাওয়ার সময় পায়।দিনটা তার কেটে যায় হোটেল রুম পরিষ্কার করতে করতে। সারাদিন বাচ্চাগুলোকে দেখতে পায়না। একেবারে রাতে গিয়ে রান্না করবে সবাই মিলে খাবে। কি খাও তোমরা জানতে চাইলে শুনলাম ওরা যব খায়। ওদের খাবারের নাম মিলিমিল। ময়দার মত গুলে খায়। সাথে সেথসোয়া। গরুর গোস্ত সিদ্ধ।ঝুরা ঝুরা। কোন মশলা নাই লবন দিয়ে সিদ্ধ। মনে হল আমাদের দেশের কাজের বুয়াদের কথা। অবস্হা তো তাদের মতই! ওরাওতো সারাদিন এবাড়ি ওবাড়ি কাজ করে বেড়ায়, সংসারের সাথে কোন যোগাযোগ নাই, রাতে স্বামী বাচ্চাকাচ্চার কাছে যায়।গরিব মানুষের অবস্হা সব জায়গায় একই। আমি মাঝে মাঝে ঐ মহিলাকে আপেল কলা যা থাকত দিয়ে দিতাম। এগুলোতো আমরা না খেলে ফেলেই দিবে, তারচেয়ে ওর বাচ্চারা খেতে পারবে। অথচ দেশটা গরিব হওয়ার কথা না। হীরার খনি আছে এখানে, তারপরেও গরিব, হাড্ডিসার লোক জন, বাচ্চারা। কি যে দূরবস্হা। তারচেয়েও ভয়াবহ অবস্হা হোল তরুন সম্প্রদায়ের। এইডসে আক্রান্ত। বাঙালিরা এইডসের ভয়ে কালোদের সেলুনে চুল কাটাতে যেতনা। জানি না এখন অবস্হার কোন উন্নতি হয়েছে কিনা।হোটেলের বসবাস শেষ হলে আমরা বাসা নিলাম। দুবেডের ফ্ল্যাট। আমাদের সংসার যাত্রা শুরু হোল।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই এপ্রিল, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৩১

মানুষ বলেছেন: পৃথিবীর কিছুই দেখিনি

১১ ই এপ্রিল, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৫৪

দোলাহাসান বলেছেন: আহারে!!!!! বিশ্বাস হয় না

২| ১১ ই এপ্রিল, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৩৭

মাহবুব সুমন বলেছেন: বতসোয়ানার এক মেয়ে আমার ক্লাস মেট ছিলো, ওকে সিসটার বলতাম ( আসলে ওর ডাক নামটাই সিসটার ;) )
খুব সুরেলা এক্সেন্টে ইংলিশ বলতো।
মজার ব্যাপার হোলো ওর হাসব্যান্ডের নাম আমার নামের সাথে মিল !
ওর বাবা ছিলো সাদা কিন্তু মা কালো। ও এখন ওখানে বেশ বড় সরো চাকরি করে শুনেছি।
বিস্তারিত লিখবেন।
ভালো অফার পেলে বড়সোয়ানা চলেও যেতে পারি, এখান থেকে অনেক অজি কনট্রাক্ট নিয়ে সেখানে যায়।

১১ ই এপ্রিল, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:০০

দোলাহাসান বলেছেন: দারুন তো। পারলে মেয়েটার সাথে যোগাযোগ করুন।প্রচুর অজিরা যায়,আর এক্সপ্যাট হিসেবে অনেক পুলা( বোতসোয়ানার টাকার নাম ) কামায়।

৩| ১১ ই এপ্রিল, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:১৩

ফারজানা মাহবুবা বলেছেন: এতো শুধু শুরুর গল্প, এরপর কী হল? ওদের জীবন যাত্রা, বা অন্য ঘটনা নিয়ে আরো পড়ার আগ্রহে রইলাম।

১২ ই এপ্রিল, ২০০৮ ভোর ৫:২৬

দোলাহাসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকুন

৪| ১১ ই এপ্রিল, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৩৩

আশিক হাসান বলেছেন: আফ্রিকার কংগোতে ছিলাম চাকরির কারনে । এই এক বছরে আপন করে নিয়েছিলাম কালো মানুষদেরকে । যারা এখনও আমাকে ই-মেইল করে তাদের ভালোবাসা জানায় ।

তাইতো অপেক্ষায় আছি আবার সেই রহস্যঘেরা কংগো নদীর কালো জলে ভেসে বেড়াবো। দেখবো কেনিয়ার কিলিমানজারোর চূ্ড়ায় জমাটবাঁধা সাদা বরফ । অথবা জীপে করে ছুটে চলবো কেনিয়ার মাসাইমারা সাফারি পার্কে ধুলো উড়িয়ে ছুটে চলা হাজারো বাইসনের সাথে ।


সেই ফেলে আসা দিনগুলি যদি আবার ফিরে পেতাম !!!!!!!

ভাল লাগলো আপনার পোস্ট, সময় পেলে আমার আফ্রিকার উপর লেখা পোস্টগুলো পড়ে দেখতে পারেন ।

ধন্যবাদ ।








১২ ই এপ্রিল, ২০০৮ ভোর ৫:২৪

দোলাহাসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য। কেনিয়াতো খুব সুন্দর দেশ!! আমি খালি নাইরোবি এয়ারপোর্টে নেমেছি ঢাকা আসা যাওয়ার পথে! তবে কেনিয়া ও কংগোতে ছিল এমন কয়েকজনের কাছে গল্প শুনেছি। খুব ভাল লেগেছে। অবশ্যই আপনার লেখা পড়ব। আবারো ধন্যবাদ আপনাকে।ভাল থাকুন

৫| ১১ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ৯:২২

নতুন বলেছেন: চলুক...

১২ ই এপ্রিল, ২০০৮ ভোর ৫:২৫

দোলাহাসান বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাল থাকুন

৬| ১১ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১০:৪৮

মাইনুল বলেছেন: ভালো লেগেছে।

১২ ই এপ্রিল, ২০০৮ ভোর ৫:২৫

দোলাহাসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকুন

৭| ১৪ ই এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ৮:৪৬

ময়ুরবাহন বলেছেন: দোলাদিদি, আফ্রিকার কিছু ছবি থাকলে দেবেন।

৮| ১৪ ই এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ১০:৩৯

দোলাহাসান বলেছেন: পরের পোস্টে ছবি দেওয়ার ইচ্ছা আছে।ভাল থাকুন

৯| ১৫ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৪:৪৪

মুহিব বলেছেন: দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ...................... ছবি কই?

১৬ ই এপ্রিল, ২০০৮ ভোর ৫:৪৯

দোলাহাসান বলেছেন: শুভ নববর্ষ।ছবি খুঁজছি, আশাকরি পরের পোস্টে দিতে পারব।ভাল থাকুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.