![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঠিক যেভাবে এই প্রজন্মও একটা স্বপ্ন দেখবে যা পূরন করবে পরের প্রজন্ম।
বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র এবং এই রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনগণের পক্ষে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করেন এবং রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। কিন্তু ‘ফ্লোর ক্রয়’ সংক্রান্ত সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে জাতীয় সংসদে স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না খোদ সংসদ সদস্যরা। সংবিধান সংশোধনসহ রাষ্ট্রের সকল আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্তকেই সমর্থন জানাতে হয় তাদের। এই বিধান সংশোধনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আলোচনাও হয়েছে বিস্তর। কিন্তু বর্তমানে ব্যাপক আকারে সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া চললেও অন্তরালেই রয়ে গেছে ৭০ অনুচ্ছেদ।
আইনবিদরা মনে করছেন, গণতন্ত্র সুসংহত করতে এই অনুচ্ছেদ সংশোধনের সময় এসেছে।
সংবিধানের ৭০(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে, যদি তিনি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন, অথবা সংসদে ওই দলের বিপক্ষে ভোট দেন তবে জাতীয় সংসদে তার আসন শূন্য হবে। এই অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যায় বলা হয়, কোনো সংসদ সদস্য নির্বাচনে কোনো দলের প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হওয়ার পর যদি ওই দলের নির্দেশ অমান্য করেÑ ক. সংসদে উপস্থিত থেকে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকলে, খ. সংসদের কোনো বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলে, তিনি ওই দলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন বলে গণ্য হবে।
৭০(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো রাজনৈতিক দলের সংসদীয় দলের নেতৃত্ব সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন উঠলে, সংসদে সেই দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের নেতৃত্বের দাবিদার কোনো সদস্যের লিখিত বক্তব্য পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে স্পিকার সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী ওই দলের সকল সদস্যের সভা আহ্বান করে বিভক্তি ভোটের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে ওই দলের সংসদীয় নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন। এছাড়া সংসদে ভোট দেয়ার ব্যাপারে অনুরূপ নির্ধারিত নেতৃত্বের নির্দেশ যদি কোনো সদস্য অমান্য করেন তাহলে তিনি (১) দফা অনুযায়ী ওই দলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন বলে গণ্য হবে এবং সংসদে তার আসন শূন্য হবে।
৭০(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি নির্দলীয় প্রার্থীরূপে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর কোনো রাজনৈতিক দলে যোগদান
করলে তিনি এই অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য সাধনকল্পে ওই দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বলে গণ্য হবে।
নির্বাচনের পর সংসদ সদস্যদের দল বদল রোধ ও সরকারের কার্যক্রম পরিচালনা সহজতর করতে এই অনুচ্ছেদ বাংলাদেশের সংবিধানে সংযোজন করা হয়। এই বিধান বাতিলের দাবি না উঠলেও দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মহল থেকে এই অনুচ্ছেদ সংশোধনের দাবি তোলা হয়। সংবিধান সংশোধনের মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সংসদ সদস্যরা এই অনুচ্ছেদের কারণে জনগণের মতামত যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারেন না। তাদের বাধ্য হয়েই দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়ে জাতীয় সংসদে ভোট দিতে হয়। এ বিধানকে ‘গণতন্ত্রের পরিপন্থী’ বলে উল্লেখ করা হয়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের সংবিধানে আনা ১৪টি সংশোধনই ব্যক্তি বা দলীয় বিবেচনায় করা হয়েছে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ৭০ অনুচ্ছেদ। তাই সরকারের স্থিতিশীলতা ও কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়ক আইন ছাড়া সংবিধান সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সংসদ সদস্যদের স্বাধীন মতামত দেয়ার সুযোগ তৈরি করা উচিত।
সম্প্রতি সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়ার পর সংবিধান সংশোধনের জন্য একটি সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়। সংশোধনের জন্য সংবিধানের বেশ কয়েকটি বিধান বর্তমানে আলোচিত হলেও এখনো ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের কোনো কথা শোনা যাচ্ছে না। ব্যক্তি বা দলকে উদ্দেশ্য করে সংবিধান সংশোধন করা হচ্ছে না- তা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথমেই এ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা উচিত বলে মনে করছেন দেশের অনেক আইনবিদ।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদকে গণতান্ত্রিক বিধানের পরিপন্থী উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, জনগণের ভোটে সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হন। ফলে যে দল থেকেই নির্বাচিত হোক না কেন তারা জনগণের স্বার্থে কথা বলবেন। কিন্তু ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে তারা দলের পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য হন। এটা কোনো গণতন্ত্রমনা মানুষ মেনে নিতে পারে না। এটি তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও বিবেকের স্বাধীনতা খর্ব করে। এমনকি জনগণের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টিও ক্ষুণœ হয়। ফলে সংবিধান সংশোধনের সময় জাতীয় সংসদ নিশ্চয়ই এ বিষয়টি বিবেচনা করবেন। সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে মতামত দিতে পারেন না বলেই গণস্বার্থবিরোধী আইন প্রণয়ন সম্ভব হয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আইনবিদ ড. শাহদীন মালিক ভোরের কাগজকে বলেন, দলের বিপক্ষে সংসদ সদস্যদের অবস্থানের কারণে গত শতাব্দির ৫০-এর দশকে এ দেশে ১২/১৩ দিনের বেশি সরকারের টিকে না থাকার নজির রয়েছে। এ কারণে এক দল থেকে নির্বাচিত হয়ে কোনো সংসদ সদস্য যেন দলের বিপক্ষে অবস্থান নিতে না পারে তার বিধানটি করা হয়। জাতীয় বাজেট বা সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রস্তাবের মতো বিষয়ে দল পরিবর্তন করতে না পারার এই বিধানের প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি মনে করি। তবে এই অনুচ্ছেদের কিছু কিছু বিষয় শিথিল করার সময় এসেছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চার সংস্কৃতির (কালচার) প্রচলন সবার আগে প্রয়োজন। জাতীয় সংসদে দলের পক্ষে ভোট দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বাইরে সরকারের সমালোচনা করার বিষয়ে কোনো বাধা নেই। কিন্তু দল বা দলের প্রধান নেতার বিরুদ্ধে কাউকেই সেভাবে কথা বলতে দেখা যায় না। এমন পরিস্থিতিতে ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে কতোটুকু লাভ হবে?
সূত্র ফুল সংবিধান
©somewhere in net ltd.