![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজকাল সুধীবৃন্দ প্রশ্ন করেন, “সত্যিই যদি আল্লাহ বলে কেউ থাকে, তাহলে তিনি আমাদের সাথে কথা বলেন না কেন? আমি তো কোনোদিন কোনো অলৌকিক ঘটনা ঘটতে দেখলাম না? প্রমান কী যে, আল্লাহ বলে আসলেই কেউ আছেন?” প্রথমত, তাদেরকে অভিনন্দন! তারা এমন একটি জটিল, আধুনিক, যুগোপযোগী প্রশ্ন আবিষ্কার করেছেন, যা ১৪০০ বছর আগে আরবের মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ানো যাযাবর, অশিক্ষিত, অসামাজিক বেদুইনরা রাসুলকে ﷺ করেছিল। শুধু তাই না, তাদের আগেও নবীদেরকে একই প্রশ্ন করা হয়েছিল। এর উত্তর আল্লাহ ﷻ কু’রআনেই দিয়ে দিয়েছেন—
''ওরা কি অপেক্ষা করছে যে, ফেরেশতাদেরকে নিয়ে আল্লাহ ﷻ নিজেই মেঘের ছায়ায় ওদের সামনে চলে আসবেন? —ততক্ষণে সব শেষ হয়ে যাবে। সবকিছু আল্লাহরই ﷻ কাছে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। [আল-বাক্বারাহ ২১০]''
যারা ঠিক করে রেখেছে যে, কোনো অলৌকিক কিছু দেখলে তবেই ইসলাম ধর্মকে সত্যি ধর্ম বলে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করবে, ঠিকমতো ধর্ম মানা শুরু করবে, তারা সাবধান! একইসাথে যারা ভাবছেন, এই শেষবারের মতো ঘুষ দিয়ে প্রমোশনটা নিয়ে নেই, তারপরে সব বন্ধ করে একদম ভালো মুসলিম হয়ে যাবো। শুধু এই বাড়িটা সুদের লোণ নিয়ে কিনে নেই, এরপরে আর কখনো কোনো খারাপ কাজ করবো না, আগামি বছরই হাজ্জ করে নেব… —এরা সাবধান! সত্যিই যেদিন ভয়ঙ্কর সব অলৌকিক ঘটনা ঘটা শুরু হবে, সেদিন অনেক দেরি হয়ে যাবে। তখন তাড়াতাড়ি করে সত্যিকারের মুসলিম হওয়ার চেষ্টা করে কোনো লাভ হবে। ঘণ্টা বেজে গেছে, পরীক্ষা শেষ। আরেকটু লেখার জন্য হাজার কাকুতি মিনতি করে কাগজ টানাটানি করে লাভ হবে না।
এই দুনিয়াটা হচ্ছে আমাদের জন্য একটা পরীক্ষা: আমরা আল্লাহকে ﷻ নিজের চোখে না দেখে, তাঁর ﷻ কথা নিজের কানে না শুনে, শুধুই নিজের বিবেক-বুদ্ধি খাঁটিয়ে, কুর’আন পড়ে, ইসলামকে সত্য ধর্ম হিসেবে মেনে নিতে পারি কিনা, এবং সে অনুযায়ী নিজের জীবনকে পরিবর্তন করতে পারি কিনা —সেটার পরীক্ষা। আমাদেরকে কোনো ম্যাজিক দেখানো হবে না, কোনো অলৌকিক কিছু এসে বলবে না মুসলিম হতে। কুর’আন দেওয়া হয়েছে, মাথা ভর্তি নিউরন দেওয়া হয়েছে, এগুলোই যথেষ্ট বোঝার জন্য যে, ইসলাম একটি সত্য ধর্ম, আল্লাহ ﷻ সত্যিই আছেন। কেউ যদি এরপরেও প্রশ্ন করতে থাকে, “না দেখে কোনো কিছু বিশ্বাস করবো কেন? প্রমাণ কি যে ইসলাম সত্যি ধর্ম?” —তাহলে তাদের সমস্যা আসলে প্রমাণ বা কারণের অভাব নয়, সমস্যা হচ্ছে তারা নিজেদেরকে কত বড় মনে করে এবং তারা দুনিয়া কতখানি উপভোগ করতে চায়, সেখানে।
কেন মানুষ ধর্ম মানতে চায় না?
যারা এই ধরনের প্রশ্ন করে, তাদের আসল সমস্যা হচ্ছে: তারা মনে করে না যে, ইসলাম এমন কোনো অসাধারণ ধর্ম, যা তাদের মানতে হবে। অথবা তারা মনে করে না যে, ইসলাম তাদেরকে এমন কিছু দিতে পারে, যা তারা নিজেরাই চিন্তা ভাবনা করে বের করতে পারে না। তাই তাদের দাবি হচ্ছে: আল্লাহ ﷻ যেন তাদের সাথে সরাসরি কথা বলে তাদেরকে বোঝান: কেন তারা ইসলাম মানবে? ইসলামে এমন কী আহামরি কিছু আছে যে, তা মানতেই হবে?
আপনাকে যখন কোনো গাড়ির সেলসম্যান একটা সাধারণ গাড়ি বিক্রি করার চেষ্টা করে, সে আপনাকে অনেক বোঝাবে: কেন আপনার গাড়িটা কেনা উচিত, এই গাড়ির চমৎকার বৈশিষ্ট্য কী যা অন্য গাড়ির নেই, কীভাবে এই গাড়িটা সমাজে আপনার স্ট্যাটাস বাড়িয়ে দেবে ইত্যাদি। সে নানা ভাবে চেষ্টা করবে আপনাকে গাড়িটা গছিয়ে দেওয়ার, কারণ গাড়িটা এমন কোনো অসাধারণ কোনো গাড়ি নয়, যা কেনার জন্য মানুষ গভীর আগ্রহে কয়েক মাস আগে থেকে এপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
ধরুন আপনি একদিন সিদ্ধান্ত নিলেন যে, আপনি একটা বিশেষ দামী ব্র্যান্ডের গাড়ি কিনবেন। আপনার বন্ধুরা আপনাকে অনেক বুঝিয়েছে যে, এর চেয়ে ভালো গাড়ি আর নেই। আপনি নিজেও অনেক পড়াশুনা করে দেখলেন যে, আসলেই এর চেয়ে ভালো গাড়ি আর নেই। কিন্তু কেনার আগে আপনি দাবি করলেন: সেই গাড়ির কোম্পানির সিইও-র সাথে আপনি নিজে কথা বলবেন, তারপরেই সেই গাড়ি কিনবেন, নাহলে কিনবেন না। সিইও নিজে যেন আপনার সাথে দেখা করে আপনাকে আশ্বস্ত করে।
যারা দাবি করে যে, আল্লাহ ﷻ যেন তাদেরকে এমন কিছু করে দেখান, যাতে করে তাদের আর কোনো সন্দেহ না থাকে যে, ইসলাম আসলেই একটি সত্য ধর্ম — তাদের অবস্থাটা হচ্ছে অনেকটা এরকম। তাদের বোঝা উচিত: একটা সত্যিকারের ভালো গাড়ি কেনার কাস্টোমারের কোনো অভাব নেই। একজন দুইজন মাথামোটা কাস্টমার তাদের গাড়ি না কিনলে কোম্পানির কিছুই যায় আসে না। বরং মাঝখান থেকে সেই কাস্টমারদের কপাল খারাপ যে, তারা একটা ভালো গাড়ি পেল না।
আবার অনেকে আছে, যারা আল্লাহকে ﷻ দেখার দাবি করে, তারা যে আসলে ইসলাম সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাচ্ছে তা নয়। তারা আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তারা ইসলাম মানবে না। তারা শুধু খামোখা তর্ক দাঁড় করাচ্ছে, যেন নিজেদের বিশ্বাস এবং যুক্তিকে সঠিক বলে প্রমাণ করতে পারে। কারো যদি ইসলাম সম্পর্কে সত্যিই জানার আগ্রহ থাকে, নিজেকে পরিবর্তন করার মানসিকতা থাকে, সত্যকে মেনে নেওয়ার মত উন্মুক্ত মন থাকে, তার জন্য কু’রআনের আয়াতই যথেষ্ট। আল্লাহকে ﷻ দেখার কোনো দরকার তাদের নেই। আল্লাহকে ﷻ না দেখে গত ১৪০০ বছরে কোটি কোটি অমুসলিম মানুষ মুসলিম হয়েছে শুধুই কু’রআন পড়ে, মুসলিমদের সংস্পর্শে থেকে ইসলামকে কাছ থেকে দেখে।
ইসলামকে যথেষ্ট গুরুত্ব না দেওয়া —হাজার বছর আগের আরব মুশরিকদের এই সমস্যাটা আজকাল একটা কমন সমস্যা, যেটা অনেক মুসলিমের মধ্যেও আছে। তারা আল্লাহর ﷻ প্রতি মোটামুটি বিশ্বাস রাখেন; কিন্তু ইসলামের বাধ্যতামূলক নিয়মগুলো যেমন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, রমযানে ত্রিশটা রোজা রাখা, প্রতি বছর যাকাত দেওয়া—এধরনের কাজগুলো করার মতো যথেষ্ট তাগিদ বা কারণ খুঁজে পান না। অনেকে আবার আল্লাহ ﷻ যে সত্যিই আছেন এবং কু’রআন যে সত্যিই তাঁর বাণী—তা নিয়ে মাঝে মধ্যেই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন; বিশেষ করে যখন তার জীবনে কোনো বড় ধরনের সমস্যা শুরু হয়। বিংশ শতাব্দীর পর থেকে এই সমস্যাটা ইন্টারনেটের কারণে মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। আজকের কিশোর-তরুণরা পাশ্চাত্যের কার্টুন, চলচ্চিত্র আর ইন্টারনেটের বদৌলতে এমন সব লেখালেখি পড়ছে, যেগুলো ধর্মীয় শিক্ষাকে ব্যাঙ্গ করে; আল্লাহ অস্তিত্বকে যুক্তির গোলকধাঁধাঁয় মিশিয়ে দিতে চায়। এগুলো পড়ে প্রথমত ধর্ম, নবী এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি তাদের শ্রদ্ধা যেমন পুরোপুরি চলে যাচ্ছে, একই সাথে তারা ডিসেন্সিটাইজড বা অনুভূতিহীন, ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে তখন যথেষ্ট যুক্তি দেখালেও কোনো লাভ হয় না। তারা তাদের বিভ্রান্তির গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খেতেই থাকে।
আজকাল অলৌকিক কিছু ঘটে না কেন?
অলৌকিক ঘটনা দেখানোর একটি সমস্যা হলো: ঘটনাটি যারা নিজের চোখে দেখে, তাদের উপরে ঠিকই বিরাট প্রভাব পড়ে, কিন্তু তাদের ভবিষ্যৎ বংশধরেরা—যারা শুধু তাদের পূর্বপুরুষের মুখে ঘটনার বর্ণনা শুনে—তাদের খুব একটা গায়ে লাগে না। ধরুন, আপনি একদিন কক্সবাজারে সমুদ্রের তীরে হাঁটছেন। এমন সময় প্রচণ্ড বাতাস শুরু হলো, আর দেখলেন বঙ্গোপসাগরের পানি দুইভাগ হয়ে গিয়ে সাগরের মধ্য দিয়ে একটা রাস্তা হয়ে গেল। তারপর সেই রাস্তা দিয়ে হেঁটে পার হয়ে এল বার্মার অত্যাচারিত মুসলিম। এটা দেখে আপনার ওপর একটা বিরাট প্রভাব পড়বে। আপনি হয়তো পরের মাসেই উমরাহ করতে চলে যাবেন। কিন্তু আপনি যদি একদিন আপনার ছেলেমেয়েদের চোখ বড় বড় করে গল্পটা বলেন, “জানো? একদিন আমি দেখলাম: বঙ্গোপসাগরের পানি সরে গিয়ে সাগরের মধ্যে দিয়ে একটা শুকনা রাস্তা তৈরি হয়ে গেল, আর বার্মার গরিব মুসলিমরা হেঁটে বাংলাদেশে চলে এল!”—তাদের উপরে কাহিনিটার সেরকম কোনো প্রভাব পড়বে না, কারণ তাদের কাছে সেটা একটা গল্প ছাড়া আর কিছু নয়। তারা সেই ঘটনা শোনার পর দিন থেকেই ভিডিও গেম খেলা, মুভি বা হিন্দি সিরিয়াল দেখা, বিয়েতে সেজেগুজে অর্ধ নগ্ন হয়ে যাওয়া —সব বন্ধ করে আদর্শ মুসলিম হয়ে যাবে না।
ধরুন, কেউ দাবি করল যে, “ভাই, আমাকে সমুদ্র দুই ভাগ করে দেখাতে হবে না। আমি যদি ছোটোখাটো একটা অলৌকিক কিছু দেখি, তাহলেই হবে। যেমন ধরুন, আকাশ থেকে গম্ভীর স্বরে যদি কেউ কথা বলে, বা ধরুন আলোর তৈরি মানুষের মতো দেখতে কেউ যদি আমার সামনে এসে বলে, ‘হ্যা, কু’রআন সত্যিই আল্লাহর ﷻ বাণী, কোনো সন্দেহ নেই। তোমাকে এর পুরোটাই মানতে হবে’—তাহলে আমি সত্যি বলছি, কালকে থেকে আমি একদম পুরোপুরি ঈমানদার হয়ে যাব—আল্লাহর কসম।”
যারা এখনও আল্লাহর ﷻ অস্তিত্ব নিয়ে ঠিক পুরোপুরি বিশ্বাস করেনি, একধরনের দোটানার মধ্যে ঝুলে আছে, তাদেরকে আপনি যদি প্রশ্ন করেন, “আপনি কেন বিশ্বাস করেন না যে, আল্লাহ সত্যিই আছেন?”—তাহলে আপনি নিচের কোনো একটা উত্তর পাবেন—
১) আল্লাহ থাকতেও পারে, আবার নাও পারে, আমি ঠিক জানি না। যেহেতু আমি জানি না সে সত্যিই আছে কি না, তাই আমি ধরে নিচ্ছি যে সে নেই এবং আমি আমার ইচ্ছা মতো জীবন যাপন করব।
২) আল্লাহ আছে কি নেই, সেটা বিজ্ঞান কখনই নিঃসন্দেহে প্রমাণ করতে পারবে না। যেহেতু আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব না, তাই আমি ধরে নিচ্ছি যে সে নেই, এবং আমি আমার মতো করে জীবন যাপন করব।
উপরের উত্তর দুটি লক্ষ করলে দেখবেন, সে ‘বেনিফিট অফ ডাউট’ দিচ্ছে ‘আল্লাহ নেই’-কে। সে কিন্তু ‘আল্লাহ আছেন’—এটা ধরে নিতে রাজি হচ্ছে না। সে যদি সত্যিই নিরপেক্ষ হয়, তাহলে সে কেন নিচের উত্তরগুলোর একটা দিচ্ছে না?
১) আল্লাহ থাকতেও পারে, আবার নাও পারে, আমি ঠিক জানি না। যেহেতু আমি জানি না তিনি সত্যিই আছেন কিনা, তাই আমি ধরে নিচ্ছি তিনি আছেন এবং আমি তাঁর আদেশ মতো জীবন পার করব।
২) আল্লাহ আছেন কি নেই, সেটা বিজ্ঞান কখনই নিঃসন্দেহে প্রমাণ করতে পারবে না। তাই আমি ধরে নিচ্ছি তিনি আছেন এবং আমি তাঁর আদেশ মতো জীবন পার করব।
কিন্তু এই ধরনের উত্তর আপনি পাবেন না। বেশিরভাগ মানুষ ধরে নেবে আল্লাহ ﷻ নেই, কারণ আল্লাহ ﷻ আছেন ধরে নিলেই নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে: নামাজ পড়তে হবে, রোজা রাখতে হবে, যাকাত দিতে হবে, হিন্দি সিরিয়াল এবং পর্ণ দেখা বন্ধ করতে হবে, ফেইসবুকে হাঁ করে অন্যের বেপর্দা ছবি দেখা বন্ধ করতে হবে—এগুলো করার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। তাহলে তাদের সাথে তর্ক করে শেষ পর্যন্ত লাভটা কী হচ্ছে?
''ইসরাইলের বংশধরদের জিগ্যেস করে দেখো, ওদেরকে আমি কত বার পরিস্কার প্রমাণ দেখিয়েছিলাম। কেউ যদি প্রমাণ পাওয়ার পরেও তা বদলে দেয়, তাহলে সাবধান! আল্লাহ ভীষণ কঠিন শাস্তি দেন। [আল-বাক্বারাহ ২১১]''
যদি ইসলাম সত্যি হয়?
ধরুন, আপনি এদের কাউকে বললেন, “ভাই, আপনার কথা যদি সত্যি হয় যে, আল্লাহর অস্তিত্ব নেই, মৃত্যুর পরে কোনো জগত নেই, তাহলে আপনি যখন মারা যাবেন, তখন আপনার অস্তিত্ব শেষ। আপনি কোনোদিন জানতে পারবেন না যে, আপনি সঠিক ছিলেন। কিন্তু ধরুন আপনি ভুল, আর মারা যাওয়ার পর দেখলেন, আল্লাহ ﷻ সত্যিই আছেন। জাহান্নামের যেসব ভয়ঙ্কর শাস্তির কথা পড়ে আপনি হেঁসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন, সেগুলো সব সত্যি ঘটনা। তখন কী হবে একবার ভেবে দেখেছেন?”
এই অবস্থায় বেশিরভাগ মানুষের প্রতিক্রিয়া হবে, “এরকম যুক্তি তো ভুতের বেলায়ও দেখানো যায়। তাই বলে কি ‘আল্লাহ আছেন’ ধরে নিয়ে আমাকে ইসলাম মানতে হবে নাকি? এটা কী রকম যুক্তি হলো?” —অথচ ‘আল্লাহ নেই’, এটা ধরে নেওয়াটা তাদের জন্য ঠিকই যুক্তিযুক্ত। তাদেরই যুক্তি অনুসারে: আল্লাহ আছেন, নাকি নেই —সেটা ৫০-৫০ সম্ভাবনা। তারপরেও তারা ‘আল্লাহ নেই’ এটা ঠিকই মেনে নিতে রাজি, কিন্তু ‘আল্লাহ আছেন’ এটা মেনে নিতে রাজি না। যদিও কিনা তাদেরই যুক্তি অনুসারে দুটোরই সম্ভাবনা সমান।
যারা অলৌকিক প্রমাণ দেখতে চায়, ধরুন তাদেরকে একটা অলৌকিক প্রমাণ দেখানো হলো। একদিন সে সকাল বেলা ঘুমের থেকে উঠে দেখল: তার সামনে আলোর তৈরি এক মধবয়স্ক প্রবীণ ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছে। সেই অলৌকিক পুরুষ গম্ভীর স্বরে তাকে বলল, “বৎস, আমি আল্লাহর ﷻ কাছ থেকে প্রেরিত দুত। তুমি কালকে থেকে কু’রআন মানতে পারো। আমি তোমাকে গ্যারান্টি দিচ্ছি কু’রআন সত্যিই আল্লাহর বাণী।”—এখন সে প্রমাণ করবে কী করে যে, সেটা তার কোনো হেলুসিনেশন বা মতিবিভ্রম ছিল না? আবার ধরুন: আগামীকাল থেকে সে আকাশ থেকে গম্ভীর স্বরে এক ঐশ্বরিক বাণী শোনা শুরু করল। সে কীভাবে প্রমাণ করবে যে, সেটা তার কোনো মানসিক সমস্যা নয়?
তর্কের খাতিরে ধরুন: আপনি এদের কাউকে একদিন প্রমাণ করে দেখালেন যে, আল্লাহ ﷻ সত্যিই আছেন। আপনি এমন এক কঠিন প্রমাণ দেখালেন, যার বিপক্ষে সে কোনো কিছুই উপস্থাপন করতে পারল না। আপনার প্রমাণ দেখার পর কি সে পরদিন থেকেই একদম আদর্শ মুসলিম হয়ে যাবে? সে কি তার লাইফ স্টাইল একদম পালটিয়ে ফেলবে এবং ইসলামের নিয়ম অনুসারে সবকিছু করা শুরু করবে?
বেশিরভাগ মানুষই সেটা করবে না। মানুষ আল্লাহকে ﷻ তখনি বিশ্বাস করে, যখন সে নিজে থেকে উপলব্ধি করতে পারে যে, তিনি ﷻ সত্যিই আছেন। মানুষকে কিছু যুক্তি-প্রমাণ দেখালেই তারা আল্লাহর ﷻ উপর পুরোপুরি বিশ্বাস করা শুরু করে দেয় না এবং তাদের জীবনকে পালটিয়ে ফেলে না। ঈমান একটি দীর্ঘ সফর, যার গন্তব্যে শুধু তর্ক করে পৌঁছা যায় না।
আধুনিক নাস্তিকতা
নাস্তিক এবং অধার্মিকদের দেখানো জনপ্রিয় সব যুক্তি এবং প্রমাণগুলোর মধ্যে যে আসলে কত ফাঁকফোকর আছে, সেটা জানার জন্য এই তিনটি বই বেশ কাজের– ১) গণিতবিদ, ফিলসফার এবং বেস্ট সেলার ড: ডেভিড বারলিন্সকি-এর লেখা The Devil’s Delusion, ২) ‘আধুনিক নাস্তিকতার জনক’ নামে কুখ্যাত নাস্তিক ফিলসফার এনথনি ফ্লিউ-এর ৭০ বছর পর আস্তিক হয়ে যাওয়ার পরে লেখা There is a God, ৩) The Human Genome প্রজেক্টের প্রধান, বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা বিজ্ঞানীদের একজন: ড: ফ্রান্সিস কলিন্স-এর লেখা The Language of God।
শূন্য থেকে সৃষ্টিজগত তৈরি হওয়াটা যে যৌক্তিকভাবে হাস্যকর একটা তত্ত্ব, সেটা নিয়ে ড: ডেভিড বিস্তারিত যৌক্তিক প্রমাণ দিয়েছেন। এমনকি মাল্টিভারস তত্ত্ব যে আসলে একটা পলিটিকাল কৌশল, যেখানে দুর্বোধ্য গণিতের আড়ালে নাস্তিকরা লুকিয়ে থেকে তাদের সেক্যুলার মতবাদ প্রচার করে যাচ্ছে —সেটা তিনি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন। DNA-তে ৩০০ কোটি অক্ষরে যে এক প্রচণ্ড সৃজনশীল এবং অকল্পনীয় জ্ঞানী সত্তার স্বাক্ষর স্পষ্টভাবে লেখা আছে, সেটা ড: ফ্রান্সিস সুন্দরভাবে দেখিয়েছেন, যা আধুনিক নাস্তিকতার জনক এনথনি ফ্লিউকেও আস্তিক হতে বাধ্য করেছে।
যারা রিচার্ড ডকিন্স নামে একজন মামুলি বায়োলজিস্ট-এর লেখা The God Delusion বইয়ের কথাবার্তা পড়ে ভক্তিতে গদগদ হয়ে গেছেন, তারা কয়েকজন সত্যিকারের বিজ্ঞানী এবং অ্যাকাডেমিকের লেখা পড়ে দেখুন। বুঝতে পারবেন যে, রিচার্ড ডকিন্স আসলে একজন ফার্মগেটের রাস্তার ওষুধ বিক্রেতার মতো মানুষকে উত্তেজনা দিয়ে বেড়াচ্ছে এবং তার ‘মাজারের’ সাগরেদ, কিছু উঠতি ‘বিজ্ঞানীরা’, পলিটিশিয়ানদের সাথে হাত মিলিয়ে, তাকে একজন সেলিব্রিটি বানিয়ে ব্যাপক ব্যবসা করে বেড়াচ্ছে। এদের প্ররোচনায় পড়ে লক্ষ লক্ষ বোকা মানুষ তাদের মাজারের মুরিদ হয়ে যাচ্ছে এবং ডকিন্স এবং তার মাজারের সাগরেদদের বিরাট বড়লোক বানিয়ে দিচ্ছে।
কেন আল্লাহ ফেরেশতা পাঠান না?
অনেকের মনে হতে পারে যে, একজন সাধারণ মানুষকে নবী হিসেবে পাঠালে মানুষ কেন তাকে পাত্তা দেবে? তারচেয়ে একজন ফেরেশতাকে পাঠালে কি মানুষ নির্দ্বিধায় তাকে আল্লাহর ﷻ দূত হিসেবে মেনে নিয়ে, সাথে সাথে মুসলিম হয়ে যাবে না?
ধরুন একদিন সৌদি আরবে মহাকাশ থেকে অন্য গ্রহের একটি প্রাণী এসে নামল। সে দেখতে অদ্ভুত, তার কোনো দেহ নেই, উজ্জ্বল সাদা আলোর তৈরি। সে সৌদি আরবে ভেসে বেড়াচ্ছে এবং মানুষকে বার বার বলছে: ভালো হয়ে যেতে, সত্য কথা বলতে, সুদ-ঘুষ না খেতে, বিশাল হোটেলগুলো সব ভেঙ্গে ফেলতে, পাশ্চাত্যের সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ না করতে ইত্যাদি। প্রথম দিকে সে যখন পৃথিবীতে আসবে, সাথে সাথে পৃথিবীতে হুলুস্থুল কান্ড শুরু হয়ে যাবে। মানুষ বিবিসি, সিএনএন, ডিসকভারি চ্যানেলে সারাদিন তার উপর ডকুমেন্টারি দেখতে থাকবে। অনেক মানুষ ভক্তি নিয়ে তাকে পূজা করা শুরু করবে। অনেক মানুষ তার পোস্টার বানিয়ে, তার নামে বই লিখে বিরাট ব্যবসা শুরু করে দেবে। তাকে নিয়ে নানা ধরনের চলচ্চিত্র তৈরি হবে, ফেইসবুক পেইজ তৈরি হবে, খবরের কাগজে নানা ধরনের কেচ্ছা কাহিনী লেখা হতে থাকবে।
কিন্তু পঞ্চাশ বছর পরে সে একটা পুরনো খবর হয়ে যাবে। সে একদিকে তার মতো ভালো কথা বলে যাবে, আর অন্যদিকে পৃথিবীর মানুষরা তাদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে। তখন তার ভালো ভালো উপদেশ শুনে কি সারা পৃথিবীর সব ব্যাংক সুদ দেওয়া এবং নেওয়া বন্ধ করে দেবে? তখন সারা পৃথিবীতে সবাই কি ঘুষ খাওয়া বন্ধ করে দেবে? সুদের লোন নিয়ে বাড়ি কেনা বন্ধ করে দেবে? তখন আমেরিকা, মিশর, সিরিয়া, বাংলাদেশের সরকার কি সাচ্চা মুসলিম হয়ে দেশে শারিয়াহ আইন চালু করবে? সারা পৃথিবীর সব মানুষ কি হিন্দি সিরিয়াল, সিনেমা, ফেইসবুক, ভিডিও গেম, মিউজিক কনসার্ট , ফুটবল খেলা দেখা বাদ দিয়ে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে থাকবে?
তাছাড়া এরকম একজন মহাজাগতিক প্রাণীর সামনে গিয়ে কি কেউ তার জীবনের সুখ দুঃখের কথা খুলে বলবে? তার জীবনের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করবে? করবে না। মানুষ এবং তার মধ্যে যে বিরাট ব্যবধান, তা তার বাণী প্রচার করার মধ্যে বরং একটা বাধা হয়ে দাঁড়াবে। বরং সেই প্রাণীটা যদি গোপনে একজন সাধারণ মানুষের রূপ নিয়ে, সমাজের মধ্যে বাস করা শুরু করে, তখন সে নিজে যেমন মানুষকে ভালো করে বুঝবে, তেমনি মানুষও তার সামনে স্বাভাবিক হতে পারবে।
''বিশ্বাসীদের উপর আল্লাহর অনেক বড় অনুগ্রহ যে, তিনি তাদেরই মধ্য থেকে একজনকে রাসুল হিসেবে পাঠান, যে তাঁর বাণী তাদেরকে শোনায়, তারা কীভাবে নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করতে পারে, তা শেখায়। তাদেরকে কিতাব শেখায় এবং প্রজ্ঞা শেখায়, যেখানে কিনা তারা একেবারেই ভুল পথে চলে গিয়েছিল। [আলে ইমরান ১৬৪]''
ফেরেশতা না পাঠিয়ে একজন মানুষকে মানুষের জন্য শিক্ষক হিসেবে পাঠানোর অনেক বড় উদ্দেশ্য রয়েছে। একজন ফেরেশতা, যে কিনা মানুষের দুর্বলতার ঊর্ধ্বে, তার পক্ষে মানুষের দুর্বলতাকে উপলব্ধি করে, মানুষের জন্য সবচেয়ে মোক্ষমভাবে ইসলামের শিক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়।[১৮৬] একজন মানুষের পক্ষেই সম্ভব মানুষের কষ্ট উপলব্ধি করে মানুষকে শিক্ষা দেওয়ার। আমরা নবীদের ﷺ জীবনী দেখলে দেখব: বেশিরভাগ নবীই ﷺ জীবনে অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছেন। অনেকেই চরম অভাবে জীবন পার করেছেন। তাদের অসুখ হয়েছে। ক্ষুধার কষ্ট কী, সেটা তারা খুব ভালোভাবে বুঝেছেন। জীবনের একটা বড় সময় সমাজের ক্ষমতাশালী মানুষদের অন্যায়, অত্যাচার সহ্য করেছেন। নিজে কষ্ট করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। নিজে কষ্ট করে উপার্জন করেছেন, পরিবার গড়েছেন, সন্তান পালন করেছেন। অনেকে তাদের স্ত্রী এবং শিশু সন্তানের মৃত্যুর মতো প্রচণ্ড কষ্টের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন। নবীদেরকে ﷺ আল্লাহ অত্যন্ত কঠিন ট্রেনিং দিয়েছেন, যেন তারা মানুষকে গভীরভাবে বুঝতে শেখেন। মানুষের জীবনের জটিলতাগুলো উপলব্ধি করে মানুষকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সঠিক উপদেশ দিতে পারেন।
এই সব উচ্চমার্গের চিন্তাভাবনা করে কী লাভ?
অনেকেই প্রশ্ন করেন, “এই সব উচ্চ মার্গের আয়াত নিয়ে এত ফিলোসফিকাল চিন্তা করে কী লাভ? এসব নিয়ে চিন্তা করে আমি তো জান্নাত পেয়ে যাবো না? আল্লাহ ﷻ তো আমাকে এই সবের হিসাব দিতে বলবেন না? এগুলো নিয়ে চিন্তা করা তো নামাজ, রোজা, যাকাত, হাজ্জ এগুলোর মত এত গুরুত্বপূর্ণ না?”
কয়েকটি লাভ—
এই ধরনের আয়াত অমুসলিমদেরকে দেখিয়ে দেয়: ইসলামে স্রষ্টার ধারণা, আর তাদের স্রষ্টার ধারণার মধ্যে পার্থক্য কোথায়। অনেক অমুসলিম এই ধরনের আয়াত পড়ে চমৎকৃত হয়ে ভাবেন, “আরে! ইসলামের স্রষ্টার ধারণা দেখি অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। ঠিক এইরকম একটা ধর্মই তো আমি খুজছিলাম এতদিন!” তারপর তারা ইসলাম নিয়ে আরও পড়াশুনা করে একসময় মুসলিম হয়ে যান।
মুসলিমরা ছোট বেলা থেকে হিন্দু, খ্রিস্টান ধর্মের নানা বই, টিভি সিরিয়াল, চলচ্চিত্র দেখতে দেখতে তাদের মধ্যে আল্লাহর ﷻ সম্পর্কে নানা ধরনের ভুল ধারণা চলে আসে। এই ধরনের আয়াতগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলে, আল্লাহর ﷻ সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণার অবসান হয়।
চিন্তাশীল মানুষরা স্বভাবতই এইসব ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করতে পছন্দ করেন। তাদেরকে যদি চিন্তার সঠিক উপকরণ দেওয়া না হয় এবং সঠিকভাবে চিন্তা করার পথ না দেখানো হয়, তাহলে তারা ভুল পথে চিন্তা করবেনই। বিশেষ করে একাডেমিক ক্ষেত্রগুলো যেহেতু গ্রিক ফিলোসফিতে ভরপুর, তাই সেগুলো পড়ে মুসলিমদের ভুল পথে চিন্তা শুরু করাটা অস্বাভাবিক নয়। এজন্য তাদেরকে কু’রআনে যথেষ্ট চিন্তার খোরাক এবং সঠিকভাবে চিন্তার পথ দেখানো হয়েছে।
আল্লাহ ﷻ কু’রআনে কোনো আয়াত এমনিতেই দেন না। প্রত্যেকটি আয়াতের পেছনে অনেক বড় কারণ রয়েছে, যা শুধু চিন্তাশীলরাই ধরতে পারেন। যারা কুরআন নিয়ে চিন্তা করেন না, তারা কুরআনের আয়াতের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অসাধারণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন না। কুরআন তাদের কাছে আরেকটি ‘নামাজ শিক্ষা’ ধরনের নিয়ম-কানুনের শুকনো বই হয়ে যায় মাত্র। আর যারা চিন্তা করেন, তারা কু’রআনের আয়াত পড়েন, আর গভীর চিন্তায় ডুবে যান, নতুন কিছু প্রথমবারের মত উপলব্ধির, আবিষ্কারের আনন্দে অভিভূত হয়ে যান।
বিঃদ্র্রঃলেখাটি পড়ে ভাল লাগলো,তাই শেয়ার কোরলাম!''কুরআনের কথা''ব্লগ থেকে সংগৃহিত!
২| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৩
আজমান আন্দালিব বলেছেন: ভালো লাগলো।
৩| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২৯
মাকড়সাঁ বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন।
৪| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০২
অন্ধকারের নক্ষত্র বলেছেন: sobaike dhonnobad!
৫| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৪২
amhabib বলেছেন: অসাধারণ আর্টিকেল , ফেসবুকে সবার সাথে শেয়ার করা উচিত । জানিনা এটা আপনার মৌলিক লিখা কি না তবে আপনি যদি লিখে থাকেন তবে অনুরোধ রইলো এমন আর্টিকেল নিয়মিত লিখতে । ধন্যবাদ
৬| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৩৮
অন্ধকারের নক্ষত্র বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই!লেখাটি আমি সংগ্রহ করেছি!লেখাটি খুবই যুক্তিগত! এরকম কিছু লেখা সবার সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ! আমি নিজেও মৌলিক ভাবে কিছু লেখার চেষ্টা করবো!
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০০
blackant বলেছেন: VERY GOOD WRITING. THANK YOU very MUCH FOR SHARING .