নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাধারণ একজন স্বপ্নবান মানুষ

মুনির মুহাম্মদ

মুনির মুহাম্মদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার নানা ভাই

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২৪

খুব ছোটবেলায় বেশ রোগা ছিলাম।আমার পেট না কি ফুটবলের মতো হয়ে থাকতো সবসময়য়,শুধু নাকি পেটের ব্যাথায় চীৎকার করতাম ,রাতের বেলায় না কি প্রায়ই চীৎকারে সবার ঘুম ভেঙে যেত। বয়স হবার পর দাদীর কাছে শুনেছি,এমন কোন ডাক্তার কবিরাজ বাকী ছিলোনা আমাদের মফস্বল শহরে যার কাছে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়নি।আমার জন্মের কিছুদিন আগেই বাবা বিদেশে(দালালের মাধ্যমে) গিয়েছিলেন, সেখানে খুব ঝামেলায় পড়েছিলেন তাঁর উপর সংসারে খুব অভাব ছিল। আমার দাদি বলতেন-"তোর পিছে অনেক কষ্ট গেছে আমাদের, আজকে এই কবিরাজতো কাল আরেক কবিরাজের কাছে নিয়ে যেতে হত।তারপরও তোর অবস্থার যখন কোন উন্নতি হচ্ছিল না তখন তোর নানা এগিয়ে আসলেন,তিনি একের পর এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে লাগলেন।তোর পিছে তোর নানা যেই পরিমাণ টাকা খরচ করেছে তা মানুষ নিজের ছেলের জন্যও করেনা।" এছাড়া বয়স হবার পর থেকেই দেখেছি ,সংসারে যখনেই খুব অভাব অনটন দেখা দিয়েছে তখনই নানা ভাই বেরাতে এসে চুপিচুপি আম্মার কাছে কিছু টাকা দিয়ে যেতেন যদিও তখন তাঁর নিজের সংসারেও খুব অভাব ছিল।এই মানুষটা বৃদ্ধ হবার পরেও গ্রাম থেকে যখন আমাদের বাসায় আসতেন তখন দুই হাতে করে পিঠা,গুর,আম নিয়ে আসতেন গ্রাম।আম্মা গামছা দিয়ে ঘাম মুছে দিতেদিতে কড়া গলায় বলতেন-"বাবা, আপনে নিজেই আসতে পারেননা অসুস্থ শরীর নিয়ে,এগুলো আনার কি দরকার?" কিন্তু নানা ভাই কথা শুনতেন না, উনি এই অভ্যেসটা অসুস্থ হওয়ার কিছুদিন আগ পর্যন্ত কণ্টিনিউ করেছিলেন।এরপর একদিন হঠাৎ করেই বাসায় খবর আসলো, নানা ভাই ব্রেন স্ট্রোক করেছেন। এরপর আর নানা ভাই সুস্থ হলেন না। আমরা নানা ভাইকে খুব ভয় করতাম,খুব মিশুক ছিলেন না কিন্তু নিজের কর্তব্যটা সবসময়য় পালন করে যেতেন। ভালোবাসতেন সবাইকে কিন্তু প্রকাশ করতেন না। আমরা বেড়াতে গেলেই উনি খাবার সময় ইংলিশ জিজ্ঞেস করতেন বিভিন্ন শব্দ ও বাক্যের কিন্তু আমি পারতাম না বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাই ভয় পেতাম। একবার আমার পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায় অভাবের কারনে তখন তিনি ঢাকা গিয়ে আমাকে নিয়ে এসে গ্রামে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন,মোট কথা আমার জীবনে নানা ভাইয়ের অবদান খুব বেশী।নানভাই যখন পুরোপুরি শয্যাশায়ী হলেন,তখন তিনি হয়ে উঠলেন সবার কাছে বোঝা। কথা বলার কাউকে পেতেন না ,কেউ তাঁর কাছে যেতনা ,সারদিন বারন্দার বিছানায় শুয়ে থাকতেন।একদিন বাড়িতে গেলে নানা ভাই আমার হাতদুটো ধরে কেঁদে বলেছিলেন"ভাই কেউ আমার কাছে আসে না ,একটা কথা বলার কাউকে পাই না,তুই একটু আমার পাশে বস।" খুব কষ্ট হয়েছিলো শুনে। কিন্তু এরপর আমারও খুব একটা বসা হতোনা ওনার কাছে যেই কয়দিন ছিলাম,তখন বয়স কম ছিল,গ্রামের বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে চলে যেতাম।আমি ঢাকা ফিরে আসার ১বছর পর নানা ভাই মারা যান, আমি তখন সিলেটে আমার ভার্সিটির পরীক্ষা চলে। জানাজাতেও যেতে পারি নাই,কেন জানি খুব কষ্টও হয় নি তখন নানা ভাইয়ের জন্য,দুইদিন পর পিকনিকেও গিয়েছিলাম।আজ ৩ বছর হয়ে গেছে উনি চলে গেছেন।এখন মাঝে মধ্যেই ওনার কথা ভাবনায় আসে ,উনি যেন ফিসফিস করে বলছেন "কেউ আমার সাথে কথা বলে না, ভাই তুই আমার পাশে একটু বস খুব একা লাগে"। খুব অপরাধ বোধ হয় ......... নানা ভাই বলে ডেকে হাতটা ধরে খুব কাঁদতে ইচ্ছে হয়। মাফ করে দিয়ো নানা ভাই,আমি খুব অকৃতজ্ঞ।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৫২

সত্যানুরাগী বলেছেন: বৃদ্ধ বয়সে ছেলে মেয়ে
বাবা মাকে বোঝা মনে করে এটাই নিয়তি।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫৬

মুনির মুহাম্মদ বলেছেন: সেটাই

২| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০০

চাঁদগাজী বলেছেন:


মানুষ চলে যায় সময় হলে, মানুষের মনে কস্ট লাগে।

আপনার পেটের অবস্হা এখন কি রকম?

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫৫

মুনির মুহাম্মদ বলেছেন: এখন সমান হয়ে গেছে ,

৩| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:০০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: চাঁদগাজী বলেছেন, আপনার পেটের অবস্থা এখন কি রকম!!!!!!
হা হা হা।
আপনার নানা ভাই, শান্তিতে থাক, যেখানেই থাকুন না কেন

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০৩

মুনির মুহাম্মদ বলেছেন: জি এখন ৬ প্যাক

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.