নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্দ জিনিস দেখবো না , মন্দ কথা বলবো না মন্দ কিছু শুনবো না।

মুন্ন৮৮

আমি গুছিয়ে কিছুই লিখতে পারি না কিন্তু মনে অনেক গল্প জমা আছে, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা তিনি যেন একদিনের জন্য হলেও আমাকে লেখার ক্ষমতা দান করেন।

মুন্ন৮৮ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘুরে এলাম খাগড়াছড়ি, পর্ব-১ (রিসাং ঝর্ণা)

২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৪:১৫

খাগড়াছড়ি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর জেলাগুলোর মধ্যে একটি। স্থানীয়দের মতে নলখাগড়ার ছড়ি থেকে খাগড়াছড়ি নামের উৎপত্তি। অতি সম্প্রতি(১৫-০৮-২০১৩) ঘুরে এলাম ছবির মত সুন্দর ছড়ির দেশ খাগড়াছড়ি থেকে। খাগড়াছড়িতে রিলাক্স ট্যুর যারা দিতে চান তাদের ঘুরা সার্থক এবং রোমাঞ্চকর করে তোলার জন্য হাতে গোনা কয়েকটি স্পটই যথেষ্ট!! এখানে সেরকম কয়েকটি জায়গা নিয়েই ধাপে ধাপে আলোচনা করবো। চেস্টা করবো ডিটেইলস দিতে তারপরও ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন বলেই আশা করব।





পর্ব-১

রিসাং ঝর্ণা







খাগড়াছড়ি আর রিসাং ঝর্ণা ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। কাউকে যদি জিজ্ঞেস করেন খাগড়াছড়িতে দেখার মত কি আছে আমি শিউর ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই প্রথমে বলবে রিসাং ঝর্নার কথা! আর একজন বলবে কিচ্ছু দেখার নাই খালি পাহাড় আর পাহাড়!!! :P







খাগড়াছড়ি শহর থেকে আনুমানিক ২২-২৫ কিলোমিটার দূরে সম্পূর্ণ পাথরের পাহাড় থেকে সৃষ্ট এই অপূর্ব ঝর্ণার রূপসুধা পান করতে হলে আপনাকে ভালই কস্ট করতে হবে কারন মেইন রোড থেকে রিসাং প্রায় আধা ঘন্টার হাঁটা পথ। তবে পথের ক্লান্তি টেরই পাবেন না কারন ইট বিছানো পথের দু পাশেই চলবে মেঘের লুকোচুরি







আর পথের পাশেই পাবেন আদিবাসী শিশুদেরকে যারা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আপনাকে দেখছে কেউ কেউ আছে আবার আপনার কাছে ছবি তোলার জন্য টাকাও চাইতে পারে!!!







রিসাঙ্গে নামার পথটি সিঁড়ির তাই নামা নিয়ে কস্ট নাই তবে উঠার সময় খবর আছে!!



নামতে নামতেই শুনতে পাবেন পানির গর্জন আর যদি একটু বৃষ্টি হয় তাহলে তো কথাই নাই নামার আগে থেকেই শুনতে পাবেন ঝর্ণার ডাক যেই ডাক উপেক্ষা করা আমার মত মানুষের পক্ষে অসম্ভব!! শেষ পথটুকু তো একরকম দোউড়েই পার হয়ে গেছি!!



তবে দৌড় দেয়ার সময় সাবধান কারন পা ফস্কালেই খাদে। আর খাদে না গেলেও আপনাকে চড়তে হবে কাঁধে!! অর্থাৎ মারাত্মক ভাবে আহত হওয়ার রিস্ক আছে। রিসাঙ্গের সীমানায় ঢোকার মুখেই চোখে পড়লো একটি বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা, এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ধরনের থ্রি কোয়ার্টার আর হাফপ্যান্ট অবশ্য কিছু ছোট প্যান্টও ছিলো!!! ;) :P







কেন এই অবস্থা সেটা নিয়ে গবেষণা করতে করতে উঠে গেলাম মূলমঞ্চে অর্থাৎ রিসাং ঝর্ণার মুল ধাপে। এই পর্যায়ে এসে আপনাকে বিরাট সাহস ও বডি ব্যাল্যান্সের পরীক্ষা দিতে হবে কারন রিসাং ঝর্ণায় গোসল করতে হতে আপনাকে প্রায় ২০-৩০ হাত জায়গা পেরিয়ে যেতে হবে এই জায়গাটুকু যে কি পরিমান পিছলা সেটা ভুক্তভুগি ছাড়া কেউই বুঝতে পারবে না। তবুও আপনাদেরকে একটা ধারনা দেয়ার চেস্টা করি মনে করেন কাচের উপর সাবান মাখিয়ে সেই কাঁচকে প্রায় ৬০ডিগ্রী কোনে খাড়া করিয়ে আপনাকে সেটা পাশাপাশি পার হতে দেয়া হল। জানি বিশ্বাস করবেন না তারপরও বলছি রিসাঙ্গের মুল ধারায় যাওয়া এর চেয়েও কয়েকগুন কঠিন কারন একবার পা হড়কালে পাথরের সাথে বাড়ি খেয়ে গড়াতে গড়াতে সোজা নিচে। তাই সাবধান হওয়ার কোন বিকল্প নেই।









তবে আপনাদেরকে একটা বুদ্ধি দিতে পারি সেটা হলো আমার মত রিবক বা নাইকির একজোড়া স্পোর্টস স্যান্ডেল (অবশ্যই বেল্ট সহ) নিয়ে যেতে পারেন কারন এটা পরা থাকলে পা পিছলায় না বললেই চলে!! :D অনেকেরই ধারনা খালি পায়ে পিছলায় কম এই কথাটা সত্যি শুধু মাত্র মাটির পেছল রাস্তার বেলায় পাথরের ক্ষেত্রে জুতার কোন বিকল্প নেই কারন খালি পা পাথরের রাস্তায় খুব বেশি পরিমানে স্লিপ করে। ফিরে আসি মুল কথায়, আমি যখন সাহস আর জুতা নিয়ে ঝর্ণায় গোসল করার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম তখন দেখি একজন চিতপটাং হয়ে সোজা নিচের দিকে রওনা করলেন তাকে ধরতে গিয়ে তার সঙ্গী হলেন আরো দুজন! তাই পিছন ফিরে বন্ধুদের বললাম দোস্ত নিচে যাইতে মুঞ্চাইলে একলাই যাইও আমারে ডাইক না পইড়া যাওয়ার সময় আমি কিন্তু তোমারে চিনিনা!!! :P





ধীরে ধীরে পৌছে গেলাম মুল স্রোতে তবে তার আগে আমিও একবার ধপাস হইছি বন্ধুর টানের চোটে :D কিন্তু উপস্থিত বুদ্ধির জোরে নিচে যাই নাই কারন আমি গড়ান দিয়া যারা বসা ছিল তাদের কোলে গিয়া পড়ছি!! :D আর অদ্ভুত হলেও সত্য যে যে জায়গায় পানি পড়ছে সেই জায়গাটা খুবই খসখসে অর্থাৎ পেছল না! এরপর শুরু হল রোলার কোস্টিং!!





কারন রিসাং হল বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক রোলার কোস্টার। তবে রোলার কোস্টিং এর সময় খুব সাবধান যারা রোলিং করবেন তারা অবশ্যই পরস্পরকে খুব শক্ত করে ধরবেন কোন ভাবেই যেন কেউ লাইনচ্যুত না হয় এবং বডি ব্যালান্স নস্ট না হয় কারন তাহলে পাথরে বাড়ি খেয়ে আপনার মাথা ফেটে যেতে পারে যেমনটি হয়ে ছিল আমাদের এক বন্ধুর বেলায়।



এবং অতি অবশ্যই লুঙ্গি পরে রোলিং করবেন না কারন জায়গাটা প্রচুর খসখসে এখানে থ্রি কোয়ার্টারই ছিড়ে ফালা ফালা হয়ে যায় আর লুঙ্গি নিয়া রোলিং করলে তো মানসম্মানও ফালা ফালা হওয়ার কঠিন চান্স আছে!! :P



এই হল রিসাঙ্গের ইতিবৃত্ত, তবে রিসাঙ্গের প্রায় ৭৫০ ফিট নিচে আরেকটি চমৎকার ঝর্ণা আছে সেখানে যেতে চাইলে স্থানীয় গাইড নিয়ে যাওয়া লাগে, পানি বেশি থাকার কারনে আমরা এবার সেখানে যেতে পারিনি।

তবে রিসাঙ্গের রূপ দেখে আমি মুগ্ধ!! সময় এবং সুযোগ পেলে আবারো যাওয়ার ইচ্ছা আছে, পরবর্তী পর্বে লিখবো খাগড়াছড়ির আরেকটি অসাধারন স্পট “দেবতা পুকুর” নিয়ে, আমার জন্য দোয়া করবেন। সবাইকে ধন্যবাদ। :)





যাওয়া, থাকা, ঘুরা এবং খাওয়াঃ



আমরা গিয়েছিলাম ঢাকার কমলাপুর থেকে শ্যামলী বাসে করে সরাসরি খাগড়াছড়ি জনপ্রতি ৫৫০ টাকা করে ভাড়া। দামী হোটেলে থাকতে ও খেতে চাইলে পর্যটন মোটেলে নামুন আর আমাদের মত সস্তায় ভাল হোটেলে থাকতে চাইলে শাপলা মোড়ে নেমে পড়ুন, মতিঝিলের শাপলা চত্তরের মত এই শাপলা মোড়ও বাজারের একদম মাঝখানে চার রাস্তার মোড়। নেমে আশেপাশে তাকালেই দেখতে পাবেন বিভিন্ন হোটেলের সাইনবোর্ড ও বিজ্ঞাপনের ব্যানার ঝুলছে দামাদামী করে নিজের পছন্দমত দামের রুমে ঢুকে পড়ুন, তবে অবশ্যই দামাদামি করার আগে রুম দেখে নিতে ভুলবেন না এবং কতজন থাকবেন সেই সংখ্যাটাও হোটেল কতৃপক্ষকে জানাতে ভুল করবেন না। মুল বাজারেই অনেকগুলো খাবার হোটেল আছে সেখানে মোটামুটি বিরানি হতে শুরু করে ডাল ভাত সবই আছে তবে স্বাদে একটু নতুনত্ব আনতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই যেতে হবে পাঙ্খোইয়া পাড়ার সিস্টেম রেস্টুরেন্টে!!





নাম শুনে একটু কেমন কেমন লাগতে পারে কিন্তু ওখানে না গেলে আপনি বুঝতেই পারবেন না যে কত সস্তায় মানুষ বাঁশ খেতে পারে এবং এক সাথে এত আইটেমের!! :P এই বাঁশ সেই বাঁশ না এই বাঁশ হল বাশের তরকারী, ভর্তা এবং ডাল। অসাধারন এই রেস্টুরেন্টে পাবেন আরো নানা ভিন্ন রকমের স্বাদ। এই হোটেলের পরিবেশন প্রনালী অত্যন্ত চমৎকার এবং হোটেলের কর্মচারীরাও ভীষণ আন্তরিক।



ঘুরাঘুরির ক্ষেত্রে খাগড়াছড়ি বাজারের অটোই বেস্ট, শুধু দরদাম করে উঠে পড়লেই হলো আপনাদের সুবিধার জন্য ভাড়ার একটি তালিকা দেয়া হলোঃ



শাপলা থেকে সিস্টেম রেস্টুরেন্ট জন প্রতি ৫-৬ টাকা

শাপলা থেকে টার্মিনাল(বাস ষ্টেশন) জন প্রতি ১০ টাকা



রিসাং যেতে হলে টার্মিনাল থেকে ফেনী অথবা চট্টগ্রাম গামী বাসে লোকাল যেতে পারেন ২০-২৫ মিনিট লাগবে, জনপ্রতি ১৫-২০ টাকা ভাড়া নিবে। এছাড়া চান্দের গাড়ী বা সিএনজিতেও যেতে পারেন সেক্ষেত্রে ভাড়া গুনতে হবে ৭০০ থেকে ১১০০ টাকা পর্যন্ত



অনুরোধ এবং সতর্কতাঃ

১. আদিবাসীদের সাথে খারাপ আচরন করবেন না, ছবি তুলার আগে অনুমতি নিন যদি অনুমতি মিলে তবেই ছবি তুলুন। কারন হুট করে একটা অপরিচিত বাইরের মানুষ এসে আপনার অথবা আপনার পরিবারের কারো ছবি তুলুক এটা নিশ্চয়ই আপনিও চাইবেন না। তবে বাচ্চাদের ছবি তোলার ক্ষেত্রে আশেপাশে বড় কেউ না থাকলে অনুমতির দরকার নেই!! :P

২. আমরা আদীবাসীদের কথা না বুঝলেও তারা খুব ভালো বাংলা বুঝে তাই সামনাসামনি তাদের সম্পরকে কোন মন্তব্য করার সময় সতর্ক থাকবেন।

৩. অবশ্যই হাতের কাছে প্রয়োজনীয় ফার্স্ট এইড রাখুন আর সম্ভব হলে রিসাঙ্গে হেলমেট নিয়ে যাবেন কারন আছাড় খেলে মাথা ফাটার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি

৪. চিপ্সের প্যাকেট, পানির বোতল বা পলিথিন জাতীয় কোন কিছু ঝর্ণার আশেপাশে ফেলবেন না সাথে করে নিয়ে এসে সঠিক স্থানে ফেলুন। এবং আপনার ছেঁড়া থ্রি কোয়ার্টারটিও নিদৃস্ট জায়গায় ফেলুন ঝর্ণার সৌন্দর্য অথবা প্রাকৃতিক পরিবেশ ঠিক রাখার দায়িত্ব পর্যটকদেরই আমরা প্রত্যেকেই যদি একটু সতর্ক হই তাহলেই আমাদের দেশের সৌন্দর্যগুলোকে টিকিয়ে রাখতে পারবো অনেক দিন :)



আরো কিছু ছবিঃ













আরো কিছু জানার থাকলে এখানে ক্লিক করুন, ধন্যবাদ :)





কমেন্ট সহ ছবি দেখতে হলে ক্লিক করুন

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৫:২০

খেয়া ঘাট বলেছেন: এরকম পোস্টে ছবি নাই। কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে।

০৫ ই মে, ২০১৪ রাত ৩:২১

মুন্ন৮৮ বলেছেন: ছবি দেয়া হয়েছে :)

২| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৯:২৭

আহলান বলেছেন: ছবি কই?

০৫ ই মে, ২০১৪ রাত ৩:২২

মুন্ন৮৮ বলেছেন: ছবি দেয়া হয়েছে :)

৩| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:০৯

আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট। খুব ভাল লাগলো, ধন্যবাদ।

০৫ ই মে, ২০১৪ রাত ৩:২২

মুন্ন৮৮ বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ!!

৪| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:৪৯

ইকরাম বাপ্পী বলেছেন: Chobi thakle valo hoto....tar poreo valo legecge pore.... Koyjon giye chilen......sob miliye khoros koto hoyeche?

২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৩:৫৩

মুন্ন৮৮ বলেছেন: ইক্রাম ভাই আমরা ছয়জন গিয়েছিলাম ২ দিন ছিলাম জনপ্রতি প্রায় ২৫০০ করে খরচ হয়েছে।

৫| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৬

মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেছেন: আন্ডা পোস্ট! ছবি ছাড়া ভ্রমন পোস্ট দেয়া পাঠকের সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই না। আজকের ভিতর বিস্তারিত ছবি না দিলে কালকে মাইনাস পাবেন।

৬| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৩:২০

মুন্ন৮৮ বলেছেন: সবাইকে ধন্যবাদ পোস্ট পড়ার জন্য। সবার কাছে দুঃখিত এবং ক্ষমা প্রার্থী কারন গতকাল নেট সমস্যা থাকায় ছবি দিতে পারিনি, তাই আজকে দিলাম।

৭| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৮

এক্সপেরিয়া বলেছেন: ভ্রমন কাহিনী ভাল লাগে.... পরের পর্বের অপেক্ষায়....

৮| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:১০

লিখেছেন বলেছেন: শাপলা থেকে সিস্টেম রেস্টুরেন্ট জন প্রতি ৫-৬ টাকা
শাপলা থেকে টার্মিনাল(বাস ষ্টেশন) জন প্রতি ১০ টাকা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.