নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি গুছিয়ে কিছুই লিখতে পারি না কিন্তু মনে অনেক গল্প জমা আছে, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা তিনি যেন একদিনের জন্য হলেও আমাকে লেখার ক্ষমতা দান করেন।
অতি সম্প্রতি খাগড়াছড়ি গিয়েছিলাম নগর জীবনের ব্যাস্ততা থেকে কিছুটা রিলাক্সেশনের উদ্দেশ্যে, সেই ট্যুরের বর্ণনাই দেয়ার চেস্টা করছি ধারাবাহিক “ঘুরে এলাম খাগড়াছড়ি” তে। প্রথম পর্বে ছিল রিসাং ঝর্ণা আর আজ দ্বিতীয় পর্ব লিখছি খাগড়াছড়ির আরেক আকর্ষণ দেবতা পুকুর নিয়ে।
আমরা ১৬ তারিখ সকালে নাস্তা করে স্থানীয় বাজার থেকে কিছু দরকারি জিনিসপত্র (আখ, পানি, পেপার, মুরগি, মশলা ইত্যাদি) নিয়ে চান্দের গাড়ি করে রওনা হয়েছিলাম প্রায় সকাল ১১ টার দিকে।
১ টার দিকে আমাদের কে নামিয়ে দেয়া হল দেবতার পাহাড়ের নিচে বাকিটুকু হাঁটা পথ।
যারা বগা লেক গিয়েছেন তাদের কাছে মনে হতে পারে দেবতা পুকুর বগা লেকের সিনিয়ার বড় ভাই কারন বগা লেকের মতই এটিও প্রায় ১-১.৩০ ঘন্টার হাঁটা পথ। হাঁটা পথ বললে খানিকটা কম বলা হয় বলতে হবে প্রায় ২০০০-২৫০০ ফিট খাড়া চড়াই, এই চড়াই আপনার মানসিক এবং শাররীক শক্তিমত্তার চরম পরীক্ষা নিবে আর এর সাথে যদি চড়া রোদ অথবা বৃষ্টির দেখা পান তাহলে তো সোনায় সোহাগা!! কারন তখন এই এক-দেড় ঘন্টার পথকে মনে হবে অনন্ত কালের পথ কারন দেবতা পুকুরের পুরো পথটিই লাল মাটির, আর লাল মাটিতে বৃষ্টির ছোঁয়া মানে তার জীবন্ত হয়ে ওঠা!!
এটি আপনাকে টেনে ধরবে, পিছলা হয়ে আপনার গতি বাড়িয়ে দিবে তবে উপরের দিকে নয় নিচের দিকে!! :v জুতা ভারী করে দিবে অর্থাৎ যতটা সম্ভব আপনার পরীক্ষা নেয়ার চেস্টা করবে। কিন্তু পথিক কি আর পথ কে ভয় পায়?? তাই এর মধ্যে দিয়েই উঠতে
হবে প্রাকৃতিক হট ওয়াটার বাথটাব দেবতা পুকুরে!!
তবে এই পথটা বেশ চওড়া বগার মত চাপা না এটাই স্বস্তির ব্যাপার। এই পথ ধরেই ধীরে ধীরে পাখির গান শুনতে শুনতে আর পাহাড়ী ফুল আর পাহাড়ীদের সুন্দর সুন্দর জুম ক্ষেত আর বাড়িঘর দেখতে দেখতে
চলে এলাম দেবতা পুকুর ঝর্ণার একদম উপরের ধাপে। স্বচ্ছ সুন্দর জলের স্রোত বয়ে যাচ্ছে নিচের ধাপে এভাবে ধাপের পর ধাপ বেয়ে মিশে যাচ্ছে পাহাড়ী জলধারায়।
তবে পানির আশে পাশে পাহাড়ী গাছের মরা ডালপালা আর পচা পাতা থাকায় এই পানি খেতে পারলাম না আফসোস!!
এই জায়গায় এসে আমাদের দেখা হল দুই ভাইএর সাথে তারা আমাদের কথা দিল আমাদেরকে এই ঝর্ণার নীচের ধাপে নিয়ে যাবে আমাদের পথচলার সঙ্গী বাড়ল আরো দুই জন!!
এক সময় পুকুরের পাশের বিশাল বটগাছের নীচে এসে শেষ হল আমাদের ক্লান্তিকর এই যাত্রা।এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস এসে জুড়িয়ে দিয়ে গেল প্রাণটা, কানে কানে যেন প্রকৃতিদেবী ফিসফিস করে তার এই অপূর্ব সৃষ্টিতে স্বাগতম জানাল !
!
পাহাড়ের আকাশের কোন ঠিক ঠিকানাই নাই এর মধ্যেই হালকা বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল অথচ আমাদের তখনো অনেক কাজ বাকি!! কারন আমরা মুরগি নিয়ে এসেছি বারবিকিউ করার জন্য লাকড়ি সংগ্রহ করবো পাহাড় থেকেই তাই বৃষ্টি হলে এই প্ল্যান পুরাই মাটি!! অতি দ্রুত লাকড়ির খোঁজে গেল দুইজন আর বাকিরা মুরগি, শিক আর চুলা তৈরিতে লেগে পড়লাম।
তারপরও শেষ রক্ষা হল না আগুন জ্বালানোর আগেই ঝুম বৃষ্টির কবলে পড়লাম তবে এক্ষেত্রে আমাদের আশ্রয় দিলেন স্থানীয় এক বাঙ্গালী তিনি তার স্রমিকদের থাকার ঘরটি খুলে দিলেন আমাদের জন্য সাথে দিলেন আগুন জ্বালানোর অনুমতি, আর কি লাগে!! শুরু করলাম বারবিকিউ!!
আগুন ধরিয়ে দিয়েই আবার ছুটলাম বৃষ্টিতে ভিজতে, পাহাড়ী বৃষ্টিতে ভিজার যে কি মজা তা বলে বুঝানো যাবে না শুধু এটুকুই বলব যে পাহাড়ি বৃষ্টিতে যারা ভিজেন নাই তারা জীবনে বৃষ্টিবিলাসের আসল মজাটা থেকেই বঞ্চিত রয়ে গেলেন!!
বৃষ্টিবিলাসের সাথে সাথে চলছিলো দেবতা পুকুরের হট ওয়াটার বাথ!! সারা শরীর পুকুরের কুসুম কুসুম গরম পানিতে ডুবিয়ে রেখে মাথার উপর বৃষ্টির বরফ শীতল পানির ফোঁটা!
আহা!!! সারাটা পথের ক্লান্তি এক নিমিষেই উধাও হয়ে গেল। জলকেলি () করতে করতে কখন যে দুই ঘন্টা কেটে গেল টেরই পাইনি!! এদিকে খিদেয় পেটে চলছে ছুঁচোর নাচন, মনে পড়ল বারবিকিউর কথা আবার ছুট লাগালাম এসে দেখি বারবিকিউ রেডি!! আর দেরি সহ্য হল না ৩ কেজি মুরগি যেন মনে হল তিন টুকরা!! নিমিষেই শেষ পানি খেয়ে ফিরতি পথ ধরলাম, তখনো মাথায় দেবতা পুকুর ঝর্ণার শেষ ধাপ দেখার চিন্তা!! বৃষ্টির পর আকাশ অসম্ভব পরিষ্কার হয়ে গেল তবে মেঘের আনাগোনা দেখা যাচ্ছিল বেশ, ঘুরপথে ঝর্ণায় যেতে লাগলো প্রায় ২০ মিনিট আর তারপর দেখলাম এক অবিশ্বাস্য দৃশ্য পাথরের পাহাড় ফুঁড়ে অসম্ভব বেগে বেরিয়ে আসছে তীব্র পানির স্রোতধারা।
তবে বৃষ্টির পরবর্তী ঝর্ণার জল ঘোলা আর ময়লা হয় তাই আর আশ্রয় হল না এই সুন্দরীর কোলে!! তবে দেখলাম পানীর তীব্র স্রোতে পাথরধসে ঝরনাটায় যাওয়ার পথকে করে তুলেছে রোমাঞ্চকর!!! এর পর পাহাড়ি নদী পেরুলাম পায়ে হেঁটে আর স্রোতের সাথে যুদ্ধ করে
আর তারপর?? তারপর অতি দ্রুত চাঁদের গাড়িতে যাত্রা করলাম শহরের পথে কারন আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল বাংলাদেশের আরেক সৌন্দর্য বিহার রাঙ্গামাটি
মেঘের চাদর গায়ে ঘুমায় পাহাড়!!!
কিভাবে যাবেন??
খাগড়াছড়ি বাস স্ট্যান্ড থেকে চাঁদের গাড়ীতে যেতে হবে দেবতা পুকুর পাহাড় পর্যন্ত আসা-যাওয়া ভাড়া পড়বে ১০০০-১৫০০ টাকা। তারপর বাকী পথ যেতে হবে হাঁটতে হাঁটতে।
সতর্কতাঃ
শারীরিক ও মানসিক ভাবে ফিট না হলে এই পথে রওনা না হওয়াই ভাল, কারন আপনার জন্য বাকিদের আনন্দ মাটি হোক তা নিশ্চয়ই চাইবেন না!!
রওনা হওয়ার পর কেউ যদি অসুস্থ (শাররীক বা মানসিক) হয়ে পড়েন তাহলে তাকে দোষারোপ বা টিটকারি না করে মানসিক সাপোর্ট দেয়ার চেস্টা করুন কারন দলের কেউ একজন অসুস্থ হলে তা এইরকম বিপদসঙ্কুল রাস্তায় দলের সবার জন্যই বিপদ ডেকে আনবে।
পর্যাপ্ত খাবার পানি নিয়ে রওনা করুন কারন এখানে খাবার মত কোন পানি নাই একদম চুড়ায় আদিবাসীদের একটি দোকান আছে।
প্রয়োজনীয় এবং সাধারন কিছু ফার্স্ট এইড সঙ্গেই রাখুন।
ধীরে ধীরে পাহাড় বেয়ে উঠুন সবচেয়ে ভাল উপায় ৫ মিনিট হাঁটা তারপর বিশ্রাম আবার ৫ মিনিট হাঁটা আবার বিশ্রাম এইভাবে। তাড়াহুড়া করলে অক্সিজেনের ঘাটতির কারনে মাথা ব্যাথা বা মাংস পেশিতে টান পড়তে পারে।
দল এবং দলের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন কারন বিপদে পড়লে দলের লোকজনই আপনার সাহায্যে এগিয়ে আসবে অন্য কেউ না!
অনুরোধঃ
পাহাড়িদের সাথে ভাল আচরন করুন, ছবি তোলার সময় অনুমতি নিন, জুম ক্ষেত মাড়াবেন না, অনুমতি ছাড়া গাছের পাতা ছিড়বেন না বা ডাল কাটবেন না। এমনকি পাহাড়িদের পানির উৎস হতে পানি সংগ্রহ বা পানের জন্য অনুমতি নিন।
মনে রাখবেন সহনশীলতা মানে ছোট হওয়া নয় আপন করে নেয়া!!
সাথেই থাকুন আসছি আলুটিলার রহস্যময় সুড়ঙ্গ নিয়ে ততক্ষন পর্যন্ত ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন,আল্লাহ হাফেজ।
ডিটেইলস দেয়ার চেস্টা করেছি তারপরও যেকোন ধরনের পরামর্শ লাগলে ইনবক্সে আওয়াজ দিয়েন!!
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৫৮
মুন্ন৮৮ বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:১৫
সুজন দেহলভী বলেছেন: "সহনশীলতা মানে ছোট হওয়া নয় আপন করে নেয়া! - ভালো লাগলো।
২১ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৩৮
মুন্ন৮৮ বলেছেন: ধন্যবাদ!!
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:৪১
খেয়া ঘাট বলেছেন: চমৎকার লাগলো। একেবারে আপনাদের চলার পানে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলাম।