নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখাটা অনেক আগের। ২০০৪ এর। পানির নিচের ছবি তোলার জন্য ১ মাসের মতন ছিলাম ছেরা দ্বীপ এ। সংরক্ষণের জন্যও রেখে দিলাম। এর মধ্যে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। হামিদ ভাই, যার ক্যামেরা দিয়ে কাজ করেছিলাম, মারা গাছেন। দ্বীপটা নষ্টও হইয়ে গেছে বলা যায়। আজ খুঁজে পেলাম লেখাটা। পড়তে পড়তে খারাপ এ লাগল।
________
"টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া" লাইনটি আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং প্রসংগত প্রায় সকল কাজের সাথেই কোন না কোন ভাবে জরিত৷ মূল কারন হিসেবে আমরা বিনা বাধায় বলে ফেলি দেশের সর্ব দনি এবং সর্ব উত্তর প্রান্তের নাম, নানা উপমায়, কথার কথায়৷
কিন্তু টেকনাফ মোটেও আমাদের দেশের শেষ প্রান্ত নয়৷ পৃথিবীর সর্ব বৃহত্ ব-দ্বীপের শেষ প্রান্তের নাম ‘নারিকেল জিনজিরা’ ৷ আজ থেকে প্রায় দেড় শ বছর আগে শুরু হয় বসতি বঙ্গোপসাগরের বুকে ফুলে থাকা ছোট্ট প্রবাল দ্বীপে৷ দ্বীপে শুধু নারিকেল বাগান আর নারিকেল বাগান৷ সে হিসেবেই বোধ হয় নারিকেল জিনজিরা নাম৷ মোটেও অমুলক নয়৷ বরং নাম হিসেবে এটাই বেশি স্বার্থক৷ বাংলা নামটা সবার জানা না থাকলেও সেন্ট মার্টিন নামটা আমরা প্রায় সবাই জানি৷ মুলত ব্রিট্রিশ প্রোভিনশিয়াল সার্ভেয়ারের দেয়া নামানুসারে এর নাম হয় ‘সেইন্ট মার্টিন’স আইলেন্ড"৷ দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ৷ একমাত্র প্রাকৃতিক শহর৷
প্রাকৃতিক ভাবে ২০ডিগ্রি ৩৪মিনিট থেকে ২০ ডিগ্রি ৩৯মিনিট উত্তর এবং ৯২ ডিগ্রি ১৮মিনিট থেকে ৯২ ডিগ্রি ২১মিনিট পূর্বে অবস্থিত৷ দ্বীপটি মূলভূমি থেকে ৯ কিমি চওড়া চেনেল দ্বারা আলাদা হয়ে বঙ্গোপসাগরের উত্তর পূর্বে অবস্থিত৷ সাগর বক্ষে থাকলেও এর জলবায়ু নিয়ন্তিত হয় উষ্ণমন্ডলীয় মৌসুমি বায়ু দ্বারা৷ সারা বছরের গড় তাপমাত্রা প্রায় একই রকম থাকে৷ কিন্তু বর্ষা এবং এর সমসাময়িক সময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত জনিত কারনে দনি পূর্বাঞ্চল তলিয়ে যায়৷ মূলত দনি-পশ্চিমা মৌসুমি বৃষ্টিপাত জুন থেকে জুলাই পর্যন্ত চলে ৷ এ সময় তাপমাত্রা থাকে সবচেয়ে বেশি ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ এছাড়া মোটামুটি বছরের অন্যান্য সময় স্বাভাবিকই বলা যায়৷
এতো গেলো নারিকেল জিনজিরার কিছুটা খতিয়ান৷ কিন্তু সর্ব দক্ষিনের এই প্রবাল গ্রহটি আমাদের যে কোন বয়সী প্রকৃতি প্রেমির ভাল লাগার স্থান৷ বৃহত্তর চট্টগ্রামের কঙ্বাজার জেলার শেষ অংশ এই নারিকেল জিনজিরা ৷ একপেশে নগর কেন্দ্রিক জীবনে অতিষ্ট হয়ে পালাবার উত্কৃষ্ট স্থান এই দ্বীপ ৷ ঢাকা থেকে সরাসরি কঙ্বাজার কিংবা চট্টগ্রাম থেকেও যাওয়া যায় টেকনাফে৷ নাফ নদীর কোলে ছোট্ট এক শহরের নাম টেকনাফ ৷ বানিজ্যিক ভাবে এই স্থান আন্তর্জাতিক বন্দর হতে পারে পাশ্ববতীদেশ মায়ানমারের নিকটবর্তী বলে। লম্বা যাত্রায় কান্ত হয়ে নাফ নদীর সৌন্দর্য প্রথমটা কিছুটা হোচট খাওয়ার মত৷ ইদানিং কালে সী ট্র্যাক নামক যন্ত্র দানবের নোঙ্গর ফেলার স্থান মূল শহরের কিছুটা বাইরের হওয়াতে অনেকই টেকনাফ শহরেই আর প্রবেশ করে না৷ দেশি নৌকায় যাত্রা তাত্তিক ভাবে নিরাপদ বলে মনে করেন না অনেকেই৷ কিন্তু শত বছরের ব্যবহৃত জেলে নৌকা আজও নিরাপদ বিনা কথায়, শুধু এতটুকু খেয়াল রাখতে হবে তা যেন এমভি সালাউদ্দিনের মত গুদাম না বানান হয়! নৌকায় নাফ নদীর সবুজে পানি যে কারও ভাললাগতে বাধ্য৷ এখানে বলে রাখা ভাল টেকনাফ থেকে নারিকেল জিনজিরার পথটার অনেকটাই কাটে এই নাফ নদীতে৷ একটু ল করলেই দেখা যাবে বাম পাশেই রয়েছে মগের মুল্লুক৷ রূপকথার কামরূপ কামাক্ষা, সর্পবিদ্যা আর জাদুটোনার দেশ বার্মা৷ যদিও এর বর্তমান নাম মায়ানমার৷ একই ধরনের নৌকা আর পোশাক আশাক বুঝতেই দিবে না ওরা এদেশিয় নয়৷ নৌকার মৃদু দুলনিকে আরও খানিকটা আনন্দময় করতে হলে চুপকরে শুয়ে যেতে হবে পাটাতনে ৷ চোখ মেললেই শুধু আকাশ, তখন ভয়ও হারিয়ে যাবে বিশাল আকাশের কাছে৷ এত বড় আকাশ একসাথে দেখার আর কোন উপায় আছে বলে আমার জানা নেই৷ মাঝে মাঝে দেখা যাবে এলবাট্্রস৷ সারেং এর ঠিক মাথার উপর নির্ভয়ে উড়ে চলছে৷
কখনও বা একা আবার কখনওবা এক ঝাক৷ আকাশ রেখে পাখির দিকে মন দিলে হামেশাই সময়টা চলে যাবে বুঝে ওঠার আগেই৷ পাখিগুলো উপরে উঠে কিছুন উড়ার পর ঝপ করে পানিতে দিবে লাফ৷ আবার ভুস করে ভেসে দেবে উড়াল৷ আজব খেলা৷ শিকার আর শিকারীর অংশ গ্রহন৷ এরই মাঝে মনে হবে দুলনি বোধ হয় বাড়িয়ে দিয়েছে কেউ খানিকটা৷ আসলে তখন সারেং তার তরী নিয়ে দরিয়ায়৷ ঢেউ একটু বেশি হলেই কেউ কেউ বলে উঠবে " দইজ্যা গরম, দইজ্যা গরম "৷ যদিও এ অঞ্চলের আধুনিক Oceanographic অবস্থা জানা যায় খুব কম তবুও দেখা যায় সমুদ্রপৃষ্ঠে স্রোতের মূল কারন হলো বাতাস৷ বছরের নভেম্বর-মার্চ অবধি উত্তর-পূর্ব হতে জোড়াল বায়ু প্রবাহিত হয় যা মূলত সাইকোন প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে৷ নারিকেল জিনজিরায় প্রতি দিনে দুবার জোয়ার, দুবার ভাটা আসে৷ শাহপুরি দ্বীপে সমুদ্র স্রোতের গড় উচ্চতা (mean tidal level, ML) ১.৮৭৪ মিটার প্রায়৷ আর সর্বচ্চো Astronomical tide (HAT) রেকর্ড করা হয় ৪.১ মিটার (BIWTA,1996) ৷ যা ভীতিকর কিছুই না৷ তাই " নাই মরতেই ভুত" হওয়ার মানসিকতা ত্যাগ করলে দেশী নৌকার যাত্রা হবে অনেক বেশী রোমাঞ্চকর আর আলাদ স্বাধের৷ দেখতে দেখতে সময় যাবে শেষ হয়ে৷ এক সময় খেয়াল করলেই দেখা যাবে তলদেশ৷ একটু সামনেই স্বপ্নিল " নারিকেল জিনজিরা"৷ আমরা অনেকেই বোধ হয় হলিউডের টাইটানিক খ্যাত অভিনেতা লিওনার্ড ডিকাপ্রিয় অভিনিত “the beach” মুভিটা দেখেছি৷ সামাজিক যাতনা এড়ানর জন্য দূরে কোন একদ্বীপে আশ্রয় খোজে সভ্যরা৷ দূর থেকে আমার কাছে মনে হল এটাই সে স্থান যা দিবে কান্তিহীন আনন্দ আর নির্ভেজাল বায়ু৷ যান্ত্রিকতা এড়ানর জন্য এর চেয়ে আদর্শ আর কিই বা আছে৷ এবার নামর পালা৷ ভাঙ্গা এক জেটিতে ভিড়ল আমাদের নৌকা, এম ভি ফারুক৷ শুরু হলো দ্বীপবাস যাপন৷
দল হিসেবে আমরা বেশ ভারি৷ পরিকল্পনা অনুযায়ি আমরা ৩ টি দলে ভাগ হয়ে গেলাম৷ নিছক ভ্রমন ছিলনা আমাদের উদ্দেশ্য৷ আগামী বছর মূলভু খন্ড টেকনাফের শাহপুরি থেকে সাতার করবে আমাদেরই অনেকে৷ মূলত এটা হবে একটা লম্বা স্নর্কলিং, প্রায় ১১ কিমি৷ তাই আমাদের এই বিশাল দল৷ মূল পরিকল্পনাকারী দলে প্রখ্যাত স্কুবা ডাইভার হামিদ ভাইয়ের সাথে ছিলেন পাখি বিশ্লেষক ইনাম ভাই এবং ফারুখ ভাই৷ তাদের বিশাল পরিকল্পনার মালামাল সামলানর দ্বায়িত্বে ছিলেন মনা৷ দলে ছিলাম আমরা সবচেয়ে বড়৷ ১২ জন৷ নানা বয়সি৷ এ দলের পরিকল্পনা করেন আজিমপুরস্থ "আমাদের পাঠ চক্র" এর দিপু ভাই৷ এর আগে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া দলে ছিলেন সেলিম, জাহাঙ্গির আর রবিন ভাই৷ তারা মূলত টেকনাফ এবং শাহপুরি দ্বীপের জরিপ কাজ সম্পন্ন করেন৷ ছেলে বুড়ো সবাই মিলে জমা হলাম আতিক ভাইয়ের Oceanic Scuba Diving Service এ৷ তাবু ফেলা হল৷ প্রথম দিন সবাই একটু কান্তু৷ তাবু খাটার পর শুরু হল রান্নার প্রস্তুতি৷ বাজার সদাই আর কি শুধু মাছ, তাও সামুদ্রীক৷ আমাদের অনেকেরই খাওয়ার অভ্যেস নেই৷ মাছ ধরাই দ্বীপবাসিদের প্রধান জীবিকা৷ মূলত মোট জনগোষ্ঠির ৮০ ভাগ মাছ ধরা এবং এর সাথে কোন না কোন ভাবে জরিত৷ ১৯৯৬ এর এক জরিপে দেখা যায় মোট ১৫৯টি নৌকার মধ্যে জেলে নৌকাই ছিল প্রায় ১৫৩টি৷ বর্তমান পরিস্তিতি কিছুটা অন্যরকম৷ পর্যটন এর জন্য দায়ী৷ আনুপাতিক ভাবে জেলে নৌকা বাড়লেও টুরিষ্ট নৌকা বেড়েছে আরও বেশি৷ এধরনের নৌকার ব্যবহার বছরের অক্টোবরের শেষ থেকে ফেব্রুয়ারীর শেষ পর্যন্ত প্রায়৷ ছেড়া দ্বীপ এবং আশপাশের এলাকায় ভ্রমনই হলো এদের আয়ের প্রধান উত্স৷ জেলে দিনের দুই সময়ে মাছ ধরতে যায়৷ এক দল বেশ ভোরে আর আরেক দল বেলা তিনটার দিকে৷ ৬-৭ ঘন্টা চলে মাছ শিকার৷ কিন্তু মাছের পরিমান যাচ্ছে কমে৷ মাছ ব্যবসায়ি জব্বার সাহেবের সাথে কথা বলায় জানা গেল আগে যেখানে মাত্র এক দেড় ঘন্টা নৌকা চালিয়ে যে মাছ পাওয়া যেত এখন তা আর পাওয়া যায় না৷ শুধু যেতেই এখন সময় নেয় ৩-৪ ঘন্টা৷ তারপরও মাছের পরিমান কম৷ এতে করে বাজার দর যাচেছ বেড়ে৷ এই বারেই দেখা গেল মাছ আসছে কঙ্বাজার থেকে৷ হোটেল ব্যবসায়ীরা মাছের চাহিদা মেটানর জন্য বাধ্য হয়ে কিনে আনছেন মাছ৷ নারিকেল জিনজিরা এবং এর আশপাশে আগে প্রচুর লব স্টার এবং চিংড়ি পাওয়া যেত৷ কিন্তু এদের দেখা পাওয়া এখন ভার৷ কারন এরা বাস করে পাথুরে এলাকায়৷ কিন্তু দ্বীপের আশেপাশে বেশখানিকটা এলাকায় এখন প্রবাল পাওয়া ভারি কঠিন৷ সব বিক্রি হয়ে গেছে৷ হাজার বছর ধরে ধীরে ধীরে যে প্রবাল তৈরী করে ছিল সাগর তা দিয়ে তৈরী হল দালান৷ বরই নির্মম৷ মাছ না পাওয়ার অন্যতম প্রধান কারন তাদের বাসস্থানের অভাব৷ তবুও ভাল সচেতনেতা এসেছে এখন৷ তাও বেশ দেরিতে৷ এখন আর দেখা যায়না কোন জেলে ছেনি বাটাল নিয়ে নামছে পানিতে৷ কিছুটা এখনও আছে৷ তাও আশা করি শেষ হয়ে যাবে৷ কাশেম মাষ্টার সাহেবের সাথে কথা বলার সময় তার আপে শোনা গেল৷ আমি বেশ ক দিন তাকে মাঝ বেলায় জেটির কাছে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছি৷ এত মানুষ যে এ দ্বীপে আসবে তা তিনি ঠিক বুঝে উঠতে পারেননা৷ প্রথম বাঙ্গালীর মুখে শোনা যায় অনেক কথা৷ মাত্র ক টা ছাপড়া ছিল, ক একটা মানুষ৷ " সেই সেন মার্টিনে আজ এত মানুষ " আমি বুজিনা তারা কি দেখে, সব তো প্রায় শেষ৷
পরদিন সকালে বেরুলাম জরিপ কাজে৷ মূল উদ্দেশ্য শাহপুরি থেকে শুরু হলে আমাদের সাতার সেন্ট মার্টিনের কোথায় শেষ হবে তা ঠিক করা৷ বেশ কঠিন কাজ৷ স্রোত দেখা, গভীরতা মাপা, এটা সেটা কত কি৷ সারা বেলা গেল এই করতেই৷ বিকালে গ্রিল ফিসের সাথে ক্যাম্প ফায়ার৷ আতিক ভাইয়ের ওসিয়ানিক স্কুবা ডাইভিং স্কুলের উঠান তখন ভরপুর৷ এনজেল ডাস্ট এর সাজ্জাদ ভাই, ইকো টুরস্ এর রাকা ভাই, কাশেম মাষ্টার সাহেব, মেম্বার সাহেবেরা আরও কত জন৷ বিশাল এক আয়োজন৷ রান্নার আয়োজক ফারুখ ভাই৷ দৈনিক জনকন্ঠের মাধ্যমে অনেকেই তার রেসিপি পেয়েছেন হয়তো বা৷ রাত ১০টা পর্যন্ত চলল আনন্দ ঘন্টা৷
পরদিন সকালে আতিক ভাইয়ের সাথে সবাই নামলাম সাগরে৷ বিশাল সাগরের উত্তাল জলরাশি কিছুটা কান্ত এই শীতে তাতে কি বাকিটা যা আছে তাও কম কিসে৷ চলল দাপাদাপি৷ সবাই একসাথে৷ বিশাল আকার ধারন করল যখন ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা যোগ দিল মিছিলে৷ মহাসমুদ্রের পারে জলত্সব৷ এর মাঝে যোগ হল হামিদ ভাইয়ের র্যাফ্ট বোটে মেয়েদের আনন্দ ভ্রমন৷ কেউ সাঁতরে কেউ নৌকায় কেউবা লাইফ জ্যকেটের ভরসায়৷ এর মাঝে ফারক ভাই নামলেন গ্যাস ডাইভিং এ৷ যথেষ্ট আনন্দ উপভোগ করে আমরা গেলাম আসল কাজে৷ পার ধরে বোটে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলাম ছেড়া দ্বীপের দিকে৷ আমি হামিদ ভাই Sonrkeling করে আর বোটে রিমন, জাহাঙ্গির আর সেলিম ভাই৷ সাগরে সাতার কাটছি৷ একটু অন্যরকম৷ প্রথম দিনে হিসেবে ভাই হলো৷ প্রায় ৪ কিলোমিটার৷ দুপুর হয়ে গেছে৷ ফেরার পালা এবার৷ সমস্যা দেখা দিল তখনই৷ এতোনতো আশা হয়েছে স্রোতের দিকে আর এবার বিপরিতে৷ বোটে তখন ৪ জন৷ একজনকে আগেই নামিয়ে দেয়া হয়েছে৷ তাও কিছুটা যাওয়ার পরই হামিদ ভাই আর সেলিম ভাই নেমে গেলেন৷ প্রায় ১ ঘন্টা অনন্ত চেষ্টা করার পর কিছুটা এগুতে পারলাম৷ এর পর ডাইভ ট্যাঙ্ক কাধে নিয়ে নেমে এলাম৷ মাথার উপর রোদ আর পায়ের নিচে আগুনে গরম বালি৷ অস্থির অবস্থা৷ যখন পৌছলাম আমাদের বেইজ ক্যাম্পে তখন শরীরে শক্তির শেষ রিন্দুটা বাকি বোধ হয়৷ গিয়ার গুলো থেকে লবণ পানি পরিস্কার করে শুকাতে দেয়ার পর নিজের গোসল সেরে খাওয়া দাওয়া৷ তাও ভাল ফারুখ ভাই ছিলেন৷ তাই আলিশান খাওয়া হচ্ছিল বেশ৷ বিকালটা তো কখন গেল বুঝতেই পারলাম না৷ সূর্যাস্থ দেখলাম৷ রাত হলে শুধুই আড্ডা আর আড্ডা৷ পরদিনের পরিকল্পনা করা হলো রাতের খাওয়ার পর৷
সকালের নাস্তা সেরে দল মিলে বেরুলাম৷ আজ সরাসরি চলে গেলাম ছেড়া দ্বীপে, হেটে৷ পথের মাঝেই আমরা না না ধরনের কোরাল দেখতে পেলাম৷ যদিও কোনটাই আর বেচে নেই৷ পানিতে নেমে গেলাম৷ নানা ধরনের নানা বর্ণের কোরাল দেখতে পেলাম, দেখলাম মাছ৷ আমার বাসার একুরিয়ামটা আমার প্রথম দিকে খুব ভাল লাগত৷ কিন্তু এখন আর তেমন না৷ কারন একুরিয়াম খুবই সীমাবন্ধ এক জলাধার৷ কিন্তু এখন আমি যেখানে তা আমার বাসার একুরিয়ামের চেয়ে তো কম নয়ই বরং বিশাল৷ এত মাছ আর কত যে রং৷ অবাক হতে হয় বিশ্ময়কর এই জগত দেখার সৌভাগ্য হয়তো অনেকেরই হয়নি৷ নারিকেল জিনজিরার সৌন্দর্য্য অবাক করা, কোন সন্দেহ নাই৷ কিন্তু এর পানির নিচের অবসথা আরও রোমঞ্চকর৷ আরও সুন্দর৷ সেন্ট মার্টিন কে কেন কোরাল দ্বীপ বলা হয় তা এবার বুঝতে পারলাম৷ হরেক রকমের কোরাল তার প্রকৃষ্ট উদাহরন৷ এখন প্রশ্ন আসতে পারে সেন্ট মার্টিন কে কেন কোরাল আইলেন্ড বলা হয়৷ মুলত এখানে শক্ত এবং কেরালাইন লাইমষ্টোন দেখাতে পাওয়া যায়৷ এগুলোই কোরার কাস্টার হিসেবে পরিবর্তিত হয়ে যায় পরবর্তীকালে। আর সেন্ট মার্টিন এ প্রচুর পরিমানে কোরালের উপস্তিতিই এ দ্বীপকে ‘কোরাল দ্বীপ’ বলতে বাধ্য করে, যদিও প্রথম দিকে এর কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ছিল না৷ কিন্তু ১৯৮৫ সালে নারিকেল জিনজিরা কে জাতীয় মেরিন পার্ক হিসেবে প্রস্তাব করা হয় কোরাল রিফের উপস্থিতির কারনে৷ (খান, ১৯৮৫; আনোয়ার,১৯৮৮)
কোরাল রীফ বলতে আমরা হামেশাই বুঝে ফেলি রং বেরং এর পাথরের আশে পাশে সুন্দর সুন্দর মাছ আর ক্রিস্টাল কিয়ার পানি৷ উপর থেকে তাকালে যেন তলদেশ দেখা যায় (!)৷ ভ্রান্ত ধারনা ছাড়া এটা কিছুই না৷ আসলে কোরাল রীফে সৃষ্টির মূলে রয়েছে নানাবিধ জটিল প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া৷ Boitic এবং Abiotic এর ক্রিয়ার মাধ্যমে Calcification, Cementation, Consolidation, Wind, Sea level fluctuation, Current ইত্যাদির নানা ধাপ অতিক্রম করে তৈরি হয় বিভিন্ন আকারের রীফ৷ স্যার চালর্স ডারউন কোরাল রীফ কে তিন ভাগে ভাগ করেছেন, fringing reefs, barrier reefs, Atolls ।
ডারউনের ধারনা অনুজায়ি fringing reefs গুলো সবচেয়ে কম সময়ে তৈরী হয় এবং মূল ভূ খন্ড বা উচু জমির সাথে কোন না কোন ভাবে যুক্ত থাকে৷ কিন্তু অন্যদিকে barrier reefs, Atolls গুলো কিছুটা বেশি সময় নিয়ে তৈরি হয়ে থাকে৷ fringing reefs ধরনের রীফ গুলোকেই উষ্ণ মন্ডলীয় সাগর এবং উপসাগরে বেশি দেখতে পাওয়া যায়৷ সাধারন পর্যটকদের আর্কষন হয়ে দাড়ায় এরাই৷ স্কুবা ডাইভারদের আনন্দের মূল উপাদান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে খুব দ্রুত৷ নারিকেল জিনজিরার আশে পাশে অল্প গভীর জলে এধরনের কোরাল দেখা যায় প্রচুর৷ দ্বীপের উত্তর পশ্চিমে এবং দনি পূর্বে বেশ কিছু লেগুন দেখা গেলেও তারা বেরিয়ার রীফের মত মোটেও গভীর নয়৷ এধরনের লেগুন বা খাড়িতে পাওয়া যায় প্রচুর মাছ৷ নদী মাতৃক এদেশে বিদেশী অনেক খেলা প্রচলিত থাকলেও জল কেন্দ্রিক কোন জনপ্রিয় খেলা আছে কিনা আমার জানা নেই৷ থাকলেও ঐ একটাই, নৌকা বাইচ৷ কিন্তু প্রচুর লোকবল দরকার সেখানেও৷ সে হিসেবে water ski, bording, snorkeling, scuba diving ইত্যাদি হতে পারে নারিকেল জিনজিরার অন্যতম আকর্ষনীয় বিনোদন মাধ্যম৷ এধরনের স্পোর্টসের জন্য খুব বেশি পয়সাকড়ি কিংবা লোক বলের প্রয়োজন হয় না৷ তাও ভাল এবারে দেখে এলাম আতিক ভাইয়ের সাহসী উদ্দোগ৷ ব্যবসায়ীক চিন্তা ধারায় তৈরী হলেও প্রসংশার দাবীদার এক বাক্যে৷ পানির নিচের আলাদা জগত্টা আমাদের কাছে হয়তো কোন দিনও পরিচিত হত না, ওশিয়ানিক স্কুবা ডাইভিং সার্ভিস এর কল্যানে তাও এখন কিছুটা সম্বব৷
অর্থকরী খরচ করে প্রবাল দ্বীপে যাওয়ার পরে প্রবাল না দেখাটা বোধ করি অন্যায়৷ বিচারে কার সৌন্দর্য বেশি তা আমি বলতে পারব না কিন্তু এটা ঠিক সাগরের নিচটা অসাধারন৷ এর জন্য নিজ থেকে দরকার শারীরীক যোগ্যতা আর সাতার জানা৷ দ্বীপের চারপাশের প্রায় সব জায়গাতেই দেখা যায় হরেক রকমের মাছ৷ আছে জলজ উদ্বিদ আর প্রবাল৷ আর এসব দেখার জন্য মাঝ দরিয়ায় ঝাপ দেয়ার কোন দরকার নাই৷ তীরবর্তী ১০ থেকে ১৫ ফুট গভীরতার মধ্যেই দেখা যাবে এত কিছু৷ এধরনের অল্প গভীর পানিতে থাকে ভাল সূর্যে আলো আর তাই পরিবেশ হয়ে ওঠে আরও দর্শনীয়৷ ভাগ্য ভাল থাকলে দেখা যাবে হাজার হাজার মাছের ঝাক৷ বিলাশ লম্বা মাছের ঝাকের মধ্যে কখন যে ঢুকে পরবেন তা বোঝাও যাবে না৷ আরও কিছুন ধর্য্য ধরলে পাওয়া যাবে বড় মাছের দেখা৷ কারন ছোট মাছ গুলোকে তারা করে নিয়ে চলে বড় মাছ৷ তাই হঠাত্ই হতো সামনে চলে আসবে বড় কিছু৷ ভয় পাওয়ার দরকার নাই৷ খুবই নিরিহ এরা৷
প্রবাল গুলোকে কাছ থেকে দেখতে প্রথমে অবশ্যই ভয়ঙ্কর মনে হতে পারে৷ কেমন যেন একটা পরিবেশ৷ একে তো একেবারে অপরিচিত তার উপর বিদঘুটে অবয়ব কোন কোনটার৷ কোটার রং উজ্বল সবুজ আবার কোনটা লালচে ধরনের৷ মৌমাছির চাকের মত দেখতে এক ধরনের প্রবাল৷ তাদের নামও হানিকম্ব৷ এটার নাম ব্রেন কেরাল, উপর থেকে দেখতে অবশ্যই মগজের মতই মনে হয়৷ হালকা বাদামীর মাঝে কিছুটা সবুজে অংশ এটাকে আরও খানিকটা ভয়ংকর করে তোলে৷ কিন্তু কিছুটা সময় এদের মাঝে সাতার কাটলেই বোঝা যাবে এরা কতটা নিরীহ৷ মূলত মাছের খাদ্য হিসেবে এরা ব্যবহৃত হয়৷ সমস্য হলো অন্যখানে, প্রবাল গুলোতে থাকে মারাত্নক ধার৷ একটু অসতর্ক হলেই আর রা নেই৷ দূঘর্টনা হতে বাধ্য৷ সেলিম ভাইয়ের পায়ে যে পরিমান কেটে গিয়েছিল তাদেখে আমরা বেশ ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম৷ অন্য অবস্থায় হলে আমরা অবশ্যই হাসপাতালে যেতাম৷ কিন্তু এই উন্মুক্ত প্রান্তরে কেন জানি কেউই তারাহুরো দেখালাম না৷ মনে হয় সবাই জানতাম, এখানে এটা এমনি ঠিক হয়ে যাবে৷ ডাইভ বোট থেকে নামার সময় খেয়াল না করায় তার এই অবস্থা৷ ফার্ষ্ট এইড দেয়া হলো৷ কিছুটা রা৷ আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা মতে দ্বীপের প্রায় সব জায়গায় স্কুবা বা স্নর্কলিং করা গেলেও ছেড়া দ্বীপ এবং এর আশ পাশের জায়গা গুলো প্রায় স্বর্গ ৷ উচু নিচু কেরাল আর পাথরের জন্য মাছ ধরাটা এখানে কিছুটা কম৷ উত্তর পূর্বে সবচেয়ে বেশি সুন্দর৷ এখানে স্কুবা করা যাবে প্রায় অনেক খানি জায়গায়৷ আর যদি আরও খানিকটা বহি সমুদ্রে যাওয়া যায় তবে দেখা যাবে সার্কদের৷ এটা অবশ্য আমার কথা না, বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর কয়েকজন ডাইভারের সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়াতে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম৷ হামিদ ভাইও তাই বলেন৷ হয়তোবা কোন একদিন জাতীয় কোন জনপ্রিয় দৈনিকে দেখা যাবে "Guaranteed dive with hammer head Shark" নামের বিজ্ঞাপণ৷ এটা অসম্ভব নয়, শুধু দরকার উদ্যোগ৷ আমরা সবাই যাব ঢাকা থেকে, সারা দেশ থেকে৷ অবাক করা সৌন্দর্য শহর নারিকেল জিনজিরায় আর সাগর তলের দেখা আলোর না দেখা রুপ দেখতে৷ উত্তর পাড়ার বাম পাশটায় দেখা যাবে বেশ কয়েকটা লেগুন৷ ভাটার সময় হাটু পানি৷ আর জোয়ারে বুক৷ বিদেশি বইতে পাওয়া লেগুনের শোভা দেখতে পাওয়া যাবে চোখের সামনে৷ কিছুন ধৈর্য্য আর একটু খেয়াল করলে এমনিতেই দেখা যাবে ঝাক ঝাক মাছ ৷ আর যদি কিছু বিস্কিটের গুড়ো নিয়ে যাওয়া যায় তবে তো আর কথাই নাই৷ সময় হারিয়ে যাবে সমুদ্রের কাছে৷ এখানে একটা কথা বলে রাখা উচিত, খালি পায়ে কোন অবস্থাতেই কোরাল কিংবা তীরে হাটা উচিত না৷ এতে করে পাদুকা জোড়া ভিজে নষ্ট হওয়ার ভয় থাকলেও পায়ের যত্ন আগে নেয়া উচিত, নয়তো সারা ট্রিপই ভন্ডুল৷ চলতে থাকল আমাদের অভিযান, সারা দিন, সারা বেলা, সেই সকাল থেকে বিকাল অবদি কান্তি এলেও হামিদ ভাইয়ের কাছ থেকে ছাড় পাওয়া যেত না৷ আনডার ওয়াটার ফটোগ্রাফি করার সময় তো জান যায় যায়৷ আমার ৩ মি মি পুরু ডাইভ স্যুটটায় ঠান্ডা মানত না ঘন্টা খানেক পর৷ একটার পর একটা ডুবদিয়ে ছবি তোলা৷ তাও মুভমেন্টে ভুল হলে আবার করতে হতো৷ কিছুই করার নাই, শুধু এটাই ভাবি আমি যার সাথে কাজ করছি তার অভিজ্ঞতায় National Geography এর সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা৷ এটা শুধু পাওয়া না যে কারও জন্য ভাগ্য বলা যায়, অন্তত আমার মত কারউ জন্য৷ সমস্যা হলো একদিনে এক রোল ছবির বেশি তোলা যেত না৷ ক্যামেরাটা শুকাতে হত তারপর আবার অন্য আরেকটা রোল৷ পানি থেকে ওঠার পর জেকে বসত ঠান্ডা৷ তাই নিয়েই ছেড়া দ্বীপের মৌসুমি আর সাদ্দামের দোকানে পালা করে চা আর গরম মাছ ভাজা খেতাম৷ দাম একটুও বেশি না৷ বরং মূল বাজারের যে কোন দোকানের চেয়ে বেশ খানিকটা তো কমই৷ তার উপর বাসি খাবার পাওয়ার কোন ভয় নেই৷ বাজারের হোটেল গুলো সাতদিন আগের মাছ আজকের বলে দেধারে চালিয়েদেয়৷ তবে কিছু দোকানের খাবারের কথা না বললেই নয়,উন্মুক্ত সাগরের পারে বসে Angel Dust এর খাবার কারও খারাপ লাগবে বলে মনে হয় না৷ ডেকরেশান এবং অন্যান্য সব কিছুই বেশ আলাদা৷ প্রায়ই আমরা দলবেধে কফি খেতে যেতাম৷ পরন্ত বেলা সূর্যাস্থ দেখা না গেলেও আকাশটা কে ভারি অদ্ভুত লাগত৷ এটাই বা কম কি, এত কম টাকায় এত সুন্দর আকাশ আর কোথায় কেনা যায় ?
রাতের বেলা সেলিম ভাই হঠাত্ করেই তাবু থেকে বের হয়ে সবাইকে ডাকাডাকি শুরু করে দিলেন৷ অনেক রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পর আবার ডাকাডাকি কেন, যা হোক শোনা গেল, কিছুন আগে ভূমিকম্প হয়ে গেছে৷ আমি অবশ্য কিছুই বুঝিনি৷ প্রথমটা তো আমরা বিশ্বাসই করিনি৷ কিন্তু সকালে ওস্তাদ( নেভির অবসর প্রাপ্ত কমান্ড ডাইভার শাহনেয়াজ ভাই ) এর কাছেও তাই জানা গেল৷ আর এখানে ভুমিকম্প মোটেও নতুন কোন ঘটনা না৷ আসলে আমরা সবাই ভূমিকম্পের ধ্বংসের ঘটনা কমবেশি জানি৷ কিন্তু এটাবোধ হয় জানি না যে পৃথিবীর আকর্ষনীয় কোরাল রীফ গুলো গড়ে ওঠে ভূমিকম্পন প্রবণ এলাকা গুলো থেকে৷ বাংলাদেশের জন্য এটাই সত্য যে ভূমিকম্প এখানে কোরাল রীফ গড়ে তুলতে কার্যকরী ভাবে সাহায্য করেছে৷ যেমনটা দেখা যায় ইন্দোনেশিয়ায়৷ সেখানে ভূকম্পনের ফলে কোরাল রীফের কলোনি তৈরি হয়েছে অনেক৷,সেদেশের আরকিপেলাগো (Archipelago) পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভূকম্পন প্রবন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত৷ আর এখানেই গড়ে উঠেছে অতুলনীয় সব কোরাল সিসটেম৷ নারিকেল জিনজিরার ক্ষেত্রে ধরা হয় বহু বছর আগে বড় বড় পাথরের বোল্ডার গুলো একসাথে জোড়া লেগেছিল এই কোরাল দিয়ে যা দিয়ে রীফ তৈরি হয়৷ আর হয়তোবা বড় ধরনের কোন ভূকম্পের ফলে বোল্ডার গুলো সরে গেছে মূল ভূমি থেকে৷ যদিও তেমন কোন বড় ধরনের ভূমিকম্পের কথা জানা যায় না৷ তবুও বৈজ্ঞানিক ভাবে এটাই ধারনা করা হয়৷ তবে এতটুকু জানা যায় দ্বীপটির উপরিভাগের খানিকটা নিচেই আছে বড় বড় বোল্ডার, যারা নিজেরা সমান্তরাল ভাবে অবস্তিত৷ অনেকের মতে এই পাথরের গঠনই দ্বীপ তৈরির মূল উপাদান এবং এরা ভূমিকম্পনে না হলেও বড় ধরনের সাইকোনিক ঝড়ের কারনেও এরা মূলভূমি কিংবা সমুদ্রতল থেকে চাপের কারনে জেগে উঠেছে৷ তাই এর উত্পত্তি নিয়ে আছে মতভেদ৷ বৃদ্ধ ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা যায় আগে নাকি বার্মা আর এই দ্বীপ ছিল পাশাপাশি৷ নাফ নদীটাই ছিল শুধু এদের মাঝে৷ ধীরে ধীরে দ্বীপ সরে আসে, নাফ নদী চওড়া হতে থাকে৷ তার কারন তারা জানেনা৷ তবে এরসবই পৌরাণিক কাহিনীর মত৷
অনিনন্দ্য সুন্দর এই দ্বীপ আমাদের দেশের গর্ব৷ একটু পরিকল্পনা আর দায়িত্বশীল হস্তপেই বদলে দিতে পারে এর পুরো রুপ৷ বর্তমানে দ্বীপটি বেশ কিছু দিক থেকে হুমকির সামনে৷ টুরিজমের নামে ইটের বদলে প্রবালের ব্যবহার, গ্যাস, তেল, নৌকার বর্জ্য ইত্যাদি যত্রতত্র নিক্ষেপ ৷ নোঙ্গর ফেলার ফলে ভেঙ্গে যাচ্ছে তলদেশের প্রবাল গুলো৷ এত সুন্দর এই দ্বীপে কোন স্থায়ী জেটি নেই, নেই কোন ভাসমান Anchorage System, ভাবতে অবাক লাগে ! ছোট ছোট নৌকা গুলোকে তীরে তোলার সময় হয়ে যাচ্ছে অপুরনীয় ক্ষতি, প্রবাল গুলো যাচেছ ভেঙ্গে৷ তার উপরেও তো আছে প্রবাল সংগ্রহকারীদের দৌরাত্ব৷ আমরা যদি এভাবে হিসেব করি, প্রতি বছর সারা দেশ থেকে ৩০,০০০ পর্যটক যদি এ দ্বীপ থেকে মাত্র একটা করে ছোট প্রবালও নিয়ে যায় তবে অবস্থাটা কি হবে? ভাবা উচিত্ সবার৷ সরকারী অফিস কিংবা অন্যন্য স্থানে বাগানের আশেপাশে লেখা থাকে ‘ ফুল ছিড়বেন না ‘ ইত্যাদি ইত্যাদি, কিন্তু হায় ! এমন একটা লেখাও চোখে এলনা যে প্রবাল ধ্বংস বা সংগ্রহ থেকে দূরে থাকুন৷ অবস্থার পরিবর্তন না হলে হয়তো নিকট ভবিষতে প্রবাল দ্বীপে পা ভেজানর পানি আর ঢাকা থেকে আমদানি করা সামুদ্রিক মাছ পাওয়া গেলেও প্রবাল আর পাওয়া যাবে না৷ তখন বোধ হয় ‘গুলিস্তান’ সিনেমা হল বিহীন গুলিস্তানের মতোই প্রবালহীন প্রবাল দ্বীপ হবে আমাদের সেইন্ট মার্টিন্স আইলেন্ড৷
২| ০৯ ই জুন, ২০২৪ সকাল ৯:২৪
কামাল১৮ বলেছেন: লেখা এতো বড় যে পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে গেছি।স্বর্ণযোগের ব্লগার বলে মনোযোগ দিয়ে পড়লাম।টাটকা লেখা চাই।
৩| ০৯ ই জুন, ২০২৪ সকাল ৯:৫২
রাসেল বলেছেন: খুব সুন্দর লেখা। পানির নিচের আরো ছবি দেখতে চাই।
৪| ০৯ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:২৯
নতুন বলেছেন: ছবি কই ? এই ব্লগে ১ ছবির ফাকে এক লাইন লেখা থাকা উচিত ছিলো...
৫| ০৯ ই জুন, ২০২৪ রাত ৮:৫৫
গোবিন্দলগোবেচারা বলেছেন: এই ব্লগে বানান ভুল হলে বেয়াদব আখ্যা দেওয়া হয় , কখনো কখনো থাপড়ানোর হুমকিও দেওয়া হয়। আপনার বানানের যা অবস্থা কে কখন থাপ্পড় দিতে চায় সেই কথা ভাবছি।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই জুন, ২০২৪ সকাল ৯:০৪
শেরজা তপন বলেছেন: আর ছবি কই?