নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দক্ষিণ এশিয়ায় জলবিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে একটি আঞ্চলিক গ্রিড গড়ে তোলার প্রস্তাব ক্রমেই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসছে। সদ্য সমাপ্ত কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সমন্বিত গ্রিড বা ‘দক্ষিণ এশিয়া গ্রিড’ তৈরির আহবান জানিয়েছেন। তার উপস্থাপনটি অভূতপূর্ব এবং যৌক্তিক বলা যেতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়া একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময় অঞ্চল। এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সর্ম্পক এবং সহযোগিতার অভাব অনেক সময় উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। তবে জলবিদ্যুৎ শক্তি একটি সম্ভাব্য ক্ষেত্র, যেখানে আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে বৃহত্তর সুবিধা লাভ করা সম্ভব। ভারত, নেপাল ও ভুটান, যাদের পাহাড়ি অঞ্চলে ব্যাপক জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে, তাদের শক্তি উৎপাদন পুরোপুরি বাস্তাবায়ন অন্য দেশগুলোর সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশর ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এবং এই অঞ্চলের জলসম্পদের ব্যবহারকে যদি প্রাধান্য দেওয়া হয়, তবে এটা প্রতীয়মান হতে পারে যে, দক্ষিণ এশিয়া একটি জলবিদ্যুৎ গ্রিড গঠনের জন্য উপযুক্ত এবং যৌক্তিক সময়ে পৌঁছেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার বিদ্যুৎ চাহিদা ও উৎসের বৈষম
দক্ষিণ এশিয়ায় বিদ্যুৎ চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। তবে এই অঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে বড় বৈষম্য রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, নেপাল এবং ভুটানে প্রাকৃতিকভাবে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও, তারা তাদের দেশের চাহিদার বেশি উৎপাদন করতে পারছে না। অন্যদিকে, ভারত এবং বাংলাদেশ বিদ্যুতের বড় ভোক্তা, কিন্তু তাদের নিজস্ব জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা সীমিত। এক্ষেত্রে, জলবিদ্যুৎ শক্তি একটি উপযুক্ত বিকল্প হতে পারে, যেখানে উজানের দেশ নেপাল এবং ভুটান তাদের সম্পদ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে এবং বাংলাদেশ, ভারতসহ অন্যান্য দেশগুলো এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে আমদানির মাধ্যমে।
আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং সাশ্রয়ী জলবিদ্যুতের ব্যবহার
দক্ষিণ এশিয়ার জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনাকে একত্রিত করার মাধ্যমে একটি আঞ্চলিক গ্রিড গঠন করা সম্ভব, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সাশ্রয়ী জলবিদ্যুতের ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে। বর্তমানে, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক দেশ তাদের সম্ভাবনার পূর্ণ ব্যবহার করতে পারছে না। একদিকে নেপাল ও ভুটান তাদের বিপুল জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছে না, অন্যদিকে ভারত এবং বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
উপরন্তু, জলবিদ্যুৎ এক ধরনের ‘সবুজ জ্বালানি’ এবং এর পরিবেশগত ক্ষতি অন্যান্য জ্বালানির উৎসের তুলনায় অনেক কম। তাই দক্ষিণ এশিয়ায় একটি জলবিদ্যুৎ গ্রিড তৈরি হলে শুধু জ্বালানি সংকটেরই সমাধান হবে না বরং এটি একটি টেকসই সমাধানে পরিণত হবে।
অর্থনৈতিক লাভ এবং আঞ্চলিক ঐক্য
দক্ষিণ এশিয়ায় জলবিদ্যুৎ গ্রিড তৈরি হলে, এটি আঞ্চলিক অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে। জলবিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ট্রানজিট ফি এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক সুবিধা বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশগুলোর জন্য একটি বড় সুযোগ হয়ে উঠবে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশসহ যে দেশের ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে অন্য দেশের জলবিদ্যুৎ গ্রিড চলাচল করবে, ওই দেশটি ট্রানজিট ফি আদায় করতে পারবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য লাভজনক হবে। আমরা বহুল আলোচিত নর্ডস্ট্রিমের উদাহরণ দিতে পারি। এছাড়া, একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক গ্রিড আঞ্চলিক ঐক্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে, যা দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা এবং শান্তির পথে সহায়ক হবে। দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা সহজ হবে।
আন্তর্জাতিক আইন এবং ন্যায্য ব্যবহারের দাবি
বাংলাদেশের ভূখণ্ড দিয়ে বিশ্ববিখ্যাত তিনটি নদী— গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা প্রবাহিত এবং এর পানি ব্যবহারে ন্যায্য অধিকারী। আন্তর্জাতিক আইন যেমন ‘হেলসিংকি রুলস’ (১৯৬৬) এবং ‘জাতিসংঘের জলস্রোত কনভেনশন’ (UN Watercourses Convention1997) বলছে যে, একটি নদী বা পানিসম্পদের ওপরে বিভিন্ন দেশের অধিকার থাকতে পারে, তবে প্রতিটি দেশকেই ‘ন্যায্য এবং সঙ্গতভাবে’ পানিসম্পদের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
এই আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ এই পানিসম্পদের ন্যায্য অংশীদার হতে পারে এবং তার অংশে উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করতে পারে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবাহিত এসব নদীর পানি অন্যান্য দেশের জলের ব্যবহারকে প্রভাবিত করতে পারে, তাই দক্ষিণ এশিয়ার জলবিদ্যুৎ গ্রিড গঠন একটি আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান দেখানোর একটি উপায় হতে পারে।
বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক ভূমিকা
বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানে রয়েছে, কারণ দেশের নদীগুলোর প্রবাহ আসছে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্য দিয়ে। এই কারণে, বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনা পুরোপুরি বান্তবায়ন করা হয়তো সম্ভব নয়।
দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্যের অনুপস্থিতি এই মহান উদ্যোগের অন্তরায় হতে পারে। আন্তঃদেশীয় নদীগুলো কোনো একটি দেশকে বেশি সুবিধা দিতে বাধ্য। যদি না দেশগুলোর মধ্যে সমঝোতা এবং দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ননীতি অভিন্ন না হয়। এর ফলে উজানের দেশগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি সুফল পাবে বা পেতে পারে। আবার ভাটি অঞ্চল ওই একই নদীকেন্দ্রিক সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হতে পারে।
ট্রান্সবাউন্ডারি নদী নিয়ে আমাদের আলোচনা, পর্যালোচনা কেবল পানিবন্টনে সীমাবদ্ধ থাকা যৌক্তিক নয়। যদিও সুষম পানি বন্টন অন্যতম প্রধান ইস্যু। তদুপরি, নদীবিধৌত অর্থনীতি, পরিবেশ দূষণের মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উপেক্ষিত রয়ে যায় বা গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার জলবিদ্যুৎ গ্রিড গঠন শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহারের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি আঞ্চলিক সহযোগিতা, পরিবেশগত সুরক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নতি এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান দেখানোর একটি কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে। জলবিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে পারে, যার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এবং জলসম্পদের প্রতি ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি শক্তিশালী গ্রিড গঠন অপরিহার্য। শুধু বিদ্যুতের জন্য নয়, বরং এটি হবে সুষম উন্নয়ন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রতীক।
বিডিনিউজ২৪ ডট কম এ প্রকাশিত। view this link
২| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২
পারস্যের রাজপুত্র বলেছেন: দক্ষিণ এশিয়ায় জলবিদ্যুৎ গ্রিড বাংলাদেশের জন্য একটি মৃত্যুফাঁদ।
৩| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৪
পারস্যের রাজপুত্র বলেছেন: দক্ষিণ এশিয়ায় জলবিদ্যুৎ গ্রিড বাংলাদেশের জন্য একটি মৃত্যুফাঁদ।
ভরা বর্ষায় যখন সবগুলি নদী পানিতে পরিপুর্ন, ভারত সরকার তখন ত্রিপুরার ডাম্বুর বাঁধ খুলে ডাম্বুর লেক এর পুরো পানি ছেড়ে দিল, ফলাফল: ফেনি কুমিল্লায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। ডাম্বুর লেক এর পানি ধারণ ক্ষমতা ০.২৩ ঘন কিলোমিটার (সুত্র-১)। অনেকটা যেন পানিবোমা বিষ্ফোরন ঘটানোর মত বিষয়। এই ঘটনা ভবিষ্যতে বারে বারে ঘটতে পারে - সেই কথা মাথায় নিয়ে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। যাতে এর পরেরবার যখন ভারত সরকার এই ঘটনা ঘটাবে - আমরা যেন আগে থেকে প্রস্তুত থাকি।
এক ঘন কিলোমিটারের চারভাগের একভাগ পানি দিয়ে যদি এইরকম সর্বনাশা দুর্যোগ ঘটানো যায়, তাইলে যেসব বাঁধের ধারণ ক্ষমতা এক ঘন কিলোমিটার বা তার চেয়ে বেশি, অথবা কয়েকটি বাঁধ সম্মিলিত ভাবে কোন এক বর্ষার রাতে যদি বাংলাদেশের উপর কোন রকম পূর্বাভাস ছাড়া খুলে দেওয়া হয় তাইলে কি ঘটতে পারে একটু কল্পনা করুন। ২০২১ সালের একটা সমীক্ষা (সুত্র-২) অনুযায়ী যমুনা/ ব্রক্ষপুত্র নদীর উজানে পানি ধারণ ক্ষমতা এক ঘন কিলোমিটারের বেশী এমন একাধিক বাঁধ ভারত সরকার কর্তৃক নির্মানাধীন আছে।
চিত্র-১: যমুনার উজানে নির্মানাধীন ১ ঘন কিলোমিটার বা অধিক রিজার্ভার ক্যাপাসিটির তিনটি জলবিদ্যূৎ প্রকল্পের অবস্থান (সুত্র-২)
যত দিন যাচ্ছে, বাংলাদেশের উজানে ভারত তত বাঁধ তৈরী করছে। এক সময় আমরা শুধু ফারাক্কা নিয়ে কথা বলতাম এরপর এর সাথে যোগ হল গজলডোবা, এরপর টিপাইমুখ। এখন জানলাম ত্রিপুরার ডাম্বুর বাঁধের কথা। গজলডোবার উজানে সিকিম ইলেক্ট্রিসিটি বোর্ডের ২০ টা পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প আছে। তিস্তার অর্ধেক পানি সেখানে আটকে থাকে, বাকি অর্ধেক পানি যা গজলডোবায় আসে, তা পুরোটাই পশ্চিম বাংলার দরকার (মমতা ব্যানার্জির ভাষ্য মতে)
সিকিম রাজ্যের জল বিদ্যুৎ পটেনশিয়াল প্রায় ৮ গিগাওয়াট (১ গিগাওয়াট = ১০০০ মেগাওয়াট)। এর অর্ধেকের বেশি বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের আকারে ভারতের গ্রিডে সংযুক্ত হয়ে গেছে। এই সব বাঁধ নির্মানের আগে ভাটির দেশ বাংলাদেশের কৃষি, পরিবেশ, জলবায়ু, জীব বৈচিত্র, মানুষের জীবনযাত্রা ইত্যাদির উপরে কি ধরণের প্রভাব পড়বে তা নিয়ে ভারত সরকার কোন পরোয়াই করে নাই। প্রতি বছর অতি ক্ষরা এবং অতি বন্যায় তিস্তা অববাহিকা বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটা কালেক্টিভ পানিশমেন্ট এলাকা হয়ে গেছে।
সিকিমের পূর্ব দিকে ভুটান। ভুটানের জল বিদ্যুৎ পটেনশিয়াল প্রায় ২৪ গিগাওয়াট। এর প্রায় দশ ভাগের একভাগ বিভিন্ন জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মানের মাধ্যমে ভারতের জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হয়ে গেছে। ভুটানের মধ্য দিয়ে আসা যমুনার উপনদী গুলোর উপর আগামী ১০ বছরের মধ্যে অনেকগুলি জলবিদ্যুতের প্রকল্প সমাপ্ত হলে যমুনা নদীর পানির প্রবাহ আরো সংকুচিত হবে।
ভুটানের পূর্ব দিকে ভারতের অরুনাচল প্রদেশ। যমুনা (ব্রক্ষপুত্র) নদীর শতকরা ৬০ ভাগ পানি অরুনাচল প্রদেশ থেকে আসে।
২০১৪ সালের বাংলাদেশ ভারত যৌথ কারিগরি টিম (JTT) রিপোর্ট অনুযায়ী আরুনাচল প্রদেশে ভারত সরকার ১৫৪ টি জলবিদ্যুত প্রকল্প নির্মানের পরিকল্পনা করেছে। প্রায় ৫৭ গিগাওয়াট সক্ষমতার এইসব প্রকল্প থেকে ভারতের মূল ভুখন্ডে বিদ্যুৎ পরিবহন করে নেওয়ার জন্য একাধিক উচ্চ ক্ষমতার বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন নির্মান করতে হবে। এইখানেই ভারতের বাংলাদেশকে দরকার।
চিত্র ২: ২০১৪ সালে বাংলাদেশের উপর দিয়ে করিডোর লাইন নেওয়ার জন্য ভারতের দেওয়া প্রাথমিক প্রস্তাব
চিকেন নেক (শিলিগুরি করিডোর) শিলিগুরি শহর, বিভিন্ন রেল, রোড, পানির খাল এবং অনেকগুলি বৈদ্যুতিক লাইনের কারনে ইতোমধ্যে ঘিঞ্জি হয়ে গেছে। নতুন করে উচ্চ ক্ষমতার বৈদ্যুতিক লাইন নির্মান করতে গেলে রাইট অফ ওয়ে পাওয়া সমস্যা। আরো বড় সমস্যা হল দোকলাম ভ্যালিতে চিনা সেনাবাহিনীর ঘাটি। ভারত চিনের মধ্যে যে কোন বড় ধরনের যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে চিন চেষ্টা করবে শিলিগুরি করিডোর দখলে নিয়ে সেভেন সিস্টার রাজ্য গুলোকে ভারতের মূল ভুখন্ড থেকে আলাদা করে দিতে। কাজেই বৈদ্যুতিক গ্রিডের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাকবোন লাইন শিলিগুরি করিডোর দিয়ে বানানো ভারতের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে এই ব্যাকবোন লাইন বানালে ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
সারা পৃথিবীতে প্রায় ১৫০ টি আন্ত সীমান্ত নদীর ৫৪ টিই বাংলাদেশ ভারতের সীমান্ত অতিক্রম করে প্রবাহিত। আন্তর্জাতিক আইনের কোন তোয়াক্কা না করে এই নদী গুলোর উপর ভারত একের পর এক বাঁধ নির্মান করে এক তরফা ভাবে পানি প্রত্যাহার, শুকনো মৌসুমে পানি আটকে রাখা, ভরা বর্ষায় বাংলাদেশকে না জানিয়ে পানি ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে হঠাৎ বন্যায় ভাটি অঞ্চলকে ভাসিয়ে দেওয়া ইত্যাদি অপরাধ মূলক কাজকর্ম করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উজানে যত বাঁধ ভারত তৈরী করবে এই অপরাধ মূলক কার্যক্রম আরও বাড়তে থাকবে। ভারতকে বৈদ্যুতিক করিডোর দিলে বাংলাদেশের উজানে পরিকল্পনাধীন অনেক বাঁধ নির্মানের জন্য ভারতের বিভিন্ন সংস্থা বিনিয়োগ যোগাড় করতে পারবে। এইজন্যই ভারতকে বৈদ্যুতিক করিডোর নির্মান করতে সাহায্য করা বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী একটা সিদ্ধান্ত।
যেখানে ভারতের একতরফা বাঁধ নির্মান ঠেকানোর জন্য কুটনৈতিক, আন্তর্জাতিক ইত্যাদি অঙ্গনে জোর প্রচেষ্টা চালানোর প্রয়োজন ছিল, সেইখানে শেখ হাসিনা রেজিমের ভারতীয় দালালরা ভারত, ভুটান এবং নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির নামে ভারতকে বৈদ্যুতিক করিডোর দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল। এই অপচেষ্টা ঠেকানোর জন্য সরকারের ভিতরের কিছু কর্মকর্তা আপ্রাণ চেষ্টা করায় করিডোর লাইন বাস্তবায়নের বিষয়টি আওয়ামী সরকার আরম্ভ করতে পারে নাই।
এখন দেখা যাচ্ছে ইউনুস সরকারও ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের মত একই রাস্তায় হাঁটা আরম্ভ করেছে। বাংলাদেশ খুবই সস্তা আরকি। যে যেভাবে পারে বেচে দিয়ে খেয়ে যাচ্ছে।
সাউথ এশিয়ান গ্রিডের নামে এই মূহুর্তে বরনগর-পার্বতিপূর-কাতিহার ৭৬৫ কেভি সঞ্চালন লাইন নামক এই করিডোর লাইন নির্মানের নকশা প্রণয়নের জন্য পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি পরামর্শক নিয়োগ করেছে বলে জানা যায়। এছাড়াও এই লাইনের পরিবেশগত ইত্যাদি ছাড়পত্র প্রণয়নের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন পাওয়ার সেলে আরেকটি পরামর্শক নিয়োগের কার্যক্রম চলমান আছে বলে জানা যায়।
বাংলাদেশের নদীর উজানে বাঁধ নির্মানের প্রকল্প গুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং পানি প্রত্যাহারের মত বিষয়ের সাথে জড়িত হলেও কয়েক বছর ধরে তিস্তার পাশাপাশি সিলেটে হঠাৎ বন্যার প্রকোপ বেড়ে গেছে। এইবার ত্রিপুরার ডাম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ার পর একটা বিষয় ক্রমান্বয়ে পরিষ্কার হচ্ছে। বাংলাদেশকে ঘিরে অসংখ্য বাঁধ নির্মানের উদ্দেশ্য প্রাথমিক ভাবে অর্থনৈতিক বলে প্রচার করা হলেও এই অবকাঠামো গুলোকে ব্যাপক বিদ্ধংসী পানি বোমা হিসাবে ব্যাবহার করার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এইটা এক ধরণের "ওয়েপন্স অব মাস ডিষ্ট্রাকশন" WMD। বাংলাদেশকে ঘিরে ভারত একধরণের WMD তৈরী করছে, যাকে ভবিষ্যতে বারে বারে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যাবহার করা যাবে।
২০১৭ সালে মেঘালয় থেকে নেমে আসা বন্যার পানিতে তেজস্ক্রিয়তা (সুত্র-৩) থাকার কারনে মাছ এবং জলজ পাখি ইত্যাদির গনহারে মারা যাওয়ার খবর আরো উদ্বেগজনক, উজানের দেশ যদি ভাটিতে শুধু হঠাৎ বন্যার ক্ষতির বাইরেও আতিরিক্ত ক্ষতি করতে চায়, যেমন বাঁধের পানিতে কোন ক্ষতিকর কেমিকেল অথবা তেজস্ক্রিয় পদার্থ মিশিয়ে তারপর ভাটির দেশের উপরে তা ছেড়ে দিতে চায় তা খুবই সম্ভব। এবং ভারতের মত দেশের পক্ষে, যারা নিয়মিত ভাবে বাংলাদেশের বর্ডারে গুলি করে মানুষ মেরে আসছে, এইরকম নাশকতা ঘটানো অসম্ভব না।
সুত্র:
(১) Click This Link
(২) Click This Link
(৩) Click This Link
১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০
মুনতাসির বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য। এখানে একটা কথাই রইয়ে যায়, জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র কিন্তু আছে এবং আরও হবে। সেটার সুবিধা কেন একটা দেশ পাবে?
ন্যাশনাল গ্রিড হলে অন্তত কিছু সুফল হইত ভাটির দেশ পাবে। পরিবেশ গত বিপর্যায়ের কথা তো সত্যি তা বিদ্যুৎ উৎপাদন হোক আর না হোক। বাংলাদেশের উপর দিয়া গাড়ি চলে যাচ্ছে, ট্রেন যাবে। কই তা নিয়ে কিন্তু তামন গোলযোগ আমরা করলাম না।
৪| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫১
পারস্যের রাজপুত্র বলেছেন: লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য। এখানে একটা কথাই রইয়ে যায়, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কিন্তু আছে এবং আরও হবে। সেটার সুবিধা কেন একটা দেশ পাবে?
বাংলাদেশ বৈদ্যুতিক করিডোর না দিলে ভারত যমুনার উজানে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য ফান্ড জোগাড় করতে পারবে না। কোন ব্যংক পাওয়ার ইভাকুয়েশন কিভাবে হবে তা নিশ্চিত না হয়ে কোন বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য বিনোয়োগ করে না। প্রতিটি জলবিদ্যূৎ কেন্দ্রকে পাওয়ার ইভাকুয়েশন কিভাবে হবে, উৎপাদিত বিদ্যূৎ এরা কিভাবে কার কাছে বিক্রি করবে তার চুক্তিপত্র বা এগ্রিমেন্ট দেখাতে হয় নাইলে এরা ফাইন্যান্স জোগাড় করতে পারে না।
ভারতের ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেন্টার গুলি পূর্ব দিকে কাজেই বাল্ক এনার্জি ট্রান্সফারের জন্য হাই ক্যাপাসিটি লং ডিসটেন্স গ্রিড লাইন লাগবে। এইসব করিডোর লাইন বানানোর ধাঁন্দা হিসাবে সাউথ এশিয়া হাইড্রো ইলেক্ট্রিক গ্রিডের মত গাল ভরা নাম উচ্চারণ করা হচ্ছে। আদতে এইগুলা করিডোর লাইন জায়েজ করার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।
শিলিগুড়ি করিডোরের পূর্বদিকে প্রায় ১০০ গিগাওয়াট জলবিদ্যূৎ পটেনশিয়াল আছে (সিকিমে ৮ গিগা, ভুটানে ২৪ গিগা, অরুনাচলে ৬০-৭০ গিগা), এর এক কোনায় সিকিমের ৮ গিগাওয়াট পটেনশিয়ালের অর্ধেক ড্যাম দিয়ে বিদ্যূৎ উৎপন্ন করা হচ্ছে, ফলে তিস্তার পানির অর্ধেকই এই ড্যামগুলো রিজার্ভারে আটকে থাকে এবং বাকি অর্ধেক গজলডোবা ব্যারেজের মাধ্যমে ভারতের আন্ত-নদী সংযোগ প্রকল্পের আওতায় প্রত্যাহার করা হয়। ফলে যমুনার মেজর একটা ট্রিবিউটারি তিস্তা নদী মরে গেছে। শুকনা মৌসুমে এর অববাহিকায় ক্ষরা হয় এবং বর্ষা মৌসুমে ফ্লাস ফ্লাড হয়। তিস্তা এখন ঐ অন্চলের মানুষের জন্য একটা কালেকটিভ পানিশমেন্ট এলাকায় পরিনত হয়েছে।
সাউথ এশিয়া হাইড্রো-ইলেকট্রিক গ্রিডের নামে ভারত আসলে বাংলাদেশের উপর দিয়ে হাই ক্যাপাসিটি বৈদ্যুতিক করিডোর চায়। এর মাধ্যমে ভারত তার ইলেকট্রিক গ্রিড এবং আন্ত নদী সংযোগ প্রকল্পের কম্বো সিকিম ছাড়িয়ে আরও পূর্ব দিকে প্রসারিত করতে চায়। এই কাজে ভারত যত পূর্ব দিকে অগ্রসর হবে, তত বাংলাদেশের ভিতরে তিস্তা-ইফেক্ট বাড়তে থাকবে। এভাবে এক সময় পুরো বাংলাদেশ কালেকটিভ পানিশমেন্ট এলাকার আওতায় এসে যাবে। শুকনা মৌসুমে আমারা পানি পাব না। বর্যায় পানিতে ভাসব।
দক্ষিন এশিয়ার জল বিদ্যূৎ গ্রিড বাংলাদেশের জন্য একটা মরণ ফাঁদ।
আর জল বিদ্যুত আসলে সবুজ না। এর রিজার্ভারে ভেজিটেশন পঁচে মিথেন গ্যাস নির্গত হয় (কার্বন ডাই অক্সাইড এবং কার্বন মনো-অক্সাইড ও নির্গত হয়)। মিথেন কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় ৩০ গুন বেশি পটেন্ট গ্রিন হাউস গ্যাস। এছাড়াও একটা হাইড্রো ইলেকট্রিক ড্যামের উজানে রিজার্ভারের পানিতে ডুবে এবং ভাটিতে পানি ও পলির ঘাটতিতে সবুজ বন ও ভেজিটেশন কমে যায়, যা আসলে কার্বন সিংক। ফলে একদিকে মিথেন সহ অন্যান্য গ্রিন হাউজ গ্যাস এমিশন হয় অন্যদিকে কার্বন সিংক কমে যায় ফলে ওভার অল গ্রিন হাউজ ইফেক্ট বৃদ্ধি পায়। ব্রাজিলের কিছু জল বিদ্যূৎ প্রকল্পে সমিক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে প্রতি ইউনিট বিদ্যূৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা বিদ্যূতের চেয়েও বেশি গ্রিন হাউজ এমিশন হয়।
ফলে ড ইউনুসের থ্রি জিরোর এক জিরো, মানে জিরো কার্বন ক্যাটাগরিতে জল বিদ্যুৎ কোন ভাবেই পড়ে না, ক্ষরা এবং বন্যার কারণে পরিবেশ, কৃষি, অর্থনীতি ইত্যাদির ক্ষতি তো আছেই।
১৯ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:০৭
মুনতাসির বলেছেন: আন্ত দেশি নদী নিয়া ইয়ুনুস সাহেব নতুন করে কিছু বলে নাই। এটা নিয়া আগেও কথা হইয়েছে। কিন্তু অন্যান্য মাধ্যমে ট্রানজিট যেমন ছিল, আছে, থাকবে (স্থল, আকাশ, ইত্যাদি, ইত্যাদি) বিদ্যুতের ক্ষেত্র তা হতে পারে। তা ভারত থেকে কয়লা আমদানি করার থেকে তো ভাল। আদানি থেকে চরা দামে বিদ্যুৎ কেনার থেকে তো ভাল। কুইক রেন্টাল থেকে তো ভাল।
এখানে কথা টা কে বললেন সেটা মুখ্য যদি না ধরা হয়, শুধু দেশের কথা ভাবা হয়, তবে হইত আপনার যুক্তি গুলো পর্যালোচনা করা সম্ভব হতে পারে। জালানি দরকার। সেটার জন্য দরকষাকষিটা কি ভাবে হবে, আমাদের জন্য সেটাই জরুরি। আমি সুদু আমার ভাবনা মতামত আকারে তুলে ধরেছি।
আপনি যে উদাহরণ গুলো দিয়েছেন, খুব এ যৌক্তিক। এখানে প্রশ্ন আসে, তার পরেও ক্যানও পৃথিবী ইভি ব্যবহার করতে যাচ্ছে? আমরা কেন ব্যাটারি রিকশা ব্যবহার করছি?
আপনার মন্তব্যের জন্য আবার ধন্যবাদ। আপনার লেখা পড়েছি।
৫| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:২০
পারস্যের রাজপুত্র বলেছেন: সাউথ এশিয়ান গ্রিডের নামে বৈদ্যুতিক করিডোরের ভয়াবহ পরিনাম
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:২৩
নতুন বলেছেন: তার উপস্থাপনটি অভূতপূর্ব এবং যৌক্তিক বলা যেতে পারে।
সবার উপকারের জন্য সুন্দর প্রস্তাবনা।
কিন্তু বিদ্যুত খুবই ভালো ব্যবসা। তাই এই প্রস্তাবনা কোন রাজনিতিক সরকার বাস্তবায়নে চেস্টা করবেনা।
তাদের পছন্দ কুইকরেন্টাল, আধানী