![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছবিগুলো একরকম — গৃহচ্যুত মানুষ, ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরবাড়ি, কাঁদতে থাকা শিশু, পুড়ে যাওয়া নগর বা গ্রাম।
একটি ফিলিস্তিনের।
অন্যটি কক্সবাজারের।
তবুও, আমাদের প্রতিক্রিয়া একদমই আলাদা। ফিলিস্তিনের জন্য আমরা রাস্তায় নামি, প্রোফাইল ছবি বদলাই, বয়কটের ডাক দিই। অথচ রোহিঙ্গাদের জন্য — যাদের আমরা নিজের দেশে আশ্রয় দিয়েছি বছরের পর বছর ধরে — সেখানে আমাদের কণ্ঠ প্রায় নীরব, ক্লান্ত, কিংবা বিরক্ত।
কেন?
আমাদের ফিলিস্তিনপ্রীতি অনেকটাই ধর্মীয় আবেগ থেকে আসে। আমরা তাদের দেখি ‘মুসলিম ভাইবোন’ হিসেবে, যারা একটি ইহুদি শক্তির বিরুদ্ধে লড়ছে। এটি পরিষ্কার এক ন্যারেটিভ, আবেগও প্রবল। মসজিদুল আকসা, শহীদত্ব, জায়োনিজম — সবই আবেগের ভাষা।
কিন্তু রোহিঙ্গা? তাঁরাও মুসলিম। কিন্তু চেহারায়, ভাষায়, সংস্কৃতিতে তারা “আমাদের মতো” নয়। আমরা তাদের বলি ‘বার্মিজ’, ‘বিদেশি’, ‘অনুপ্রবেশকারী’, যদিও তারা শত শত বছর ধরে রাখাইন অঞ্চলে বসবাস করে আসছে। ধর্ম একা যথেষ্ট নয়, যখন আমাদের মনে হয় তারা “আমাদের মানুষ” নয়।
কিন্তু এই দুটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মিল রয়েছে, যেটা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই — রোহিঙ্গা যেমন শত শত বছর ধরে রাখাইনের বাসিন্দা, তেমনি গাজার ফিলিস্তিনিরাও প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে নিজেদের ভূমিতে বাস করছেন। এই ভূমি তাদের পূর্বপুরুষদের, এই মাটি তাদের ইতিহাসের অংশ। কোনোভাবেই তারা “বহিরাগত” নয়। এই বাস্তবতা রোহিঙ্গা ও গাজাবাসীদের লড়াইকেই এক কাতারে নিয়ে আসে — এটি নিছক উদ্বাস্তু সংকট নয়, এটি এক একটি জাতির অস্তিত্বের লড়াই।
ফিলিস্তিন আমাদের কাছে এক প্রতীক — নিপীড়িত মুসলিম জাতির প্রতিনিধি। এটি আবেগ জাগায়, প্রতিবাদ করতে নিরাপদ, খরচ কম। রোহিঙ্গা আমাদের উঠোনেই। তারা আমাদের জমিতে বাস করে, আমাদের সাহায্য নিচ্ছে, প্রশাসনকে বিব্রত করছে। ফলে সহানুভূতির বদলে আমরা তাদের দেখি একটি সমস্যা হিসেবে। দূরের ট্র্যাজেডিতে চোখ ভেজানো সহজ, ঘরের বোঝা বইতে কষ্ট।
আমাদের সহানুভূতি আসলে নির্বাচিত। ফিলিস্তিনে আমরা সহানুভূতি দেখাই, কারণ এটি আমাদের মুসলিম পরিচয় ও বিশ্ব রাজনীতির এক প্রতীকী যুদ্ধ। রোহিঙ্গাদের দিকে তাকাই না, কারণ ওদের সংকট আমাদের অস্বস্তিতে ফেলে। এটি জটিল, রাজনৈতিক, এবং বাস্তব। আমরা নিজেদের বলি, “আমরা তো ওদের আশ্রয়ই দিয়েছি, আর কী করব?”
আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি, কারণ তারা সীমান্ত পেরিয়ে এসেছে, হত্যা-ধর্ষণ-পুড়িয়ে দেওয়ার হাত থেকে বাঁচতে। আন্তর্জাতিক আইন ও মানবতা আমাদের তাড়িত করেছে। সেই একই মানবতা কি আমরা আজ গাজাবাসীদের জন্য দাবি করছি? ইসরায়েলের বর্তমান নীতি ও সামরিক অভিযানের মূল উদ্দেশ্যই যদি হয় গাজার জনসংখ্যাকে স্থায়ীভাবে কোথাও অন্যত্র স্থানান্তর করা — তবে আমরা কেন প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলোর দিকে তাকিয়ে বলছি না, “তোমরা প্রস্তুত হও, মানবতার জন্য, ওদের আশ্রয় দাও”? আমরা তো নিজেই রোহিঙ্গাদের জন্য তা করেছি। তাহলে গাজার মানুষের ক্ষেত্রে এই দাবি আমরা তুলছি না কেন? আর এখন, এক দশক হতে চলল—রোহিঙ্গারা এখানে। আমরা কি রাস্তায় নেমেছি তাদের নিজ ভূমিতে ফেরানোর দাবিতে? কোনো মিছিল? কোনো সামাজিক আন্দোলন? আমরা কি রাষ্ট্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করছি? না। বরং আমরা চাই তারা যেন চুপচাপ থেকে যায়, যেন এই বোঝাটা আর বাড়ে না। অথচ মানবতা তখনই অর্থবহ হয়, যখন তা সুবিধা বা দূরত্ব দেখে বদলে যায় না।
নাকি আমাদের প্রতিবাদ শুধু স্লোগানে সীমাবদ্ধ, বাস্তব দায়িত্বের প্রসঙ্গে আমরা নিরব?
ফিলিস্তিন নিয়ে আমাদের আবেগ প্রকৃত। কিন্তু রোহিঙ্গা নিয়ে আমাদের নীরবতা আমাদের মনোজগতের গভীর ছায়া দেখায়। এটি দেখায়, আমরা কারা আমাদের মনে করি আপন — আর কারা পর। এটি শেখায়, সহানুভূতি আর প্রতীকী সমর্থনের মধ্যে পার্থক্য কী।
২| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:০১
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।
আমি আপনার সাথে একমত।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:০৪
নতুন বলেছেন: রহিঙ্গাদের জন্য কি কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?