নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শেরপা

দেখতে চাই ধরনী

মুনতাসির

আমি পাহাড়ে চড়ি,সাগরে ডুবি, পৃথিবী আমার প্রেম

মুনতাসির › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেন আমরা দূরে কোথাও যেতে পারি না?

২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:৪৯

বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ভ্রমণ করা অনেক কঠিন, যদিও হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্সে সাম্প্রতিক সময়ে এর কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা মাত্র ৪১টি দেশে ভিসামুক্ত বা ভিসা-অন-অ্যারাইভাল সুবিধা পান, যা বৈশ্বিক র‌্যাঙ্কিংয়ে আমাদের পাসপোর্টটি ১০১তম স্থানে রয়েছে। কিন্তু এই সুবিধাগুলোর বাস্তবতা বেশ জটিল।

হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স পাসপোর্টগুলোর মূল্যায়ন করে কতগুলো দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করা যায়, তা বিবেচনা করে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই ৪১টি দেশ এমন যেগুলো সাধারণত বৈশ্বিক যোগাযোগের কেন্দ্র নয় বা অনেক অনেক মানুষ শুধু পর্যটনের জন্যে যাবে না এবং এই ভিসামুক্ত দেশগুলোর বেশিরভাগই কর্মক্ষেত্র বা পর্যটনের জন্য প্রধান গন্তব্য নয়। হেনলি সূচকে সবথেকে এগিয়ে আছে জাপান ও সিঙ্গাপুর। যাদের পাসপোর্টধারীরা প্রায় ১৯০টিরও বেশি দেশে ভিসামুক্ত ভ্রমণ করতে পারেন।

বাংলাদেশি পাসপোর্টের সীমাবদ্ধতা মূলত বৃহত্তর অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের প্রতিফলন। বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নতি হলেও দুর্নীতি, দুর্বল কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক সমস্যাগুলো এ পাসপোর্টের শক্তি কমিয়ে রেখেছে। ফলে আমরা সেসব দেশে বিনা ভিসায় যেতে পারি যারা অর্থনৈকিতভাবে গুরুত্বপূর্ন নয় এবং যাদের ভিসানীতি তুলনামূলক ভাবে নমনীয়।

হেনলি সূচক মতে আমরা ৪১ টি দেশে ভিসা ছাড়া বা অনএরাইভাল ভিসা পেতে পারি। কিন্তু ৪১টি ভিসামুক্ত দেশের মধ্যে অনেকগুলোতেই পৌঁছানো সহজ নয়, কারণ এসব গন্তব্যে পৌঁছাতে কোন না কোন দেশ দিয়ে ট্রানজিট করতে হয়। আর যার জন্যে ট্রানজিট ভিসার প্রয়োজন হয়। যেমন, লাতিন আমেরিকার দেশ বলিভয়াতে আমরা যেতে পারি। কিন্তু যেতে হলে ইউরোপ বা আমেরিকার মতো দেশের মাধ্যমে যেতে হতে পারে। আবার ঢাকা থেকে ব্রাজিল হয়েও যাওয়া যেতে পারে। ব্রাজিল বলা হলো কারন বাংলাদেশে ব্রাজিলে দূতাবাস আছে। যদি সেই পথেও যেতে চাওয়া হয় তবে ব্রাজিলের ভিসা লাগবে। এখন কথা হলো আমরা এখান থেকে সেই ভিসাটি পাব কি না? শতভাগ না হলেও এর কাছাকাছি সম্ভবনা হলো, না ভিসা পাওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে ব্রাজিল হয়ে বলিভিয়াও যাওয়া যাবে না। আর যদি আমেরিকা আর ইউরোপ হয়ে যেতে হয় তবে যেগুলোর জন্য ট্রানজিট ভিসা প্রয়োজন পরবে। তার মানে হলো, আমরা চাইলেও বলিভিয়া যেতে পারছি না। যদি না আমাদের ট্রানজিটের দেশগুলোর ভিসা আগাম নেয়া না থাকে। ঠিক একই ভাবে ক্যারিয়ান দেশগুলোর কথাও বলা যায়।

ফলে, যদিও ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুযোগ থাকলেও, ট্রানজিট ভিসা পাওয়ার অসম্ভবতা আমাদের দূরের কোন দেশে ঘুরতে যাওয়াকে ব্যপক জটিল, ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য করে তুলতে পারে।

এই সীমাবদ্ধতাগুলোর মূল কারণ হলো অর্থনৈতিক অসামঞ্জস্য এবং দুর্বল কূটনৈতিক প্রভাব। বাংলাদেশের বিশ্বব্যাপী চিত্র, বিশেষ করে শাসনব্যবস্থা, শ্রম সমস্যা এবং দারিদ্র্য নিয়ে উদ্বেগ, এর ভিসা নীতিতে প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারত যেমন কূটনৈতিক সম্পর্কের গভীরতা ও বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ বৃদ্ধির কারণে শক্তিশালী পাসপোর্টের সুবিধা পেয়ে থাকে, বাংলাদেশ সেই তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে আছে।

এখানে অরেকটি বিষয় লক্ষ্যনীয়, ভৌগলিক ভাবে পাশাপাশি দেশগুলোর মধ্যে যে ধরনের আন্তদেশীয় বা আন্তমহাদেশীয় ভ্রমণের সুবিধা পাওয়া যা বা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিদ্যমান আছে, তা দক্ষিণ এশিয়াতে পরিলক্ষিত হয় না। আমাদের সার্কের ৮ টি দেশের মধ্যে বস্তুত ভিসা কড়াকড়ি অন্যান্য দেশের মতই মনে হতে পারে। যদিও সার্ক বলে একটা আন্ত মহাদেশীয় জোটের কথা আমাদের সবারই জানা। এই সার্কেও ভিসা আছে। যা সার্ক ভিসা এক্সজামসন স্কিম নামে পরিচিত। এই ভিসা পাওয়া গেলে ভিসাধারী সার্কের ৮টি দেশে অবাধে চলাচল করতে পারেন। কিন্তু এই ভিসা কি সাধারনের জন্যে? একেবারেই না!

এখানেও এক টি দেশের কূটনৈতিক পাদর্শিতা বড় ভূমিকা পালন করে। তার সাথে জীবনযাত্রার মান, আইনশৃঙ্খলার মত বিষয়গুলোও গুরুত্ব পায়। তাছাড়া, বিশ্বব্যাপী অভিবাসন নিয়ন্ত্রনের কঠোর নীতি এবং অভিবাসনের প্রতি উদ্বেগ বাংলাদেশিদের ভ্রমণ স্বাধীনতায় আরো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বেশির ভাগ দেশগুলো ভিসামুক্ত ভ্রমণ প্রদান করতে আগ্রহী নয়, কারণ তারা আমাদের অবৈধ অভিবাসন বা থেকে যাওয়ার প্রবনতাকে ভয় পায়।

বাংলাদেশে ৪৯ টি দেশের দূতাবাস আছে। আবার এর মধ্যে ১০টি হলো ইউরোপের দেশ যাদের ভিসা হলো এ কটি। বাদ বাকি দেশের মধ্যে অনেকগুলোতেই পর্যটনকে প্রাধন্য দেয়া হয় না যেমন ইরাক, লিবিয়া। আবার নতুন যে দুটি দেশ তাদের দূতাবাস চালু করেছেন, আর্জেটিনা এবং কসোবো, তারা বাংলাদেশ থেকে পর্যটন ভিসা দেয় না। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে শ্রমবাজার কেন্দ্রিক যে ভ্রমণ তা আদতেই আলাদা। এর ভিসাও আলাদা। তাই আমরা চাইলে হয়তো চেষ্টা করে ভিসা পেতে পারি কিন্তু সমষ্টিগত অর্থে পর্যটন হয়তো সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডাকে মানুষ ভ্রমণ করে থাকেন। তবে তা নিদ্দির্ষ্ট অর্থনৈকিত সক্ষম মানুষদের জন্যেই প্রযোজ্য।

হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স একটি পাসপোর্টের শক্তির সংখ্যাগত মূল্যায়ন প্রদান করে, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য এই মান কতটুকু যৌক্তিক তাও ভাবার বিষয়। ট্রানজিট ভিসার বাধা এবং সীমিত ভিসামুক্ত গন্তব্যের জটিলতা বাংলাদেশের পাসপোর্টধারীদের ভ্রমণকে অনেক কঠিন করে তোলে। যদি ট্রানজিট প্রয়োজন হয়না এমন দেশগুলোর সংখ্যা দিয়ে হেনলি সূচক মাপা হয়, তবে বাংলাদেশের স্থান আরও অনেক নিচে হবে।

কিন্তু নাগরিক হিসেবে আমাদের কাছে প্রশ্ন আসতে পারে, তবে এত এত অর্থনৈকিত উন্নয়ন ঘটলেও আমাদের পাসপোর্টের মানের উন্নয়ন কেন হলো না, সেটাই চিন্তার।

*দুই বছর আগের লেখা।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম। জানলাম।

২| ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:২৩

অপলক বলেছেন: লেখাটা ভাল লাগল।

নিচু শ্রেণীর লেবার হিসেবে বাংলাদেশীরা কাজ করায় বিদেশীদের মাঝে আমাদের নিয়ে একটা নেতিবাচক মনোভাব আছে। যেটা অপ্রকাশিত আর একটা কারন পাশপোর্ট রাঙ্কিয়ের।

আমাদের উচিত বেশি বেশি উচ্চ শিক্ষিত বাংলাদেশীদের বিদেশে চাকরীর ব্যবস্থা করা। আবার তারাও যেন লোভী না হয়। ২০১৭তে লিভার ব্রাদার্সের ২জন লোক কনফারেন্সে গিয়ে অবৈধ ভাবে লন্ডন থেকে অন্য দেশে পালিয়ে যায়। তারপর থেকে ৬ মাস পর্যন্ত নতুন করে লন্ডন বা ইউকে তে যাবার ভিসা বাঙ্গালীরা পায়নি। এটা একটা লজ্জার বিষয় ছিল।

৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৭:৪৪

মুনতাসির বলেছেন: শ্রমিকের শ্রেনি হয়তো সময়ের সাথে সাথে বদলে যায় বা যাবে। কলোনিয়াল সময়ে যে ভাবে ভারতীদের সারা দুনিয়াতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তা এই নিম্ন শ্রেনির মাধ্যমে। আজ ১০০ বছরপর তাই আমরা সারা পৃথিবির আনাচে কানাচে তাদের দেখি। তাই সময় একটা ব্যপার। বর্তমানে আমাদের করনীয় হয়তো প্রশিক্কিত শ্রমিক এবং এর মানের দিকে জোর দেয়া।

কানাডায় অভিভাসন নিয়ে অনেকে গেছেন সো কল্ড লেবার কেটাগরিতেই। তাদের নামটা সুন্দর - কেয়ার গিভার। খুজে দেখুন আপনার আমার পরিচিত অনেকেই এই কাজ করে। তাই শ্রমের শ্রেনি নাই। অন্নত আমাদের জন্য। আমরা ব্লু কলার জাত।

৩| ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৭

নতুন নকিব বলেছেন:



বাংলাদেশি পাসপোর্টের দুর্বলতা নিয়ে অনেক তথ্যবহুল ও যুক্তিনির্ভর বিশ্লেষণ। বিশেষ করে ট্রানজিট ভিসা প্রসঙ্গটি বেশিরভাগ মানুষ উপেক্ষা করে, কিন্তু আপনি সেটিকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছেন।

৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৭:৪৫

মুনতাসির বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.