![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এই লেখাটি অনেকের কাছে একটু বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। কেননা, আমারা এমন একটা দেশে বাস করি যেখানে মৃত্যু শুধুই একটা সংবাদ। বড় বা কেউকেটা কেউ হলে তা শিরোনাম। এর বেশি নয়। সেক্ষেত্রে একটি বিড়ালকে কেউ পেটাল, সেটি নিয়ে আলোড়ন বা প্রতিবাদ অনেকের কাছেই ‘আদিখ্যেতা’ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু একটি বিষয় আমরা উপেক্ষা করি— যখন কোনো প্রাণীর ওপর নির্যাতন ঘটে, তা যদি ব্যক্তিগতভাবে না-ও ঘটে, তবুও এর প্রভাব সামাজিক ও নৈতিক স্তরে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে।
ঢাকার বসুন্ধরা এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি, যেখানে একটি ফ্ল্যাটের পোষা বিড়াল অন্য একটি ফ্ল্যাটে চলে গেলে, সেই ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা বিড়ালটিকে রড দিয়ে মারধর করে। এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, এবং গণমানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের মতো বড় সংবাদমাধ্যমেও খবরটি প্রকাশিত হয়। কয়েক বছর আগেও অনেকে হয়তো ভাবতেন না যে একটি বিড়াল নির্যাতনের ঘটনা সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হতে পারে, অথচ এখন ফায়ার সার্ভিস পর্যন্ত পোষা প্রাণী উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছে— এমন সংবাদ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেই দেখা যাচ্ছে।
এটি নির্দেশ করে যে প্রাণীর প্রতি আমাদের মনোভাব ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে। এক সময় যেটি ধনী সমাজের ‘আদিখ্যেতা’ বলে ব্যঙ্গ করা হতো, আজ সেই চর্চা মধ্যবিত্ত এবং নিম্নআয়ের পরিবারেও দেখা যায়। নগরজীবনে ভেটেরিনারি ক্লিনিকের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান; গুগল ম্যাপে সার্চ করলেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। বাজারে অ্যানিমেল ফুডের সরবরাহ এবং টিনশেডে বসবাসকারী পরিবারেও পোষা প্রাণীর উপস্থিতি, এই পরিবর্তনের সামাজিক দিক নির্দেশ করে।
পাশাপাশি, রাস্তায় থাকা কুকুরদের নিয়মিত খাওয়ানো বা আশ্রয় দেওয়ার মতো ঘটনাগুলোও আজকাল স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। আগে যা বিচ্ছিন্ন ছিল, এখন তা নিয়মিত চর্চা। এই পরিবর্তন শুধুমাত্র সহানুভূতির নয়, এটি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ।
আইনি কাঠামো: প্রাণী কল্যাণ আইন, ২০১৯
বাংলাদেশে প্রাণীদের সুরক্ষার জন্য ২০১৯ সালে ‘প্রাণী কল্যাণ আইন’ পাশ হয়, যা প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা বা অবহেলাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে। এই আইনের মূল বিষয়গুলো হলো:
অপরাধের সংজ্ঞা: কোনো প্রাণীকে অযথা কষ্ট দেওয়া, মারধর করা, অবহেলা করা, বা অপ্রয়োজনীয়ভাবে হত্যা করা আইনের আওতায় অপরাধ।
শাস্তি: দোষী সাব্যস্ত হলে ৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড, ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
অভিযোগ প্রক্রিয়া: যে কেউ থানায় গিয়ে এফআইআর দায়ের করতে পারে, অথবা স্থানীয় প্রাণী কল্যাণ সংগঠনের সহায়তা নিতে পারে।
এই আইন বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ থাকলেও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে এই ধরনের ঘটনা প্রচারিত হওয়ায় আইন প্রয়োগের চাপ বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক প্রভাব: ভিসা ও চাকরির ক্ষেত্রে ঝুঁকি
প্রাণী নির্যাতনের ঘটনা শুধু স্থানীয়ভাবে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও গুরুতর পরিণতি বইয়ে আনতে পারে। বিশ্বের অনেক দেশে, বিশেষ করে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে, ভিসা বা ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় আবেদনকারীর ‘চরিত্র মূল্যায়ন’ (Good Character Assessment) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাণী নির্যাতনের অভিযোগ বা দোষী সাব্যস্ত হওয়াদের ভিসা বাতিল, প্রত্যাখ্যান, বা ইমিগ্রেশন ব্লকের কারণ হতে পারে।
অভিবাসন আইন ছাড়াও, চাকরিস্থলে একজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে ‘misconduct’ বা ‘moral turpitude’-এর অভিযোগ উঠলে, কোম্পানির নিজস্ব কোড অব কন্ডাক্ট অনুযায়ী তাকে চাকরিচ্যুত করা হতে পারে। বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত) অনুযায়ী, কর্মচারীর আচরণ যদি প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন করে বা নৈতিক মূল্যবোধ লঙ্ঘন করে, তবে তার বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
Section 23 – Misconduct
Misconduct includes "conduct prejudicial to the interest of the establishment." If an employee’s action (even outside the workplace) seriously damages the company’s reputation or violates ethical expectations, they can be dismissed.
Section 24 – Dismissal for Conviction
If the person is convicted in a criminal court (e.g., under the Animal Welfare Act 2019), the employer may terminate them without notice.
প্রাণী নির্যাতন ও সামাজিক সহিংসতার সংযোগ
বিশ্বব্যাপী গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাণী নির্যাতনের সঙ্গে মানুষের প্রতি সহিংসতার একটি সুস্পষ্ট সংযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই-এর একটি প্রতিবেদন (২০১৬) অনুসারে, যারা প্রাণীদের ওপর নিষ্ঠুর আচরণ করে, তাদের নিয়ে পরে শিশু, নারী, বা বয়স্কদের প্রতি সহিংসতার আশঙ্কা বেশি থাকে। এই কারণে, প্রাণী নির্যাতনকে ‘রেড ফ্ল্যাগ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা একটি সমাজের সামগ্রিক নিরাপত্তা ও মানবিক মূল্যবোধের সূচক।
অতএব, প্রাণীর ওপর সহিংসতা নিছক একটি ‘ছোট ঘটনা’ নয়। এটি বড় সামাজিক সংকেত বহন করে। এটি একটি জাতির মানবিক উন্নয়নের মানদণ্ড হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে। যারা আজ একটি বিড়াল পেটাতে পারে, তারা কাল একজন শিশুর প্রতিও সহিংস হতে পারে— এমন সংযোগ বিশ্বব্যাপী গবেষণায় প্রমাণিত।
এই কারণে, আমাদের প্রতিবাদ করা, সোচ্চার হওয়া এবং আইনগত ও সামাজিকভাবে এমন অপরাধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া জরুরি। শুধু প্রাণী নয়, এই সমাজ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রক্ষার জন্যই।
আজকাল আমরা অনেকেই বিড়ালের প্রতি এক অদ্ভুত মায়া অনুভব করি। কেউ হয়তো একা থাকে, কেউ হয়তো ব্যস্ততার ভিড়ে হারিয়ে গেছে। কারও জীবনজুড়ে সম্পর্কের ভাঙাগড়া, কারও আবার ক্লান্তি— মানসিক আর আবেগের। অথচ এই সমস্ত কিছুর মধ্যেও একটি ছোট বিড়াল হঠাৎ আমাদের জীবনে আশ্রয় হয়ে দাঁড়ায়।
প্রশ্ন হচ্ছে— আমরা কি সত্যিই বিড়ালকে এতটা ভালোবাসি? নাকি আমাদের ভেতরে নিঃস্বার্থ ভালোবাসার যে অভাব, সেটা পূরণ করতেই আমরা বিড়ালের কাছে আশ্রয় খুঁজি?
মানুষের সম্পর্কগুলো এখন আগের মতো সহজ নেই। ভালোবাসা যেন হয়ে উঠেছে একটি লেনদেন— কে কাকে কতটুকু দেবে, কে কাকে কতটা গুরুত্ব দেবে। সেখানে ভুল বোঝাবুঝি আছে, আছে প্রত্যাশার চাপ, আর আছে নিজের মতো করে বাঁচতে না পারার বেদনা।
কিন্তু বিড়াল কিছু চায় না। তারা আমাদের নিখুঁত হতে বলে না, আমাদের ব্যর্থতা নিয়ে বিচার করে না। তারা কখনো পাশে বসে থাকে, কখনো ঘুমিয়ে যায়, কখনো আবার খামখেয়ালি হয়ে দূরে চলে যায়। তবুও তাদের ভালোবাসা শর্তহীন।
এই শর্তহীনতা, এই স্বস্তি— হয়তো এটাই আমাদের টানে। বিড়ালের মাঝে আমরা খুঁজে পাই এক ধরনের নীরব ভালোবাসা, যা আমাদের মনকে ছুঁয়ে যায়।
তাই যখন আমরা বিড়ালের দিকে ঝুঁকি, তখন সেটা শুধু একটা পোষা প্রাণীর প্রতি মায়া নয়— তা হয়তো এক নীরব আকুতি, নিঃস্বার্থ ভালোবাসার খোঁজে নিজেরই দিকে ফিরে দেখা।
এই প্রসঙ্গে Netflix-এর আলোচিত ডকুমেন্টারি সিরিজ Don't F**k with Cats: Hunting an Internet Killer-এর উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক। এই সিরিজটি দেখায় কিভাবে একটি অনলাইনে প্রকাশিত বিড়াল হত্যার ভিডিও একটি বৈশ্বিক অনুসন্ধানে রূপ নেয় এবং শেষ পর্যন্ত একজন সাইকোপ্যাথ খুনিকে সনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে সাহায্য করে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়— প্রাণী নির্যাতন কখনোই ‘ছোট অপরাধ’ নয়; বরং এটি বড় সহিংসতার পূর্বাভাস হতে পারে। এই ডকুমেন্টারিটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, প্রাণীর প্রতি সহিংসতা কোনো ব্যক্তিগত আচরণ নয়, এটি একটি সামাজিক বিপদের ইঙ্গিত। এই কারণে, আমাদের প্রতিক্রিয়া থাকা জরুরি— শুধু সংবেদনশীলতায় নয়, দায়িত্ববোধেও।
Published : 14 May 2025, 04:42 PM বিডিনিউজ২৪.কম। view this link
১৫ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:৪৪
মুনতাসির বলেছেন: আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ। জি, ঠিক একই ভাবে ব্যান্ড সংগিত নিয়ে কথা উঠে ছিল। তাতে কিন্তু কোনো কিছু আটকে থাকেনি। সৃষ্টিকর্তার ব্যপারটা তার উপর ছেড়ে দেয়া ভাল। তার হয়ে আমাদের ভাবার জন্যে মনে হয় উনি আমাদের সৃষ্টি করেননি।
অনেক শিশুতো এখন ডে কেয়ারে থাকে। কারণ মা রা কাজ করেন। চাকরি করেন। সংসার সামলান। তাই ক্রোড় এর সংজ্ঞা হয়তো পরির্র্তনশীল
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:১৭
অপলক বলেছেন: অনেক সুন্দর গুছিয়ে লেখা তথ্যবহুল পোস্ট। ধন্যবাদ দিতে পাচ্ছি না, কারণ উন্নশীল একটা দেশে পোষা প্রাণী পালা একটা আদিক্ষেতা , টাকার অপচয়। যে দেশে মানুষ এখনও ভিক্ষা করে, শিশু বিক্রি করে, অভাবে নিজের বোনকে পাচার করে, বাচ্চাকে খাওয়াতে মা দেহ ব্যবসা করে, সে দেশে এগুলো বড়ই মাতামাতি। সৃষ্টিকর্তাও এসবে সায় দেবেন না। তবে অবশ্যই অবলা প্রাণী নির্যাতন বন্ধ হোক,তা আমি চাই।
ব্যক্তিগতভাবে আমি কুত্তা, বিড়াল, পাখি বা বন্য প্রাণী বাসায় পালা অপছন্দ করি। কারণ, বন্যেরা বনেই সুন্দর শিশুরা মাতৃকোড়ে।