নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দ আমার আশ্রয়, চিন্তা আমার পথ। ইতিহাস, সমাজ আর আত্মপরিচয়ের গভীরে ডুব দিই—সত্যের আলো ছুঁতে। কলমই আমার নিরব প্রতিবাদ, নীরব অভিব্যক্তি।

মুনতাসির রাসেল

আমি তোমাদের মাঝে খুজিয়া ফিরি আমার বিশ্বলোক; নরকে গেলেও হাসিয়া বলিব আমি তোমাদেরই লোক।

মুনতাসির রাসেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ড. ইউনুস: এক নতুন স্টেটসম্যানের উত্থান

২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ড. মুহাম্মদ ইউনুস ধীরে ধীরে রাজনীতির এক নতুন স্তরে পদার্পণ করছেন—একজন স্টেটসম্যান হিসেবে। তার রাজনৈতিক যাত্রা হয়তো এখনও পূর্ণতা পায়নি, তবে গতিপথ অত্যন্ত সুস্পষ্ট। তার প্রতিটি পদক্ষেপ মেপে মেপে নেয়া, এবং জনগণের মধ্যে তার প্রতি আস্থা দিন দিন বাড়ছে। রাজনীতিতে বাস্তবতার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ জনগণের পারসেপশন, আর ইউনুস এই জায়গাটায় সফলভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।
অর্থনীতির রূপান্তর: রেমিট্যান্স ও বাজারের পরিবর্তন
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় চমক রেমিট্যান্স প্রবাহের রেকর্ড বৃদ্ধি। মার্চ মাসে ৩ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে, যা প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ঈদ উপলক্ষে রেমিট্যান্স বাড়ার প্রবণতা স্বাভাবিক, তবে এতটা অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পেছনে নিঃসন্দেহে নতুন সরকারের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ব্যবস্থাপনার প্রভাব রয়েছে। এই ধরনের পরিবর্তন বাজারেও পড়েছে, যার উদাহরণ হিসেবে ডিমের দাম উল্লেখযোগ্য। গত বছর যেখানে ১৫ টাকা পিস দরে ডিম কিনতে হয়েছে, এবার তা নেমে এসেছে ৮ টাকায়।
এই ধরনের মূল্যহ্রাস শুধু বাজারের স্বাভাবিক চক্র নয়; এটি সরাসরি প্রভাবিত হয়েছে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিনিয়োগকারীদের মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে। ড. ইউনুসের প্রতি এই আস্থা যে কেবল দেশীয় বিনিয়োগকারী নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা বোঝা যায় চীনের কাছ থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক প্রতিশ্রুতি থেকে।
রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ইউনুস বনাম অতীতের শাসক
বাংলাদেশের ইতিহাসে সত্যিকারের স্টেটসম্যান খুব কমই পাওয়া গেছে। সর্বশেষ যিনি এই যোগ্যতার ছাপ রেখেছিলেন, তিনি জিয়াউর রহমান। তার প্রশাসনিক দক্ষতা, সততা, এবং দূরদর্শী নীতির কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি দৃঢ় অবস্থান তৈরি করেছিল। কিন্তু তার জীবন ছিল সংক্ষিপ্ত। বর্তমান সময়ে ড. ইউনুস যেন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছেন, যেখানে তিনি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা এবং নৈতিক নেতৃত্বের সমন্বয় ঘটাচ্ছেন।
জিয়াউর রহমানের মতোই ইউনুস ব্যক্তিগত সম্পদের প্রতি আগ্রহী নন। তার নিজের জন্য কিছু করার প্রয়োজন নেই, কারণ সম্মান, স্বীকৃতি ও মর্যাদার শীর্ষ বিন্দুতে তিনি বহু আগেই পৌঁছে গেছেন। এই নির্লিপ্ততা তাকে আরও নির্ভীক করে তুলেছে, এবং তিনি কেবল দেশের উন্নয়নেই মনোনিবেশ করতে পারছেন।
আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ইউনুসের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি
ড. ইউনুস কেবল অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেই নয়, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও এক নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। তিনি বাইডেন প্রশাসনের কাছ থেকে সরাসরি সমর্থন পেয়েছেন, যা বাংলাদেশি রাজনীতিতে এক নজিরবিহীন ঘটনা। যেখানে অতীতের শাসকেরা বিশ্বনেতাদের সাথে সেলফি তোলাকে সাফল্য হিসেবে গণ্য করত, সেখানে ইউনুস বিশ্বনেতাদের সাথে চোখে চোখ রেখে কথা বলার সক্ষমতা দেখিয়েছেন।
শি জিনপিংয়ের কাছ থেকে ২ বিলিয়ন ডলার পাওয়া তার কৌশলগত বিচক্ষণতারই প্রমাণ। চীনের সাথে বন্ধুত্ব রাখতে গিয়ে অনেক সরকারপ্রধানই কেন্দ্রীয় প্রশাসনের উপর নির্ভরশীল থেকেছেন, কিন্তু ইউনুস প্রথমেই হাইনান প্রদেশে গিয়ে প্রাদেশিক সরকারের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছেন। এতে বোঝা যায়, তিনি শুধুমাত্র কূটনৈতিক স্তরে বন্ধুত্ব নয়, বরং জনগণের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে আগ্রহী।
রোহিঙ্গা সংকট ও ইউনুসের কঠোর বার্তা
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ইউনুসের অবস্থানও ব্যতিক্রমী। জাতিসংঘ মহাসচিবকে তিনি রোহিঙ্গাদের মাঝে নিয়ে গিয়ে তাদের সাথে ইফতার করিয়েছেন এবং মাতৃভাষায় জানিয়েছেন, "আগামী ঈদ আপনারা নিজের দেশে করবেন।" এটি কেবল মানবিক বার্তা নয়; বরং কৌশলগতভাবে মিয়ানমার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি কঠিন বার্তা।
জিয়াউর রহমানের আমলে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপে ভারতীয় নৌবাহিনী অবৈধভাবে প্রবেশ করেছিল। জিয়া দেরি করেননি—বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের গানবোট পাঠিয়ে ভারতীয় সেনাদের সরিয়ে দিয়েছিলেন। এই ধরনের দৃঢ় অবস্থান দেখাতে খুব কম নেতা সাহসী হন। ইউনুসও সেই ক্যাটাগরির রাজনীতিক, যিনি প্রয়োজন হলে কৌশলগতভাবে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
বাংলাদেশের অর্থনীতির নতুন দিকনির্দেশনা
জিয়াউর রহমান যখন শ্রমবাজার উন্মুক্ত করেছিলেন, তখন তিনি সরাসরি সৌদি বাদশাহর কাছে গিয়েছিলেন এবং চেয়েছিলেন ভিক্ষা নয়, চাকরি। তার এই দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে প্রবাসী আয় বাংলাদেশ অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউনুসও অর্থনীতিতে নতুন ক্ষেত্র তৈরি করছেন।
বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে তার সংযোগ ও গ্রহণযোগ্যতা বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করছে। তার প্রশাসন ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়, যেখানে দেশীয় বিনিয়োগ ও বিদেশি বিনিয়োগ দুইটাই সমান গুরুত্ব পাবে।
ইউনুসের ভবিষ্যৎ: বাংলাদেশ কোন পথে যাচ্ছে?
ড. ইউনুস একাধিকবার বলেছেন, তিনি দীর্ঘমেয়াদে রাজনীতি করতে চান না। তিনি বারবার বলেছেন, ডিসেম্বর অথবা জুনের পর তাকে ক্ষমতায় ধরে রাখা যাবে না। এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিরল ঘটনা। সাধারণত রাজনীতিবিদেরা ক্ষমতা আঁকড়ে ধরতে চান, অথচ ইউনুস ক্ষমতা ছাড়তে চান।
এমন একজন নেতা, যিনি নিজে ক্ষমতা চান না, কিন্তু জনগণ চায় তিনি থাকুন—এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশ আগে কখনো দেখেনি।
বাংলাদেশের রাজনীতির গতিধারা বদলাচ্ছে। অর্থনীতি, কূটনীতি, ও প্রশাসনিক দক্ষতার সমন্বয়ে ইউনুস এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে এগোচ্ছেন। ইতিহাস বলে, এই ধরনের নেতাদের সময় স্বল্প হয়, কিন্তু প্রভাব সুদূরপ্রসারী।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:২৪

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: জাতির ভালো কিছু হোক।

২৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:৫০

মুনতাসির রাসেল বলেছেন: সবার মঙ্গল কামনা করছি।

২| ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: দেশে ডলার সংকট ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে এটা অনেক বড় একটা ব্যাপার। রেকর্ড পরিমাণ যে টাকা বাংলাদেশে আসছে সেটাও বিরাট ভূমিকা রাখছে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেনে। প্রবাসীদের এই অবদান স্মরণ রেখে কিছু বিষয়ে সরকারের আরো কিছুটা যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। অন্তত এয়ারপোর্টে তাদের অযথা হয়রানি কমানোর জন্য কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জেনে ভালো লেগেছে। দিন শেষে বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাক এটাই চাওয়া। ধন্যবাদ।

২৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:৫২

মুনতাসির রাসেল বলেছেন: প্রবাসীদের আস্থার শঙ্কা কেটেছে। ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:৫২

মেঠোপথ২৩ বলেছেন: ডক্টর ইউনুসকে যদি আমরা অন্তত কয়েক বছর ক্ষমতায় না রাখতে পারি তবে সে ব্যার্থতার দায় আমাদের। দুর্নীতিবাজ লুটেরা রাজনৈ্তিক দলগুলোর নির্বাচনের নামে দেশ লুটের ক্ষমতাকে এবার যেভাবেই হোক প্রতিহত করতে হবে।

২৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:৫৪

মুনতাসির রাসেল বলেছেন: ক্ষমতা কাঠামোর পরিবর্তন জরুরী। কোনভাবেই আর পূর্বের ক্ষমতা কাঠামোয় ফেরৎ যাওয়া যাবে না। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। ধন্যবাদ আপনাকে।

৪| ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৯

চেংগিস খান বলেছেন:



ড: ইউনুসকে আমেরিকা এনেছে, আমেরিকাই উনার ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে; মাঝখানে জিয়ার মতো সময়স্যায় না'পড়লেই রক্ষা।

২৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:৫৫

মুনতাসির রাসেল বলেছেন: আপনি কি তাই চান?

৫| ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:৪৩

চেংগিস খান বলেছেন:



লেখক বলেছেন: অথচ তার ব্যাক্তিগত কোন সম্পত্তিই নেই!

-উনার সম্পর্কে কোন কিছু না জেনে কিভাবে এখানে লিখছেন? উনার টাকার উপর ট্যাক্স না'দেয়ায় মামলা হয়েছিলো।

৩০ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:০৭

মুনতাসির রাসেল বলেছেন: জি, সাজানো মামলা। সেই মামলা সম্পর্কে উনি কি কি বলেছেন দয়াকরে শুনে দেখবেন।

৬| ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৯:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: ইউনুস সাহেব জামাতের বন্ধু হয়ে গেছে তা জানেন?

৩০ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:০৯

মুনতাসির রাসেল বলেছেন: ওনার মধ্যে বৈরিতা নেই জন্যই হয়ত এমন মনে হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.