মৃত্যু..।

১৫ ই জুন, ২০১৯ দুপুর ২:৩২

নেতা সাহেবের বড় দাম্ভিকতা। তিনি এলাকার বড় নেতা। নেতা সাহেবকে টাকা না দিয়ে তার এলাকায় কোন কাজই হয় না। একজন ধার্মিক ব্যাক্তি নেতা সাহেবের এলাকায় বাড়ি করছেন। বাড়ি করতে গেলে নেতা সাহেবকে টাকা দিতে হবে বলে হুশিয়ার করে দিল নেতার সাঙপাঙরা। কিন্তু কয়েকদিন পরও দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় একদিন দুপুর বেলা নেতা এসে বাড়ির কেয়ারটেকারকে ডেকে গালাগাল করতে শুরু করলেন।

নেতা বললেন, "ব্যবসা তোমাগো জায়গা মতো ঢুকায় দিমু। মিয়া মানুষ চিনো না?"
জবাবে বেচারা কেয়ারটেকার শুধু "জি জি" বলে যেতে লাগলেন।

লোক জমে গেল। নেতা চিৎকার করতে লাগলেন। উঁচু স্বরে বললেন, "তোমগো মালিক রে আমার লগে দেখা করতে কইবা। না কইলে তোমারে দেইখা লমু। কোন জায়গায় বাড়ি করতাছো টের পাও না মিয়া?"
কেয়ারটেকার মালিককে জানানোর পর মালিক বলল, "ঠিক আছে দেখতেছি কী করা যায়।"

পরের দিন দুপুর বেলা গভীর এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে খুব বেদনাত্মক মন নিয়ে লোকটি সেই নেতার সাথে দেখা করতে গেল। যাবার আগে অফিসে ভালো মতো ওযু করে নিল। তার পর টেবিলের ওপর রাখা কোরআন শরীফের পাশ থেকে সাদা টুপিটা হাতে নিয়ে কেয়ারটেকারকে বললঃ "চলুন আপনিও সাথে চলুন।"
কেয়ারটেকারের বুকের ভেতর থেকে গভীর এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।

দুজন দ্রুত পায়ে হাঁটতে লাগল নেতার বাড়ির উদ্দেশ্যে..... তাদের সাথে একে একে একে আরো কিছু মানুষ সামিল হল। সবার মাথায় সাদা টুপি। কারো কারো গায়ে পাঞ্জাবিও রয়েছে।
সবাই নেতার বাড়ি যাচ্ছে নেতার জানাজা পড়তে। শেষরাতে নেতার মৃত্যু হয়েছে....।
মালিক আর কেয়ারটেকার জানাজা শেষে নেতার জন্য দোয়া করল। তার গুনাহ সমূহ মাপ করে দেবার জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে আকুতি জানাল।
আকাশ ফেটে অগ্নিতাপ ছড়িয়ে পড়ছে যেন।

আগের দিন দুপুর বেলা যে নেতা দাম্ভিকতা নিয়ে তার সাথে দেখা করতে বলে ছিলেন। পরের দিন দুপুর বেলা তার নিথর নিস্তব্ধ দেহখানার সামনে সেই লোক ঠায় দাঁড়িয়ে আছি। অথচ তিনি নিশ্চুপ নিশ্চল। কিছুই বলা তো দূরের কথা সামান্য অঙ্গুলির ইশারা দেবার ক্ষমতাও নেই তার।
নেতার মৃতদেহ বহনকারী ট্রাকটি আস্তে আস্তে বড় রাস্তার দিকে এগুতে লাগলো...।

মৃত্যু বড় নিষ্ঠুর। সে নেতা চিনে না। আমীর ফকির চিনে না। মেম্বার চেয়ারম্যান চিনে না। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী চিনে না। সে কিছু চেনে না কিছু জানে না। শুধু জানে কখন কাকে বিনা নোটিশে নিয়ে যেতে হবে, কার দাম্ভিকতা সাড়ে তিন হাত মাটির ঘরে চিরতরে চাপা দিতে হবে....

হে আমার রব,
অহংকারিত্ব থেকে আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই।
জুলুম থেকে আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই।
আমায় ক্ষমা করুন...রহম করুন। আমিন।

০ টি +০/-০