![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
না। মোটেও ভাল না। তারপরও আমরা দু:খে-সুখে গালাগালি দেই। জিনিস কিনে বাসায় এসে যখন দেখলেন ঠকে গেছেন তখন অনুপস্থিত দোকানদারকে লক্ষ্য করে নিদেন পক্ষে 'শালা' বলেন নি –এমন মানুষ সত্যিই বিরল। অন্যদিকে ন্যাংটাকালের বন্ধুকে দীর্ঘদিন পরে হঠাৎ দেখে মুখ ফসকে সে শব্দ বের হয়ে আসে তাও ওই 'শালা।' তবে এটি তখন গালি নয় পরমানন্দের প্রতীক। সেও হয়ত একই শব্দ উচ্চারণ করে আপনার প্রতি। কিন্তু কেউ এতে মনঃক্ষুণ্ন হয় না।
মা-নানীর মুখে শুনেছি। আমার মামাকে ছোট বেলায় পড়তে দেয়া হলো, চলো আমরা পাঠশালায় যাই। মামা শুনে চেতে উঠলেন। -এমন বাজে কথা লেখা আছে সে বইতে সে বইই পড়বো না। শেষমেষে ওই পাঠশালা কেটে স্কুল করে দেয়া হয়েছিল।
অন্যদিকে আমাদের এক দাদাকে ছোটবেলায় কোরআন তালিম দেয়া হচ্ছিল। বলা হলো, আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম... ওমনেই বেঁকে বসলেন তিনি। -না শয়তানের নাম নিয়ে কোরআন শরীফ পড়বো না। তাকে কোনো ভাবেই বোঝানো গেল না এর অর্থ। শেষ পর্যন্ত বিসমিল্লাহ দিয়ে কাজ সারা হলো। মা-নানী-মামা-দাদা কেউ আর নেই। আল্লাহর দরবারে ফিরে গেছেন অনেক আগেই।
দু' বন্ধুতে অনেকদিন পর দেখা হলে দেদার গালাগালি চলে। ঘটেছে এমন কাণ্ড এ জীবনে। ঢাকায় জিপিও'র কাছে দূর থেকে দেখতে পেলাম সেই স্কুল জীবনের এক বন্ধু। কোনও দিকে না থাকিয়ে হাঁটছে। চুল কমেছে। মধ্যপ্রদেশের বহর বেড়েছে। চেহারা-সুরতে রাশভারী হয়েছে। চলায় ব্যক্তিত্বের ভাবও অতিপ্রকট।
কিন্তু তারপরও স্কুলজীবনের চেহারাকে সে পুরোপুরি গোপন করতে পারেনি ছাগলটা'। তাকে চিনতেও দেরি হল না। -ওই শালা ছাগল কই যাস! নিজে যে কখন রাসভ স্বরে চিৎকার জুড়েছি বুঝতেই পারলাম না। আর এ স্বর জীবনে যে একবার শুনেছে তার ভোলার কথা নয়। সেও ঘুরে দাঁড়াল। বহু বছর ধরে যে সব ভাব-সাব অর্জন করেছে তা দ্বিধাহীন চিত্তি বিদায় করে দিয়ে বলল- আরে হারামজাদা পাঠা তুই এখনও মরস নাই।
দু'জনেই পরস্পরের দিকে তীর বেগে ছুটতে শুরু করলাম। একই সঙ্গে চলল গালাগালির বৃষ্টি। -ওই কুত্তার বাচ্চা আমি মরুম কেন তুই মর। পাল্টা জবাব এলো-শুয়ারের বাচ্চা তোর জিভ গোড়া থেকে ছিড়া আইন্যা জুতার তলা বানামু।
কথিত কোমল পানীয়র বোতল ঝাঁকিয়ে খুললে যে ভাবে ফসফস করে পানি বেরতে থাকে একই ভাবে দু'পক্ষের মুখে থেকে ঝরছিল গালিবৃষ্টি। আশেপাশের লোকজন সতর্ক হয়ে উঠল। এই বোধহয় শুরু হয় মারাত্মক মারপিট! হাতের নাগালের মধ্যে আসতেই দু'জন দু'জনকে জড়িয়ে ধরল।
-শালা ছিলি কই স্কুল ছাড়ার পর তোর একটা লোমও দেখতে পাই নাই।
-তুই শালাও কোথায় ভাইগ্যা আছিলি এতদিন। কোন কান্দুপট্টি বা টানবাজারে বাসা বানাইছস।
পাশের এক মহিলা ফোস করে স্বস্তির শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বললেন- ভাইরে আপনারা স্কুল জীবনে কি যে আকাম-কুকাম করে আইছেন কে জানে। কিন্তু পরম বন্ধু ছিলেন সে কথা জোর দিয়া কইতে পারি।
- স্কুল জীবনের সব বন্ধুর সঙ্গে আমাদের এমনই মাখামাখি। দু'জনেই প্রায় একত্রে বলে উঠলাম। গালাগালি যে এখানে একধরণের গলাগলিই হয়ে উঠেছে- সে কথা বোধহয় বলার দরকার নেই।
তবে সব-সময় তা হয়না। হয় না বলেই এটা গালাগালি। গালাগালি সার্বজনীনও নয়। ধরুন, কোনও ইরানিকে শালা বললে সে বুঝতেই পারবে না কি বলা হলও। কিংবা বুড়া আঙ্গুল দেখিয়ে যদি বলি, দুস শালা কাঁচকলা খা! সে হয়ত খুশিই হবে। কারণ ইরানে দামি ফলের গোত্রে পড়েছে কলা। বুড়া আঙ্গুল দেখানো তো এখন 'ওকে'র সমার্থক হয়ে গেছে।
রাজশাহীতে 'মামুর ব্যাটা' বলে একটা গাল দেয়া হয়। 'মামুর ব্যাটা'র মতো নিরীহ শব্দও যে গালাগালি হতে পারে এটা অন্য জেলার লোকজন হয়ত বুঝতে না। এদিকে বরিশালে কোনও মহিলাকে 'মাতারি' বা কোনও লোককে 'ব্যাটা' বলায় হয়ত দোষ নেই। কিন্তু অন্য অনেক জায়গায় শব্দদ্বয় ব্যবহার করলে খবর আছে। ছোট বেলায় চাঁদপুরে 'বুড়ির নাতি' বলে গালাগালি করতে শুনেছি। তুলনামূলক ভাবে বুড়ি না হলে তো আর নাতি হয় না! এর মধ্যে অপমানিত বোধ করার রহস্য কি আজও উদ্ধার করতে পারিনি। এখনও এ গালির চল আছে কিনা তাও জানি না।
কোনও কোনও গালিকে বাংলায় অনুবাদ করে জাতে ওঠানোর বা একে সর্বত্র প্রয়োগযোগ্য করার চেষ্টা অনেকের মধ্যে দেখা যায়। এ রকম একটি শব্দ হলো 'কেশ।' এ নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যার কোনও প্রয়োজন নেই।
এদিকে, আপন শ্যালককেও চোখ লাল করে কর্কশ গলায় শালা বললে মানহানির মামলা হতে পারে- মুজতবা আলীর পাঠক মাত্রই সে কথা ভালভাবেই জানেন।
লিবিয়া ফেরত এক ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু অনেক কাল আগে গালাগালি নিয়ে নিজের একটা অভিজ্ঞান আমাদের শুনিয়েছিলেন। সে সময় বাসে করে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করি। বাসেই তার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। সদা হাসিখুশি সে ভদ্রলোক বললেন, লিবিয়া যাওয়ার পরই কিছু আরবি শব্দ শিখিয়ে দিলেন পুরানো কয়েকজন। বললেন- লিবিয়বাসীদের সঙ্গে কথা বলার আগে-পিছে এ সব শব্দ বলতে হবে। তাই করতাম। ক'দিন পর আরবি ভাষায় সামান্য জ্ঞান হওয়ার পর দেখলাম, ওগুলো সবই বিশুদ্ধ গালাগালি এবং 'ম' 'চ'কার বিষয়ক সব শব্দ। সাথে সাথেই ওসব ব্যবহার বন্ধ করলাম। ওগুলোর বদলে সুশীল বাক্য ব্যবহার করতে শুরু করলাম আর বিপদে পড়লাম। -বিপদ বলেন কি? আমরা সবাই অবাক হয়ে জানতে চাইলাম।
-হ্যাঁ আমার নামে নালিশ করা হল, যখন এখানে এসেছিলাম তখন লোকজনের সঙ্গে আন্তরিক ভাবে কথা বলতাম কিন্তু এখন মাতব্বরী চালে কথা বলি! আসলে আমি যাকে গালাগালি বলে ভেবেছি ওগুলো আন্তরিকতা প্রকাশেও ব্যবহার হয়!
এক কালে ছাদপেটা হতো। এখন হয়ত আর ওর চল বা প্রয়োজন নেই। ছাদপেটার সময় সূর করে যে গান গাওয়া হতো তাতেও প্রচুর 'গালাগালি' বা 'অশালীন' শব্দ থাকতো। যারা সে গান শুনেছেন মনে আছে নিশ্চয়ই।
ইংরেজিতে 'ডিকশেনারি অব স্ল্যাং' থাকলেও এখনও এ জাতীয় কোনও অভিধানই নেই বাংলাভাষায়। শরৎচন্দ্র মহোদয়ের 'শ্রীকান্ত' কুলিদের সঙ্গে কাজ করার সময় দেদার গালাগালি দিয়েছেন। তবে খাতা খুলে সে কাজ করেছেন। কারণ তার নাকি গালাগালি মোটেও জানা ছিল না। এদিকে গালি না দিলে কাজে 'জোস' পায় না কুলিরা।
বাংলা ভাষায় গালাগালির একটি অভিধান থাকলে দেশের এর বিবর্তন এবং বৈচিত্র্য নিয়ে অনেক 'মজার' তথ্য জানা যেত। এ ছাড়া, আজকের যুগের 'শ্রীকান্তদের'ও সুবিধা হতো! ( প্রশ্ন উঠতে পারে- এ যুগে এমন 'শ্রীকান্ত' কেউ সত্যিই আছেন কি!)
১৯ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:১৯
সৈয়দ মূসা রেজা বলেছেন: বাতাসে অষ্পষ্ট সুর তোতলায় তোতলায়- ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৮
রাজীব নুর বলেছেন: "ঘোলাটে মাথার ভেতর দিয়ে দিনরাতগুলো যায় আর ফিরে আসে..."