![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় মহানবী সা. এর অবদান
মানব সমাজ যখন অমানিশার ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত, মানুষে মানুষে কলহ-বিবাদ, গোত্রে গোত্রে রক্তের হোলি খেলা, পাশবিকতা ও হিং¯্রতার জয় জয়াকার, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বিগ্রহের যাতাকলে যখন মানবতা নিভু নিভু করছে তখন ধরাধামে সম্প্রীতির মশাল নিয়ে আগমন করলেন মানবতার পরম বন্ধু, মহানবী মুহাম্মাদ সা.। তিনি আবির্ভুত হন গোটা বিশ্ববাসীর উপহার স্বরূপ। শুধু মুমিন-মুসলিম নয় সমগ্র মানব জাতির ত্রাণকর্তা রূপে তিনি প্রেরিত, মহান আল্লাহ ইরশাদ করেনঃ
আমি তোমাকে সমগ্র মানব জাতির প্রতি সু-সংবাদ দাতা ও সতর্ককারী রূপে প্রেরণ করেছি। (সাবা-২৮)
মহানবীর আবির্ভাবকালে বিশ্বের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিঃ
এখানে বিশদ আলোচনার অবকাশ নেই, একথার বলার প্রয়োজন নেই যে, মহানবী সা. এর পূর্বে আরবে সভ্যতা বলতে কিছুই ছিলনা, সবই ছিল হানা-হানি ও রাহাজানি। অসংখ্য নবী-রাসূল বিশ্বের বিভিন্ন দিগন্তে মানুষে মানুষে সাম্য ও সম্প্রীতির শিক্ষা দিয়ে গেছেন। কিন্তু মহানবী সা. এর আবির্ভাবকালে কেবল আরবজাহান নয় বরং সারা জাহান হতে মানুষে মানুষে ভালবাসা ও জাতিতে জাতিতে সম্প্রীতি ভূলুন্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। মিশর, ভারত. ব্যাবিলন, গ্রীস ও চীনে মানব সভ্যতা সম্পূর্নরুপে বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। রোম ও পারস্য আজকের ইউরোপ আমেরিকার মত সভ্যতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধ্বজাধারী ছিল। কিন্তু বা¯তবতা বলতে কিছুই ছিলনা। সন্ত্রাস নির্মূল ও বিশ্বশান্তির নামে পাশ্চাত্য জগত আজ যেমন সারা বিশ্বে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিচ্ছে। রোমক ও ইরানীগণ তখন নিজেদের মাঝে হানা-হানিতে কেবল সীমাবদ্ধ ছিলনা বরং গোত্রে গোত্রে হানা-হানি ও সাম্প্রদায়িকতা সভ্যতার আড়ালে ছড়িয়ে দিত। রোমান ও পারস্য সম্রাটগণ শুধু অবতার হওয়ার দাবী করতনা বরং তারা খোদা হয়ে মানব সমাজে জেঁকে বসেছিল। তাদের সাথে আতাঁত করে সাধারন জনগনের উপর প্রভুত্ব চালাত ভূমিপুত্র ও ধর্মযাজকগণ। তাদের শোষন নিষ্পেষনে মানুষ শ্বাসরুদ্ব হয়ে মরতে বসেছিল। কর্তৃত্বশীল শ্রেনীর ভোগ-বিলাস তাদের নৈতিক সত্তাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। ক্ষমতার পালাবদল হত লড়াই সংঘর্ষের মাধ্যমে। নিত্যনতুন শাসক ক্ষমতার মসনদে আসীন হওয়ার পর জনগন ভাবত আগেরটির চেয়ে এটি আরও ভয়ানক শোষক। সারাবিশ্ব স্বজনপ্রীতি ও সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে ভরপুর হয়ে গিয়েছিল। মানুষের সামনে ক্ষীণতম আশার আলো জ্বালানের মত কোন মতবাদ ছিলনা। তারা আর্তনাদ করত কিন্তু তাতে সাড়া দেয়ার কেউ ছিলনা। নবীদের শিক্ষা বিকৃতি ও অপব্যাবহারের ফলে দুনিয়া থেকে উঠে গিয়েছিল। গ্রীক দর্শন, কনফুসিয়াস, মনুসংহিতা, বেদ বেদান্ত, বৌদ্ধ ধর্ম ও জাষ্টিনিন ও সোলুওনর আইন সবই হয়ে পড়েছিল নিষ্প্রাণ ও নিষ্ক্রীয়। কোন দিক হতে কোন আশার আলো দৃষ্টিগোচর হচ্ছিলনা। বিশ্বজুড়ে যখন ইতিহাসের ভয়াবহতম বীভৎসতা ছড়িয়ে পড়লো, অরাজকতার ঘুট ঘুটে অন্ধকারে মানবতা ঢাকা পড়লো, তখন আকস্মিকভাবে সম্প্রীতির প্রদীপ নিয়ে প্রেরিত হলেন মানবতার শ্রেষ্টতম বন্ধু মহানবী সা.। মহান আল্লাহ্র ভাষায় এরূপে ইরশাদ হয়েছেঃ
তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহকে স্মরণ করঃ তোমরা ছিলে পরপর শত্রু এবং তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিকুন্ডের প্রান্তে ছিলে, আল্লাহ তা হতে তোমাদেরকে রক্ষা করেছেন। (আলে-ইমরান-১০৩) উল্লেখ্য যে:
জাহিলিয়া যুগে আউস ওখাজরায পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী দু’টি সম্প্রদায় ছিল। এদের মাঝে যুদ্ধ-বিগ্রহ ও পরস্পর হানা-হানি এত চরমে পৌছে ছিল যে, শুরু হওয়ার পর আর তা শেষ হয়না। মহানবী সা. সম্প্রীতির অমীয় বাণী নিয়ে এধরাতে আবির্ভুত হলে তারা তা বুকে ধারন করে। ফলে তাদের মধ্যকার চিরাচরিত হানা-হানি কেবল বন্ধই হয়নি বরং তারা সম্প্রীতি ও ভালবাসার বন্ধনে আপন ভাইয়ের মত হয়ে গিয়েছিল। আল-কুরআনে বিষয়টি এভাবে তুলে ধরা হয়েছে (ইবন কাসীর, মুখতাসারু তাফসীরে ইবন কাসীর ১খ ৩০৫)
হিলফুল ফযূল গঠনঃ
পারস্পরিক সহযোগিতা ও ঐক্যের অঙ্গীকারমূলক একটি সংঘের নাম ছিল হিলফুল ফযূল। মুহাম্মাদ সা. সবে মাত্র কিশোর, বয়স ১৪ বছর, ফিজারের ৪র্থ যুদ্ধ তখন সংঘটিত হয় বিবদমান দু’টি দলের মাঝে প্রধানত কুরাইশ ও হাওয়াযিন গোত্র ছিল। কুরাইশদের হয়ে তিনি চাচাদের সঙ্গে যুদ্ধে উদ্ভাসিত ছিলেন। কুরাইশগন ছিল এতে আত্ম রক্ষার ভুমিকায়। তারা ছিল সম্পূর্ন নির্দোষ। একারণেই হযরত মুহাম্মাদ সা. তাতে অংশ গ্রহণ করেন। তবে তিনি কোন অস্ত্র হাতে তুলে নেননি। যুদ্ধভীষন আকার ধারন করেছিল (ফুয়াদ হামযা, কালবু জাযীরাতিল আরব, মিসর ১৩৫২ হি. ২৬০) রনাঙ্গনে উপস্থিত থাকায় যুদ্ধের বিভীষিকা তিনি প্রত্যক্ষ করেন। গোত্রে গোত্রে এরূপ তান্ডব লীলা তাঁকে প্রচন্ড ভাবে আহত করে। আরবদের মাঝে এরূপ নির্মমতা চিরকাল হতে চলে আসছে। কোন দিনেই তাদের পাষাণ হৃদয়ে সহমর্মিতার উদ্রেক হয়নি। এবারই ব্যতিক্রম, কতিপয় যুবকের অন্তরে যুদ্ধ বন্ধ ও মানব সমাজে সম্প্রীতির ভাবনা তৈরী হয়। কারন বিশ্ব মানবতার ত্রানকর্তা, করুনারছবি ও ইনসানিয়্যাতের রবির আলোকচ্ছটা পড়েছে সেই যুবসমাজের অন্তরে। ফিজার যুদ্ধের পরিসমাপ্তির পর বনু হাশেম গোত্রের পতাকা উড্ডয়ন কারী যুবায়ের একটি শান্তি সংঘ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করলেন। তিনি ছিলেন মুহাম্মাদ সা. এর চাচা । তার অন্তরেই হযরত মুহাম্মাদ সা. এর অন্তরের প্রতিচ্ছায়া সম্যক রূপে প্রতিফলিত হয়েছিল। সমাজে সম্প্রীতি সৃষ্টির ভাবনা তাঁর হৃদয়ে সঞ্চারিত হয়েছিল। উপস্থিত যুবকগণ স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে তাতে সাড়া দিল। আপন গোত্রের কেউ কোন অন্যায় করলে তাকে সর্বাত্মক সমর্থন করা, তার মান ইজ্জত রক্ষার্থে অকাতরে ধন-প্রাণ বিলিয়ে দেয়া ছিল আরবে সাধারন নিয়ম। এপ্রথাকে বিসর্জন দিয়ে যুবকদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞায় ঐক্যমত পোষন করায় বালক মুহাম্মাদ সা. মনেপ্রাণে খুশি হয়েছিলেন। (আস-সুহায়লী, আর-রাওদুল উনুফ, মিসর ১৯১৪ ২খ ৭১)
আব্দুল্লাহ ইবন জুদ’আনের গৃহে একটি সম্মেলনের মাধ্যমে হিলফুল ফযূলের কার্যক্রম শুরু হয়। হযরত মুহাম্মাদ সা. এসম্মেলনে স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন। অন্যতম সদস্য হিসেবে তিনি শপথ গ্রহন করেন। নুবুওয়াত লাভের পর তিনি বলতেন, আব্দুল্লাহ ইবন জুদ’আনের গৃহে শপথ করে যে প্রতিজ্ঞা করে ছিলাম তার বিনিময়ে আমাকে লাল লাল উট দান করলেও আমি সেই প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করতে সম্মত নই। আজও যদি কোন নিপীড়িত ব্যক্তি হে হিলফুল ফযূলের সদস্যগণ! বলে আহ্বান করে তবে আমি তার সে ডাকে সাড়া দেব। কারন ইসলাম ইনসাফ প্রতিষ্ঠা এবং নির্যাতিতের সাহায্যের জন্যই এসেছে ।
(আল-হাকীম নিশাপুরী,আল-মুসতাদরাক, হায়দ্রাবাদ, ১৩৪৫হি, ২খ ২২০)
হাজারে আসওয়াদ প্রতিস্থাপনে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িকতার নিরসনঃ
কা’বা ঘর ও হাজারে আসওয়াদ ছিল ধর্ম বর্ণ নিবিশেষে সকল গোত্রের কাছে সম্মানিত। সেই আদম আঃ হতে তা সকল শ্রেনীর মানুষের প্রিয় স্থান বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। হযরত মুহাম্মাদ সা. তখনও নুবুওয়াত লাভে ধন্য হননি। তাঁর বয়স যখন ৩৫ বছর, তখন কা’বা গৃহ মেরামত করার প্রয়োজন পড়ে। সকলে মিলে মিশে কা’বার নির্মান কাজকরতে লাগলেন। মক্কার কোন গোত্রই যেন এবরকতময় কাজ হতে বঞ্চিত না হন, সেজন্য ঘরের প্রতিটি অংশকে এক এক গোত্রের মাঝে ভাগ করে দেয়া হয়। সম্মিলিত ভাবে কা‘বার কাজ চলছিল। হাজারে আসওয়াদ যেই স্থানে সংস্থাপন করার কথা সেখানে আসার পর কর্মরত গোত্র গুলোর মাঝে মতভিন্নতা সৃষ্টি হলো। কোন গোত্রের লোকজন পাথরটিকে যথাস্থানে স্থাপন করবেন তা নিয়ে মহা বিভ্রাট সৃষ্টি হলো। কারন এর সাথে সামাজিক মর্যাদার বিষয় জড়ানো ছিল। প্রতিটি গোত্র এমর্যাদায় ছাড় দিতে নারাজ। এর ফলে দ্বন্ধ চরম আকার ধারন করল। গোটা শহর হাঙ্গামার ভয়ে আতংকিত হয়ে ওঠল। চারদিন পর্যন্ত থম থমে ভাব বিরাজ করছিল। এরই মাঝে রণ প্রস্তুতি চলছিল। কোন কোন গোত্র তৎকালীন আরবের প্রথা অনুযায়ী রক্তে হাত ডুবিয়ে মরণের প্রতিজ্ঞা পর্যন্ত করে ফেলল। যুদ্ধ বন্ধে বয়োজ্যেষ্ঠ আবু উমাইয়া (মতান্তরে তার ভাই ওয়ালীদ) বিবদমান দলগুলোকে যুদ্ধ বন্ধে একটি প্রস্তাব পেশ করলেন। তিনি বললেন, বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য আমি প্রস্তাব করছি যে, আগামী দিন বনু শায়বা নামক গেইট দিয়ে যিনি সর্বাগ্রে প্রবেশ করবেন তার হাতে এ ঝগড়ার মীমাংসার ভার দেয়া হোক। এপ্রস্তাবকে মীমাংসার সুন্দরতম পন্থা বলে সকলে মেনে নিলেন। তবে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মাঝে উদ্বেগের কারন ছিল সেই গেইট দিয়ে কে প্রবেশ করে তার কৌতুহল নিয়ে। অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ হল সেই গেইট দিয়ে হযরত মুহাম্মাদ সা. এর প্রবেশের মাধ্যমে । তাকে দেখে সবাই বলে উঠল, সে তো ‘আল-আমীন’ আমরা তাঁর উপর সন্তুষ্ট। তাঁকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলা হল, তিনি বললেন যে সকল সম্প্রদায় হাজারে আসওয়াদ যথা স্থানে স্থাপনের অধিকারী বলে দাবীদার, তারা নিজ নিজ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি নির্বাচন করুন। তিনি একখানা চাদর বিছিয়ে দিয়ে তাতে হাজারে আসওয়াদ কে এর মাঝ খানে রেখে প্রতিনিধি গণকে চাদরের এক প্রান্তে ধরে তা উঠাতে বললেন ফলে সম্মিলিত ভাবে তারা তা যথা স্থানে স্থাপনের সুযোগ লাভ করল। অতঃপর তিনি নিজ হাতে চাদর হতে পাথরটিকে যথা স্থানে রেখে দিলেন। এতে সকলেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। এভাবে রক্তক্ষয়ী সাম্প্রাদায়িক দাঙ্গার একসম্ভাবনা তিরোহিত হয়েগেল। (আয-যারকানী, শারহু মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়া, মিসর তা,বি ১খ ২০৩; আলী ইবন বুরহানুদ্দীন, আস-সীরাতুল হালাবিয়া, মিসর ১৯৬ খ্রি:, ১খ ১৬০)
মুহাজির ও আনসারদের মাঝে ভ্রাতৃতে¦র বন্ধনঃ
রাসূলুল্লাহ সা. মাদীনায় হিজরতের পর দেশ ত্যাগী সাহাবায়ে কেরাম ও আশ্রয় দাতা আনসার গণের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টির মাধ্যমে সম্প্রীতির এক উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। দু‘টি অঞ্চলের মানুষ, যারা পেশা ও সংস্কৃতিতে ভিন্ন ভিন্ন ধারায় অভ্যস্থ, তাদেরকে এক সুতোয় গাঁথার জন্য যেই কর্ম কৌশল অবলম্বন করার প্রয়োজন ছিল, তাহল, তাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ পয়দা করা। রাসূলুল্লাহ সা. তা-ই করে গোটা উম্মাহকে সোনালী সমাজে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ইরশাদ হচ্ছেঃ
আনাস রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. মদীনায় আমার গৃহে কুরাইশ ও আনসারদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করছিলেন, তার থেকে বর্ণিত অন্য রেওয়ায়াতে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. আবূ উবায়দা ইবনুল র্জারাহ ও আবূ তালহার মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করে দিয়েছিলেন। (ইমাম মুসলিম, আস-সাহীহ, ২খ ৩০৮) এই ভ্রাতৃত্ব এমন ভাবে সুদৃঢ় করে দেয়া হয়ে ছিল যে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে এর দ¦ারা পরস্পর উত্তরাধিকারও হওয়া যেত। পরবর্তীকালে আল-কুরআনে উত্তরাধিকার আইন স্পষ্ট ভাবে নাযিল হলে এর কার্যকারিতা রহিত হয়ে যায় (ইমাম নাওয়ায়ী, পাদটীকা সাহীহ মুসলিম, প্রাগুক্ত)
মাদীনা সনদঃ
মাদীনায় হিজরতের পর রাসূলুল্লাহ সা. পৌনে ছয় বর্গমাইলের ছোট্ট একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের দায়িত্ব তার উপর অর্পিত হয়। তিনি পর্যবেক্ষণ করলেন, এখানে অন্যান্য ধর্মানুসারী লোকজনও রয়েছ্,ে ইয়াহুদীগণের তিনটি উপগোত্র এখানে বহুকাল হতে বসবাস করে আসছে। অবিশ্বাসী গণের সংখ্যা ও নেহাত কম নয়,আনসারদের প্রসিদ্ধ দু’টি দল আউস ও খায্রাজ তো আছেই। এছাড়া আব্দুল আশহাল, সা‘ইদা, যুরায়ক প্রভৃতি গোত্রে বহু ইয়াহুদী ছিল। একারনে সবার আগে রাষ্ট্রের নাগরিকদের মাঝে ঐক্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখার দায়িত্ব অর্পিত হয় তাঁর উপর। ফলে মাদীনার অন্যান্য নাগরিকদের সাথে সহাবস্থানের জন্য একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির প্রতিপক্ষ ছিল প্রধানত ঃ ইয়াহুদীদের তিনটি উপগোত্র। তারা ছিল যথাক্রমে, বানূ নাযীর, বানূ কুরায়যা ও বানূ কায়নুকা। ইসলামী রাষ্ট্রের সংবিধান আল-কুরআন পূর্ন ভাবে নাযিল হওয়ার পূর্বে এ সনদ অনুসারে মাদীনা রাষ্ট্র পরিচালিত হত । একে বিশ্বের ইতিহাসে সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান বলা হয়। ইবন হিশাম মাদীনা সনদের ৫৩ টি ধারা উল্লেখ করেছেন। তা নিম্মরূপঃ-
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
এটি নবী মুহাম্মাদ এর পক্ষ হতে লিখিত। কুরাইশ, ইয়াসরিব ও এখানকার বসবাসকারীদের নিয়ে সম্পাদিত।
১.অন্যদের বিপরীতে এখানকার সকলেই এক উম্মাহ বলেগণ্য হবে।
২.কুরাইশ মুহাজিরগণ পূর্ব প্রথা অনুযায়ী রক্ত পণ আদায় করবে। বন্দিদের মুক্তি পণ পরিশোধ করে তাদেরকে মুক্ত করবে। যাতে মুমিনদের মধ্যকার পারস্পরিক আচারন ন্যায়ানুগ ও ভারসাম্য পূর্ন হয়।
৩.বানূ-সা‘ইদাহ তাদের পূর্ব প্রথা অনুযায়ী রক্তপণ পরিশোধ করবে এবং প্রত্যেক সম্প্রদায় তাদের বন্দিদের মুক্তিপণ পরিশোধ করবে।
৪.বানু আউফের আনসারগণ পূর্বের মত মুক্তিপণ পরিশোধ করবে। প্রত্যেক পক্ষই বন্দিগণকে মুক্ত করার চেষ্টা করবে, যাতে মুমিনদের মাঝে পারস্পরিক সাম্য ও সংহতি অব্যাহত থাকে।
৫. বানূ হারিস, বানূ জু’শাম, বানূ নাজ্জার, বানূ নাবীত ও বানূ আউস প্রত্যেক গোত্রের লোকেরা পূর্ব প্রথা অনুযায়ী মুক্তিপণ পরিশোধ করবে। যাতে ইনসাফ ও ভারসাম্যপূর্ন জীবন-যাপনে সকলেই সমান সুযোগ পায়। (এ মর্মে ৬,৭,৮,৯,১০টি ধারা লিপি বদ্ধ ছিল)
১১. মুমিনদেরকে মিসকীন ও অভাবগ্রস্তরূপে ছেড়ে দেয়া যাবেনা। প্রয়োজন কালে যাতে যাবতীয় পাওনা তারা পরিশোধ করতে পারে সেরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১২. কোন মুমিন ব্যক্তি অপর মুমিন ভাইয়ের অনুমতি ছাড়া অন্য কারো সাথে চুক্তি বদ্ধ হতে পারবে না।
১৩. যে ব্যক্তি অন্যায় অনাচার ও পাপ পংকিলতায় লিপ্ত থাকবে, মুত্তাকী মুমিনগন সম্মিলিত ভাবে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।
১৪. কোন মুমিন ব্যক্তি কোন অবিশ্বাসী লোকের বিপরীতে কোন মুসলিমকে হত্যা করবে না।এমনকি কোন মুসলিমের বিরুদ্ধে কোন অবিশ্বাসীকে সহযোগিতা করা যাবেনা।
১৫.আল্লাহ্র জিম্মা সর্বজন মান্য। কোন সাধারন নাগরিক কাউকে নিরাপতÍা দিলে সকলকে তার মর্যাদা রক্ষা করে চলতে হবে। মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।
১৬. ইয়াহুদিগণের মধ্যে যে ব্যক্তি আমাদের আনুগত্য পোষণ করবে সেও সাম্য ও সমতার অধিকারী বলে গণ্য হবে। সে কোন অন্যায়ের শিকার হবেনা।
১৭. মুসলিমগনের সন্ধি অভিন্ন সন্ধি। আল্লাহ্র পথে কোন মুমিন ব্যক্তি অপর মুমিন ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে শত্রুর সাথে সন্ধি করা চলবেনা।
১৮.আমাদের পক্ষের শক্তি রূপে যারা আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করবে, তারা একে অপরের সহযোগিতা করবে।
১৯.মুমিনগণ আল্লাহ্র পথে মারা গেলে একজনের রক্তের বদলা অপরজনকে নিতে হবে।
২০. মুমিনগণ নিঃসন্দেহে সবচেয়ে সহজ-সরল তথা সিরাতে মুসতাকীমে রয়েছে।
২১. কোন মুশরিক বা পৌত্তলিক ব্যক্তি মক্কার কোন কাফির কুরাইশ লোকের সম্পদ বা প্রাণের আশ্রয় দাতা হবেনা। কোন মুমিন ব্যক্তিকে এব্যাপারে বাধা প্রদান করা যাবেনা।
২২.কোন মুমিনকে যে ব্যক্তি হত্যা করবে আর সাক্ষ্য প্রমাণে তা সাব্যস্থ হবে, তার থেকে কিসাস নেয়া হবে। হত্যার বদলে তাকে হত্যা করা হবে। তবে হ্যা, নিহত ব্যক্তির ওয়ারিশগণ রক্তপণ নিয়ে তাকে মাফ করে দিতে সম্মত হলে আর মুমিনগণের তাতে সায় থাকলে ভিন্ন কথা। এছাড়া কিসাসের কোন বিকল্প নেই।
২৩. যে ব্যক্তি এ চুক্তি নামার বিষয় বস্তুর সাথে একমত পোষণ করেছে আর সে আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তার জন্য কোন নতুন ফিতনা সৃষ্টি কারীদের সাহায্য করা ও আশ্রয় দান করা বৈধ হবেনা।
২৪. তোমাদের মাঝে কোন বিষয় নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে তা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের নিকট উত্থাপন করতে হবে।
২৫. ইয়াহুদীগণ যে পর্যন্ত মুসলিমদের সাথে মিলে মিশে যুদ্ধ করবে সে পর্যন্ত তারা এ যুদ্ধের ব্যয় ও বহন করবে।
২৬. বানূ আউফের ইয়াহুদীগণ মুমিনদের সাথে একই উম্মাহ রুপে গণ্য হবে। ইয়াহুদীগণ তাদের ধর্ম এবং মুসলিমগণ তাদের ধর্ম পালনে স্বাধীন থাকবে। এটি তারা এবং তাদের অধীনস্থ গোলামদের জন্য ও প্রযোজ্য থাকবে। যে ব্যক্তি অন্যায় ও অপরাধ করবে, এর দায় সে এবং তার গৃহবাসীগণ ছাড়া অন্য কেউ বহন করবেনা।
২৭. বানূ নাজ্জার ইয়াহুদীগণ বানূ আউফের ইয়াহুদীণের মত স্বাধীনতা ভোগ করবে।
২৮. বানু হারিসের ইয়াহুদীগণও বানু আউফের মত অধিকার লাভ করবে।
২৯. বানূ সা‘ইদা
৩০. বানূ জু‘শাম
৩১. বানূ আউফও
৩২.বানূ সা‘লার এসকল গোত্রের ইয়াহুদীগণও বানু আউফের ন্যায় অধিকার ভোগ করবে।
৩৩. জাফনা গোত্র ও সা‘লাবার শাখা গোত্র, সা‘লাবারা যে রূপ অধিকার ভোগ করবে তারাও তার অধিকারী হবে।
৩৪. বিশ্বস্ততায় বানূ শুতায়বা ও সেই সকল অধিকার ভোগ করবে, যা বানূ আউফ করে থাকে। বিশ্বাস ভঙ্গে তা রহিত হয়ে যাবে।
৩৫. সা‘লাবা গোত্রের অধীন তার দাস-দাসীগনও মূল গোত্রের মত স্বাধীনতা লাভ করবে।
৩৬. ইয়াহুদীগণের শাখা গোত্র গুলোও মূল গোত্রের ন্যায় অধিকার লাভ করবে।
৩৭. কোন গোত্র ও উপগোত্র মহানবী মুহাম্মাদ সা. এর অনুমতি ছাড়া যুদ্ধে বের হবে না।
৩৮. জখম করার প্রতিশোধ গ্রহনের পথে কোন বাধা-বিপত্তি সৃষ্টি করা হবেনা। রক্ত পাতে যে ব্যক্তি উদ্ধত সে নিজে ক্ষতি গ্রস্থ হবে এবং নিজ পরিজনের জন্যও ধ্বংস ডেকে আনবে। তবে নিপীড়িত ব্যক্তির কথা স্বতন্ত্র, সে আল্লাহর আনুকল্য পাওয়ার উপযুক্ত।
৩৯. মুসলিম ও ইয়াহুদীণের ব্যয়ভার তাদের নিজেদের উপর বর্তাবে।
৪০. এ চুক্তি পত্র গ্রহন কারী কোনগোত্র যদি অপর গোত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারন করে তাহলে অস্ত্র ধারীদের বিরুদ্ধে সকলে সম্মিলিত ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। চুক্তি গ্রহণ কারীগন একে অপরের প্রতি বিশ্¦স্ত থাকবে, বিশ্বাস ভঙ্গ করবেনা। পরস্পরের প্রতি সৌহার্দ্য ও মঙ্গল কামনার সম্পর্ক বজায় থাকবে।
৪১. কোন পক্ষ তার মিত্র পক্ষের অপকর্মের জন্য দায়ী হবেনা, তবে অত্যাচারিত সাহায্যের অধিকার লাভ করবে।
৪২. যত দিন পর্যন্ত ইয়াহুদীগণ মুসলিম সমাজের সঙ্গী ও সহযোদ্ধা রূপে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত তারাও যুদ্ধের ব্যয়ভার নির্বাহ করবে।
৪৩. ইয়াসরিব (মাদীনা) অঞ্চল এ চুক্তি নামার সকল পক্ষের কাছে পবিত্রভূমি বলে বিবেচিত হবে।
৪৪. কোন পক্ষের আশ্রিতরা আশ্রয়দাতার সমান মর্যাদা ও অধিকার লাভ করবে। তাদের কোন ক্ষতি সাধন করা যাবেনা এবং তাদের সাথে অপরাধমূলক কোন কাজ করা যাবেনা।
৪৫. কোন মহিলাকে তার পরিবারের লোকজনের অনুমতি ছাড়া আশ্রয় দেয়া যাবেনা।
৪৬. চুক্তি পত্রে একমত পোষন কারী পক্ষ সমূহের মাঝে যদি নতুন করে কোন সমস্যার উদ্ভব হয়, যার ফলে যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশংকা হয় তাহলে এর মীমাংসার জন্য তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ সা. এর কাছে উত্থাপন করতে হবে। এ চুক্তি নামার বিষয় ব¯তু আল্লাহ্র কাছে পসন্দনীয়, এর প্রতি বিশ্বস্ত থাকাও তার কাছে প্রিয়।
৪৭. মক্কার অবিশ্বাসী কুরাইশ সম্প্রদায় বা তাদের সহযোগী যে কোন আক্রমণ কারীর বিরুদ্ধে ঐক্য বদ্ধ ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
৪৮. চুক্তির সকল পক্ষ ইয়াসরিব আক্রমণ কারীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকবে।
৪৯. অন্যদেরকে যখন সন্ধির জন্য আহ্বান জানানো হবে, তখন তাদেরকে আহ্বানে সাড়া দিতে হবে। অনুরূপ মুসলিমগণকেও সন্ধির জন্য আহ্বান জানানো হলে তাদেরও সন্ধি বদ্ধ হতে হবে। তবে কেউ যদি ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ন হয়, তবে তার ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য হবেনা।
৫০. প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তার নিজের দিকের প্রতিরোধের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে।
৫১. আউসের ইয়াহুদীগণ নিজেরা এবং তাদের দাস-দাসীগণ এই চুক্তির শরীক পক্ষ হিসেবে সমান অধিকার লাভ করিবে।
৫২.এ চুক্তি পত্র কোন অত্যাচারী বা অপরাধীর সহায়ক বিবেচিত হবেনা। যুদ্ধের যাত্রী ও মাদীনায় অবস্থানকারী উভয়ই নিরাপত্তার অধিকারী বলে বিবেচিত হবে। তবে অত্যাচারী ও অপরাধী এর ব্যতিক্রম বলে গন্য হবে।
৫৩. আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সা. ঐ ব্যক্তির পক্ষে রয়েছেন, যে ব্যক্তি চুক্তি পালনে নিষ্ঠাবান ও আল্লাহভীরু।
সিরাতবিদ আল্লামা শিবলী নু‘মানী বলেন, এ সনদের মাধ্যমে ইয়াহুদীগণ ও মুসলিমগণের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সম্প্রীতির সম্পর্ক স্থাপিত হয়। আর,বি,শেরজিয়ান্ট তাঁর দ্যা সুন্নী জামি‘আ প্যাক্ট উইথ দ্যা ইয়াথরিব জুস এন্ড দ্যা তাহরীম অফ ইয়াথরিবঃ এ্যানালাইসিস এ্যান্ড ট্রান্সসেলেশন অফ দ্যা ডকুমেন্ট কমবাইজ্ড ইন দ্যা সো-কলড ‘কন্সটিটিউশন অফ মাদিনা’ প্রবন্ধে বলেন যে, ঐব [গঁযধসসধফ (ংস.)] ঋড়ৎসবফ ধ পড়হভবফবৎধঃরড়হ (টসসধয) ইধংরপধষু ঝবপঁষধৎ রহ ঢ়ধঃঃব.
তিনি সকলের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। এই সনদে মাদীনাবাসী ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান, মজূসী- অগ্নি উপাসক এক কথায় সনদে স্বাক্ষরিত সকল সম্প্রদায় উম্মাহ ভুক্ত বলে ঘোষনা করা হয়। (অগ্রপথিক, জুলাই-আগষ্ট-২০১৩ সংখ্যা)
অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সাথে সৌহার্দ্য পূর্ণ আচারণঃ
মু‘আমালা ও মু‘আশারাহ তথা লেন-দেন ও আচরণে মুসলিম ও অমুসলিমের মাঝে কোন পার্থক্য রেখা নেই। অনুরূপ আক্রমনোদ্যত ও যুদ্ধরত নয় এমন অমুসলিম ব্যক্তি সহমর্মিতা ও সমবেদনা পাওয়ার অধিকার রাখে। আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছেঃ
আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের সাথে সদাচার ও ইনসাফ করতে নিষেধ করেন না। যারা তোমাদের সঙ্গে ধর্ম নিয়ে লড়াই করেনা এবং তোমাদেরকে তোমাদের দেশ হতে বের করে দেয় না। (মুমতাহিনাঃ ৮)
আরো ইরশাদ হয়েছেঃ
কোন সম্প্রদায়কে মসজিদে হারাম হতে বের করে দিয়েছে-এশত্রুতা যেন তোমাদের তাদের উপর সীমালংঘনে উদ্ধুদ্ধ না করে। (মায়িদাঃ ২)
রাসূলুল্লাহ সা. এর সাবধান বাণীঃ অমুসলিম নিরাপরাধ কোন ব্যক্তিকে হত্যার ফলে জান্নাতের খুশবুঁও পাওয়া যাবেনা বলে রাসূলুল্লাহ সা. উম্মতকে সাবধান করেদিয়েছেন। বর্ণিত হয়েছেঃ
আবূ হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন: যে ব্যক্তি এমন কোন চুক্তি বদ্ধ অমুসলিমকে হত্যা করবে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের যিম্মায় রয়েছে, সে জান্নাতের সুগন্ধিও পাবেনা, যদিও জান্নাতের ঘ্রাণ সত্তর বছরের দূরত্ব হতে পাওয়া যায়। (ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, ১খ ২৫৯)
খাদ্য গ্রহণে সম্প্রীতিঃ
রাসূলুল্লাহ সা. অন্য ধর্ম অবলম্বীগণের খাদ্য গ্রহনে নিঃসংকোচ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। বর্ণিত হয়েছেঃ
কাবীসা ইবন হুলব তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করে, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে খ্রিষ্টানদের খাবার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি উত্তর দিলেন তোমার অন্তরে যেন খাবার গ্রহনে সংশয় সৃষ্টি না করে যে, তুমি এর ফলে খ্রিষ্টানদের মত হয়ে যাবে। (ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান ১খ ২৮৫)
রাসূলুল্লাহ সা. এর এ উক্তির মর্ম হল খ্রিষ্টানগণ অন্যধর্মাবলম্বীগণের খাদ্যগ্রহন হতে দূরত্ব বজায় রাখে।তাদের খাদ্য গ্রহণ করলে তুমি তাদের মত হয়ে যাবে বলে মনে করোনা।
©somewhere in net ltd.