নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আমার মত

মোহাম্মদ নাবিল

আমি আমার মত

মোহাম্মদ নাবিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

রমজান মাসের গুরুত্ব ও ফযিলত

২৪ শে জুন, ২০১৪ ভোর ৫:৪৬

॥ এক ॥সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’য়ালার জন্য- যিনি রাব্বুল আ’লামীন। দরূদ ও সালাম রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আ’লামীন, তাঁর পরিবারবর্গ ও বংশধর, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিআল্লাহু আনহুম) ও সালিহীন (র) বান্দাগণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও তার রসুল। নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি কেবলমাত্র মুত্তাকীনদের জন্যই নির্ধারিত। পবিত্র মাহে রমজান আমাদের দুয়ারে সমাগত। সমস্ত মাসের মধ্যে সেরা ও সর্বাধিক বরকতপূর্ণ মাস হলো রমজান মাস, কারণ এ মাসে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং কুরআনের সম্মানার্থে এবং ক্বলবের মাঝে কুরআনের নূর প্রবেশের উপযোগী তাকওয়াপূর্ণ ক্বলব তৈরির লক্ষ্যে এ মাসে সিয়াম পালনের জন্য আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাগণকে নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআন ও হাদীসে এই রমজান মাসের মর্যাদা এবং এতে ইবাদত-বন্দেগী করার ব্যাপারে অনেক আলোচনা এসেছে। নিম্নে এ প্রসঙ্গে কুরআন ও হাদীসের আলোকে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি আলোচনা উপস্থাপন করা হলো। সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য : ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় সিয়াম অন্যতম বিধান। সিয়াম সাধনার বিধান রাখা হয়েছে আল্লাহভীতি সৃষ্টি তথা তাকওয়া অর্জনের লক্ষ্যে। কুরআন কারীমে দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন করা। আল্লাহ তা’আলা বলেন- ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের ওপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’ – {সূরা বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩}।

সাওম ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। আরবী এ ‘সাওম’ শব্দটি আমাদের দেশে রোজা নামে সমধিক পরিচিত, যা মূলত ফারসী শব্দ। সাওম অর্থ বিরত থাকা। যেহেতু পানাহার ও কামাচার সাধারণত প্রবৃত্তির লিপ্সা ও লালসাকে উদ্দীপ্ত করে, সেহেতু আল্লাহ তা’আলা প্রবৃত্তিকে দমন করে তাকওয়ার গুণাবলী বিকাশের জন্য সাওমের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রবৃত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছেন।

সিয়াম মাত্র কয়েক দিনের জন্য : জীবন ধারণের স্বার্থেই পানাহার সম্পূর্ণরূপে বর্জন করা সম্ভব নয়। তাই চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র কয়েক ঘণ্টা সাওম পালনের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আবার শিশুদের এর আওতা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। অক্ষম-বৃদ্ধদের জন্য ‘ফিদইয়া’র অবকাশ রাখা হয়েছে। মুসাফির, অসুস্থ ও সন্তান প্রসব, স্তন্যদান ও ঋতুকালে নারীদের প্রতি লক্ষ্য রেখে উযর দূর হওয়ার পর ‘কাযা’র মত বিকল্প রাখা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন :

-‘নির্দিষ্ট কয়েক দিন। তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হবে, কিংবা সফরে থাকবে, তাহলে অন্যান্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদইয়া- একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা। অতএব যে স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত সৎকাজ করবে, তা তার জন্য কল্যাণকর হবে। আর সিয়াম পালন তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জান।- {সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত : ১৮৪}।

সিয়াম পালন করতে হবে কুরআন নাজিলের মাসে : রমজান হল কুরআন নাজিলের মাস। আল্লাহ তা’আলা সমগ্র মর্যাদা ও সম্মান কুরআনের সাথে সংযুক্ত করেছেন। সমস্ত মাসের মধ্যে সেরা ও সর্বাধিক বরকতপূর্ণ মাস হল রমজান মাস, কারণ এ মাসে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং কুরআনের সম্মানার্থে এবং ক্বলবের মাঝে কুরআনের নূর প্রবেশের উপযোগী তাকওয়াপূর্ণ ক্বলব তৈরির লক্ষ্যে সিয়াম পালনের জন্য আল্লাহ তা’আলা রমজান মাসকেই নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন :

-‘রমজান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।’-{সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত : ১৮৫}।

মাহে রমজানের যে রাতে পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, সেই রাত্র ‘লাইলাতুল (শবে) কদর’ নামে অভিহিত। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে এ প্রসঙ্গে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাযিল করেছেন। তিনি এই মহান ‘লাইলাতুল (শবে) কদর’-কে হাজার মাস থেকেও অধিক মর্যাদাসম্পন্ন বলে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন :

-‘নিশ্চয়ই আমি এটি নাযিল করেছি ‘লাইলাতুল কদরে’। আর আপনি কি জানেন ‘লাইলাতুল কদর’ কী? ‘লাইলাতুল কদর’ হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত।’ -{সূরা আল-কদর, আয়াত : ০১-০৫}

রমজান মাস হলো ইবাদতের মৌসুম। এ মাসে ইবাদতের গুরুত্ব অনেক বেশি। কুরআন ও হাদীসে এই রমজান মাসের মর্যাদা এবং এতে ইবাদত-বন্দেগী করার ব্যাপারে অনেক আলোচনা এসেছে। নিম্নে এ প্রসঙ্গে কুরআন ও হাদীসে আলোকে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি আলোচনা উপস্থাপনা করা হলো। আশা করা যায় এ আলোচনা সবার জন্যই বরকত ও কল্যাণময় হবে। যেমন :

এক রমজান থেকে আরেক রমজানের মধ্যবর্তী গুণাহসমূহ মুছে দেয় : হযরত আবূ হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ‘পাঁচ ওয়াক্তের সালাত, এক জুমুআ থেকে আরেক জুমুআ এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজানের মধ্যবর্তী সব গুণাহ্ কে মুছে দেয়, যদি সে কবীরা গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকে।’- [সহীহ মুসলিম : ৪৫৯]।

রমজান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শিকল দিয়ে বেঁধে দেয়া হয় : হযরত আবূ হুরাইয়রা রদিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যখন রমজান আগমন করে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়।’- [সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম]।

অন্য বর্ণনায় : হযরত আবূ হুরাইয়রা রদিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘যখন পবিত্র রমজান মাস এসে যায় তখন আসমান তথা জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।’- [সহীহ বুখারী : ১৮৯৯, সহীহ মুসলিম : ১০৭৯]।

‘রাইয়্যান’ দরজা দিয়ে রোজাদারগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে : হযরত সাহল বিন সা’দ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতের একটি দরজা রয়েছে যার নাম ‘রাইয়্যান’। কেয়ামতের দিন ঐ দরজা দিয়ে রোজাদারগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া তাদের সাথে আর কেউই ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। বলা হবে- ‘কোথায় রোজাদারগণ?’ তখন তারা ঐ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।- [সহীহ বুখারী : ১৮৯৬, সহীহ মুসলিম : ১১৫২, তিরমিযী]।

রমজান মুমিনের জন্য গনীমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ : হযরত আবূ হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহ তা’আলার কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনগণ এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনীমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।- (মুসনাদে আহমদ : হাদীস ৮৩৬৮, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : হাদীস-৮৯৬৮, সহীহ ইবনে খুযাইমা : হাদীস-১৮৮৪, তাবারানী : হাদীস-৯০০৪, বাইহাকী : শুয়াবুল ঈমান, হাদীস-৩৩৩৫



সূত্র: বিডিভিউ২৪.কম

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.