![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১।।
টক শো প্রোগ্রাম টা শেষ হতেই,ত্রপার বেশ কাহিল লাগা শুরু করল। এমনটা কিন্তু তার আগে কখনই হয় নি।কিন্তু হটাৎ কেন হল তা তার মাথায়ই আসছিল না। এর মাঝেই আর একটা কথা মনে পড়তেই, ক্লান্তি ভাবটা যেন চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে গেল। আজ রাত তিনটা বাজে ওর নিউওয়ার্ক গামী ফ্লাইট ধরতে হবে। হাতে সময় মাত্র তিন ঘণ্টা।
সব কিছু ঘুছিয়ে এয়ারপোর্টে আসতে আসতে প্রায় দেড়টা বেজে গেল। এয়ারপোর্টের যাবতীয় কাজ শেষ করা মাত্রই শুনলো, ফ্লাইট আধা ঘণ্টা লেট এ ছাড়বে। তো আর কি করা, বসে বসে সময় কাটানো ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু হটাৎই তার চোখ পড়লো একটা বড় আয়নার উপর। ত্রপাকে আপাদমস্তক পুরটাই দেখা যাচ্ছে ওটাতে। ত্রপার চোখটা যেন একটু স্থির হয়ে গেল। আজ ওকে কেন জানি একটু অন্যরকম সুন্দর লাগছে। কেন লাগছে তা ভাবার আগেই, প্লেনে উঠে পড়ার সময় এসে গেল।
২।।
রোজকার মত আজও ফজরে মসজিদের আজানে ত্রপার ঘুম ভেঙ্গে গেল। কিন্তু আজ তার কাছে আজানের সুরটা কেমন জানি কর্কশ শুনাল। মনে মনে ভাবল, আজান দিবে সুকণ্ঠ অধিকারী কেউ; কর্কশ গলা ওয়ালা কাউকে দিয়ে আজান দেয়ানোটা উচিৎ নয়। এ কথা গুলো মনে মনে ভাবতে ভাবতেই, ত্রপা বাথরুমে চলে গেল। ওযু শেষ করা মাত্রই আয়নার দিকে তাকিয়ে আল্লাহর প্রতি রাগে মনে মনে দুএকটা কথা, নামাজ শেষে আবার সেই কথা গুলার জন্য অনুশোচনা করা তার ডেইলি রুটিনের অংশ বলা যায়। তবে আজ একটা কথা মাথায় আসায়, সে নিজেকে অতন্ত সুখী অনুভব করল।
হ্যাঁ, আল্লাহ ওকে কোন সুন্দর রুপ দেয়নি। ওর গায়ের রঙ কাল, চেয়াহারায় কোন কামনীওতা নেই, নাকটাও কেমন থ্যাবড়ান, চোখ ও টানা টানা নয় মোট কথা সমাজের চোখে ও দেখতে কুৎসিত। তবে এ কারনেই ওকে পুরুষের লোলুভ দৃষ্টির স্বীকার হতে হয় না। এ সৌভাগ্যও বা কটা মেয়ের ভাগ্যে জুটে।
রায়হান হটাৎ চোখ ডলতে ডলতে ত্রপার রুমে ঢুকে বলল,আম্মা তোকে ডাকে।
কেন?
সেটা জানিনা। আমাকে ডাকতে বলল তাই ডাকলাম।
তবে ত্রপা কিছুটা আচ করা সত্তেও স্বাভাবিক ভাবেই গেল মার রুমে।
ত্রপা ও মার রুমে ঢুকে দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে রইল। কোন কথা বা আওয়াজ করল না।
কিরে তুই অভাবে দাড়িয়ে আছিস কেন? চেয়ারটায় বস।
বসবো না মা। বল কিসের জন্য ডেকেছ।
তোর মত মেয়েরা পড়াশুনায় ভাল হয়, তুই তাও হলি না। এইচ.এস.সি পরীক্ষায় কোনমতে পাস করলি, কিছু বললে তাও না শুনার ভান ধরে থাকস।
মা, তুমি কি এই সাত সকালে আমাকে এগুলো বলার জন্য ডেকে এনেছ??
না তোকে তো কিছু বলে লাভ নেই। ডেকেছি, আগামী সপ্তায় যে তোর রনি ভাইয়ের বিয়ে মনে আছে????
ও হে। মনেই ছিলনা।
তা থাকবে কিভাবে আছ তো ফেসবুক,আউট বই,ইন্টারনেট এগুলা নিয়ে। নে এই প্যাকেটটা নে।
এর ভিতর কি?
কিছু রূপচর্চার সামগ্রী। এই এক সপ্তাহ টানা ব্যাবহার করবি। বলা যায় না, ওই অনুষ্ঠান থেকেই তোর জন্য কোন সমন্ধ চলে আসতে পারে।
হটাৎ আমার বিয়ের জন্য লাগলে কেন?
ওমা সারা জীবন বাপের সংসারে থাকর মতলব নাকি!!
তোর বাবার সিদ্ধান্ত। আমারও একি মত।
৩।।
বিয়ের কথা শুনে আসার কারনে, হটাৎ ত্রপার সাইফের কথা মনে পড়লো। সাইফ এখন ইউনিভার্সিটি পাস করা যুবক। সুদর্শন ছেলে বলতে যা গুন দরকার তার সবই আছে সাইফের। ত্রপাদের পাশের বাড়িতে থাকে। ছেলেটাকে ও স্কুল থেকে ভালবাসে। তবে কখনও বলেনি বা অন্যভাবে বলা যায় বলার চেষ্টাও করে নি। ত্রপার ধারনা, কাউকে ভালবাসার পর যদি তাকে পেয়েই যাওয়া হয় তবে এ ভালবাসায় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। কাছে পাওয়াটা এখানে স্বার্থ। ত্রপা নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসতে জানে। যদিও সে এও জানে, পৃথিবীর কিছুই নিঃস্বার্থ নয়। এমন কি পিতামাতার নিকট সন্তান বা সন্তানের নিকট পিতা মাতাও নয়।
ত্রপা ও সাইফের জীবন নিজ অক্ষেই চলতে থাকবে। তবে ত্রপার হৃদয়ের ছোট একটি অংশ সবসময়ই সাইফের ভাল কামনা করে যাবে। এটাই হয়ত নিঃস্বার্থ ভালবাসা।
৪।।
সপ্তাহ পার হয়ে রনির বিয়ের সময় চলে এল। কিন্তু ত্রপার মায়ের দেয়া প্যাকেট যেমনটা তেমনই রইল। ত্রপা যদিও কখন ও বোরকা পড়ে না তবে সে সিধান্ত নিল বিয়েতে বোরকা পড়বে। সেজে গুঁজে বিয়েতে যেয়ে বিবাহ যোগ্য ছেলেদের পিতামাতার সামনে হাটাহাটি করাটা তার কাছে বাজারি মেয়েদের মত মনে হয়। শুধু এ ব্যাপারটাই না। বিয়েতে এমন কিছু মেয়ে আসবে,যারা সবসময় বোরকা পরলেও বিয়ের দিন চড়া মেকাপে ঘুরাফিরা করবে; তাদের অদৃশ্য একটা গুত দেয়াও এর অংশ।
বিয়ের অনুষ্ঠানের দিন যাবার পূর্বে, ত্রপার কান্ডকারখানা দেখে ওর মা ব্যাপক রাগারাগি করল। যদিও শেষ পর্যন্ত ত্রপাই জিতে গেল এবং বোরকা পরেই বিয়েতে গেল। বিয়েতে ত্রপার অবস্থা দেখে সবাই একটু অবাক হলেও ত্রপার মা বলে বেড়াতে লাগলো, তার মেয়ে খুব ধার্মিক তো তাই।
তবে ত্রপার নিকট আত্মীয়রাও যে ওর ‘’অসুন্দর চেহারা লুকানোর জন্য এই ব্যবস্থা’’ এরকম কানাকানি করে নাই, তা না; করেছে তবে ত্রপা এগুলা গায়ে লাগায় না।
এভাবে সময়ের পিছে সময় যেতে যেতে কিভাবে যে একটা বছর পার হয়ে গেল, ত্রপা টেরই পেল না। ভার্সিটিতে ভর্তি আর ওর হল না। তবে এর জন্য ত্রপার চেয়ে ওর পরিবারই বেশি দায়ী।
৫।।
ত্রপা এই মাত্র ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিল। মুহূর্তে শত লাইক পার হয়ে গেল।
ত্রপার ফেসবুকে নিজের কোন ছবি নাই। তবুও ওর ফ্রেন্ড চার হাজার প্লাস। ফেসবুকে একটা ছবি বিহীন মেয়ের প্রতিও যে ছেলেরা এত আগ্রহী হয় ভেবে ত্রপার কিছুটা আনন্দই হয়। যদিও এ আনন্দকে বিকৃত বলা চলে। যা হোক, ওর ফেসবুক ফ্রেন্ডদের কেউ কেউ ওকে ফেক মনে করে। কারন যেখানে অধিকাংশ মেয়ে ফেসবুকে নায়ক-নায়িকা , সিনেমা-সিরিয়াল নিয়ে আলাপ আলোচনা করে। সেখানে ত্রপা করে দেশ,রাজনীতি,সমাজ এগুলো নিয়ে। ইদানিং ত্রপা বিভিন্ন ব্লগ সাইটে ব্লগিং ও শুরু করেছে। ব্লগিং করতে করতে ত্রপা একদিন খবর পায় BEST BILLE BLOGGER CONTEST নামক কানাডিয়ান একটি সংস্থা ওয়েবসাইট এ কানাডা সহ পৃথিবীর সব ভাষাভাষী ব্লগার দের নিয়ে একটা প্রতিযোগীটা করছে। অত সত না বুঝলেও ত্রপা ওখানে ওর একটি লেখা জমা দেয়।
৬।।
কলিং বেলে পর পর দু টা বেল বাজলো। রায়হান ছাড়া এ কাজ কারোর না।
ঘরে ঢুকতেই দেখা গেল, রায়হানের হাতে একটা বিয়ের দাওয়াত কার্ড।
কিরে কার বিয়ে?
রায়হান কার্ডটা হাতে দিতে দিতে বলল, আপা এই আঠার তারিখ সাইফ ভাইয়ের বিয়ে। আমাকে বাসায় আসতে দেখে আমার হাতে দিল।
ও আচ্ছা। দেখি কার্ড টা দে তো।
ত্রপা কার্ড টা হাতে নিয়ে ওর রুমে চলে গেল এবং দরজাও লাগিয়ে দিল। তবে ওর এই আকর্ষিক পরিবর্তন রায়হানের চোখে পড়লেও তেমন গুরুত্ত দিল না। কারন ত্রপা বরাবরই এ বাসায় গুরুত্বহীন।
৭।।
রাত প্রায় একটা। ত্রপার চোখে ঘুম নেই। শোয়া থেকে উঠে ক্যালেন্ডারের দিকে তাকাল। আঠার তারিখ আসতে আরও দশ দিন বাকি। আর মাত্র দশটা দিন, হ্যা মাত্র দশটা দিন পার হলেই প্রমান হয়ে যাবে আসলেই পৃথিবীতে নিঃস্বার্থ কাজ সম্ভব।
শেষ পর্যন্ত ত্রপা সফলতার পথেই এগিয়ে চলল। আজ সে সাইফের বিয়েতে যাবে। তবে এবার আর বোরকা পড়ে নয়। কোন কৃত্রিমতা ছাড়াই বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবে এবং অনুষ্ঠান শেষ করেই আসবে। কারন ওকে যে প্রমাণ করতেই হবে।
কিন্তু না একটা ফোন সব পরিকল্পনায় ব্যাঘাত ঘটাল।
হ্যালো, আপনি কি ত্রপা?
হে বলছি। কে আপনি?
CONGRATULATION । আপনি ব্লগিং এ এশিয়ান ক্যাটাগরিতে এবং বাংলাদেশ হতে একমাত্র শ্রেষ্ট ব্লগার নির্বাচিত হয়েছেন। আপনি এখোনই কানাডিয়ান এ্যাম্বেসিতে আসুন। আপনাকে কানাডায় পুরস্কৃত করা হবে। তাই কিছু কাজ আছে।
কথা গুলো শুনে, ত্রপা বিশ্বাস করতে পারছিল না স্বপ্ন দেখছে না সত্যি। ঘোর কাটতেই চিৎকার করে বাসার সবাইকে জানাল। কিন্তু কারোরই তেমন ভাবান্তর দেখা গেল না। হয়তো তারা কেউ বিশ্বাস করে নি আর না হয় গুরুত্ব দেয় নি। এর জন্য ত্রপার অপার আনন্দের মাঝেও কিছু দুঃখ রয়ে গেল।
পরদিন ত্রপা একাই আগ্রাবাদ হতে একটা ট্যাক্সি নিয়ে চট্রগ্রাম এর কানাডিয়ান এ্যাম্বেসিতে গেল। সেখান থেকে শুনলো, ওরাই সব করে দিবে । আগামী মাসের অর্থাৎ নভেম্বর বার তারিখ ফ্লাইট। তবে আর একটা বিষয় হল, ত্রপার একারই খরচ সহ যাবতীয় সব কিছু করে দেয়া হবে কিন্তু অন্য কাউকে নিতে হলে হবে নিজ খরচায়।
ত্রপা বাসায় এসে চুপচাপই রইল। কারণ, বললেও যে কিছু হবে সে তা ভালভাবেই জানে। তবে নিজের ভিতর এক ধরনের চাপা আনন্দ অনুভব করল।
৮।।
অপেক্ষা সব সময় হয় বিরক্তিকর। কিন্তু ত্রপার জীবনে এই একটা মাস অপেক্ষা যেন অনেক মধুর।
সময় তার নদীতে সাঁতার কাটতে কাটতে প্রায় নভেম্বর মাসের আট তারিখ হলে গেল। এই মুহূর্তে ত্রপা ঠিক করল ওর বাবাকে সব বলবে। বললোও কিন্তু ফলাফল ওর ধারনামত হল ভয়াবহ। তারা ত্রপাকে যেতে দিবে না। তবে ত্রপা অনড়। এ নিয়ে বাসায় যুদ্ধ অবস্থা। তবে এবারি প্রথম ত্রপা খেয়াল করল, রায়হান কিছু বলছে না তবে মনে মনে ত্রপারই পক্ষ অনুসরন করছে।
১১/১১/১১
সকাল ৫.১০।
ত্রপা ঠিক করল আগামী কালই সে ঘর থেকে পালাবে। তাই সে দিন রাতেই ঘর থেকে বেশ কিছু টাকা চুরি করল। টাকার অংকে খুব বেশি না মাত্র দশ হাজার। তবে ত্রপার কাছে এটাই ঢের।
১২/১১/১১ সকাল ৪.৩০।
আকাশে সূর্যি মামা তখন ও উঠেনি। ঠিক তখনই ত্রপা ঘর থেকে পালাল। ঢাকার উদ্দেশ্যে যাবার প্রথম বাসেই সে যাত্রা শুরু করল। ঘর থেকে বাহিরে এত দূর একা একা কখন যাওয়া হয় নি তাই মনে মনে অদৃশ্য একটা চাপা ভয় ও ছিল। এদিকে ঘরে কি হবে না হবে তার কোন ভ্রুক্ষেপ ছিল না ওর। ওর ধ্যান জ্ঞান কখন ও কানাডাগামী বিমানে উঠবে।
©somewhere in net ltd.