![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিম্নগামী অতীত নিয়েই আমার বেঁচে থাকা, চায়ের দোকানে বসে ধূসর ধোঁয়ায় উড়িয়ে ছিলাম স্বপ্নের ঘুড়ি, চেতনা জুড়ে ছিল একটু ছেলে মানুষী, কল্পনা ছিল অচেনা পৃথিবীর অঙ্গ জুড়ে, কণ্ঠে ছিল মিছিলের উষ্ণতা, দৃষ্টি ছিল অসীমের কাছে, অজানা একটা ঝড় আসলো, পাল্টে গেলো চিত্র, আমি প্রস্তুত ছিলাম না, ছিলাম না সিদ্ধহস্ত, সময়ের স্রোতে আমি অচেনা হলাম, সময় টা কি খরস্রোতা নাকি কালস্রোতা তাও জানা হোল না, জানা হয় নি অনেক কিছুই- যৌনতায় গড়া প্রেম পিপাশার কথা, নিঃসঙ্গতায় বন্ধুর জন্য অপেক্ষা, পিয়াসী চলে যাওয়ায় কষ্টের তীব্রতা, ভরা যন্ত্রণায় আত্মঘাতি হওয়া , এখানে এখন কিছুই নেই, আছে কিছু মধ্য রাতের বোধ, কলুষ মনের হাহাকার, প্রতিস্থাপিত নিঃস্পৃহ বিদ্বেষ, আপন মনেই কেঁদে ফেলার ভয়, সমানুপাতিক সমীকরণ, আমার মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে, অহমিকার দেয়ালে লেগেছে ঘৃণার পোস্টার, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয়ে এলো, প্রক্রিয়া চলছে পাপ ধুয়ে ফেলার, মনুষ্যত্বের অন্বেষণে ব্রতী দেহ মন, বিশ্বাস করবে না কেউ তবু আমি বলব আমি তোমাদেরই একজন।
লাশ কাটা ঘরে পরে আছে আমার নিথর রক্তাক্ত শরীর,
ওরা বলছে আমার নাকি মৃত্যু হয়েছে!
আমার অবস্থান এখন শূন্য জগতে ,
যেখানে নেই কোন ঘৃণা বোধ , নেই মায়ার দেয়াল,
সব যন্ত্রণার হয়েছে মুক্তি!
মৃত্যুর গন্ধ টা এখন সহ্য হয়ে এসেছে!
লাশ কাটা ঘরের শিহরন এখন উপভোগ্য!
আমার অবশ অনুভূতির দেয়াল ভেঙ্গে গেছে অনেক আগে!
তবুও আমার চিন্তা খেলা করছে,
এই তো আজ সকালের কথা!
দূর থেকে মসজিদে ফজরের আযানের শব্দ শুনে ঘুম ভেঙ্গে ছিল আমার,
আবছা আলোয় দেখেছিলাম তোমার নির্মল মুখ,
বাবু গুটি সুটি মেরে শুয়ে ছিল তোমার বুকের কাছে,
তার মুখে তোমার উম্মুক্ত বক্ষ!
ছেলে টার অভ্যাস টা আর গেল না,
বাইরে বেরিয়ে এসে দেখি পাশের বাড়ির বউ ঝি দের কর্মব্যাস্ততা,
শুরু হোল নতুন দিন!
কিন্তু এইদিন টি অন্য দিনের চেয়ে আলাদা,
দিনের শুরুতেই বাতাসে ভেসে এসেছিল বারুদের গন্ধ,
আজ হরতাল!
সারা দেশ আজ গণতন্ত্রের দাবিতে উম্মাতাল,
মুক্তির মিছিলে সবাই সোচ্চার,
গৃহী মানুষের জন্য হয়ত আজকের দিনটি ঘুম দিবস,
নতুন বিবাহিতদের জন্য মধুচন্দ্রিমার সুযোগ,
কিন্তু আমার জন্য এই হরতাল নিতান্তই দোযখের সামিল,
আমি সরকারী চাকুরীজীবী,
সরকারের হুকুম অগন্তান্ত্রিক মানুষের ভয়ে মুখ লুকানো যাবে না,
অফিস খোলা!
সবাই হরতালে অফিস করবে!
তাই আমার এত কর্মচাঞ্চল্য!
সকাল সকাল বের হতে হবে তা না হলে ভাংচুরকারিরা বের হয়ে পড়বে,
সূর্য লাল লাল থাকতে থাকতেই বের হয়ে এসেছিলাম,
সকালের নাস্তাও হয়নি,
পেটের ভিতর নাড়িভুঁড়ি উল্টে আসতে চাইছিল,
এর মাঝে চোখে পড়েছিল একটি একচোখা শালিক,
দিনের শুরুতেই মনে কু ডাকতে লাগলো,
হাজার চেষ্টা করেও মনটাকে কেন্দ্রীভূত করতে পারছিলাম না,
অশনি কোন সঙ্কেত ছিল আজকের সকাল টাতে,
কোথাও কেউ নেই,
মনে হচ্ছিল পুড়ো নগরী যেন শোকের চাদরে ঢাকা,
অলস ভঙ্গিতে হেটে যাচ্ছিলাম,
রাস্তার এপারে ওপারে পুলিশের ভ্যান,
হঠাৎ করে একদল ছেলে পুলে এসে উপস্থিত হোল রাজপথে,
শ্লোগান তুলল গণতন্ত্রের, বিক্ষোভে ফেটে পড়ল রাজপথে,
হুংকার ছাড়ল হিংস্রতার,
পুলিশ ভ্যানে আগুন লেগে গেল মুহূর্তেই,
আমার মত সাধারন মানুষ তখন আশ্রয়ের খোঁজে,
কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল
মানুষে মানুষে ভেদাভেদ নেই জীবনে প্রথম বার দেখলাম,
সবাই বাঁচতে চায়,
পুলিশ নিজেদের আত্ম রক্ষায় ছুঁড়ছে ফাঁকা গুলি,
হঠাৎ আমার গতি রোধ হোল,
অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলাম আমার বুকের মাঝখান টাতে একটি বড় গর্ত,
গলগল করে বেড়িয়ে আসছে তাজা রক্ত,
ঝাপসা হয়ে আসছিল চারপাশ,
হঠাৎ করে মনের আনাচে কানাচে লুকিয়ে থাকা একটি প্রশ্ন আবার জেগে উঠলো,
এক দেশ, এক মানুষ -তবুও কেন এত বিচ্ছিন্ন আজ জনগোষ্ঠী?
এই কি সেই দেশ যে দেশে ৩০ লাখ মানুষ প্রান দিয়েছিল স্বাধীনতার জন্য!
এলোমেলো হয়ে আসছে সব,
প্রিয় মুখ গুলো ভেসে আসছে,
বাবুর মুখে বাবা ডাক, তোমার স্নিগ্ধ ছোঁয়া,
মায়ের প্রতিক্ষা, বাবার রাগ!
আহ, আর পারছি না,
সব অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে, তার মানে এই কি মৃত্যু?
এরপর থেকেই আমি লাশ কাটা ঘরে শুয়ে আছি,
একটা প্রশ্নের উত্তর হয়ত কখনই জানা হবে না,
কি দোষ ছিল আমার?
ওরা আমার জন্য ময়না তদন্ত করবে না,
আমার সুরতহাল হবে না,
ধীরে ধীরে পচন ধরছে শরীরে,
মাছির উৎপাত ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে,
মুখের অবয়বে আসছে আমুল পরিবর্তন,
কেউ আমায় চিনতে পারছে না,
আজ আমি বেওয়ারিশ,
আজ আমার কেউ নেই।।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৬
শাহিন বলেছেন: চমৎকার হয়েছে । শুভেচ্ছা ।