নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Restless

I want to make me as a blog writter.

রাশিদুল ইসলাম নাহিদ

I like to explain the international affiars.

রাশিদুল ইসলাম নাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিরস্ত্রীকরণ ও অস্ত্রনিয়ন্ত্রণের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৩

হেগ সম্মেলন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যে সকল নিরস্ত্রীকরণ ও অস্ত্র সীমিতকরণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তার মধ্যে অনেক চুক্তি সফল হয়েছে আবার অনেক চুক্তিই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। ¯œায়ু যুদ্ধের সময় দুই পরাশক্তির মাঝে ব্যাপক অস্ত্রীকরণ হয়। কিন্তু যখন ¯œায়ু যুদ্ধ শেষ হয় তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের অস্ত্রের কাচাঁমাল গুলো অনেক আঞ্চলিক শক্তি গুলোর মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে ¯œায়ু যুদ্ধ পরবর্তী বিশ্ব ব্যবস্থায় আবারও নতুন করে অস্ত্রীকরণের ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মাঝে আবারও নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।

যদিও বলা হয় যে, ¯œায়ু যুদ্ধের পর ১৯৯২ সালের মধ্যে প্রাক্তন সোভিয়েত সীমান্ত থেকে সমস্ত কৌশলগত আণবিক অস্ত্র রাশিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে রািিশয়ার কৌশলগত আনবিক অস্ত্রের সংখ্যা অনেকটাই অনিশ্চিত। অনেক বিশেষঞ্জের মতে এর বর্তমান স্বীকৃত সংখ্যা হচ্ছে ৪০০০। রাশিয়ার বিশাল অস্ত্র ভা-ার নিয়ে অনেক সংশয় প্রকাশ করেন। এক্ষেত্রে বলা হয় এগুলো কয়েক বছরের মধ্যে অপ্রচলিত হয়ে যাবে। তবে তাদের নতুন আণবিক অস্ত্র ব্যবস্থা উৎপাদনের হার অত্যন্ত তাৎপর্র্যপূর্ণ।

১৯৯২ সালের ২ জুলাই বুশ ঘোষণা দেন আমেরিকার ভূ-পৃষ্ঠে ও সমুদ্রে নিক্ষেপকারী কৌশলগত আণবিক অস্ত্র সরিয়ে নিয়েছে। প্রকাশিত পরিমাণ অনুযায়ী আমেরিকার এখন ১০০০ এর কম কৌশলগত অস্ত্র রয়েছে। তবে রাশিয়া ও আমেরিকা মুখে যতই অস্ত্র হ্রাসের কথা বলুক না কেন তাদের প্রকৃত অস্ত্রের পরিমাণ সুনিদির্ষ্ট নয়। কেননা বিশ্বে পরাশক্তির আসন কে টিকিয়ে রাখতে হলে শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী হলে হবে না অস্ত্রের দিক থেকেও অনেক শক্তিশালী হতে হবে। এছাড়াও যেখানে এ সমস্ত পারমাণবিক অস্ত্রই তাদের জাতীয় নিরপত্তা প্রদান করে সেখানে এত সহজে তারা অস্ত্রের পরিমাণ কমিয়ে ফেলবে তা বলা যায় না। এদের অবস্থান ও বিস্তার এখন অস্বচ্ছ।

যুক্তরাষ্ট্রের সামনে প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হিসেবে গড়ে উঠেছে চীন, যাদের পারমাণবিক ক্ষমতা উচ্চস্তরের। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার পরাশক্তির আসন আর হয়তোবা দুই দশক ধরে রাখতে পারবে। এর পরই বিশ্বে বহু মেরুকরণ সৃষ্টি হবে। সে কথা বিবেচনা করেই যুক্তরাষ্ট্র কখন সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের দিকে যাবে না। এছাড়াও ২০০১ সালের রাশিয়ার সাথে চীনের “সাংহাই ফাইভ” চুক্তি আগামী বিশ্বে জোটবদ্ধ শক্তির নতুন ইঙ্গিত প্রদান করছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নিরস্ত্রীকরণ থেকে সরে আসা অনেক দূরের ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। এতে সিটিবিটি কার্যকর হচ্ছে না এবং আমেরিকার মদদে ভারতের মত আঞ্চলিক শক্তির পারমাণবিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে যা ভবিষ্যতে চীনের নিবৃত্তকারী হিসেবে মার্কিন প্রশাসন কর্তৃক ব্যবহৃত হতে পারে। এদিকে লক্ষ্য রেখেই চীন কখন পুরোপুরি নিরস্ত্রীকরণের দিকে যাবে না।

এছাড়াও বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তি যেমন- চীন, ভারত, পাকিস্তান, উঃ কোরিয়া, দঃ কোরিয়া, ইরান ও ইসরাইল পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হওয়ায় অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যদিও বলা হয় এসব দেশ তাদের নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সামরিকীকরণ ও অস্ত্রীকরণে আগ্রহ প্রকাশ করছে। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, বৃহৎ শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের মাধ্যমে পাশ্ববর্তী দেশ ইরানে হামলার পরিকল্পনা করছে। কেননা মধ্যপ্রাচ্যে ইরান যদি পারমানবিক ক্ষমতাধর দেশ হয় তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ক্ষুন্ন হবে। এদিকে ইরানও ইসরাইল কে নিবৃত্ত করার জন্য পারমানবিক ক্ষমতাধর দেশ হওয়ার চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। যদিও ইরান তার পারমানবিকরণ কে শান্তিপূর্ণ বলে উল্লোখ করে আসছে। এছাড়াও উত্তর ও দক্ষিন কোরিয়ার সীমান্তে মাঝে মাঝেই উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া দেশটির কর্ণধার কিম জং উনের নেতৃত্বে সফল ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। এদিকে দক্ষিণ কোরিয়া মাঝে মাঝেই উত্তর কোরিয়া আক্রমণের হুমকি দিচ্ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে এই অঞ্চলে দিন দিন এক সংকটাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।যেখানে দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার পক্ষে চীনের ভুমিকা অসামান্য। আর এসকল উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দিন দিন দেশগুলিকে অস্ত্র নিয়ন্ত্রনের দিকে না নিয়ে বরং অস্ত্রীকরণের দিকে প্রভাবিত করছে।

এদিকে ভারত ও পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হওয়ায় উভয়েই পরস্পরকে হুমকি মনে করছে। সন্দেহ, উগ্রতা ও প্রতিহিংসাপরায়ণতার মধ্যে দিয়েই দু’ দেশের পারমাণবিক অস্ত্রসম্ভার গড়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে যে পাকিস্তান যদি ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালায় তবে ভারত তার পাল্টা প্রতিত্তর হিসেবে পাকিস্তানের চেয়ে বেশি শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাচ্ছে। জেনস পত্রিকার হিসেব অনুযায়ী, ভারতের কাছে ২০০ থেকে ২৫০ এর মত এবং পাকিস্তানের কাছে ১৫০ এর মত পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে যা উভয় দেশের শহরগুলিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। পাকিস্তানের সাথে সন্ত্রাসবাদ বিতর্কে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ধীরে ধীরে খারাপ এর দিকে যাচ্ছে। এদিকে ভারতের সাথেও পাকিস্তানের সম্পর্ক বেশি ভাল না। হয়ত কোন এক সময়ে আমেরিকার মদদে পাকিস্তানের সাথে ভারতের সংঘর্ষ শুরু হতে পারে। তখন চীন পাকিস্তানের পক্ষ নিতে পারে। ফলে এক্ষেত্রে একটি যুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে। আর এ ভবিষ্যত সম্ভাবনার দিকে লক্ষ্য রেখেই কেউ পুরো পুরি নিরস্ত্রীকরণের দিকে যাবে না।

এছাড়াও বর্তমান বিশ্বে অনিয়ন্ত্রীত অস্ত্র বাণিজ্য নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। বৃহৎ শক্তি গুলো তাদের মুনাফা অর্জনের জন্য তাদের অস্ত্র উৎপাদন আরও বাড়িয়ে তুলছে। আর এসব অস্ত্রের প্রধান ক্রেতা হল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। তাই দেখা যায় যে মধ্যপ্রাচ্যে যত অস্ত্রের পরিমাণ বাড়ছে সেখানে ততই সহিংসতা বেড়েই চলছে। এছাড়াও দেখা যায় ওসমানীয় খেলাফত ভেঙ্গে যাওয়ার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সেীদিআরব ও ইরানের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃত্বের প্রশ্নে এক ধরনের প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে দেশ দুটি সামরিক শক্তি ও অস্ত্রের দিক থেকে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। মধ্য প্রাচ্যের স্বৈরশাসকগণ তাদের ক্ষমতা সুসংহত রাখার জন্য ব্যাপক অস্ত্রীকরণ করেছে। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে যে আরব বসন্ত হয়েছে সেখানে বৃহৎ শক্তিগুলো বিদ্রোহী গ্রুপ গুলোকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে এক রক্তময় হোলি খেলায় মত্ত হয়েছে। সিরিয়াকে মোকাবেলা করার জন্য তুরস্কে প্যাট্রিয়ট মোতায়েন করা হয়েছে। ফলে বিশেষজ্ঞগণ সেখানে এক যুদ্ধের সম্ভাবনার কথা বলেছে। এছাড়া সহজে অস্ত্র প্রাপ্তির ফলে সন্ত্রাসী গ্রুপ গুলোর সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম আরও বেড়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র তার নিরাপত্তার কথা বলে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে অস্ত্রের প্রয়োজন হচ্ছে। আফগানিস্থান ও ইরাক সহ বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্র তার মিশন অব্যাহত রেখেছে। তাই দেখা যায় যে এ সমস্ত কারণে নিরস্ত্রীকরণ ও অস্ত্র সীমিতকরণ প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।

উপরোক্ত পর্যবেক্ষণ থেকে বুঝা যায় যে, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার কর্ণধার যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী আধিপত্য বিস্তারে এবং অর্থনৈতিক প্রতিপত্তি অর্জনের লক্ষ্যে কার্যকর ভুমিকা গ্রহন করে চলছে। আর লক্ষ্য অর্জনে ব্যবহৃত হচ্ছে তার সামরিক ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক আগ্রাসন। তাই বর্তমান বিশ্বে নিরস্ত্রীকরণ ও অস্ত্র সীমিতকরণ প্রচেষ্টা পুরোপুরি সম্ভব নয়। কেননা বিশ্বব্যাপী যে সর্বাতœক পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি সিটিবিটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তাতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মদদ পুষ্ট রাষ্ট্রসমূহ সিটিবিটিতে আগ্রহী নয়। ফলে বিশ্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থার যে ধারণা নিয়ে সিটিবিটির উদ্ভব হয়েছিল তা এখন অনেক দূরের লক্ষ্য। আর যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ব্যতীত বিশ্বব্যাপী এ ধরনের কার্যক্রম আদৌ সম্ভবপর নয়।

তবে নিরস্ত্রীকরণ ও অস্ত্র সীমিতকরণের লক্ষ্যে যেসব চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে যেমন- ঘচঞ, ঝঅখঞ, ঝঞঅজঞ, ঈঞইঞ ইত্যাদি চুক্তিগুলো নিরস্ত্রীকরণ ও অস্ত্র সীমিতকরণের ক্ষেত্রে অনেক সুফল বয়ে এনেছে। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্যান্ডিহুক ইলেমেন্টারি স্কুলে এক বন্দুক ধারীর গুলিতে ২০ জন শিশুসহ ২৭ জন নিহত হওয়ায় দেশটির বর্তমান কর্ণধার ও দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রনের জন্য আইন প্রণয়নের পরিকল্পনা করছে। কিন্তু রিপাবলিকানরা এর বিরোধিতা করছে। ফলে অস্ত্র নিয়ন্ত্রনের পরিকল্পনা বাধা গ্রস্থ হচ্ছে। তারপরও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কেননা নিউক্লিয়ার ফ্রি জোন ও আগ্নেয়াস্ত্র মুক্ত বিশ্ব পেতে হলে বিশ্বের বৃহৎ রাষ্ট্র গুলোকেবি নিরস্ত্রীকরণে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু প্রতিশ্রুতি আর চুক্তি করলেই অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে কার্যকরী পদপে গ্রহন করতে হবে। বিশ্বের ৯০ ভাগ পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ রয়েছে দুই পরাশক্তি রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। বাকী ১০ ভাগ রয়েছে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারত, ইউক্রেন, ইরান ও পাকিস্তানসহ মাত্র ৬/৭ টি দেশের হাতে। এ তথ্য থেকে খুব সহজে বুঝা যায় যে, বিশ্বের সমুদয় পারমাণবিক অস্ত্র মাত্র ৮/৯ টি দেশের হাতে সীমাবদ্ধ। ফলে, বৃহৎ শক্তিগুলো অস্ত্র পরিহার করলেই পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ সম্ভব।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.