হরতালের দিনে মেয়েটির সাথে

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৩৩

-ওদিকে যাবেন না!

জাহাজ কোম্পানি গিয়েছিলাম দুটা বই কিনতে।বই কিনা শেষ তাই ফিরছিলাম।কিছুদূর হাটতে হবে তারপর অটো।
হরতালের দিন,অটোতে কি হেটে যাওয়াও রিস্ক।কিছু দুর হেটে আসতেই একটা মেয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলল।আমি ফিরে দেখলাম মেয়েটার দিকে,এ তো মেয়ে নয় যেন পরী।আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়েই আছি,মেয়েটা আবার বলল
-ওদিকে যাবেন না
আমি এবার মুখ খুললাম
-কেন?
-ও পাশে পুলিশের সাথে বিএনপির মারামারি চলছে।তাই ওপাশ দিয়ে কেউ যেতে পারছেনা।
-অহ।আচ্ছা যাবনা।ধন্যবাদ।

মেয়েটা আবার হাটা শুরু করল।কেন জানি মেয়েটাকে ছাড়তে চাচ্ছিলাম না তাই নিজে একটু দৌড়ে গিয়ে বললাম
-শুনছেন
-আপনি!হুম বলুন কি বলবেন?
-আপনি কোথায় যাবেন?
-মানে কি?
-না বলছি,আপনি কি লালবাগের ও পাশে যাবেন।
-কেন?ওপাশে গেলে কি করবেন?
-না মানে আপনার সাথে যেতাম।আমি রংপুরে নতুন তো তাই পথ ঘাট চিনিনা তাই যদি একটু সাহায্য করতেন।

মেয়েটা কি যেন ভাবছে, কিছুক্ষন ভেবে বলল
-আচ্ছা আসুন আমার সাথে!
-ধন্যবাদ,আসলে আমি পরশুদিনই রংপুর এসেছি।তাই এ অবস্থা
-ও।কোথায় বাসা আপনার?
-কুড়িগ্রাম,আপনি কি এখানে স্থানীয়?
-হুম,আমার বাসা লালবাগের পাশেই।

আমি মেয়েটার প্রতি এখন পুরাই ফিদা, তাই সময় নষ্ট না করে পরিচত হতে হবে।তাই আমি নিজেই বললাম
-আমার নাম শুভ।
-আমার নাম শান্তা।

বাহ খুব সুন্দর,শুভ শান্তা কি সুন্দর মিল।

-আচ্ছা আপনি কোথায় পড়েন?
-কারমাইকেল এ?আপনি?
-আমি রোকেয়া ইউনিভার্সিটি তে
-ও আচ্ছা।

আর কোন কথা হলনা,৫ মিনিট হেটে আসার পর শান্তা বলল,
-এখান থেকে রিকশা নিয়ে চলে যান!
এখানেই সব কিছু কি শেষ,আমার কিছু করতেই হবে।তাই আমি আবার বললাম
-আপনি যাবেন না!
-হুম যাব।
-চলুন একসাথে যাই,একি জায়গা তো দুজনের গন্তব্য।

শান্তা কি যেন ভাবল,তারপর বলল
-আচ্ছা চলুন!

আমরা রিকশায় উঠলাম,এখান থেকে আমার ভার্সিটি আর শান্তার কলেজ ১০ মিনিটের পথ।যা করতে হবে তারাতারি করতে হবে আর রিকশা তেই করতে হবে।
আমি চিন্তা করছিলাম কি বলব।
তার আগেই শান্তা বলে উঠল
-আপনি কোন বিষয় নিয়ে পড়েন?
-আমি,আমি কেমিষ্ট্রি নিয়ে পড়ি!আপনি?
-আমি বাংলায়
-আন্দাজ করেছিলাম,বাংলাতেই পড়বেন।
-কি ভাবে আন্দাজ করলেন?
-হুমায়ূন আহমেদ বলছে না,সুন্দরি মেয়েরা বাংলায় পড়া উচিত তাই আর কি
-ফ্লাট করছেন!
-না,ফ্লাট করলে নাম্বার চাইতাম।তা চাই নি!
-এখন চাইবেন হয়ত!
-হুম,দিন আপনার নাম্বার টা!
-কেন,ফ্লাট বলে করছেন না
-এখন করছি, তাই চাচ্ছি।
-হা হা হা

আহ কত সুন্দর করে হাসে।
-আপনার হাসি অনেক সুন্দর!
-আবার ফ্লাট করছেন।
-না সত্যি বলছি।
-ধন্যবাদ।

এসে গেছে আমাদের গন্তব্য স্থান।
অনেক তারাতারি এসে গেছি।
রিকশা ওয়ালার উপর খুব রাগ হচ্ছে এত জোরে আসা লাগে,একটু আস্তে আস্তে আসলে কি হত।

ইম্প্রেস করতে হবে,তাই ভাড়া আমাকেই দিতে হবে।এত কিছু চিন্তা করে যেই মানি ব্যাগ বের করছি ভাড়া দেওয়ার জন্য,মানি ব্যাগ বের করে দেখি রিকশাওয়ালা নাই।
আমি শান্তার দিকে তাকিয়ে দেখি ও হাসছে।ও হাসতে হাসতেই বলল,
-আজ থাক আর দিতে হবেনা।

এখানেও আমি হেরে গেলাম,একটা সুযোগ ছিল ইম্প্রেস করার সেটাও মিস।
-আজ দিলাম না কিন্তু কবে দিব?
-উম..,আরেকদিন যদি দেখা হয়ে যায় তখন?
-দেখা কি আর হয়ে যায়, দেখা করতে হয়।
ও কি যেন ভাবল,তারপর নিজের ব্যাগ থেকে মোবাইল টা বের করল, সেটা দেখে নিল তারপর আমার দিকে তাকাল।ভাবছিলাম ও হয়ত আমার নাম্বার নিবে কিন্তু আমাকে হতাশ করে দিয়ে বলল
-আজ আর সময় নেই।অনেক বেজে গেছে।আরেক দিন কথা হবে।

আমি কোন ভাবেই চাইছিলাম না শান্তা যাক, কেন যানি কেমন লাগছিল।কোন কিছু হারিয়ে যাচ্ছে এমন মনে হচ্ছিল।যদিও পরে ওকে খুজে বের করা খুব কঠিন হত না!
আমি আবার বললাম
-আচ্ছা এখন গিয়ে করবেন।
-বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিব।
-ও আচ্ছা!আমার একটা অনুরোধ রাখবেন!
-কি?
-আমি কখনো আপনাদের কলেজ দেখিনি একটু আমাকে ঘুরিয়ে দেখাবেন!

শান্তা আমার দিকে অনেক ক্ষন তাকিয়ে থাকল।তারপর একটা হাসি দিল।তারপর বলল
-আজ ঘুরে কাজ নেই।আপনার নাম্বার দিন আমি ডেকে নিব।
-ও,আচ্ছা।নিন।
একটা মিসকল ও দিয়ে দিতেন।পথ হারিয়ে গেলে কাজে লাগবে।

আমার কথা শুনে আবারো শান্তা হাসল।যে হাসির প্রেমে পরে গেছি আমি,সে হাসি।আমার মোবাইল টা বেজে উঠল আর তার সাথে মনের ঘন্টিটাও।

মোবাইল বাজতেই,শান্তা বলল,
-দিয়ে দিলাম।আশা করি আর বিপদে পড়বেন না।
ভাল থাকবেন।
আর ১০ টার আগে কখনো নয়,তখন বাবা জেগে থাকে।
-আচ্ছা ১০ টার পরেই দিব
-আচ্ছা আমি যাই।
বলে শান্তা আরো একবার আমাকে পাগল করার হাসি দিয়ে চলে গেল।

আমি মনে মনে হরতাল কে ধন্যবাদ দিলাম।যাক
হরতালে কারো কোন লাভ না হলেও আমার হল।
বেচে থাকুক হরতাল,বেচে থাকুক আমার ভালবাসা।

৪ টি +০/-০