![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) ছিলেন ইসলামের এক প্রদীপ্ত সূর্য, সত্যের এক আলোকিত পর্বত। সত্যের জন্য সুকঠিন ত্যাগের যে ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন তা তাকে চিরকালের জন্য মুসলিম জাতির হৃদয়ে শ্রদ্ধার আসনে সমাসিন করেছে। তার জীবন মুসলিম জাতির জন্য ত্যাগের এক মহান আদর্শ হয়ে আছে। তিনি ছিলেন পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় হাদিস বিশারদের অন্যতম এবং মুসলমানদের সর্বজনগ্রাহ্য চার মাযহাবের অন্যতম 'হাম্বলী' মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা। তার মাযহাব হানাফি, শাফেয়ী ও মালেকী মাযহাবের মতই আজো পৃথিবীতে চর্চিত ও অনুসৃত।
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) ১৬৪ হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেন। জন্ম সূত্রে তিনি ছিলেন খাটি আরব। বিখ্যাত শাইবান গোত্রে তার জন্ম। তার গোত্রের পূর্বসূরীগণ বাস করতেন বসরায়। তারা আরবের সেসব গোত্রপতিদের অন্তভর্ুক্ত ছিলেন, যাদের শৌর্যবীর্য ও শক্তি সাহসের কথা ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের দাদা হাম্বল ইবনে বেলালি বসরা থেকে খোরাসান চলে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি উমাইয়া প্রশাসনের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। যখন আব্বাসীয় গোত্রের লোকজন খোরাসানে তাদের ধমর্ীয় তৎপরতা শুরু করে, তখন হাম্বল তাদের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। এ পর্যায়ে তিনি বড় ত্যাগ স্বীকার করেন। ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের পিতা হাম্বলেও সৈনিক ছিলেন। ইমাম আহমদের জন্মের পূর্বেই তিনি ইন্তেকাল করেন। তারপর ইমাম আহমদের সম্মানিতা মাতা মরক্কো থেকে বাগদাদ চলে আসেন। এখানেই ইমাম আহমদ জন্মগ্রহণ করেন। তার মা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী ও উদ্যমী নারী। স্বামীর রেখে যাওয়া সামান্য সম্পদ নিয়ে কৃচ্ছ্রতার মধ্য দিয়ে তিনি জীবন যাপন করেন। ইমাম আহমদ বিন হাম্বলেও তাই ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অত্যন্ত সাহসী, ধৈর্যশীল, উদ্যমী ও দৃঢ়চেতা।
ইমাম হাম্বলের (রহ.) মাতা তাকে গতানুগতিক শিক্ষার বিপরীতে ইলমে ওহির এক নিরলস ধারকরূপে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাই খুব ছোট বয়সেই তিনি তার ছেলেকে মক্তবে ভর্তি করে দেন। শিশু আহমদ প্রথমত কুরআন হিফজ করেন। এরপর তিনি ভাষাতত্ত্বের জ্ঞান অর্জন করেন এবং লেখা শিখেন। মহান আল্লাহ তাকে দান করেছিলেন অসাধারণ ধীশক্তি। একবার যা শুনতেন তা আর কখনো ভুলতেন না। অল্পদিনের মধ্যেই তিনি একজন কৃতিছাত্র হিসেবে পরিচিত হয়ে যান। কিশোর আহমদ ছিলেন অত্যন্ত শান্ত-শিষ্ট ও বুদ্ধিমান। অনেক নিরক্ষর মহিলার যাদের স্বামীগণ দূর দূরান্তে সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন তারা কিশোর আহমদকে দিয়ে তাদের পত্র পড়িয়ে শুনতেন এবং জবাব লিখিয়ে নিতেন। তিনি সেসব পত্রে কখনও কোন অমার্জিত কথা লিখতেন না। লোকজন তাদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারে কিশোর আহমদকে আদর্শরূপে গ্রহণ করেন। তার উত্তম আখলাক, তাকওয়া ও বহুমুখী প্রতিভা দেখে অন্তদর্ৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিগণ বলতেন এই ছেলে বেঁচে থাকলে তার সমকালের এক মহান ব্যক্তিরূপে খ্যাতি লাভ করবে এবং সমকালীন মানবতার এক অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে বৃত হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ইমাম আহমদ (রহ.) হাদিস শিক্ষার প্রতি মনোনিবেশ করেন। বাগদাদের প্রথিতযশা মুহাদ্দিসের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে তিনি ইলমে হাদিসের গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। ইসলামী খেলাফতের রাজধানী বাগদাদের লেখাপড়া সমাপ্ত করে তিনি বসরা, কুফা, হেজাজ, শাম প্রভৃতি অঞ্চল সফর করেন এবং প্রতিটি স্থানের প্রথিতযশা মুহাদ্দিসগণের কাছ থেকে হাদিস শিক্ষা করেন। তিনি হেজাজের প্রথম সফরেই ইমাম শাফেয়ী (রহ.) এর সাথে সাক্ষাৎ ও তার শিষ্যত্ব গ্রহণের সৌভাগ্য লাভ করেন।
ইমাম আহমদের মনোবল ছিল অত্যন্ত দৃঢ়। তিনি আপন সিদ্ধান্তে ছিলেন অবিচল। একবার যা সিদ্ধান্ত নিতেন, যে কোন ত্যাগের বিনিময়ে তা বাস্তবায়িত করে ছাড়তেন। একবার তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে, পবিত্র মক্কায় গিয়ে তিনি হজ্জ করবেন এবং কয়েকদিন হেজাজে অবস্থান করে হাদিস শেখার জন্যে ইয়ামান গিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বিন হুমামের দরবারে উপস্থিত হবেন। ইমাম আহমদ তার সহপাঠী ইয়াহয়া ইবনে মুঈনের কাছে তার অভিপ্রায়ের কথা ব্যক্ত করলেন। এবং তারা উভয়ে এ নিয়তে মদীনায় প্রবেশ করলেন। প্রবেশ করে সবেমাত্র 'তাওয়াফে কুদুম' সমাপ্ত করেছেন, এমন সময় আব্দুর রাজ্জাক ইবনে হুমামের দিকে উভয়ের চোখ পড়ল। ইয়াহয়া ইবনে মুঈন, ইবনে হুমামকে পূর্ব থেকেই চিনতেন। তিনি এগিয়ে গিয়ে তাকে সালাম করে তার সাথে ইবনে হাম্বলের পরিচয় করিয়ে দিলেন। আব্দুর রাজ্জাক ইবনে হুমাম, ইমাম আহমদকে দীর্ঘ জীবন লাভ ও সীরাতুল মুস্তাকীমের উপর দৃঢ়পদ থাকার দোয়া দিলেন এবং আবেগভরা কণ্ঠে বললেন যে, আমি দূর থেকে তোমার বড় প্রশংসা শুনেছি। কথোপকথনের এক পর্যায়ে ইমাম আহমদ, আব্দুর রাজ্জাক ইবনে হুমামকে লক্ষ্য করে বললেন, আমরা ইনশাআল্লাহ আগামীকাল হাদিস শেখার জন্য আপনার খেদমতে উপস্থিত হবো। এরপর ইবনে হুমাম চলে গেলে ইবনে মুঈন ইমাম আহমদকে বললেন, অঙ্গীকার কেন করলে? আল্লাহ শুকরিয়া আদায় কর।আল্লাহ আমাদের ইয়ামান যাতায়াতের কষ্ট থেকে বাঁচিয়েছেন। এখানেই শাইখকে পেয়ে গেছি। ইমাম আহমদ (রহ.) বললেন যে, আমার আলস্নাহর কাছে লজ্জালাগে যে হাদিস সংগ্রহের জন্য কোন অভিপ্রায় পোষণ করে তা ত্যাগ করব। আমরা ইয়ামান যাব এবং সেখানে গিয়েই শাইখের কাছে হাদিস শিখবো।
চলিস্নশ বছর বয়স থেকে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) হাদিসের দরস দেয়া শুরু করেন। মুসলিম জাহানের দূর-দূরান্তে তার ব্যক্তিত্বের কথা ছড়িয়ে পড়ছিলো। ফলে তার কাছে ছাত্র ও সাধারণ শ্রোতাদের ভিড় জমতো। কোন কোন বর্ণনাকারীর মতে তার দরসে ছাত্র ও শ্রোতাদের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যেতো। তন্মধ্যে বিশেষ একটা গ্রুপ ছিল যারা ইমাম আহমদ (রাহ.) এর গৃহে গিয়ে দরস গ্রহণ করতো। তারা হাদিস শুনতো এবং লিখতো।
দরসের এ মজলিসগুলো ছিল অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ। উপস্থিত ভক্তবৃন্দ অত্যন্ত আদব ও শিষ্টাচারের সাথে দরসে বসতো। অর্থহীন কোন কৌতুকের কথা বা হাদিসের দরসের আদব পরিপন্থী কোন আলোচনা ইমাম আহমদের দরসে কখনও শোনা যেত না। তিনি দরিদ্রদের ধনাঢ্যদের উপর প্রাধান্য দিতেন। ইমাম আহমদের এক সাথী আবু বকর মরুঝীর বর্ণনা- আমি দরিদ্রদের ইমাম আহমদের দরসে যতটা সম্মানিত ও গৃহীত হতে দেখেছি, তা অন্য কোথাও দেখিনি। তিনি দরিদ্রদের প্রতি অধিক আন্তরিক ছিলেন। তার মধ্যে নম্রতা ও গাম্ভির্যের চমৎকার সমন্বয় ছিল। তিনি তাড়াহুড়ো পছন্দ করতেন না। স্থিরতা ও গাম্ভীর্যের ছাপ তার চেহারায় পষ্ট ছিল।
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) অসাধারণ ধীশক্তির অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও স্মৃতির উপর নির্ভর করে তিনি কখনো হাদিস বর্ণনা করতেন না। বরং যখনই হাদিস বর্ণনার প্রয়োজন হতো তখনই কিতাবের শরণাপন্ন হতেন। তার ছাত্রদেরও তিনি হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে কিতাবের সাহায্য নিতে নির্দেশ দিতেন। মূলত এ বিষয়টি ছিল ইমাম আহমদের অত্যধিক সাবধানতার ফল। কিন্তু এর ফলে ধীরে ধীরে কিতাবের প্রচলন হয়ে যায়।
পূর্বেই বলা হয়েছে যে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল ছিলেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসগণের অন্যতম। হাদিস ভাণ্ডার থেকে মুসলমানদের প্রাত্যহিক জীবনের বিধি-বিধান আহরণের জন্য ইজতিহাদ বা গবেষণার পাশাপাশি তিনি বিপুল পরিমাণ হাদিস মুখস্থও করেছিলেন। তার সংকলিত হাদিসগ্রন্থ 'মুসনাদে আহমদ' থেকেই ইলমে হাদিসে তার জ্ঞানের বিস্তৃতি ফুটে ওঠে। তার এ সুবৃহৎ সংকলন গ্রন্থে অন্তভর্ুক্ত হাদিসের সংখ্যা এক লক্ষ চলিস্নশ হাজার। আরো বিস্ময়কর যে তথ্যটি এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিকগণ দিয়েছেন তাহলো- ইমাম আহমদ বিন হাম্বল তার মুখস্থ সাড়ে সতের লাখ হাদিস থেকে চয়ন করে এ সংকলন গ্রন্থটি তৈরি করেছেন।
এ গ্রন্থ সংকলিত হওয়ার পর তার ভক্ত অনুরক্তদের জন্য তার উপদেশ ছিল, যে হাদিস এ সংকলনে পাবে না, মনে করবে তা কোন হাদিসই নয়। তার এ উক্তি থেকে বুঝা যায় তিনি তার এ সংকলন গ্রন্থে হাদিসরূপে প্রাপ্ত সকল বর্ণনাই অন্তভর্ুক্ত করতে চেয়েছিলেন। অবশ্য তার এ উক্তি নিয়ে মুহাদ্দিস মহলে সামান্য বিতর্কের সূচনা হয়েছিল। সে বিতর্কের সমাধানও হয়েছে এভাবে ইমাম আহমদ (রহ.) মূলতঃ তখনকার সময় পর্যন্ত প্রাপ্ত ও প্রসিদ্ধ সকল হাদিস এ সংকলনে অন্তভুর্ক্ত করার বিষয়টি বোঝাতে চেয়েছেন। অতএব তার উক্তির অর্থ এ নয় যে, এ সংকলনের বাইরে আর কোন হাদিসই থাকতে পারে না।
এ মহান ইমামের বৈশিষ্ট্য ও চিরবরণীয়তার আরেকটি বড় কারণ হলো তিনি খলকে কুরআন (কুরআনকে আল্লাহর মাখলুক বলা) এর মত একটি চরম ফিতনার মুকাবিলা করেন। খলকে কুরআনের ফিৎনাটি জন্ম দিয়েছিল মুতাযেলা সম্প্রদায়। মুতাযেলা সম্প্রদায় হচ্ছে মুক্ত চিন্তার অধিকারী গ্রীক দর্শনে প্রভাবিত চরম কট্টরপন্থী একটি ভ্রান্ত দল। তারা আলস্নাহর দ্বীনের মাঝেও তাদের মুক্ত বুদ্ধি ও মস্তিষ্কপ্রসূত দর্শনের পাগলা ঘোড়া নিয়ে ছুটোছুটি শুরু করেছিল। তারা নির্বিচারে তাদের তন্ত্রমন্ত্র আর ভ্রান্ত মতবাদকেই মূল ঈমান আখ্যা দিয়েছিল। খলকে কুরআনের ফিৎনা মানে হচ্ছে এ ধারণা পোষণ করা যে পবিত্র কুরআন আল্লাহ তাআলার অন্যান্য মাখলুকের মত একটি মাখলুক মাত্র। তার চিরন্তন বাণী নয়। পবিত্র কুরআনকে মাখলুক বলার ফলাফল এই দাঁড়ায় যে পবিত্র কুরআনও অন্যান্য মাখলুকের মত ক্ষণস্থায়ী। কুরআনকে মাখলুক বলার এ মতাবাদটিকেই সংক্ষেপে বলা হয় খলকে কুরআনের মতবাদ।
খলকে কুরআনের বিষয়টি ব্যাহ্যত একটি জ্ঞানগত ও দার্শনিক বিতর্কের বিষয় হলেও তদভ্যন্তরে মুতাযেলাদের ছড়ানো অন্য ভ্রান্তিসমূহের চেয়েও ভয়াবহ সুদূরপ্রসারী বিষাক্ত কুফল নিহিত ছিল। এ ভ্রান্ত আক্বীদার বিরুদ্ধে যদি ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) হিমালয়ের মত বাঁধ সেধে রুখে না দাঁড়াতেন তাহলে পবিত্র কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্ম্যের অনুভূতি এবং তা শব্দও অর্থগতভাবে হুবহু আল্লাহর বাণী হওয়ার বিশ্বাস মানুষের অন্তরে একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়তো। এ বিষয়টি মুতাযেলাদের মতের সমর্থক ঐতিহাসিকগণও স্বীকার করেছেন।
এছাড়া আল্লাহ-রাসূল ও পরকালে অবিশ্বাসী দার্শনিকদের মতাবাদকেই যদি ঈমান ও কুফরের মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করে নেয়া হতো এবং এ ফিৎনার বিরুদ্ধে কেউ এগিয়ে না আসতো, তাহলে একথাই প্রমাণিত হতো যে কুরআন সুন্নাহকে ঘরে আবদ্ধ রেখে মানুষ তার মুক্তবুদ্ধি দিয়েই যে কোন মতবাদ রচনা করতে পারে এবং সে মতবাদকে ঈমান ও কুফরের মানদণ্ড আখ্যা দেয়া যায়। এ কারণেই সে যুগের উলামায়ে কেরাম ও মুহাদ্দিসগণ সে যুগের দর্শন তত্ত্বের কঠোর বিরোধিতা করেছেন। তারা কুরআন সুন্নাহকে মানুষের আক্বীদা বিশ্বাস ও আমলের একমাত্র উৎস এবং ঈমান ও কুফরের একমাত্র মানদণ্ড সাব্যস্ত রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছেন। মজার ব্যাপার হলো, মুতাযেলাদের মতবাদগত বিপস্নব শুধু মুক্ত চিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা নামেই আত্মপ্রকাশ করেছিল। কিন্তু তাদের হাতে যখন নেতৃত্ব এলো তখন তারা উদারতার শ্লোগান বাদ দিয়ে শাসনের রুদ্র দণ্ড দিয়ে মানুষকে তাদের মতবাদ গ্রহণে বাধ্য করছিল এবং সমগ্র মুসলিম জাহানকে অশান্তি ও নৈরাজ্যের লীলাভূমিতে পরিণত করছিল।
মুতাযেলাদের উত্থান বনু উমাইয়্যাদের শাসনামল থেকে শুরু হয়েছিল। খলীফা হারুনুর রশীদের শাসনামল নাগাদ তারা বিশেষ পরিচয়ে একটি বিশেষ অবস্থানে এসে যায়। এরপর মামুনুর রশীদ তার স্বভাবগত মানসিক দুর্বলতার কারণে মুতাযেলাদের এ আন্দোলনে প্রভাবিত হয়ে পড়েন। তাই তিনি যখন খলীফা পদে অধিষ্ঠিত হন তখন মুতাযেলাগোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের চীফ জাস্টিস হিসেবে ইবনে আবু দাউদকে নিয়োগ দেয়। তিনি মুতাযেলা মতবাদ তলোয়ারের জোরে সত্যপন্থী মুসলিম চিন্তানায়কদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে উন্মত্ত হয়ে ওঠেন।
মামুন ২১৬ হিজরীতে সর্বপ্রথম প্রত্যেক মুসলিম প্রদেশের গভর্নরদের নিকট এ মর্মে ফরমান জারী করে যে, সরকারী পদস্থ ব্যক্তিরা যেন সর্বসাধারণের মাঝে খলকে কুরআনের আকিদা ঘোষণা করে, যে ঘোষণা করবে না তাকে বরখাস্ত করে দেয়া হবে। এরপর দ্বিতীয় ফরমান বাগদাদের গভর্নরের নিকট প্রেরণ করে এ মর্মে যে, সে যেন বাগদাদের নির্দিষ্ট সাতজন মুহাদ্দিসকে তার দরবারের হাযির করে। যে মুহাদ্দিসগণ তার বিরোধী বলয়ের বিশেষ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত। এ সাত জন উপস্থিত হলে মামুন তাদেরকে খলকে কুরআন সম্বন্ধে প্রশ্ন করে। তারা সকলেই তখন মামুনের সাথে ভয়ে তার খলকে কুরআনের আক্বীদার ব্যাপারে ঐকমত্য প্রকাশ করেন। খলীফার নির্দেশ অনুযায়ী তারা আলিম উলামা ও মুহাদ্দিসগণের একটি বিরাট সমাবেশে এ আক্বীদার প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেন। পরিস্থিতি তখন অত্যন্ত জটিল হয়ে দাঁড়াল। কিন্তু তবুও হকের পথে অবিচণ মুহাদ্দিসগণ ও সর্বসাধারণ তাদের অবস্থানে দৃঢ়পদ রইলেন। এর কিছুদিন পর মুসলিম জাহানে ধরপাকড় শুরু হয়ে গেল। বশীর ইবনে ওলীদ কিন্দী এবং ইবরাহীম ইবনুল মাহদীকে কতল করা হলে প্রাণভয়ে অনেক বড় বড় আলিমের কদম টলে গেল। তারা এ ফিৎনা থেকে বাঁচার জন্য আত্মগোপনের পথ অবলম্বন করলেন। অনেকেই গৃহকোণ অবলম্বন করলেন। প্রত্যেকেই আত্মরক্ষার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কতিপয় বাক্য উলামা ও সুফীদের মুখে তখন স্বাভাবিকভাবে শোনা যোতো। তারা বলতেন, এ যুগ হাদিসের দরস ও সুন্নাহ প্রচারের যুগ নয়। এটা হলো ক্রন্দন বিলাপের যুগ। সুতরাং আলস্নাহর কাছে। কাঁদাকাটি করো এবং সমুদ্রে ডুবন্ত ব্যক্তির মত দু'আ করতে থাকো। কেউ বলতেন (এ যুগে) তোমরা তোমাদের জিহবার হিফাজত করো এবং নিজেদের আত্মশুদ্ধির কাজে লেগে যাও। যা কিছু জান তা মেনে চলো এবং যা কিছু মন্দ তা পরিহার করে চলো। কেউ বলতেন এ যুগ নিরবতার যুগ এবং নিজের গৃহদ্বার রুদ্ধ করে বসে থাকার যুগ।
লিংক
Click This Link
২| ১২ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৫:৪১
লুল মামা বলেছেন: ৭১ এ পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তান এর মধ্যে বিভেদ ছিল। তাই যুদ্ধ হল।
আর এখন মুক্তিযোদ্ধা আর অমুক্তিযোদ্ধা এর মদ্দে বিভেদ। যুদ্ধ আসন্ন।
৩২ বিসিএস এ প্রতিটা chader এ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বেশি নিয়োগ হইসে।
যুদ্ধ আসন্ন।যুদ্ধ আসন্ন।যুদ্ধ আসন্ন।
৩| ১২ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৫:৪২
ক্লাউনবয়৮৭ বলেছেন: বাব্বাহ! কঠ্ঠিন জিন্দেগী.........পার করেছেন উনারা
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৫:০০
নাজিম রেজা বলেছেন: লিখাটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ