![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভীষণ কল্পনাপ্রবণ একজন মানুষ আমি। কল্পলোকের ক্যানভাসে ছবি এঁকে, মনোজগতের সুবিশাল হাইপার স্পেসে নিজের এক মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে আমি হয়েছি ঈশ্বর। যখন প্রচন্ড কষ্টে কাঁদতে ইচ্ছে করে, তখন নিজের সৃজিত মহাবিশ্বের অসীম গ্যালাক্সিপুঞ্জ দেখে গর্বিত অনুভব করি। অতঃপর স্বপ্নীল জগতের দিকে তাকিয়ে উচ্চারণ করি দৈব বাণী- "নিশ্চই তোমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান। দুঃখ কিংবা কষ্ট তাকে স্পর্শ করে না।"
ছোট্ট নওমির পৃথিবীটা ছিলো অসম্ভব সুন্দর। মায়ের নরম হাতে আদরস্নাত মাখা-মাখা ভাতের পরমত্ব, নির্ভরতার প্রতীক বাবার আঙ্গুল আলতো চেপে ধরে গঞ্জের হাটে চকোলেট আর বেলা বিস্কুট খেতে যাওয়া, সোনালী বিকেলজুড়ে সুমিদের সঙ্গে উঠোনে ফ্রক পরে অবাধ্য লুকোচুরি-ছুটোছুটি, গ্রামময় দৌড়ে বেড়ানো, সন্ধ্যায় সদ্য ভেজা ঘাস কিংবা ধানক্ষেত মাড়িয়ে পৃথিবীর ওপাশে হারিয়ে যাবার প্রস্তুতি নিতে থাকা কমলা রঙের সূর্যটা ছুঁয়ে দেখার রুদ্ধশ্বাস অভিযানের হাতছানি, রাতে হলদে চেরাগের কম্পমান শিখায় শব্দ করে নামতা মুখস্ত করা, দাদির কাছে সুয়ো রানী-দুয়ো রানীর গল্প আর নিশিপোকাদের একটানা মৃদু গুঞ্জন শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়া। হঠাৎ করেই সেই পৃথিবীটা যেনো একটু একটু করে বদলে যেতে শুরু করে। কিশোরী দেহে এস্ট্রোজেন হরমোনের অস্ফুট আর্তনাদে নওমি ওর রন্ধ্রে রন্ধ্রে একটি নারী সত্ত্বার অস্তিত্ব টের পায়। সেই ‘ভৌতিক’ সত্ত্বার আবির্ভাবে ওর চিরপরিচিত জগতের নিয়মগুলো মোমের মত গলে পড়তে শুরু করে, আর সেই মোমের আস্তরণের অন্যপাশে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে থাকে পৃথিবীর সংকীর্ণতা, নির্মমতা আর নিষ্ঠুরতার অন্য এক গল্প। নওমি আবিষ্কার করে, ও এখন আর সেই ছোট্ট পুতুলটি নেই। ও এখন পিণ্ড। মাংসপিণ্ড। নওমি যখন পথচলত মেয়েবেলায়, আশে-পাশের সবার আচরণই ছিলো বড্ড স্বাভাবিক। আর এখন পথ চলতে গেলেই ও স্পষ্ট বুঝতে পারে, কয়েক জোড়া দৃষ্টি ওকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। সেই চোখগুলো যেনো মানুষের নয়, জিভ বের করে লালা ঝরাতে থাকা ক্ষুধার্ত হায়নার! কোন কোন হায়না আবার তাকিয়ে থেকেই ক্ষান্ত হতো না, ছুঁড়ে মারতো অশ্লীল সব শব্দগুচ্ছ! হতবাক হয়ে ও লক্ষ্য করে, কেউ এসবের বিচার-সালিশ করছে না! বরং সমস্ত অপরাধের ভার চাপছে ওর ওপর। এক নিমেষেই বদলে গেলো পরিবারের সদস্যদের অভিব্যক্তি! কয়েকদিনের ব্যবধানেই ‘নিরাপত্তা’র অজুহাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য শুরু হলো নওমির কারাবাস। হায়! সেই কারাবাসও ওর নিরাপত্তা দিতে পারে নি। নওমির ‘জীবিত’ জীবনের গল্পটি মোটামুটি শেষ হয়ে গেছে সেদিন, যেদিন ভরা বর্ষায় প্রবল বর্ষনের শব্দ ছাপিয়ে ওর ঘর থেকে চিৎকার শুনতে পেয়েছিলো আশেপাশের মানুষ।
এরপরের দিনগুলো কিভাবে কেটেছে নওমির তা মনে নেই। দুঃস্বপ্নের মত শুধু মনে আছে, ওর বাবা ওকে খুব মেরেছিলো, বাড়িভর্তি সেদিন ছিলো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ওকে গঞ্জের কোন এক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো, সেখানে শক্ত মুখের পুরুষ ডাক্তাররা ওর অনাবৃত শরীরের গোপন অংশ স্পর্শ করে কি কি যেনো পরীক্ষা করেছিলো! সে কী বীভৎস! পরীক্ষার পর ওরা কি সিদ্ধান্তে এসেছিলো, জানে না নওমি। সেই হায়নাটাকে গ্রেফতার হয়েছিলো কি না, জানা নেই ওর। ঠিক কি কারণে ওর সঙ্গে কেউ আর ভালো করে কথা বলে না, বুঝতে পারে নি নওমি। এক অস্বস্তিদায়ক কুতকুতে চোখে মানুষগুলো ওকে পর্যবেক্ষণ করে, কেন করে সে প্রশ্নের উত্তর নেই ওর কাছে।
নওমি শুধু জানে, ওকে এখন হাতের মোটা রশিটা দিয়ে একটা ফাঁস বানিয়ে ঘরের এই সিলিং ফ্যানটায় ঝুলে পড়তে হবে!
২| ২০ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৮
নীল জোসনা বলেছেন: একটি মেয়ের বেড়ে উঠার পারিপার্শ্বিক সুন্দর বর্ননা দিয়েছেন ।
আশা করি আরও ভালো ভালো লেখা পাবো আপনার কাছ থেকে ।
শুভ কামনা রইলো ....।
৩| ২১ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:২২
ডি মুন বলেছেন: নোংরা বাস্তবতা।
নওমিরা সুস্থ সুন্দর জীবন নিয়ে বেঁচে থাকুক। আর আমরা পুরুষেরাও মানুষ হতে শিখি। কারণ নারী বা পুরুষ হবার চেয়ে মানুষ হতে শেখা জরুরী।
ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম।
ভালো থাকুন সবসময়।
৪| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:১৪
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
দুটো লাইক, মন্তব্য নেই; ভাবা যায়।
গল্প লেখায় গঠনমূলক না হোক, পাঠোত্তর মন্তব্য হলেও লেখক অনুপ্রেরনা পাবে বোধ করি।
৫| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৩৪
মাহমুদ০০৭ বলেছেন: সুন্দর ভাষায় নোংরা বাস্তবতার গল্প ।
ভাল থাকবেন ইমু ভাই ।
৬| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২৯
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ছোট্ট হলেও যথেষ্ট শক্তিশালি গল্প।
৭| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:২২
সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: গল্পে যে দুঃখজনক সত্যটা উঠে এসেছে তা মন ভার করে দেয়।
ভাল থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৬
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
দুটো লাইক, মন্তব্য নেই; ভাবা যায়।
গল্প লেখায় গঠনমূলক না হোক, পাঠোত্তর মন্তব্য হলেও লেখক অনুপ্রেরনা পাবে বোধ করি।