![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রবিবার সকালে আমি অন্যান্য দিনের তুলনাই একটু বেশি দুরে মর্নিং ওয়াকে আসি । বছরের এই সময়ের আবহাওয়াটা আমার সবচেয়ে পছন্দের। রাস্তার বামদিকে মোড় নিতেই হঠাৎ চোখে পড়লো ম্যাপ হাতে একটা লোক একবার ডানদিকে তাকাচ্ছে একবার বামদিকে । এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, may I help u? লোকটা ঘুরে তাকাতেই আমি ভীষণ চমকে উঠলাম। এইটাই হয়তো আমার নিয়তি। নিজেকে সামলে নিয়ে ইংরেজীতেই প্রশ্ন করলাম, 'আপনি কি পথ হারিয়েছেন'? সে বললো, এই প্রথমবার সে বোস্টনে এসেছে, হোটেল থেকে বেরিয়ে সে এক পরিচিত ফ্যামিলির বাসায় যেতে চায়। সে যে ঠিকানাটা বল্লো সেটা আমার এপাটমেন্টে যাওয়ার পথেই পড়ে। আমি বল্লাম, জায়গাটা আমি চিনি, আমি দেখিয়ে দিচ্ছি। সে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বল্লো, আপনি কি Mexican? আমি মাথা নাড়তেই আবার জিজ্ঞাসা করলো, তাহলে নিশ্চয় Indian? আমি বুঝতে পারলাম, ও আমাকে এখনও চিনতে পারেনি। আর পারবেই বা কি করে? এই চৌদ্দো বছরে আমিই বা কি কম চেঞ্জ হয়েছি? চোখে এখন আর চশমা নেই, চুলগুলো ছোট করে কাটা আর পরনেও রয়েছে পশ্চিমা পোশাক। আমি কিছু বলছিনা দেখে ও নিজেই বলে যেতে লাগলো যে সে সাতদিন আগে জাপান থেকে এসেছে নতুন job নিয়ে। আগে Texas Instruments এ কাজ করতো । আমি চুপচাপ হাটঁতে হাটঁতে পুরানো দিনের কথাগুলো ভাবছিলাম। একসময় পাশাপশি বাসায় ভাড়া থাকতাম। আমার থেকে একবছরের বড় ও। লেখাপড়ায় প্রচন্ড ভাল থাকায় ওর নোট নিয়েছি, পড়া বুঝে নিয়েছি। একসাথে ছোটদের নাটকও করেছি পাড়ায় বিজয় দিবসের অনুস্ঠানে। ও ছিল আমার আইডল। সে বড় হলে Engineering পড়তে চাইতো বলে আমিও Engineering পড়েছি, ও travel এর গল্প শোনাতো , ছবি তোলার কথা বলতো বলে আমিও ঘুরে বেড়িয়েছি বহু দেশে, ছবি তোলা এখন আমার প্রিয় কাজগুলোর মধ্যে একটি। সবাইকে ছেড়ে এই যে দেশ থেকে এতদূরে একাকী জীবনযাপন করছি তার মধ্যে আছে না পাওয়ার কষ্ট আর কারও প্রতি তীব্র অভিমানবোধ । বাঙ্গালীরা বিদেশেও অন্যের পারসোনাল বিষয়ে কানাঘুষা করে বলে আমি এখানকার বাঙ্গালীদেরকে পারতোপক্ষে এড়িয়ে চলি। হাটঁতে হাটঁতে ওই ঠিকানায় আসার পর গেটের সামনে থেকে বিদায় নেবার সময় বাঙ্গলাতে বল্লাম, ভালো থেকো, নিলয়। ওর ভীষণ অবাক করা মুখকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেলাম ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে।
তারপর পেরিয়ে গেল এক সপ্তাহ। কাজের চাপে ওকে নিয়ে বেশী চিন্তার সুযোগ পাইনি, আর হয়তো চিন্তাও করিনি নতুন করে কষ্ট পেতে চাই না বলে । আজ রবিবার বলে আবারও মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছি । মোড়ে দাঁড়িয়ে water bottle থেকে পানি খেতে গিয়ে পেছনে একটা শব্দ শুনলাম। ঘুরে তাকাতেই দেখি নিলয়। ও- ই এগিয়ে এসে বল্লো, আমি ঠিক জানতাম যে এখানে আসলে তোমার দেখা পাবই। তাইতো সকাল ছয়টা থেকেই এখানে দাড়িঁয়ে আছি। সেদিন প্রথমে আমি তোমাকে চিনতেই পারিনি, তুমি বাঙ্গলা না বল্লে হয়তো শেষ পযন্ত চিনতামই না। আমি ওকে উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে শুরু করতেই পেছন থেকে দৌড়ে এসে খপ্ করে ও আমার হাত ধরে ফেলে বল্লো , কোথায় যাচ্ছো ইরা ? ওর হাতের সংস্পশে আমার শরীরে যেন তীব্র এক শীহরণ অনুভূত হলো। আমি অভিমানের সুরে বল্লাম, আমার কাছে এখন তুমি কি চাও ? একসময় তীব্র আবেগ নিয়ে তোমাকে আমার মনের কথা জানিয়ে যে চিঠি লিখেছিলাম, তার উত্তর না দিয়ে তুমিতো আমাকে অবহেলায় দূরে সরিয়ে দিয়েছোই, এখন এতদিন পরে আমার কাছে তোমার কি বলার আছে ? তখন নিলয় অত্যন্ত অবাক চোখে তাকিয়ে মিনতির সুরে বল্লো, বিশ্বাস করো, আমি তোমার কোনো চিঠি পাইনি। জাপান থেকে দেশে ফিরে তোমার খোঁজে তোমাদের বাড়িতে গিয়ে জানতে পারি সপরিবারে তোমরা বাড়ি বিক্রী করে ঢাকায় চলে গিয়েছো, তারপর থেকে পরিচিত কারও কাছ থেকেই তোমাদের কোনো খবর পাইনি। এই সমারভিলের বাঙ্গালীরাও দেখি তোমার সম্র্পকে তেমন কিছু জানেনা, তুমি নাকি তাদের এড়িয়ে চলো। আমার দুই হাত ধরে হঠাৎ হাটুগেড়ে বসে নিলয় ছল্ ছল চোখে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল্লো, 'চৌদ্দো বছর ধরে তুমি সবার থেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছো, আজকে থেকে আর তোমাকে হারাতে দিবো না, ভাগ্য আমাদেরকে আবার এক রাস্তায় এনে দাড়ঁ করিয়ে দিয়েছে , আর কখনও তোমাকে আমার থেকে দূরে যেতে দিবোনা, কক্ষনওনা'।
চলবে......
পর্ব -২ এর লিংক:
Click This Link
পর্ব -৩ এর লিংক:
Click This Link
পর্ব -৪ এর লিংক:
Click This Link
পর্ব -৫ এর লিংক:
Click This Link
নায়রা
[email protected]
২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:৫৭
সাদা কলো বলেছেন: অপেক্ষায় রইলাম.....।
৩| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৩:০০
নায়রা বলেছেন: ধন্যবাদ। আশা করি সামনের লেখাগুলোও পড়ে মন্তব্য করবেন।
৪| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৩:২২
অন্যমত বলেছেন: চলুক...
৫| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৩:৩২
শুকনা মরিচ বলেছেন: খুব ভালো লাগলো ।
পরের পর্ব খুব তাড়াতাড়ি চাই । অপেক্ষায় থাকলাম
অনেক অনেক ভালো থাকবেন
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:৪৫
অর্ফিয়াস বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার সাবলীল কথন। সাথে আছি।