নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান মনের জানালা খুলে দায় এবং সেই খোলা জানালা দিয়ে না জানা বিষয় গুলো দেখি যা বাংলাদেশের সীমা ছাড়িয়ে সারা পৃথিবী দেখতে সাহায্য করে ।

এইচ এন নার্গিস

আমি একজন লেখক, সমাজ কর্মি , মা এবং মুক্তিযোদ্ধা

এইচ এন নার্গিস › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক জিনিয়াসের উত্থান, Pride and Prejudice (জেইন অস্টিনের উপন্যাসের বিষয়বস্তু )

১৩ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১২:২১

"Pride and Prejudice"


"Pride And Prejudice"  সিনেমার এক দৃশ্য


জেইন অস্টিনের গল্পের বিষয়বস্তু


"It is a truth universally acknowledged, that a single man in possession of a good fortune, must be in want of a wife." অর্থাৎ, একজন পুরুষ ধনী হলে সে বিয়ে করতে চায় কিনা, তা বিষয় নয়; তাকে বিয়ের মধ্যে প্রবেশ করায় মেয়ের বাবা-মা। কারণ মেয়ের বাবা-মা সেই ধনী ছেলেটিকেই চায় তাদের কন্যার জন্য। এটাই হলো 'ইউনিভার্সাল ট্রুথ'। কারণ তারা একটি ধনী ছেলে চায়। মানুষটি কেমন, তা তাদের বিষয় নয়—বিষয় তার অর্থ।


গল্পে দেখা যায়—এক মা তার পাঁচ মেয়েকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, সেখানে একটা ধনী ছেলে ধরা তার মায়ের উদ্দেশ্য। বলে যাওয়ার সাজগোজ আলাদা, চুলের স্টাইল অন্যরকম। তরুণীরা কোমরে কর্সেট পরত কোমর সরু দেখানোর জন্য। হাতে থাকত ফ্যান্সি ফ্যান। একটাই উদ্দেশ্য—তাকে যেন পছন্দ করে কোনো পুরুষ। তাকে সবাই মিলে অবলোকন করবে—উপযুক্ত পাত্রী কি না। হাবভাব দেখাতে হবে অন্যরকমভাবে।


যে পাত্রী বা পাত্র নিজেদের পছন্দ করত, সেই পছন্দ দুই পরিবার একত্রে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখত—পদমর্যাদা, বংশমর্যাদা এক রকম কি না। আর এই প্রেসার ছিল অনেক বেশি। এই 'পাত্র-পাত্রী হান্টিং পার্টি' চলত সারা রাত ধরে, মোমবাতি ক্ষয় না হওয়া পর্যন্ত।


এই গল্পটি একটি ক্লাসিক নভেল। সময়টা ১৭শ শতাব্দী। বেনেট গার্লস—বেনেট পরিবারে পাঁচটি মেয়ে। মা চান পাঁচটি ধনী ধনী ছেলে, কারণ ধনী ছেলের হাত ধরে তার মেয়েরাও ধনী হবে। কারণ বাবার সম্পত্তি সব চলে যাবে ছেলের হাতে। মেয়েরা ধনী ঘরে বিয়ে না দিলে তারা গরিব হয়ে পড়বে।


এলিজাবেথ বেনেট পাঁচ মেয়ের একটি মেয়ে। সে বুদ্ধিমান, স্বাধীনচেতা এবং স্মার্ট। ডারসি একজন ধনী, যার আছে অনেক জমি এবং সে সেই সম্পত্তির মালিক। কিন্তু সে অহংকারী, রূঢ় আর অহংবোধপূর্ণ — হাবভাব দেখানো আর অহংকারী।


পাঁচ মেয়ের মধ্যে এলিজাবেথকে সে পছন্দ করে এবং অল্প দেখাদেখির পরেই তাকে বলে দেয় — সে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু এলিজাবেথ সরাসরি ক্রোধান্বিত হয়ে তা না করে দেয় এবং বলে — "তোমার পছন্দ হলেও আমার হবে কি না, তা দেখতে হবে।" অর্থাৎ তারও নিজস্ব একটা ইচ্ছা আছে, মতামত আছে, তার দাম দিতে হবে। টাকা আছে বলেই নিজেকে বিলিয়ে দেব — তা নয়।


এই গল্পে এই ডায়ালগ দিয়ে জেইন অস্টিন মেয়েদের বলতে চেয়েছেন — "যাকে মানুষ হিসেবে ভালো লাগবে, তাকেই বিয়ে করবে।" এলিজাবেথের মা মেয়ের এই নাকচ করাটিকে শুনে আপসেট হয়ে যায় এবং তার বান্ধবীর কাছে গিয়ে বলে — "এতো ভালো ছেলে, মাসিক ইনকাম ১০ হাজার পাউন্ড, তবুও আমার মেয়ে নাকচ করে দিল!" হাস্যরসপূর্ণ এই ডায়ালগটি বেশ বিখ্যাত।


মেয়েরা সে সময় বাবার সম্পত্তি পেত না। নিজেরাও আয় করত না। নিজেদের হাতে কোনো টাকা-পয়সা থাকত না। লিজির মা পাঁচ মেয়ের বিয়ে নিয়ে এবং কীভাবে তাদের পাত্রস্থ করা যায় সেই চিন্তায় থাকে। তার মতে, পাত্র অভদ্র, রূঢ় — তাতে কী? টাকা-পয়সা তো আছে!


আরও কিছু ডায়ালগ আছে, যা খুব আলোড়িত করে — ডারসি বিয়ের প্রস্তাব দিলে, লিজ তা প্রত্যাখ্যান করে দৃঢ়তার সঙ্গে — "আমাকে কি তুমি তোমার চেয়ে কম মর্যাদাসম্পন্ন ভাবো? এটা কি একজন ভদ্রলোকের ব্যবহার?" "তুমি কি মনে কর, তুমি বিয়ে না করলে আমার বিয়ে হবে না?" "যেহেতু তোমার অর্থ আছে, সামাজিক মর্যাদা আছে, তাই দেখে তুমি অভদ্র, রূঢ় হয়েও তোমাকে বিয়ে করে নেব?" "কীভাবে তা ভাবতে পারো?" "মোটেও আমি তোমাকে বিয়ে করব না। খুব তাড়াতাড়ি কোনো কিছু না দেখেই তুমি বিয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছো এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছো — আমি এখনো ‘হ্যাঁ’ বলিনি। আমার ইচ্ছা-অনিচ্ছা আছে। শুধু তোমার ইচ্ছায় বিয়ে হবে — তা সম্ভব নয়।"


কারণ, ডারসি যে রকম হাবভাব দেখাচ্ছিল, তা লিজির পছন্দ হয়নি। কারণ তার মনোভাব এবং ধারণা ছিল — "আমি পুরুষ, তাই আমার আদেশেই মূল কথা।" "পুরুষ সবসময় উঁচু," "পুরুষ উত্তম" — যেমনটি আজও অনেক এশিয়ান সংস্কৃতিতে দেখা যায়।


বিয়ের বাজারে পুরুষ জাতির এই মনোভাব কেমন, সেটাই এই গল্পের বিষয়বস্তু। এই গল্পে ডারসি অবশ্য তার ভুল বুঝতে পারে। নিজেকে শুধরে আবার ফিরে আসে। সে বুঝতে পারে — মেয়েদের প্রতি ভালো ব্যবহার করতে হবে। এবং তখন লিজি তার প্রস্তাব গ্রহণ করে।


মায়ের চিন্তাধারা পরিত্যাগ করে, মেয়েরা যে দৃঢ় হচ্ছে তাদের নিজস্ব ইচ্ছা-অনিচ্ছা প্রকাশের ব্যাপারে — এটাই গল্পের মূল বিষয়। সমাজের কুপ্রথা, মানুষের মানসিকতা ও চিন্তাচেতনাকে নাড়া দেওয়া — জেইন অস্টিন তার গল্পে মানুষের আচরণ এবং কুপ্রথা দূর করতে চেয়েছিলেন।


জেইন লেখার মধ্য দিয়ে মেয়েদের উদ্দেশে বলেছেন — "I see you and I hear you." যা একেবারে আধুনিক এক ‘চিন্তাচেতনা’।
চলবে

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



জেন অস্টেন বিরচিত Pride and Prejudice প্রেমকাহিনীধর্মী উপন্যাসটিতে থাকা সামাজিক ব্যঙ্গ, রোমান্স,
ও মানসিক অন্তর্দৃষ্টিকে একত্র করে লেখা কাহিনীটিকে খুবই দক্ষতার সাথে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরার প্রয়াস নিয়েছেন
দেখে ভাল লাগল ।
ইংল্যান্ডের গ্রামীণ পটভূমিতে রচিত এ কাহিনীর কেন্দ্রে থাকা এলিজাবেথ বেনেট, এক তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও স্বাধীনচেতা
তরুণী, এবং ফিটজউইলিয়াম ডার্সি, একজন ধনী কিন্তু প্রথমে অহঙ্কারী ও সংরক্ষিত প্রকৃতির ভদ্রলোক। তাদের
সম্পর্কের ধাপে ধাপে বিকাশের মাধ্যমে উঠে আসে অহঙ্কার, কুসংস্কার, শ্রেণি ভেদ, বিয়ে এবং আত্মোন্নয়ন, এই
বিষয়গুলো আপনার লেখাটিতে সুন্দর ভাবে উঠে এসেছে ।

শুভেচ্ছা রইল

২| ১৩ ই জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১:৩২

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.