নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান মনের জানালা খুলে দায় এবং সেই খোলা জানালা দিয়ে না জানা বিষয় গুলো দেখি যা বাংলাদেশের সীমা ছাড়িয়ে সারা পৃথিবী দেখতে সাহায্য করে ।

এইচ এন নার্গিস

আমি একজন লেখক, সমাজ কর্মি , মা এবং মুক্তিযোদ্ধা

এইচ এন নার্গিস › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন জিনিয়াসের উত্থান ,জেইন অস্টিন

১৪ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১০:৩৮

জেইন অস্টেনের প্রথম গল্প "Titled"




জেইন এর পরিবার পরিচয়

গল্পটি তার বড় বোনকে নিয়ে লেখা। জেইনের হিরো ছিল তার বড় বোন। জেইনের ছিল পাঁচজন বড় ভাই এবং এই একমাত্র বোন।

তৃতীয় ভাই এডওয়ার্ডকে তাদের এক ধনী আত্মীয়ের কাছে তার বাবা অল্প বয়সে তার ভবিষ্যতের ভালো ভাগ্যের জন্য পালকপুত্র হিসেবে দিয়ে দেন। কারণ সেই আত্মীয়ের ছিল অনেক সম্পত্তি, কিন্তু পুত্র না থাকার কারণে সেই সম্পত্তি হস্তান্তর করার জন্য, সে সময়ের প্রথা অনুযায়ী, একজন পুত্র দরকার ছিল। তাই তাদের অনুরোধে ছোটবেলায় তাকে দিয়ে দেন তার বাবা। দ্বিতীয় ভাই জর্জ জন্মগতভাবে মানসিক রোগী ছিলেন এবং তাকে রেখে দেন তার আরেক চাচা।

ছোটবেলায় জেইন ভাইবোনদের সঙ্গে বাড়ির পাশে বাগানে কমেডি নাটক মঞ্চস্থ করত। ১২ বছর বয়সে সে তিনটি নাটকের স্ক্রিপ্ট লেখে। ১১ বছর বয়সে কবিতা আর গল্প লিখতে শুরু করে।

বাবা তাকে লেখার জন্য কাগজ কিনে দিতেন এবং ক্যাসান্দ্রা (তার বোন) স্কেচ করতে পছন্দ করত, তাই তার জন্য স্কেচ পেপার কিনে দিতেন। দুই বোনকে স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছিল, কিন্তু স্কুল ফি দিতে না পারা এবং অসুস্থতার কারণে তারা বাড়ি ফিরে আসে।

জেইন ভাইদের স্কুলের বই সব পড়ত। সে সময় মেয়েদের স্কুলে মেয়েদের শুধু ফ্রেঞ্চ, রান্না, সেলাই ইত্যাদি শেখানো হতো, ছেলেদের আবার সব সাবজেক্ট পড়ানো হতো।

তাদের বাড়িতে সাহিত্য, রাজনীতি সব বিষয়ে আলোচনা হতো এবং পরিবেশটি ছিল ইজি-গোয়িং।

জেইনের বাবা, তার চার ভাই এবং বড় বোন ছিল তার লেখার বড় পাঠক। জেইন চারপাশ মনোযোগ দিয়ে শুনত এবং গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করত। তার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। এই দেখা ও শোনা তার লেখায় ফুটে উঠত। ভাইবোনেরা তার লেখা খুব উপভোগ করত।

তাছাড়া সে ছিল হাসিখুশি ও রসবোধসম্পন্ন একজন মানুষ। মজার ছলে লেখা এবং সেই লেখায় রাজনৈতিক ভাষ্য জুড়ে দেওয়া—এই ব্যাপারটি ছিল বেশ ইন্টারেস্টিং।

তার লেখা চিঠির  সংগ্রহ

তার চিঠি থেকে জানা যায় সে ছিল উচ্চাকাঙ্ক্ষী। শুধু ভাইবোনই তার পাঠক হোক, এমনটা সে চায়নি। ব্যাপক পাঠক গড়ে তোলার জন্য সে চেষ্টা শুরু করে।

সে বুঝে গিয়েছিল তার মধ্যে লেখক হওয়ার গুণ আছে এবং তাকে লেখক হতেই হবে। কিন্তু জর্জিয়ান ব্রিটেনে একজন নারী হিসেবে এই পথ ছিল কঠিন এবং সুযোগ ছিল সীমিত।

১৭৯০ সালের জর্জিয়ান ব্রিটেনে নারীর কোনো অধিকার ছিল না। নিজে সে যা চায়, তা পাওয়ার সুযোগও ছিল না। নারীর শিক্ষার সুযোগ ছিল কম, এবং তার প্রচলনও তেমন ছিল না।

সমাজে এবং পরিবারে আশা করা হতো, একটা মেয়ে বিয়ে করবে, বাচ্চাকাচ্চা হবে এবং তা প্রতিপালনের মধ্যেই তার জীবন কাটবে। ছোটবেলা থেকেই তাদের ট্রেনিং দেওয়া হতো একজন স্ত্রী হওয়ার জন্য। তার বাইরে কিছু ভাবারই সুযোগ ছিল না। মেয়ে মানেই তাকে গৃহের মধ্যে বাধ্য হয়ে থাকতে হবে, স্বামীর সেবা করতে হবে এবং তাকে মা হতেই হবে।

কিন্তু জেইন নিজেকে আবিষ্কার করল অন্যভাবে। পরিবারের সব সদস্যের সুখ কীসে, তা দেখা ও সেবা করার মাধ্যমে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া নয়—সে অন্যরকমভাবে জীবন কাটানোর কথা ভাবতে শুরু করল।

এই একই রকম চিরাচরিত গৎবাঁধা জীবন—জন্ম, বিয়ে আর অবশেষে মৃত্যু—এর মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে অন্য কিছু করার ইচ্ছা ছিল তার। যা সেই সময়ের সমাজের জন্য ছিল অত্যন্ত কঠিন।

১৭৯৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর: 

সেই সময়ের সাউথহ্যাম্পটন বন্দর

সে সময়ের সাউথহ্যাম্পটন। জেইনকে পাঠানো হল সাউথহ্যাম্পটনের কাছে একটি বন্দর এলাকায়, তার এক কাজিন এলিজাবেথের গর্ভাবস্থা ও শিশুজন্ম সংক্রান্ত বিষয়ে সাহায্য করার জন্য।

তখন সে ছিল একজন টিনএইজ গার্ল। এই বিষয়ে তার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। এর আগে চাইল্ড বার্থ বা সন্তান জন্মদানে সে কখনো সহায়তা করেনি।

সাউথহ্যাম্পটন ছিল একটি বন্দর এলাকা। নানা দেশের নানা বর্ণের মানুষ নানা ব্যবসায় লিপ্ত ছিল। বাইরের দেশ থেকে মালামাল আসত জাহাজে করে, আবার জাহাজেই যেত বিভিন্ন কিছু। চারদিকে ছিল ব্যস্ততা।

এই অভিজ্ঞতা তার লেখার উপকরণে পরিণত হয়। চারদিকে সে দেখে নানান ধরনের মানুষের পেশা, যা পরে তার গল্পে কাজে লাগে।

এরপর আসে বাচ্চা প্রসবের সময়টি। যা ছিল তার কাছে রীতিমতো ভয়ংকর। অসম্ভব ব্যথায় চিৎকার, প্রসব যন্ত্রণায় কাতর, চারদিকে বিভীষিকাময় রক্তরঞ্জিত দৃশ্য—

জেইনের কাছে মেয়েদের এই কষ্ট প্রকৃতির একটি কঠিনতম অধ্যায় বলে মনে হলো। এই বাস্তব চিত্র তার চোখের সামনে ঘটে যেতে দেখে তার মন আলোড়িত হয়ে ওঠে।

সে ভাবতে থাকে—যেহেতু সে নিজেও একজন মেয়ে, তবে তাকেও কি এই অবস্থার মধ্যে একদিন পড়তে হবে?

তার কাছে এটা মেয়েদের জন্য রীতিমতো একটি টর্চার! পুরোপুরিভাবে সে বিষয়টিকে গ্রহণ করতে পারেনি। তার বোনের কাছে লেখা একটি চিঠিতে এই excruciating মুহূর্তটি সে ব্যক্ত করে।

তার মতে, মেয়েদের জীবনে এটি এক ধরনের নিষ্ঠুরতা। জেইনের বোনের কাছে লেখা সমস্ত চিঠি সংগ্রহ করে তা বই আকারে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

জর্জিয়ান ইংল্যান্ডে একজন নারীর প্রসবকালীন সময় ছিল বিপদসংকুল। মা ও শিশুর মৃত্যুহার ছিল অত্যন্ত বেশি। প্রসবকালীন জটিলতায় মা ও শিশুর উভয়ের মৃত্যু একটি সাধারণ ব্যাপার ছিল।

জেইন অস্টেনের পরিবারের চারজন সদস্য মারা যান প্রসবকালে। যা তার চিঠি থেকেই জানা যায়।জেইন অস্টেনের জীবন চলার পথে সমাজে পদে পদে মেয়েদের হেনস্তা দৃষ্টিগোচর হয়।

১) মেয়েদের বাবার সম্পত্তি থেকে বাদ দেওয়া।

২) শুধুমাত্র মেয়ে থাকলে তাদেরকে সম্পত্তি দেওয়া যাবে না, একটি পুত্র চাই-ই।

৩) ছেলে স্কুলে যাওয়ার প্রাধান্য পায়, কিন্তু মেয়ে নয়।

৪) মেয়েদের স্কুলে পাঠ্যপুস্তক ও সিলেবাস ছেলেদের থেকে পৃথক।

৫) তাদের শুধু রান্নাবান্না, সেলাই, আর বাচ্চা দেখাশোনা শেখানো হয়।

৬) বিয়ের ব্যাপারে ছেলে এবং তার বাবা-মা নিজেদেরকে উঁচু ভাবেন এবং তাদের প্রাধান্যই গুরুত্বপূর্ণ হয়।

৭) একটি মেয়ের হাতে কোনো টাকা-পয়সা থাকে না। ফলে অর্থনৈতিকভাবে তারা থাকে ক্ষমতাহীন।

৮) মেয়েদের চাকরি করার সুযোগ ছিল না।

৯) বিয়ে হওয়া, বাচ্চা নেওয়া, বাল্যবিবাহ, জোরপূর্বক বিয়ে—এসব ছিল সাধারণ বিষয়।

১০) একজন পুরুষ, একজন নারীকে যে সম্মান দেওয়া উচিত—সম-অধিকার, সমান সুযোগ—এসবের কোনো চর্চা ছিল না।

জেইন অস্টেন তার বইগুলোতে এই সমস্যা তুলে ধরে সমাজকে পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন গল্পের মাধ্যমে।

চলবে

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.