| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী
"প্রত্যেক প্রাণীই মরণের স্বাদ ভোগ করবে ... এই পার্থিব জীবন কিছু বাহ্যিক ছলনার মাল সামানা ছাড়া আর কিছুই নয়।" {সূরা আল-ই-ইমরান, আয়াত ১৮৫} "সত্যিকার ঈমানদার ব্যক্তি হচ্ছে তারা, যারা আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসূলের ওপর ঈমান আনে, অতঃপর (আল্লাহ তায়ালার বিধানে) সামান্যতম সন্দেহও পোষণ করে না এবং জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে; এরাই হচ্ছে সত্যনিষ্ঠ।" {সূরা আল হুজুরাত, আয়াত ১৫}
গত পর্বের পর ...
ছাত্রজীবন অনাগত ভবিষ্যতে সাফল্যের বীজ বপনকাল, জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে নিজেকে যোগ্য নাগরিক রূপে গড়ে তোলার সময়, শরীর চর্চার মাধ্যমে নিজের মন ও শরীরকে বিকশিত করার সময়, সে মহামূল্যবান রত্নকে তারা হেলায় নষ্ট করছে। একটু অবসর পেলেই, এমনকি পড়ার টেবিলে বসে চুপিসারে মোবাইলে গেমস খেলায় মেতে উঠছে।
শুধু কি গেমস (?)। বর্তমান পাশ্চাত্য সভ্যতার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে আমরা গান-বাজনা যেমন হালাল করে নিয়েছি (নাঊযুবিল্লাহ), তেমনি গান-বাজনা শোনার সরঞ্জামের তেমন প্রয়োজনও হয় না। ঘটা করে রেডিও-ক্যাসেটের সামনে বসে সময় নষ্ট করার দরকার আজকের দিনে আর নেই। একটি সাদামাটা মোবাইল ফোন সাথে থাকলেই যথেষ্ট, পথ চলতে চলতেই গান শোনা যাবে। তবে এক্ষেত্রে মেমোরি কার্ড (Memory Card) নামের একটি বস্তু হ'লে আরো সুবিধা হয়। মাত্র ১৬৫ বর্গ মিলিমিটার আয়তনের (সীমকার্ডের চেয়েও ছোট) অতিক্ষুদ্র এ বস্তুটির তথ্য ধারণ ক্ষমতা এত বেশী যে, তা ভিসিডি ডিস্ককেও হার মানায়। এতে শত শত অডিও গান সংরক্ষণ করা যায়। এমনকি এটি একটানা চার ঘন্টা শব্দসহ ভিডিও চিত্র ধারণ করতে পারে। আর এই শক্তিশালী ক্ষুত্র বস্তুটি বর্তমানে অধিকাংশ মোবাইলে যুক্ত করার সুবিধা থাকায় মোবাইল আজ বাদ্যযন্ত্রে পরিণত হয়েছে। হাট-বাজারে, পথে-ঘাটে বের হ'লেই মোবাইল ফোন থেকে গান-বাজনার অশালীন সুর ভেসে আসে। যারা এভাবে রাস্তা-ঘাটে মোবাইলে গান বাজায়, তাদের অধিকাংশই তরুণ ছাত্র। গৃহ-পরিবেশেও গান শোনা বন্ধ নেই। পিতা-মাতার অগোচরে কানে এয়ারফোন ঢুকিয়ে একাকী ঘরে পড়ার টেবিলে গুণ গুণ শব্দ তুলে গান শুনছে অথচ পিতা-মাতা কক্ষের বাইরে থেকে মনে করছেন তার আদরের সন্তান হয়তো অধ্যয়নে নিমগ্ন। কিন্তু তাদের সন্তান যে গান-বাজনার মধ্যে ডুবে আছে তা তারা বুঝতেই পারছেন না।
এর সাথে আবার রয়েছে FM Radio। প্রতিটি মোবাইল ফোনে মেমোরি কার্ড সংযুক্ত করার সুযোগ না থাকলেও বর্তমানে প্রায় ৯০%-এর বেশী মোবাইল ফোনে রয়েছে রেডিওর প্রচার তরঙ্গে প্রচারিত অনুষ্ঠান শোনার সুবিধা। ফলে মোবাইল নামের এ যন্ত্রটি অনেকটা রেডিওর বিকল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারী বেতার কেন্দ্রগুলো ছাড়াও অসংখ্য বেসরকারী বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যারা FM প্রচার তরঙ্গে অনুষ্ঠান প্রচার করে। এদের দৈনিক কার্যক্রমের তিন-চতুর্থাংশ সময় জুড়ে থাকে বাংলা, হিন্দী, ইংরেজী গান। অনুরোধের মাধ্যমে এদের কাছ থেকে পসন্দের গান শোনা যায় বলে বর্তমানে এসব FM বেতারকেন্দ্র বেশ জনপ্রিয়। বিশেষতঃ যুব ও ছাত্র সমাজে এদের গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে বেশী।
এসব বেতার কেন্দ্র ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার সময় অনুরোধের ও পসন্দের গান প্রচার করে থাকে। গানের সাথে আবার রয়েছে কোকিল কণ্ঠী এক জোড়া যুবক-যুবতীর মনকাড়া উপস্থাপনা। ফলে ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়ার মূল্যবান সময়কে জলাঞ্জলি দিয়ে সেসব সংগীতানুষ্ঠান শোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছে।
মোবাইলের কর্মকান্ড শুধু গান-বাজানার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হয়তো এতটা শঙ্কিত হ'তে হ'ত না। কিন্তু এর মরণছোবল যে আজ মানুষের চরিত্রে অব্যাহত দংশন করে চলেছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের দরুন মোবাইল ফোনে ভিডিও সুবিধা যুক্ত হওয়ায় এ যন্ত্রটি অনেকটা পকেট টেলিভিশনে রূপ নিয়েছে। এতে করে মোবাইল সৎকাজে যতটা না ব্যবহৃত হচ্ছে, তার চেয়ে বহুগুণে ব্যবহৃত হচ্ছে চরিত্র বিধ্বংসী কাজে। বিভিন্ন অশ্লীল ভিডিও গান এমনকি টিভিতে প্রচার অযোগ্য সিনেমা মোবাইলে দেখা যাচ্ছে। মেমোরি কার্ডে ডাউনলোড করে মোবাইলের সাহায্যে অহরহ নীলছবি (Blue film) দেখা হচ্ছে! (নাঊযুবিল্লাহ)। এতে চরিত্র ধ্বংস হচ্ছে, ঘটছে শারীরিক অবক্ষয় আর গুনাহ হচ্ছে অপরিমেয়।
যে চরিত্র মানব জীবনের অমূল্য সম্পদ, যে সম্পদ একবার হারিয়ে গেলে কোন দিনই ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়, সে অমূল্য সম্পদ যে এই যন্ত্রের দ্বারা নিমেষে ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে তা কি কেউ কখনো খেয়াল করেছে? এর কারণে কিশোর ও যুবসমাজ আজ চরম হুমকির মুখে। সচেতন বিবেক নিশ্চয়ই জানে যে, কিশোরকালই (১২-১৬ বছর) চরিত্র গঠনের সময়। এ সময়ের সদ্ব্যবহার যেমন ভবিষ্যৎ সাফল্যের দ্বার উন্মোচন করতে পারে, তেমনি এ সময়ের অপব্যবহারের দরুন ভবিষ্যতে সীমাহীন দুর্ভোগেরও সম্মুখীন হ'তে হয়।
এখানেই শেষ নয়, এই যন্ত্রটি আজ প্রণয় যোগাযোগেরও দ্রুততম মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে এককভাবে শুধু মোবাইল নয়, দেশের মোবাইল নেটওয়ার্কগুলোও দায়ী। তাদের বিভিন্ন অফার যেমন নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা রিচার্জে এত শতাংশ বোনাস বা ফ্রি মিনিট, দিনের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে হ্রাসকৃত কলরেট, রাতের জন্য বিশেষ ছাড়, বিশেষ কয়েকটি নাম্বারে সার্বক্ষণিক কথা বলার জন্য সর্বনিম্ন কলরেট ইত্যাদি। আবার কোম্পানীর প্রচার ও প্রসারের জন্য কমমূল্যে বিভিন্ন সুবিধা সম্বলিত সিমকার্ড তো রয়েছেই। এমনিতে আমাদের দেশে সহশিক্ষা ব্যবস্থার কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের অবাধ মেলামেশার সুযোগ অবারিত. তারপরও মোবাইলে এতসব সুবিধা; সব মিলিয়ে মোবাইল ফোন যেন প্রণয়ালাপের অদ্বিতীয় মাধ্যম।
মোবাইলের মাধ্যমে না দেখেই শুধু কথা বলে অনেকের সাথে গড়ে উঠছে প্রেমের সম্পর্ক। এমনকি এভাবে একে অপরের সাথে 'মোবাইল প্রেম' করে ঘরও বাঁধছে। পরিণামে যা হবার তাই হচ্ছে। ঘর ভাঙছেও দ্রুত।
গৃহে পিতা-মাতার চোখ ফাঁকি দিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে লেখাপড়া বাদ দিয়ে সন্তর্পণে গভীর রাত পর্যন্ত কথা বলা, প্রত্যাশিত কোন কলের জন্য মোবাইল নীরব (Silent) রেখে অপেক্ষা করা যাতে কেউ টের না পায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবাসিক হোস্টেলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসকের ভয়ে টয়লেট-বাথরূমে ঢুকে কথা বলা ইত্যাদি ছাত্র-ছাত্রীদের পেশায় পরিণত হয়েছে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে- সব ছাত্র-ছাত্রী কি একাজে লিপ্ত? না, মোবাইল ব্যবহারকারী অপরিণামদর্শী কতিপয় ছাত্র-ছাত্রী একাজে লিপ্ত। তবে জোর দিয়ে বলা যেতে পারে যে, মোবাইল ব্যবহার করে অথচ একাজে সম্পৃক্ত নয় এমন ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যায় অনেক কম। একাজে একদিকে যেমন সময় ও অর্থ অপচয় হয়, তেমনি অপরদিকে বিভিন্ন সামাজিক বিশৃঙ্খলার জন্ম দেয়। আর চারিত্রিক অবক্ষয় যে ঘটছে তা তো বলাই বাহুল্য।
এতে সামাজিক বা আর্থিক কোন ক্ষতি না হ'লেও একাজ শরী'আত সমর্থিত নয়। ইসলাম মাহরাম ও স্বামী-স্ত্রী ব্যতীত পর নারী-পুরুষের সাথে দেখা করা নিষিদ্ধ করেছে। এমনকি ফিতনার আশঙ্কা থাকলে পর নারী-পুরুষে কথা বলা পর্যন্ত সমর্থন করেনি। তাহ'লে কিভাবে বেগানা নারী-পুরুষ ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইলে কথা-বার্তা, প্রেমালাপ চালাতে পারে?
ইতিমধ্যেই দেশের অনেক আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অভিভাবকগণ আপন আপন সন্তানের ওপর এ বিষয়ে সচেতন দৃষ্টি রাখলে তারা ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে পারবে। তবে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকদের চেষ্টা যথেষ্ট হবে না, এক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানীগুলোর উপর কঠোর আইন জারী করতে হবে যাতে তারা ১৮ বছরেরর কম বয়সী ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট সীমকার্ড বিক্রি করতে না পারে। তবে শুধু আইন করে কোন কাজ হবে না। এসব অপকর্ম থেকে বেঁচে থাকার অপরিহার্য পূর্বশর্ত হ'ল তাক্বওয়া তথা আল্লাহভীতি। কারণ তাক্বওয়া ছাড়া কোন কাজে সাফল্য অর্জন সহজ নয়। আল্লাহ তা'আলা আমাদের তাক্বওয়া সহকারে কার্যকরী পদক্ষেপ অবণম্বনের মাধ্যমে মোবাইল ফোনের এই বিভীষিকা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!!
~~~ সমাপ্ত ~~~
রচনাঃ
আসীফ রেজা
নওদাপাড়া মাদরাসা,
সপুরা, রাজশাহী।
১৮ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১২:৪০
মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী বলেছেন: -
একমত প্রকাশ করছি ভাই আপনার সাথে ... ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই অক্টোবর, ২০১১ সকাল ১১:৪৬
অচিন্ত্য বলেছেন: দুর্গন্ধ আসবে বলে জানালা বন্ধ রাখলে ঘরে আলো বাতাসের অভাব হয়/ইসলামের সাথে যখন সন্ত্রাসের সম্পর্ক দেখানোর জন্য পশ্চিমের মিডিয়া সোচ্চার, তখন আমরা সহযেই বুঝতে পারি যে সন্ত্রাসের সাথে যদি কেউ যুক্ত থাকে সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়/এর সাথে ইসলামের সম্পর্ক নেই/একইভাবে প্রযুক্তিকে কিভাবে ব্যবহার করা হবে সেটা নির্ভর করে ব্যবহারকারীর নৈতিক শিক্ষার উপর/প্রযুক্তির উপর নয়/আমি একজনের কথা জানি যিনি তার কম্পিউটার থেকে শুরু করে মোবাইল ফোন সব জায়গায় তার ধর্মীয় ম্যাটেরিয়েল রেখেছেন/দোষ বা গুন প্রযুক্তির না/ব্যবহারকারীর/কাজেই ছোটদের উপর আস্থা না হারিয়ে তাদেরকে সঠিক পথে চালনার জন্য ভেতর থেকে প্রেরণ দিতে হবে/সেই প্রেরনায় ঘাটতি থাকলে যেখানে প্রযুক্তির সুবিধা নেই সেখানে ও কোন না কোন উপায়ে সে অনৈতিক কাজের সাথে যুক্ত হবেই/আর সেই জায়গাটা শক্তিশালী হলে প্রযুক্তির ভীড়ে বসে ও সে নৈতিকতার হাল ধরে থাকবে