![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কলেজ শেষে সপ্তাহে তিন দিন আমি আমার প্রিয় বাবাকে দেখতে যাই।হাসপাতালের রুমে বাবা অজ্ঞান অবস্থায় শুয়ে আছেন।মর্মস্পর্শী দুর্ঘটনার পর বাবাকে এ আশঙ্কাজনক অবস্থা দেখে আমার মন খুবই খারাপ হয়।হাসপাতাল চত্বরের চারিদিকে একবার দুই চোখ ঘুরিয়ে দেখি।ছেলেমেয়েরা তাদের মা-বাবার সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছে।মাত্র ছয় মাস আগে একটা দানব গাড়ি, ইয়া বড় বড় চাকার গর্জনে মাটি কাঁপিয়ে ব্যাঘ্র দর্পে ছুটে এসে আমার বাবাকে প্রচন্ড ধাক্কা দিয়ে জেবরা ক্রসিং এর ওপর ফেলে দিল।কয়েক গজ দূরে বাসা। অতি নিকটে এসেও সেদিন বাবা বাসায় ফিরতে পারেননি।সেই স্মৃতি মনে জাগতেই আমার দুই চোখ জলে ভরে যায়।
মস্তিষ্কের আঘাত থেকে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে।বাবা ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন।বজ্রাহত হয়ে বাবার দিকে স্থির দৃষ্টিতে আমি তাকিয়ে আছি।বাবার জেগে ওঠার সম্ভাবনা ডাক্তার নাকচ করে দিয়েছেন।মনে হচ্ছে বাবা বিছানায় ঘুমিয়ে আছেন, দুর্বল কিন্তু প্রশান্ত।আগে কখনও বাবাকে এত ঘুমাতে দেখিনি।রাত দিন খেটে আমাদের জন্যে আহার যোগাড় করেছেন। এক দন্ড বিশ্রাম পাননি।তাই বোধহয় আজ বাবা অভিমান করে স্থির হয়ে আছেন।তিনি আমাকে আর কখনও ডাকবেননা, কখনও আমার সঙ্গে বিকেল বেলা গল্প করবেননা—ভাবতে খুব কষ্ট হচ্ছে।আমার কাছে সবসময়ই তিনি অসাধারণ।
‘বাবা, তুমি আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসো।তুমি জাননা আমি তোমাকে কত ভালবাসি। আমি তোমার সব কথা শুনবো, বাজারের থলি ধরে তোমার সঙ্গে বাজারে যাব, সাইকেলের বায়না ধরবনা, পরের মাসের পরের মাস মাইনে পেলে কিনে দিও, কম্পিউটারে সময় অপচয় করবনা।বাবা, আমি ট্র্যাফিক আইন মেনে চলব, কারও বাবাকে আঘাত করবনা।’
আমার দুই চোখের কার্ণিশ বেয়ে ঝরছে অজস্র অশ্রুধারা।
©somewhere in net ltd.