![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তৃতীয় ধরণের পাগল হল সেয়ানা পাগল। এটা সবচেয়ে কঠিন ধরণের পাগলামি। এই পাগল কি সুস্থ না অসুস্থ সেটা বোঝা খুব কঠিন। যখন সে পাগলামি করছে তখন তার কাজকারবার হবে সুস্থ মানুষের মতো। জটিল সব যুক্তি দিয়ে সে তার পাগলামি প্রতিষ্ঠিত করবে। আবার যখন সে সুস্থ থাকবে তখন তার চিন্তা ভাবনা হবে পাগলের মতো। অফিসে এবং বাসায় নিয়মিত ভাবে আমি এই পাগলের ভূমিকায় অভিনয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার কাছে ভালোই লাগে। শুধু মাঝে মধ্যে আমার মাথার মধ্যে জ্যোৎস্না ঢুকে পড়ে। তখন খুব অস্থির লাগে। কেন লাগে জানি না। আপনারা কেউ কি জানেন?
বব হ্যারিস, এক সময়ের বিখ্যাত অভিনেতা, বয়সটা এখন একটু ধরে এসেছে, কিন্তু তাতে তাঁর জনপ্রিয়তা কিছু কমেনি। সম্প্রতি জাপানের বিখ্যাত সান্টোরি হুইস্কির ব্রান্ড এম্বাসেডর হয়ে বব হ্যারিস টোকিওতে এসেছেন। কাজের শুরুতেই তিনি ধাক্কা খেলেন ভাষার কাছে। অবশ্য তাঁর দীর্ঘ পেশাদারী অভিনয় জীবনের অভিজ্ঞতার কাছে মার খেলো ভাষার দূরত্ব। অচিরেই তাঁর খুব ব্যস্ত সময় কাটতে লাগলো সান্টোরি হুইস্কির বিজ্ঞাপন এবং খ্যাতির বিড়ম্বনা সামলাতে সামলাতে।
ক্যারিয়ারের মতো বব হ্যারিসের সংসার জীবনও দীর্ঘ। ঠিক যে সময়টায় এসে মানুষ মিড লাইফ ক্রাইসিসে পড়ে বব এখন ঠিক সেই সময়টাই পার করছেন। সারাদিনের কাজের ঝামেলা পার করে হোটেলে ফিরে তিনি যখন সেই সুদূর আমেরিকা থেকে স্ত্রীর ফ্যাক্স পান তখন তাঁর চোখে মুখে ফুটে ওঠে এক রাশ হতাশা – তিনি এই বছরও তাঁর ছেলের জন্মদিনের কথা ভুলে গেছেন। এবং তাঁর স্ত্রী সেটা তাঁকে মনে করিয়ে দিতে ভোলেন নি।
জাপানের অচেনা পরিবেশে বিষণ্ণতায় ভুগতে থাকা বব হ্যারিসের সাথে হোটেলের বারে একদিন দেখা হয়ে গেল অপূর্ব সুন্দরী শার্লটের সাথে। শার্লট জাপানের এসেছে তাঁর ওয়ার্কোহলিক বরের সাথে, যে পেশায় একজন ফটোগ্রাফার। দু বছর হয়েছে তাদের বিয়ে হয়েছে। শুরুতে সময়টা খুব ভালো কাটলেও এখন খুব বাজে একটা সময় পার করতে হচ্ছে শার্লটকে। তাঁর বর সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকলেও শার্লটের হাতে করার মতো কোন কাজ নেই। বন্ধু বান্ধবহীন এই ভিন দেশে একা একা রাস্তাঘাটে হেঁটে আর সুপারমলে ঘুরে ঘুরে তাঁর সময় কিছুতেই কাটছে না। এছাড়াও তাঁর অনিদ্রার রোগ আছে। একা একা থেকে তাঁর সমস্যাটা বেড়েছে।
বিদেশ বিভূঁইতে পা রাখলেই নিজের ভাষায় দুটো কথা বলার জন্য মন আঁকুপাঁকু করে। তাঁর ওপর বব হ্যারিস আর শার্লট দুজনই নিঃসঙ্গতায় ভুগছিলো। ফলে সামান্য পরিচয়ের পরই তাদের মধ্যে চমৎকার একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো। এরপর দুজনে মিলে জাপানের অলিগলি আর ক্লাব চষে বেড়াতে লাগলো। শুরুতে জাপানের ভিন্নতর সংস্কৃতি আর অচেনা মানুষের ভিড় বব আর শার্লট দুই জনের কাছেই অসম্ভব বাজে আর বিরক্তিকর লাগছিল। অথচ দুই জনের মধ্যে যখন পরিচয় হয়ে গেল তখন সেই বিষয়গুলোই তাদের কাছে ধরা পড়লো প্রবল আনন্দ আর কৌতূহলের অনুষঙ্গ হয়ে। এলোমেলো ঘোরাফেরা আর পরস্পরের ব্যক্তিগত জীবনের গল্প ভাগাভাগি করার ফাঁকে মিড লাইফ ক্রাইসিসে ভোগা বব আর বিবাহিত জীবন নিয়ে শঙ্কিত শার্লট মনের কোন সূক্ষ্ম অনুভূতির কাছে বাঁধা পড়ে গিয়েছিল সেটা সিনেমার শেষে এসে রহস্যাবৃতই থেকে গেল।
সোফিয়া কাপ্পোলার গল্প এবং পরিচালনায় সুন্দর একটা সিনেমা এই Lost in Translation। অত্যন্ত ব্যবসাসফল এই সিনেমায় বব হ্যারিসের চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন Bill Murray. আর শার্লটের চরিত্রে রূপদান করেছেন স্কারলেট জোহান্সন। সিনেমার গল্পের প্রয়োজনেই এর দৃশ্যায়ন করা হয়েছে টোকিওতে। অবশ্য টোকিওতে সিনেমার দৃশ্যধারণ করার পেছনে উদ্দেশ্য ছিল মূলত বব হ্যারিস আর শার্লটের জীবনের নিঃসঙ্গতার বিষয়টাকে ফোকাসে নিয়ে আসা। অসাধারণ এই গল্পটাকে বড়পর্দায় ফুটিয়ে তোলার জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজটা ছিল অভিব্যক্তির মাধ্যমে মনের অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করতে পারাটা। বলতেই হচ্ছে এই দুরূহ কাজটাই সফলভাবে তুলে ধরেছেন Bill Murray আর স্কারলেট জোহান্সন।
সিনেমার নাম Lost in Translation হল কেন সেটা নিয়ে ও মজার তথ্য আছে। বব হ্যারিস যখন তাঁর সান্টোরি হুইস্কির বিজ্ঞাপন বানানোর ফটোশুটে যান, তখন এক জাপানী পরিচালক তাঁকে কিছু নির্দেশনা দেন। সেটা জাপানী ভাষাতেই। বব হ্যারিসকে পরিচালকের কথাগুলো জাপানী থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করে দিচ্ছিলেন একজন অনুবাদক। কিন্তু অনুবাদের সময় আসল কথাগুলোই হারিয়ে গেল। ইচ্ছাকৃতভাবেই সেই কথাগুলোর কোন অনুবাদ সাবটাইটেলে দেয়া হয়নি। সিনেমার মূল গল্পটা এটাই। বব হ্যারিসের জীবনের কিছু অংশ হারিয়ে গেছে, আবার শার্লটের জীবন থেকেও হারিয়ে গেল। কিন্তু তাদের গেছে যে দিন একেবারেই কি গেছে, কিছুই কি নেই বাকি ?
বাকি আছে কি নেই সেটা বুঝতে হলে সিনেমাটা দেখতে হবে। শুধু দেখলেই হবে না, সেটা বুঝতে পারার মতো মানসিক পরিপক্বতাও থাকতে হবে। নাহলে ভালো লাগবে না। আশা করি এই সিনেমাটা দেখেছে এমন কারো সাথে একদিন দেখা হবে। কথা হবে।
সিনেমাটা নিয়ে আরও অনেক গল্প করা যেতো। কিন্তু এই মুহূর্তে কথা বলার মতো কাউকেই পাওয়া গেল না। কারণ সিনেমাটা কেউ দেখেছে এমন কাউকে পেলাম না। আমি সিনেমাটা দেখেছিলাম প্রায় বছর চারেক আগে। তখনও এক হিসেবে অনেক কিছু বোঝার মতো অভিজ্ঞ হয়ে উঠি নি। এবার সিনেমাটা দেখে অন্য রকম একটা অনুভূতি হল। অনুভূতি শেয়ার করা গেল না, যায়ও না কখনো। তবু এই সিনেমাটার ট্যাগ লাইনটার মতো বলতেই হয় – Everyone wants to be found.
So, do I.
আমার অন্যান্য রিভিউগুলোঃ
১) মুভি রিভিউঃ “π”
২) মুভি রিভিউঃ The Lunchbox
৩)মুভি রিভিউঃ Dead Poets Society
৪)মুভি রিভিউঃ Three Colors Trilogy
১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:১৮
নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৫২
কোলড বলেছেন: Very good review. You captured the essence of this low key movie. Some movie you watch and for some reasons the resonance stays with you for a long time.
১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:২০
নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: চমৎকার একটা কথা বলেছেন। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৩১
ডা: শরীফুল ইসলাম বলেছেন: ভালো লাগল +++++