নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি চেষ্টা করি নতুন কিছু শেখার, ভালো কিছু করার, আর নিজে যা জানি তা অন্যকে উদারভাবে শেখানোর যদি কেউ শিখতে চায়।

নয়া পাঠক

আমি এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনুজীবন, যে সর্বদা কিছু শিখতে উদগ্রীব, চষে বেড়াই চারপাশে, নতুন কি কি আছে!

নয়া পাঠক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া এক বাড়ি

০৪ ঠা জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:০৮




বাংলাদেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে ছিলো এক পুরানো বাড়ি। নাম ছিলো "অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া বাড়ি"। কথিত ছিলো, সেই বাড়িতে অনেক বছর আগে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছিলো। দুর্ঘটনার পরে কেউ আর সেখানে বাস করতে সাহস পায়নি।

বাড়িটি একটি ঘন জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত ছিলো। দিনের বেলায়ও সূর্যের আলো সেভাবে পৌঁছাতো না। গাছের পাতার ছায়ায় সবসময় ম্লান আলো থাকতো। গ্রামের মানুষ বিশ্বাস করতো, সন্ধ্যার পর সেই বাড়িতে কিছু একটা ঘটে যা মানুষকে পাগল করে দেয়।

তরুণ সাংবাদিক রাজীব সেই বাড়ি সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছিলো। সে ভাবলো, এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন লিখবে। রাজীব বিশ্বাস করতো না ভূতের কাহিনী, কিন্তু এই অদ্ভুত ঘটনার পেছনে কি লুকিয়ে আছে তা জানার জন্য সে আগ্রহী ছিলো। এক সন্ধ্যায় সে গ্রামে এসে পৌঁছালো এবং গ্রামের প্রবীণদের সাথে কথা বলতে শুরু করলো। প্রবীণরা রাজীবকে সেই বাড়িতে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করলো। কিন্তু রাজীব তাদের কথায় কর্ণপাত না করে সিদ্ধান্ত নিলো, সে রাতে সেই বাড়িতে কাটাবে।

বাড়িটির দিকে এগিয়ে যাওয়া শুরু করলো রাজীব। গাছের পাতায় বাতাসের সুর শুনতে পেলো, মনে হচ্ছিলো যেন কেউ ফিসফিস করে কিছু বলছে। বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালে, তার শরীর শীতল হয়ে গেলো। কিন্তু সে ভয়কে উপেক্ষা করে বাড়ির দরজা খুললো।

বাড়ির ভিতর ঢুকে সে দেখলো, আসবাবপত্রগুলো জীর্ণ-শীর্ণ, মাকড়সার জাল ভরে গেছে। রাজীবের কাছে একটা অদ্ভুত গন্ধ আসছিলো, যা অনেক পুরনো কিছু পোড়া কাঠের গন্ধের মত। সে একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে ঘরের সবকিছু দেখতে লাগলো।

একসময় সে দেখতে পেলো, বাড়ির ভেতরে একটা পুরনো ডায়েরি। ডায়েরিটি খুলে পড়তে শুরু করলো। সেখানে লেখা ছিলো, বাড়ির একমাত্র উত্তরাধিকারী রিনা সম্পর্কে। রিনা ছিলো খুব মিষ্টি আর দয়ালু মেয়ে। কিন্তু একদিন হঠাৎ করে রিনার বাবা-মা উধাও হয়ে গেলেন। সেই থেকে রিনা পাগল হয়ে গিয়েছিল। গ্রামের মানুষ বলতো, রিনা প্রতিদিন রাতে কাঁদতো আর বলতো, “তারা ফিরে আসবেনা।”

রাজীব ডায়েরির পাতা উল্টাতে উল্টাতে একটা জায়গায় এসে থেমে গেলো। সেখানে লেখা ছিলো, রিনা নিজেকে একটি বড় আয়নায় দেখতে পেতো, কিন্তু আয়নার ভিতরে তাকে কেউ একটা চেয়ে দেখতো। রাজীবের শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলো। ঠিক তখনই সে এক অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেলো, যেন কেউ হেঁটে আসছে।

রাজীব মোমবাতির আলোতে দেখলো, একটা ছায়া ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসছে। সে ভয়ে কেঁপে উঠলো। হঠাৎ করে মোমবাতির আলো নিভে গেলো। পুরো ঘর অন্ধকারে ঢেকে গেলো। রাজীব তার টর্চলাইট বের করে জ্বালাতে চেষ্টা করলো, কিন্তু টর্চলাইটটা কাজ করছিলো না।

তার মনে হলো, কেউ তার গায়ের উপর হাত রেখে তাকে ছুঁতে চাইছে। সে চিৎকার করে উঠলো। ঠিক তখনি একটা ঠাণ্ডা বাতাস এসে রাজীবকে ঠেলে ফেলে দিলো। রাজীবের শরীর জমে গেলো। সে অনুভব করলো, কেউ তার পায়ের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। সে সাহস করে চোখ খুললো।

একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো, তার চোখ দিয়ে রক্ত ঝরছিলো। মেয়েটি ফিসফিস করে বললো, “তারা ফিরে আসবে না, তুমি ফিরে যাও।” রাজীবের হৃদপিণ্ড দ্রুত ধুকপুক করছিলো। মেয়েটি ধীরে ধীরে তার মুখের কাছে আসছিলো।

রাজীব কোনো রকমে উঠে দৌড়াতে শুরু করলো। বাড়ি থেকে বের হয়ে এসে দেখলো, চারদিকে কুয়াশা। সে দিশাহারা হয়ে দৌড়াতে লাগলো। জঙ্গলের মধ্য দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে সে পিছনে চেয়ে দেখলো, মেয়েটি তাকে অনুসরণ করছে।

অনেকক্ষণ পর রাজীব গ্রামের দিকে ফিরে আসলো। গ্রামের প্রবীণরা তাকে দেখে আতঙ্কিত হয়ে উঠলো। রাজীবের শরীর শীতল হয়ে গিয়েছিলো, চোখগুলো ফাঁকা হয়ে গিয়েছিলো। সে শুধু বলতে পারছিলো, “তারা ফিরে আসবে না, তারা ফিরে আসবে না।”

সেই রাতের পর থেকে রাজীব আর আগের মত ছিলো না। সে অনেক চেষ্টা করেও সেই অভিজ্ঞতা ভুলতে পারেনি। গ্রামবাসী তাকে দেখতে আসতো, কিন্তু রাজীব কারো সাথে কথা বলতো না। শুধু একা একা বসে থাকতো আর চোখে মুখে সেই ভয়াবহ ঘটনার ছাপ থাকতো।

গল্পের শেষে রাজীবের জীবন হয়ে উঠেছিলো এক ভয়ংকর অভিশাপের মত। সেই অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া বাড়ি গ্রামে আজও আছে, কিন্তু কেউ আর সেখানে যেতে সাহস করে না। কারণ তারা জানে, সেখানে কিছু একটা আছে যা মানুষকে পাগল করে দেয়।

এই ঘটনাটি গ্রামের লোকেদের মনে গভীর দাগ কেটে রেখেছিলো। তারা বিশ্বাস করতো, কিছু জায়গায় এমন কিছু আছে যা মানুষের বোধগম্যতার বাইরে। আর সেই অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া বাড়ি ছিলো তার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ


ছবিসূত্র: Click This Link

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:৩০

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: কোথায় এটা। ঘটনা সত্যি নাকি

গল্প হলে সুন্দর হয়েছে লিখা

০৪ ঠা জুলাই, ২০২৪ সকাল ১১:১০

নয়া পাঠক বলেছেন: ধন্যবাদ আপু, ঘটনা সত্য কিনা জানি না, তবে এটা সম্পূর্ণ কল্পনা থেকে লেখা, মনে হয় বাস্তব হলেও হতে পারে। এটি আসলে একটি রূপক কাহিনী।
ধন্যবাদ লাইক এবং মন্তব্যের জন্য।

২| ০৪ ঠা জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:৫২

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: মজার আবার ভয়েরও।

০৪ ঠা জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:৫৬

নয়া পাঠক বলেছেন: ধন্যবাদ মাইদুল ভাইয়া, আপনার মজা ও ভয় দুটোই পাওয়ার জন্য। আমার প্রত্যাশা এটাই ছিল।

৩| ০৪ ঠা জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৪:১৭

শাওন আহমাদ বলেছেন: ভালোই লাগলো পড়তে।

০৪ ঠা জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:৩১

নয়া পাঠক বলেছেন: ধন্যবাদ শাওন ভাইয়া, সুন্দর কমেন্টের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.