![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গরীব হয়ে জন্ম নেয়াটা বড় অভিশাপ। আর জন্মের পর মা বাবা তাদের সন্তানকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানানোর স্বপ্ন দেখাটাও অতি হাস্যকর বটে। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য যেটুকু খরচ লাগে ঐ পরিবারের পক্ষে কোনভাবেই যোগার করা সম্ভব হয় না। নুন আনতে যার পান্তা ফুরায় তার আবার ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার! একটু বড় হয়ে আমার মায়ের মুখে একটাই কথা শুনতাম সব সময়, তোকে অনেক বড় হতে হবে। অশিক্ষিত অসুস্থ মানসিক ভারসাম্যহীন প্রিয় বাবা ও হয়ত চাইতেন কিন্তু তিনি কখনো বলতে পারেননি। বড় ভাইয়ের উপার্জনে কোন রকম দিন চলে যাচ্ছিল। তিন ভাই আর এক বোনের মধ্যে আমি ছিলাম তৃতীয়। পরিবারে সবার ছোট ছিল আমার আদুরের বোন ।
বয়স যখন ছয় তখন আমি আমাদের গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হই। আমার স্কুলের সঙ্গী বলতে তখন কেউ ছিলনা। জীবনে কিছু করতে পারছি না পারছি একজনকে আমার মনটা ভালভাবেই সপে দিয়েছিলাম। যতটুকু মনে পড়ে ধীরে ধীরে বড় হওয়ার সাথে সাথে মনের মাঝে বাসা বাধতে থাকে আমার পাশের বাড়ির শ্যামলা মেয়েটি। শ্যামলা বললাম কেন? হুম…. ও শ্যামলাই ছিল। শ্যামলা হলে কি হবে, ওর মাঝে কিছূ একটা ছিল যার ফলে যে কাউকে খূব সহজেই ঘায়েল করত পারত। দেখতে খুবই আকর্ষনীয় ছিল বটে। বাজারে ওর বাবার দোকান ছিল। মোটামুটি বড়লোক বলা যায় ওদের, প্রচুর ধানী জমি, পুকুর, গোয়াল ভরা গরু সবই ছিল ওদের।
তথন যে বয়স, এতকিছূ বুঝিনি। তখন সেই ছিল আমার একমাত্র খেলার সাথী। তবে বেশী দিন নয়। আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমি যখন ক্লাশ থ্রিতে পড়ি তখন আমার সাথে লুকুচুরি খেলার অপরাধে ওর মা ওকে অনেক মেরেছিল।আর আমাকে ওর সাথে মিশতে বারন করছিল। যাই হোক, তবু আমাদের বন্ধুত্বটা শেষ হয়ে যায়নি। স্কুলের প্রায় পুরোটা সময়ই ওর সাথে কাটাতাম। দেখতে দেখতে সুন্দর দিনগুলো শেষ হয়ে যাচ্চিল। সামনে ৫ম শ্রেনীর সমাপনী পরীক্ষ। ভালভাবেই পরীক্ষা দিলাম। আমার কষ্ট হচ্ছিল এই ভেবে, আমি বুঝতে পারছিলাম পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে আমি আমার প্রিয় সাথীটিকে হারাব। পরীক্ষার পর আবারও বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করলাম। তারপর অবসর। সময় কাটতে চাইতো না। কল্পনার মায়ের ভয়ে আমি ওর বাড়িতেও যেতাম না।
গরীব হয়েছি বটে, কিন্তু কেন জানি উপরওয়ালা আমার মাথায় একটু বেশীই মগজ দিয়েছিল। প্রাইমারী স্কুলের ক্লাশ ওয়ান থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত আমার ক্লাশে কাউকে ফাস্ট হতে দেইনি। গ্রামের সবার কাছ থেকে এজন্য প্রশংসা শুনতাম সব সময়। ৫ম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি, ৮ম শ্রেণীতে বৃত্তি, এসএসসি তে জিপিএ ৫.০০।
মাধ্যমিক বিদ্যালয় আমাদের গ্রাম থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দুরে ছিল। আমার স্কুলের প্রায় সবাই ঐ স্কুলে ভর্তি হয়ে গেছে। তখনও আমার কোন খবর নাই। আমার গরীব পরিবারে আমাকে হাইস্কুলে পড়ানোর মতই সামর্থ্য নেই, তাও আবার মিছিমিছি ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন দেখে। অবশেষে সবার পরে আমি ভর্তি হতে পেরেছিলাম। আমার পরে ক্লাশ রুল আর কারও ছিলনা। আমার অবশ্য অনেক ভালই লাগছিল কারন ঐ স্কুলে আমার প্রিয় সাখীও ছিল।
কিছূ দিনের ব্যবধানে কল্পনা অনেক পাল্টে গেল। আমার অনুপস্থিতে এত দিনে ওর নতুন বন্ধূ হয়ে গেছে। একটা দুটো নয়, ওর এখন অনেক বন্ধু। ওর সামনে যেতে আমার কেমন জানি লজ্জা লাগত। নিজেকে অনেক হীন মনে হত। আমার পোশাক, পায়ের সেন্ডেল সব কিছুর দিকে থাকালে নিজেকে আমার এতটাই ছোট মনে হত যেন পালিয়ে যাই সবার কাছ থেকে। ওর সাথে আমার আগের সম্পর্কটা নেই্। সময়ের ব্যবধানে অনেকটাই পাল্টে গেছেম কল্পনা। এভাবে চলে গেল আরও একটি বছর। ক্লাশের ফাস্ট হয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলাম। স্কুলের টিচাররা আমার মেধা দেখে বেতন মওকুপ করে দিলেন। প্রথম হওয়ার পর সবাই একটু একটু করে আমার সাথে মিশতে শুরু করল। কল্পনার সবচেয়ে প্রিয় যে বন্ধুটি ছিল রুমেল, তার সাথেও আমার একটা ভাল সম্পর্ক তৈরী হয়ে যায়। ক্লাশে আমার পরে রুমেলের মেধাস্থান ছিল। ধীরে ধীরে রুমেল আমার প্রিয় বন্ধু হয়ে যায়।
পরে জানতে পারলাম আমার কল্পানার কল্পনা রুমেলের সাথে প্রেম করে। ওদের মাঝে একটা ভালভাসার সম্পর্ক তৈরী হয়ে যায়। আমি বরান করতে পরিনি। মনে মনে খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। নিজের মনের মানুষটা অন্যের সাখে সম্পর্ক করলে কার না কষ্ট হয়?
যা্ই হোক, রুমেল আমার পরিচয়ে কল্পনার বাড়িতে আসা যাওয়া করত। রুমেলের গ্রাম ছিল আমাদের স্কুলের পরের গ্রাম। আমিও কল্পনার বাড়িতে যাওয়া আসা করতাম। ততদিনে কল্পনার মা কেন জানি আমার প্রতি মায়ার দৃষ্টিতে থাকাতেন। হয়ত আমি ওনার মেয়ের ক্লাসে প্রথম ছিলাম বলেই ভাল ব্যবহার করতেন।
দিন চলে যায়, এভাবেই এসএসসি পরীক্ষা দেই। যে যার মত হারিয়ে যাই আবারো। এসএসসির পর কল্পনার বাড়িতে কারনে অকারনে যাওয়া আসা করতাম। একনজর দেখার জন্য মনটা কেমন ছটফট করত। আমি জানতাম, ও আমাকে ভালবাসত না। আমি জানতাম, ওর মনে আমার স্থান নেই। আমি জানতাম, কল্পনা রুমেলকে ভালবাসে।
তবুও আমি ওকে ভালবাসতাম্। আমার দ্বারিদ্রতা ওকে আমার কাছ থেকে দুরে নিয়ে যায়। আমি আজো বলতে পারিনি, কল্পনা আমি তোকে ভালবাসি। আমার হৃদয়টা কেটে দেখ, কত কষ্ট জমিয়ে রেখেছি। তুই যথন রুমেলের সাথে কথা বলিস, আমার হৃদয়ে কতটা ক্ষতের সৃষ্টি করে একবার দেখ। যদি তুমি বুঝতে, আমার হৃদয়ে তোকে কোথায় বসিয়েছি, যদি একবার জানতে, তোর জন্য আমি মরতে পারি, তোর সুখের জন্য্ আমি আমার শেষ রক্ত বিন্দুটুকু দিতে পারি। তবে তুমি আমাকে এত যন্ত্রণা দিতে না যদি তুমি জানতে। আমি চিৎকার করে বলতে চাই তোমায়, আমি তোমায় অনেক অনেক ভালবাসি। কিন্তু, আমার ভয় আমার দ্বারিদ্রতা।
তারপর……
কেটে গেল জীবনের অনেকটা বছর, লেখা পড়াটা ঠিকভাবে করতে পারনি। আমার কল্পনা কল্পনাতেই রয়ে গেল। নিজের এতটাই পরিবর্তৃন হয়ে গেল একটা ভার্সিটিতেও পড়ার সুযোগ হয়নি। সময় পেলে পুরোটা লিখব অন্যদিন।
(ভাল লাগলে লাইক করতে ভুলনা, আর তোমার বন্ধুদের জানাতে শেয়ার কর)
নাজমুল হাসান রুবেল
ঢাকা, বাংলাদেশ
প্রথম প্রকাশঃ ১৩ জুন ২০১৪ ফেসবুকের মাধ্যমে।
২| ১৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:১৯
আহসানের ব্লগ বলেছেন: এই লেখা লেখির একটি অনবদ্য জগতে আপনাকে স্বাগতম,
ভালো থাকবেন,
লিখবেন,
পড়বেন
এবং মন্তব্য করে অন্য লেখক দের উৎসাহিত করবেন।
৩| ১৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১:৫৪
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
ভালবাসা স্বর্গীয় ব্যাপার। ভালবাসার স্বর্গীয় ছোয়ায় ধন্য হোক আপনার জীবন।
হ্যাপী ব্লগিং ।
২০ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:১২
নাজমুল হাসান রুবেল বলেছেন: ধন্যবাদ আহসান ভাইয়া, উৎসাহ না পেলে একজন ভাল লেখকের পরের লিখা গুলো লেখতে ইচ্ছা করে এত কোন সন্দেহ নেই। আমি চেষ্টা করব সবসময় এই লেখালেখির জগতে বিচরণ করতে।
২০ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:১৬
নাজমুল হাসান রুবেল বলেছেন: ভালবাসা স্বর্গীয় ব্যাপার। আসলেই ভালবাসা সম্পূর্ণ স্বর্গীয় ব্যাপার... অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য, সেলিম আনোয়ার ভাইয়া
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৫:২৪
মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম।