![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার একদিন আমাকে বললেন, নাজ তোমার নিজস্ব আদর্শ থাকা সত্ত্বেও সাহিত্যের এমন কোন শাখা নাই তুমি বিচরন করো না। তোমার আর্দশের মানুষগুলো কট্টরপন্থি হয়। তুমি তা নও। আমি বললাম, বড় হয়েছে আপনার মোটো "আলোকিত মানুষ চাই" আব্বার মুখে এই কথা শুনে। পাঠ্যপুস্তক ব্যতিত আব্দুস শহীদ নাসিম আংকেলের বই, "সবার আগে নিজেকে গড়ো" দিয়ে আমার বই পড়া শুরু হয়। তসলিমা, লেলিন, স্ট্যালিনদের বই আব্বা নিজে কিনে দিতেন।
স্যার কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন তোমার বাবাকে আমার শ্রদ্ধা জানাবে। আচ্ছা আরেকটা কথা বলি, বেগম জিয়াকে আমি খুব ভালো করেই জানি। উনি আমাকে বেশ শ্রদ্ধা করে। হুমায়ুনকে তিনি কোন চোখে দেখে? আমি বললাম স্যার আমার চেয়ে আপনি এটা বেশি ভালো করেই জানেন। স্যার জিয়াউর রহমানের সময় আপনি বিটিভির মহাপরিচালক ছিলেন। আমার জন্মও হয়নি তখন। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ উদ্বোধন প্রোগ্রামের দায়িত্ব খালেদা জিয়া আপনাকে দিয়েছিল। স্যার আপনার কি মনে আছে, দিদা সেদিন আপনাকে বলেছিল, স্যার স্কীডগুলো( ছোট নাটিকা) হুমায়ুন সাহেবকে দিয়ে লেখাবেন। সায়ীদ স্যার একটু অবাক হয়ে বললেন, তুমি এসব জানো কি করে? আমি বললাম স্যার আমি যেহেতু উনার পার্সোনাল আইটি কাজগুলো করি। সেই সুবাদে উনি আমাকে প্রায়শই পাশে রাখেন। ২০১৫ সালে বেগম জিয়া তিনমাস তার অফিসে বন্দী ছিলেন। তার সাথে আমিও ছয়দিন বন্দীজীবন কাটিয়েছি। দিদা রাতে ঘুমাতেন না। তাহাজ্জুদের নামাজের আগে আমার সাথে অনেক বিষয়ে কথা বলতেন। একদিন আপনার কথা বলেছিল। হুমায়ুন স্যার নিয়ে কথা বলেছিল। দিদা আমাকে তার দেয়াল উপন্যাস সম্পর্কে জানতে চাইলেন। সেদিন আমি দিদাকে বলেছিলামঃ
বাংলাদেশের জনপ্রিয় সাহিত্যিক মরহুম হুমায়ুন আহমেদের একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক উপন্যাস হচ্ছে দেয়াল। বাংলাদেশ রাজনৈতিক ইতিহাসের পটভূমিকায় এই উপন্যাসটি লেখা। উপন্যাস এবং ইতিহাস গ্রন্থের মধ্যে পার্থক্য আছে। একটিকে
বিশুদ্ধ ইতহাস গ্রন্থ বলা যায় না দ্বিতীয়টিকে বিশুদ্ধ ইতিহাস গ্রন্থ বলা যায়। উপন্যাসে সাধারণত: হেয়ালী করেও অনেক কথা বলা হয়। বলা হয় কোন একটি চরিত্র হয়তো হেয়ালী করে কথা গুলো বলেছিল। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে হুমায়ুন আহমদের দেয়াল নিয়ে সংশয় থেকে যায়।
দেয়াল ইতিহাস আশ্রিত একটি উপন্যাস।জিয়াউর রহমান সম্পর্কে স্মৃতিচারণ আছে, আছে জিয়াউর রহমানের শাসনামলের প্রাকৃতিক দূর্যোগহীনতা, আছে জিয়াউর রহমানের সুশাসনের কথা, তার সৎ ও সারল্য জীবনচিত্র, রয়েছে তার মৃত্যুতে জেনারেল মঞ্জুরের সম্পৃৃকতা, একই রয়েছে জিয়া হত্যাকান্ডে প্রভাবিত করায় স্ত্রীর ভূমিকার কথা। শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডসহ রক্ষী বাহিনীর কথা আছে, আছে পঁচাত্তর হত্যাকান্ড পরবর্তী রক্ষীবাহিনীর দায়িত্বশীল তোফায়েল আহমদের অসহায়ত্বেরও কথা।
এর সত্যাসত্য নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা হতে পারে।
১। শুক্রবার ভোরে প্রেসিডেন্ট জিয়া নাস্তা খাচ্ছিলেন। আয়োজন সামান্য। চারটা লাল আটার রুটি । দুই পিস বেগুন ভাজি। একটা ডিম সিদ্ধ । জিয়ার সঙ্গে নাশতার টেবিলে বসেছেন তার বন্ধু ও সহযোদ্ধা জেনারেল মঞ্জুর । জেনারেল মঞ্জুর বিস্মিত হয়ে বললেন, এই আপনার নাশতা ? প্রেসিডেন্ট বললেন, হতদরিদ্র একটি দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এই নাশতা কি যথেষ্ট না ? (দেয়াল, হুমায়ুন আহমেদ, ১৮৯-পৃষ্ঠা)
২। জিয়াউর রহমানের পাঁচ বছরের শাসনে প্রতি মাঘের শেষে বর্ষন হয়েছিল কিনা তা কেউ হিসাব রাখেনি, তবে এই পাঁচ বছরে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি । অতি বর্ষণের বন্যা না, খরা না, জলোচ্ছাস না । দেশে কাপড়ের অভাব কিছুটা দূর হলো। দ্রব্যমূল্য লাগামছাড়া হলো না । বাংলাদেশের নদীতে প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়তে লাগলো ।
বাংলাদেশের মানুষ মনে করতে লাগলো অনেক দিন পর তারা এমন এক রাষ্ট্রপ্রধান পেয়েছে যিনি সৎ । নিজের জন্য বা নিজের আতœীয়স্বজনের জন্য টাকা পয়সা লুটপাটের চিন্তা তার মাথায় নেই । বরং তার মাথায় আছে দেশের জন্য চিন্তা । তিনি খাল কেটে দেশ বদলাতে চান । জিয়া মানুষটা সত্ ছিলেন , এতে কোনো সন্দেহ নেই । লোক দেখানো সৎ না , আসলেই সৎ । তার মৃত্যুর পর দেখা গেল জিয়া পরিবারের কোনো সঞ্চয় নেই । (দেয়াল, পৃষ্ঠা-১৯৩)
৩। তারিখ ৩০ মে রাত এগারোটা । জিয়া প্রান হারান তার একসময়ের সাথী জেনারেল মঞ্জুরের পাঠানো ঘাতক বাহিনীর হাতে । বলা হয়ে থাকে , জেনারেল মঞ্জুর তার রুপবতী স্ত্রী দ্বারা পরিচালিত ছিলেন । এই স্ত্রী মঞ্জুরের শেষ দিন পর্যন্ত তার সঙ্গী ছিলেন । সেনা অভ্যুত্থান ঘটানো এবং জিয়া হত্যার পেছনে প্রলয়ংকারী স্ত্রীবুদ্ধি কাজ করতে পারে । (দেয়াল, পৃষ্ঠা-১৯৬)
৪। বঙ্গবন্ধুর অতি কাছের মানুষ তার রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ বসে আছেন রক্ষীবাহিনীর সদর দপ্তর সাভারে । আতঙ্কে তিনি অস্থির । বঙ্গবন্ধু নিহত হলেন । বঙ্গবন্ধুকে রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত রক্ষীবাহিনী ঝিম ধরে বসে আছে । একসময়ের সাহসী তেজি ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদও ঝিম ধরে বসে আছেন । শুরু হয়েছে ঝিম ধরার সময় । রাস্তায় মিছিল বের হয়েছে । দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, সেই মিছিল আনন্দ মিছিল। শফিক বাংলামোটরে গিয়ে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখল । সেখানে রাখা ট্যাংকের কামানে ফুলের মালা পরানো । কিছু অতি উত্সাহী ট্যাংকের উপর ওঠে নাচের ভঙ্গি করছে । আমার বাবর রোডের বাসার কথা বলি । বেতারে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর খবর প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে একতলার রক্ষীবাহিনীর সুবেদার পালিয়ে গেলেন । তার দুই মেয়ে ছুটে এল মা’র কাছে । তাদের আশ্রয় দিতে হবে । মা বললেন তোমাদের আশ্রয় দিতে হবে কেন ? তোমরা কি করেছ ? তারা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল , খালাম্মা , এখন পাবলিক আমাদের মেরে ফেলবে । এই ছোট্ট ঘটনা থেকে রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার এবং তাদের প্রতি সাধারন মানুষের ক্ষোভ ও ঘৃনাও টের পাওয়া যায় । (দেয়াল, পৃষ্ঠা-১০৭)। শব্দ : ৫৮০
আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার একটু মুচকি হেসে বললেন তুমি জাকির নায়েকের রেফারেন্স দাও।
©somewhere in net ltd.