![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছবির এই ব্যক্তির নাম লেন্দুপ দর্জি, কাজী লেন্দুপ দর্জি খংসর্পা। এই ব্যক্তি ও তার সঙ্গিসাথীগণ স্বাধীন সিকিমকে ভারত রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দ সংস্থা ‘র’ এবং সেনাবাহিনীর বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্যদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ভারতীয় রাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্য হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ভারতের রাজনৈতিক গুপ্তচর এবং পুতুল হিসাবে কাজ করে, এবং কাজ ফুরালে ভারত রাষ্ট্র তাকে ছুড়ে ফেলে দেয়। এইভাবে ঐতিহাসিক এক জাতীয় বেঈমান এই লেন্দুপ দর্জি ভারত রাষ্ট্র কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে জীবনের শেষ দিনগুলিতে অত্যন্ত কষ্টকর অনুশোচনা ও মর্মবেদনা নিয়ে জাতীয় বেঈমান হিসাবে দুনিয়ার সকল মানুষের ঘৃণার বস্তুতে পরিণত হন এবং অবহেলা অযত্নে বিনা চিকিৎসায় ভীষণ একাকিত্বের এক দীর্ঘ জীবন (১০২ বছর) বেঁচে থেকে ২০০৫ সালে ইতিহাসের পাতায় নিন্দিতভাবে আশ্রয় নেন।
সিকিমকে গ্রাস করার জন্য ভারত দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস নামের একটা দল সে দেশে নিজেদের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে গড়ে নিয়েছিল। তারা এই দলের নেতা লেন্দুপ দর্জিকে নানা প্রচার প্রপাগাণ্ডা ও তৎপরতার মাধ্যমে সিকিমবাসীর মনে সম্মানের উচ্চ শিখরে তুলে এনেছিল। ভারত সরকার ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্যদের দিয়ে সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেসকে আষ্টেপৃষ্ঠে ছেয়ে ফেলেছিল। ১৯৭০ থেকে ৭৫ পর্যন্ত সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস তৎকালীন সিকিমের স্বাধীন স্বত্তা ও অস্তিত্বের প্রতি, সার্বভৌমত্বের প্রতি প্রতিশ্রতিশীল রাজাকে উৎখাত করার জন্য দেশে চরম অরাজক পরিস্থিতি তৈরী করেছিল। এক পর্যায়ে সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেসের ব্যানারে ভারতীয় বিশেষ সেনারা এবং গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সিকিমের রাজপ্রাসাদের সামনে চরম দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টি করে। ইন্দিরা গান্ধী রাজার নিরাপত্তার কথা বলে সেখানে সৈন্য পাঠায় এবং সারা বিশ্বের সাথে তৎকালীন সিকিমের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে উল্টো রাজাকেই বন্দি করে, এবং একজন ভারতীয়কে গভর্নর হিসাবে নিয়োগ দেয়। ভারতীয় গভর্নর সেখানে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ব্যবস্থা করে এবং প্রহসনের নির্বাচনে সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেসকে ৩২টি আসনের মধ্যে ৩১টি আসন পাইয়ে দেয়। তারপর সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস ও তার উচ্চ সম্মানের জনপ্রিয় নেতা কাজী সাব (লেন্দুপ দর্জি) ভারতের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক লাল গালিচা সংবর্ধনা ইত্যাদি কুটকৌশলী সম্মানে ভূষিত হয়ে ধীরে ধীরে সিকিমকে ভারতের হাতে নানা চুক্তির মাধ্যমে তুলে দেন। তখন সিকিমবাসী ভারতীয় প্রচারযন্ত্রের প্রচারণা ও নানা কুটচাল লোভ লালসা স্বপ্নবাজী ইত্যাদির ফাঁদে পড়ে অনেক খুশি হয়েছিলেন, তারা নিজেদের ভ্যাগ্য ও দিন বদলের অনেক উঁচু স্বপ্ন দেখেছিলেন। দুর্ভাগ্যজনক সত্য হচ্ছে সিকিম আজ ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্রতম একটি রাজ্য।
ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক সুধীর শর্মা তার Pain of loosing a nation বইতে লিখেছেন, “আমাকে লেন্দুপ দর্জি নিজে বলেছেন যে, বছরে তিন-চার বার আমার সাথে “র” এর লোকজন দেখা করতো এবং দেশে অশান্তি, অরাজকতা ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে বলতো। জীবনের পড়ন্ত বেলায় (২০০৪ সালে) নেপালের একটি সাপ্তাহিকের সাথে কথা (বাণীবদ্ধকৃত) বলতে গিয়ে আত্ম অপরাধ স্বীকার করে দর্জি বলেন, সিকিমকে ভারতভুক্ত করার জন্য আমি ভারতীয় শাসকদের কথামত সবকিছুই করেছি। কিন্তু কার্যসিদ্ধির পর ভারত আমাকে ভুলে গেছে, আমাকে উপেক্ষা করেছে। তিনি বলেন, আগে আমাকে ভারত সফরকালে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং কর্তৃক লালগালিচা অভ্যর্থনা দেয়া হতো, আর এখন দ্বিতীয় এমনকি তৃতীয় সারির ভারতীয় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে চাইলে আমাকে কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়, এবং এমনকি স্বাক্ষাৎই পাই না।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৩
আবু আফিয়া বলেছেন: এ বিষয়ে অবগত করার জন্য ধন্যবাদ