নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাজমুল হুদা নাজ

নাজ রিটার্নস

নাজ রিটার্নস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইন্ডিয়া, চায়না, বাংলাদেশ - আগামী নির্বাচন

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:১৩

আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় এচিভমেন্টের একটা হোলো তারা বাংলাদেশের প্রশাসন ও এলিট সমাজকে বোঝাতে পেরেছে যে ইন্ডিয়া আওয়ামী লীগকে ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়ে রেখেছে এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যাওয়া মানে ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে যাওয়া।

ব্যাপারটা মোটেও এতো ব্ল্যাক এন্ড ওয়াইট না। এমন কি ২০১৪'র নির্বাচনেও ইন্ডিয়ার একটা অংশ বিএনপিকে জানিয়েছিলো যে তারা নির্বাচনে গেলে আওয়ামী লীগকে হারাতে পারবে অনায়াসে (বিএনপির নেতৃত্ব মনে করেছিলো যে এটা একটা ট্র্যাপ)।

আমাদের মনে রাখতে হবে যে এক দেশের ডিপ্লোম্যাটদের অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যতোই ইন্টারভীন করার চেষ্টা করুক, তাদের খুব বড়ো বড়ো প্রতিবন্ধকতা থাকে। সবচেয়ে বড়ো প্রতিবন্ধকতা হোলো ডিপ্লোম্যাটরা নিজে। আমলারা এই কথাটার মানে বুঝতে পারবেন।

আজকের দিনে এতো বেশী স্টেক হোল্ডার যে এফেকটিভ ডিপ্লোমেসি করার জন্য ডিপ্লোম্যাটদের চাইতে বহুগুণ কার্যকরী টুলস সরকারের বাইরের লোকজনদের থাকে।

বাংলাদেশের ওপর ইন্ডিয়ার ইদানিং কালে যে অবিশ্বাস্য প্রভাব তার মূল কারণ হোলো বাংলাদেশীদের প্রভুপরায়ণতা। ইন্ডিয়ার যদি এতো ক্ষমতা থাকতো তাহলে তাদের নেপাল, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ আর ভুটানে এরকম অভূতপূর্ব ডিপ্লোম্যাটিক ধ্বস নামতো না। আমার খুব কাছের এক টপ বাংলাদেশী প্রোফেশনালকে ইন্ডিয়ার এক সক্রিয় সেক্রেটারি বলেছিলেন যে বাংলাদেশীরা নিজেরাই স্ব-উদ্যোগে সব কিছু করে দেয় তাদের, ইন্টেলিজেন্স শেয়ার করে নিজে থেকে চাওয়ার আগেই। তিনি হয়তো একটু বাড়িয়ে বলেছিলেন তার অবস্থানের কারণে, কিন্তু আমি বহু ক্ষেত্রে এর সত্যতা দেখেছি।

বাংলাদেশের মানুষেরা চাকরিতে যতোটা উপরে উঠতে থাকে ততোই কুসংস্কারাচ্ছন্ন হতে থাকে। শীর্ষ পদে পৌঁছুলে দুটো কুসংস্কার প্রতিটি সফল বাঙালিকে গ্রাস করে যে তিনি নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান (যেহেতু বাঙালি এবস্ট্রাক্ট কী বোঝে না, লিভিং এম্বোডিমেন্ট ছাড়া কোনো এবস্ট্রাক্ট কনসেপ্ট সে বুঝতে পারে না; বাঙালি ভাষার দুর্যোগে জন্ম থেকেই মূর্তিপূজারী) এবং তিনি না থাকলে সেই প্রতিষ্ঠানটি টিঁকবেই না। আমি ইদানিং দেখেছি যে তৃতীয় একটা কুসংস্কার সফল বাংলাদেশী প্রোফেশনালদের মাঝে ভীষণভাবে সংক্রমণ করেছে যে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে টিকেই আছে ইন্ডিয়ার কারণে এবং ইন্ডিয়া রেগে গেলে বাংলাদেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। এই ন্যারেটিভ তৈরী করাটাই আওয়ামী লীগের টিকে থাকার মূল কারণ।

অথচ আজকের রিয়ালিটি হোলো এরকম:

ইন্ডিয়ান ডিপ্লোমেসির জন্য বাংলাদেশে সফলতার সবচেয়ে বড় য়ার্ডস্টিক হোলো তাদের মন্ত্রণালয়ের সুপেরিয়রকে দেখানো যে দেখো বাংলাদেশের সাথে চায়নার ব্যবসা ও ইনভেস্টমেন্ট কমছে। ইন্ডিয়ার ফরেন পলিসি প্লেয়ারদের কাছে বাংলাদেশ মোটেও বিএনপি-আওয়ামী লীগের যুদ্ধ ক্ষেত্র না, তাদের কাছে বাংলাদেশ হোলো ইন্ডিয়া-চায়নার যুদ্ধক্ষেত্র। এইভাবে দেখলে সরকারী কর্মচারীদের চাকরির রেলেভেন্স থাকে। ডিপ্লোম্যাটরা তাদের চাকরি রক্ষার কারণে অদ্ভুত ধরণের য়ার্ডস্টিক তৈরী করেন এবং সেই য়ার্ডস্টিক মোতাবেক পৃথিবী বিচার করেন।

শেখ হাসিনা জানেন যে ইন্ডিয়ার পক্ষে তার পরিবাবরকে সহায়তা করা সম্ভব, কিন্তু বাংলাদেশে ম্যাসিভ ইনভেস্টমেন্ট করার ক্ষমতা ইন্ডিয়ার নেই, যেটা চায়নার আছে। শেখ হাসিনা চান যে চায়নার সাথে তার সম্পর্ক হবে লাবণ্যের মতো - ঝর্ণার জলের মতো প্রেম - প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য নয়। আর ইন্ডিয়ার সাথে তার সম্পর্ক হবে কেতকীর মতো - ঘড়ায় রাখা জল- প্রতিদিন পানের উদ্দেশ্যে। সমস্যা হলো, ইন্ডিয়া ও চায়না নিজেদের লাবণ্য ও কেতকী মনে করেন না, কোনো অমিতের উদ্দেশ্যেও তারা বসে নেই। তাদের কাছে বাংলাদেশ বরং ভিভিয়েনের মতো ইফ য়ু নো, ওয়াট আই মীন

ডিপ্লোম্যাসি জিনিসটা কী বুঝতে হলে আপনাকে ডিপ্লোম্যাটদের মাইন্ড-সেট কী এটা বুঝতে হবে এবং বুঝতে হবে যে ডিপ্লোম্যাসি আদতে হোলো ম্যানুফ্যাকচার্ড রিয়ালিটিকে সত্য বলে প্রতিষ্ঠা করার প্রকল্প, সেটা আপনি যেদেশেই যান। বুরোক্রেটরা চাইলেও ও পারলেও নুয়ানসেস ধরেন না, তাদেরকে প্রোমোশান পাওয়ার জন্য আজগুবি গল্পের বিগ পিকচার আঁকতে হয়। দিন শেষে তারা তাদের বসকে বুলেট পয়েন্ট দেখিয়ে বুজুম বাজুম বোঝাতে হয় যে, দেয়ার ইজ স্টিল হোপ এন্ড উই আর ডুইং জাস্ট ফাইন। সারা পৃথিবীতেই আমলাদের এই একই জাত।

ইন্ডিয়ান আমলাদের জন্য একটা ইলেজিটিমেট সরকারকে ইনডেফিনিটলি সাপোর্ট করা মোটেও সুখকর জিনিস না। মনে রাখবেন তাদের মেক বিলিভ ওয়ার্ল্ডে এসব আনএপেটাইজিং কাজ করে পাকিস্তান ও চায়না। ইন্ডিয়ানরা সত্যি সত্যিই মনে করে যে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের একেনমি যেখানে নিয়ে গেছে সেখানে তাদের নিজেদের লক্ষ লক্ষ প্রফেশনালের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে।

অন্যদিকে হাসিনার সমস্যা হোলো তিনি ইন্ডিয়া যা চায়, অর্থাৎ চায়নার সাথে ব্যবসাহ্রাস - সেটা করতে পারাটা এফোর্ড করেন না। আবার অন্যদিকে চায়নার সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের যে চেষ্টা তিনি করেছেন এবং তার বদলে তিনি আশা করেছিলেন যে রিফিউজি ক্রাইসিসে চায়না বাংলাদেশের পক্ষে আর মায়ানমারের বিপক্ষে অবস্থান নেবে। চায়না করেছে ঠিক তার উল্টা।

ইন রিয়ালিটি, দেশের বাইরে কোনো কোয়ার্টার থেকেই হাসিনা ব্ল্যাঙ্ক চেক পান নি। চাইনিজরা ব্যবসা করতে চায় শুধু, যেই আসুক তারই সাথে তারা ব্যবসা করবে। সে হিসেবে চায়নার সাপোর্ট কার দিকে বোঝা মুশকিল। বাট ইন্ডিয়ানরা অবশ্যই ২০১৪ সালে বসে নেই।

এরকম পরিস্থিতিতে বিনপির খুব বড় একটা সুবিধা ও তার চাইতেও বড় একটা অসুবিধা আছে। সুবিধা হোলো যে তারা জানে যে ইন্ডিয়ার বিএনপি-চিন্তা অন্তত ২০১৪ সালের চাইতে কম নেতিবাচক। বহির্বিশ্বে বিএনপি যে খুব আদরণীয় হয়ে গেছে তা না কিন্তু পাঁচ-সাত বছর আগে বিএনপি সম্পর্কে এক্সটার্নাল স্টেক হোল্ডারদের যেমন নেতিবাচক ছিলো এখন মোটেও সে অবস্থায় নেই। আগে স্টেকহোল্ডাররা তাদের অভিযোগ জানাতো, এখন তারা জানতে চায় তোমরা ক্ষমতায় আসলে কী করবে? এটাকে উন্নতি বলা চলে।

আর অসুবিধা হোলো শেখ হাসিনার হাতে ট্রাম্প কার্ডটা রয়েই গেছে। আমি শেখ হাসিনা হলে কখনোই নির্বাচনে কী হবে এটা নিয়ে চিন্তা করতাম না। আমার চিন্তা হোতো কীভাবে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখা যায় এবং আরেকবার একটা ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী নির্বাচন করে সেটা হজম করা যায়। নির্বাচনের ঠিক তিন মাস আগে ধরে নিন জেলে বিএনপির একজন নেতাকে ১৯৯৫ সালে তিনবার হাঁচি দেয়ার অভিযোগে মেরে ফেলা হোলো - এর বিরুদ্ধে তাণ্ডব হোলো - এবং তার অজুহাতে আওয়ামী লীগ খুব সহজেই বলে দিতে পারবে যে বাংলাদেশে এখন নির্বাচনের পরিস্থিতি নেই।

বাংলাদেশের পুলিশ-বিচার বিভাগ-প্রশাসন-আর্মি সবাই মিলে এই নির্বাচন বন্ধ করাটা মেনে নেবে - এমন কি যেকোনো জেলহত্যাও মেনে নেবে - এটাই বাস্তবতা। এটাই শেখ হাসিনার সব থেকে বড় ট্রাম্প কার্ড।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.