নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাজমুল হুদা নাজ

নাজ রিটার্নস

নাজ রিটার্নস › বিস্তারিত পোস্টঃ

~ভারতবর্ষে মুসলমানদের আগমন কি আক্রমনকারী হিসেবে?~

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৩৬

এই উপমহাদেশের ইতিহাস পাঠ করলে এটাই প্রতীয়মান হয় ভারতে মুসলমানেরা এসেছিল আক্রমণকারী হিসেবে। এই উপস্থাপন উদ্দেশ্যমুলক। দু তিন হাজার বছর আগেও গ্রিক, রোমান, আরব, চৈনিকেরা ভারতের দক্ষিণে বিস্তৃত জলরাশি পার হয়ে জলপথে ভারতে এসেছে। তাদের কেউ কেউ ফিরে গেছে, কেউ কেউ থেকে গেছে, এই ভুখণ্ডের জনগনের সাথে মিশে গেছে। ইসলাম নাজিল হওয়ার আগে থেকেই আরবেরা ধাও নামের তাদের তিন পাল্লার জলযানে বানিজ্য করতে আসতো। এমনকি তারা বসতি স্থাপন করে থেকেও গিয়েছিল। কোচিন থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে ক্র্যাঙ্গানোরে ৬৮৩ সালের মসজিদের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে, যা দেখে নিশ্চিতভাবে বলা যায় আরব মুসলমানেরা সেখানে বসতি স্থাপন করেছিল। তবে মুসলমানেরা কীভাবে ভারতে বসতি স্থাপন করেছিল; কবে থেকে তারা ভারতে আসতে শুরু করে, তা ইতিহাসের বইগুলোতে পাওয়া যায়না। ভারতে মুসলমান ইতিহাস শুরুই হয় মুসলমান আক্রমণ থেকে। যেন এর আগে ভারতে তাঁদের কোন ইতিহাস নেই।

চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যভাবে শ্রিলংকা থেকে চীন যাওয়ার পথে ইবনে বতুতা চট্টগ্রাম বন্দরে নেমে হবংক বা বর্তমানের সিলেটে হজরত শাহ জালালের সাথে দেখা করতে যান। তখন তিনি চট্টগ্রামে অনেক মুসলমানের কবর দেখেছিলেন, যারা সেই অঞ্চলে তাঁদের বসতি স্থাপন করেছিল। বাঙলায় যদিও তখন ফকরুদ্দিন মুবারক শাহের আমল, কিন্তু তখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম মুসলমান শাসকের অধীনে ছিলনা। চট্টগ্রামে মুসলমান আধিপত্য প্রতিষ্ঠার আগেই সেখানে মুসলমান বসতি স্থাপিত হয়েছিল।

"শেখ সুভোদয়া" নামে এক প্রাচীন পুথি পাওয়া গেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, বখতিয়ারের গৌড় জয়ের আগে লক্ষণ সেনের রাজসভায় আরব সওদাগর এসেছিলেন। তিনি যুদ্ধ করতে আসেননি, বানিজ্য করতে এসেছিলেন।

ভারতের ইতিহাসের বইগুলোতে মুহম্মদ ইবনে কাশিমের ৭১২ সালে সিন্ধুজনের কাহিনীকে ভারতে মুসলামান প্রবেশের প্রথম ঘটনা বলে বর্ননা করা হয়। বলাই বাহুল্য এটা অর্ধসত্য।

আর মুহুম্মদ বিন কাশিমের সিন্ধুজয়ের ঘটনা মোটেই রাজ্যলাভের ইচ্ছা থেকে করা হয়নি। আসল ঘটনা হচ্ছে, ভারত সাগরে আরব বানিজ্য জাহাজের উপরে জলদস্যুদের হামলা রাজা দাহিরের সময়ে একটা নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছিল।

ইরাকের শাসক আল হাজ্জাজ অনেকবার দাহিরকে অনুরোধ করেছিলেন এটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য। কিন্তু দস্যুতা থামেনা বরং বানিজ্য বহরে হামলা করে এবার জলদস্যুরা আরব রমনিদের লুট করে নিয়ে যায়। দাহিরের বিনা অনুমতিতে এবং প্রশ্রয়ে এই হামলা চলতে পারেনা এবং এটা ছিল আরব বানিজ্যের উপরে সিন্ধুর আক্রমণ। তাই এই আক্রমণের হাত থেকে আরব বানিজ্য বহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেে আল হাজ্জাজ কাশিমকে অনুরোধ করেন দাহিরকে আক্রমণ করতে। বানিজ্য বহরকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধকে আক্রমণকারীর আক্রমণ হিসেবে যখন উপস্থাপন করা হয় তখন শিক্ষার্থিদের একাংশের মনে গ্লানিবোধ আরেক অংশের মনে ঘৃণা উৎপাদিত হয়। এভাবেই শুরু হয় হিন্দু-মুসলমান বিভেদ। এই বিভেদের প্রভাব অনিবার্যভাবে গড়িয়ে গড়িয়ে পরে শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত বিপুল জনগোষ্ঠীর উপরেও। এভাবেই শুরু হয় এক সম্প্রদায়ের দিক থেকে আরেক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা, অবিশ্বাস আর প্রতিশোধের চিন্তা।

ইতিহাস লেখকেরা কি অর্ধসত্য উপস্থাপন করে ঘৃণা উস্কে দেয়া বা ঘৃণা জাগরুক রাখার দায় অস্বীকার করতে পারেন?

তথ্যসুত্রঃ ভারতীয় মুসলমানদের সংকট;সুরজিত দাশগুপ্ত, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, পৌষ ১৮০৮; পৃষ্ঠা ৫-৮

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.