![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাত্রির নির্জনতায় নিঃসঙ্গ কেঁদে কেঁদে, একদিন হয়তো তুই অজান্তেই মরে যাবি, তবুও তুই জানবি না পাষাণ এ বুকে কতটুকু ভালবাসা তোর জন্যে জমা রাখি।
দরজাটা খোলা মূলতঃ বাতাস আসার জন্য.. সেই যে কারেন্ট গেছে আবার কখন আসবে কে জানে.. আকাশটা দেখা যাচ্ছে ধূসর মেঘে ঢাকা.. সন্ধ্যা প্রায় হয়েই যাচ্ছে.. গোধূলীর আকাশটা দেখা যাচ্ছে না.. দেখা যেত যদি জানালা দিয়ে মুখ বাড়ানো হয়.. কিন্তু বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না রাজুর.. বৃষ্টি মনে হয় আরেক পশলা নামবে.. আষাঢ় মাসে আকাশের কোন তালগোল নেই.. সারাদিন মেঘলা আকাশ আর হঠাত্ হঠাত্ গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, মাঝে মাঝে তুমুল বৃষ্টি.. রাজুর চিন্তা এখন বৃষ্টি না আসা নিয়ে.. বৃষ্টি আসলেই পানি ঢুকে পড়ে রুমের ভিতরে.. বিছানাপত্র অনেক সময় বেখেয়ালে থাকলে ভিজে যায়.. চিলেকোঠায় থাকার শাস্তিটা মনে হয় এটাই.. রাজু মনে মনে চাইছে যেন বৃষ্টি না আসে.. বৃষ্টি নামলেই অযথা কাজ বাড়বে আর সময়মত যেতে পারবে না টিউশনিতে.. ঢাকার অলিগলি রাস্তাতে একটু বৃষ্টিতেই পানি উঠে যায় নয়ত কাদায় ভরে যায়..
-কি ব্যাপার দীপ্ত? লেখা রেখে অন্য কি চিন্তা করছো?
-না স্যার চিন্তা করছি রাতে যদি বৃষ্টি আসে তবে ছাদে যাব ভিজতে..
-আচ্ছা বৃষ্টি আসুক.. পড়ো এখন..
হায়রে কেউ বৃষ্টি আসার জন্য দোয়া করে আর কেউ না আসার জন্য.. মুচকি হাসল সে.. মাসের আজ অর্ধেকের মতো চলে গেছে বেতন এখনো পায় নি, বেতন চাওয়ার মত ইচ্ছা নাই তার.. দিবে হয়তো বা কোনো সমস্যায় আছে এটা ভেবে আর চায় না..
ফোনটা হঠাত্ বেজে উঠল..
-কই তুমি?
-বাসায় যাচ্ছি..
-একটু আসতে পারবা? আমার বাসার সামনে..
একটা হালকা দীর্ঘশ্বাস ফেলল রাজু.. এখন হেঁটে হেঁটে এসেছে সেই কলাবাগান থেকে.. আবার এখন যদি ওর বাসায় যেতে হয় তবে জিগাতলা যেতে হবে.. পকেটে টাকাও তেমন নেই.. হেঁটে যাওয়া ছাড়া উপায়ও নেই.. টাকা নেই বলে এখন কমদামের সিগারেট টানে.. সিগারেটের টাকা বাঁচিয়ে কেবল ওর বাসার সামনে যাওয়া যায়..
-কি চুপ হয়ে আছো যে?
-আচ্ছা আসতেছি..
আজকে রাফাকে নিচে দেখে কিছুটা অবাক হল রাজু.. অন্য সময় রাফা শুধু তাকে দেখতে চায় আর সে রাস্তায় দাঁড়ায়.. করিডোর থেকে দুমিনিট দেখে রাফা চলে যেত.. তারপর ফিরে আসত সে..
রাফার হাতে দেখল একটা খাম..
-ধরো এটা?
-কি এর মধ্যে?
-ঐটা জেনে তোমার দরকার নেই.. দিছি ব্যাস, এখন চলে যাও..
রাজুর মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল.. এত কষ্ট করে আসল আর একটুও ভালো করে দেখতে পারল না.. গ্যারেজ থেকে বের হয়ে রাস্তায় গিয়ে খামটা খুলল..
এই মেয়েটা অনেক পাগলামি করে হয়তো খামের মধ্যেও পাগলামির কোন চিহ্ন আছে.. মাঝে মাঝে মেয়েটার পাগলামি আকাশ ছুঁয়ে যায়.. একবার রাত একটার সময় ফোন করে বলেঃ আমার না তোমাকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে.. আসো না এখন?
মোহাম্মদপুর থেকে রাতেই রওনা দিল ঝুম বৃষ্টির মাঝে..
রাজু আবার না করতে পারে না ওর কোন কথায়.. ভালবাসে বলে হয়তো ওর সব পাগলামিতে সায় দিয়ে যায়..
খামটা খুলে দেখলো কিছু টাকা.. অবাক হওয়াটা রাজুর বৈশিষ্ট্যের মধ্যে নাই.. তাই তেমন অবাক হল না.. এমন সময় রাফা ফোন দিলঃ কি দেখছো খামের ভিতর?
-টাকা দেওয়ার মানে কি? কিনে দিতে হবে নাকি কিছু??
-না, এই টাকা তোমার..
-এই টাকা আমার মানে? তোমার টাকা আমি নেব কেন?
-আরে বাবা, তোমার সবকিছু আমার না? আর আমার সবকিছু তোমার না? তাই এটা তোমার জিনিস তোমাকেই দিলাম.. তোমার হাতে টাকা নেই আমি জানি.. হ্যাঁ, আর শোনো এই টাকা পারলে একদিনেই খরচ করে ফেলো?
-না খরচ করব না..
চিলেকোঠায় ফিরতে ফিরতে রাত ১১টা.. এর মধ্যে বৃষ্টি হয়েছে.. রুম খুলে দেখে ভিতরে পানির ছড়াছড়ি.. মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল.. পানি পরিষ্কার করতে হবে তারপর ঘুম..
এই চিলেকোঠা থেকেই ঘনিষ্ঠতা শুরু হয় রাফার সাথে.. রাফার প্রচন্ড দুর্বলতা আছে চিলেকোঠার প্রতি.. পরিচয়ের পর যখন শুনল রাজু চিলেকোঠায় থাকে, বলে উঠলঃ আমাকে নিয়ে যাবা? আমার অনেক দিনের স্বপ্ন চিলেকোঠায় থাকার.. বাবা মা মেয়ে হয়েছি বলেই দেয় না চিলেকোঠায় থাকতে,ছেলে হলে অবশ্যই দিত..
রাজু বললঃ অসুবিধা কোথায়? একেবারে চলে আসো আমার চিলেকোঠায়.. দুজন একই সাথে থাকব..
রাফা হেসে বললঃ ফাজিল পোলা.. শখ কত..
মাঝেমধ্যে রাফা আসে এই চিলেকোঠায়.. রুমের সবকিছু ঠিকঠাক মতো সাজিয়ে রেখে যায়.. যাওয়ার সময় বলে যায়ঃ পারলে আজকেই রুমটা অগোছালো করে ফেলো?
রাজু ওর জন্য একটা পায়েল কিনল আর এক বক্স চকোলেট.. এই মেয়েটা এখনো বাচ্চাদের মতো চকোলেট খেতে পছন্দ করে.. আজ বেতন পেয়ে অনেক টাকাই খরচ হয়ে গেল.. বিকেলের সোনালী রোদ মেঘলা আকাশের ফাঁক দিয়ে যেন আলো ছড়াচ্ছে.. প্রকৃতির এইরূপ দেখে মনটা ভালো হয়ে গেল তার.. আজ রাফার সাথে দেখা করার কথা তাই এগুলা কিনেছে.. মেয়েটাকে মাঝে মাঝে পাগলী আর রহস্যময় মনে হয়.. অনেকক্ষণ হয়ে গেছে দাঁড়িয়ে আছে রবীন্দ্র সরোবরের পাশে.. এখানেই আসার কথা রাফার.. অপেক্ষা করতে করতে একটার পর একটা সিগারেট টানতে থাকে.. এদিকে আবার সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে.. রাফাকে আবার সন্ধ্যার আগে বাসায় যেতে হবে..
আজ তিন দিন ধরে চেষ্টা করছে একটার পর একটা কল দিচ্ছে কিন্তু ফোন বন্ধ.. মেসেজগুলোও ডেলিভারড হচ্ছে না.. কি হলো মেয়েটার??? ভাবছে কি করলে ওর সাথে যোগাযোগ করতে পারবে কিন্তু কোন বুদ্ধিই মাথায় আসছে না.. সেদিন রাত আটটা পর্যন্ত রবীন্দ্র সরোবরে অপেক্ষা করেছে সে কিন্তু রাফা আসেনি.. সেদিন বিকেল থেকে ফোন বন্ধ.. অস্থিরতা চরম পর্যায়ে পৌছে গেছে তার.. রাফার বাসার কেউ তাকে চিনে না গেলে সমস্যা হতে পারে তাই যেতেও পারছে না.. তার কোন বান্ধবীকেও চিনে না.. রাফার সাথে তার কোন মিউচ্যুয়াল ফ্রেন্ডও নাই ফেইসবুকে.. মাথাটা পুরোই আউলে গেছে তার.. কাল রাত থেকে কিছুই খায় নি.. একটার পর একটা সিগারেট খেয়েই যাচ্ছে মাঝে মাঝে পানির তেষ্টা পেলে খাচ্ছে.
দ্বিতীয় পর্বঃ Click This Link
তৃতীয় পর্বঃ Click This Link
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৩৫
আকিব আরিয়ান বলেছেন: ২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ১০:১১ তে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১১:১০
ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: